সাধারণত নাকের এক ধরনের বোটা থাকে। এটা দেখে অনেকে নাকে পলিপ হয়েছে বলে ধরে নেয়। এই ধারনাপি একেবারেই ভুল। পলিপ নাকের গভীরে হয়ে থাকে। নাকের মধ্যে এক ধরনের মাংস পিণ্ডকে পলিপ বোঝানো হয়। এটি অনেকটা স্বচ্ছ। পলিপ দুই ধরনের হতে পারে।
নাকের এ রোগ ও তার চিকিৎসা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক কান ও গলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার। সাক্ষাতকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: পলিপ কি, এটি কত ধরনের হয়ে থাকে?
ডা. কামরুল হাসান : ন্যাসাল পলিপ নাম দেখেই বোঝা যায় যে, এটা নাকে হয়। পলিপ জিনিসটা আসলে একটা মাংসপিণ্ড। এটাকে মাংসপিণ্ড বলা হলেও আসলে এটা মাংসপিণ্ড নয়। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় ম্যাস। আসলে এটা নাকের ভেতরে হয় এবং দেখতে স্বচ্ছ, দেখতে অনেকটা সাদা রংয়ের আঙুরের থোকার মতো নাকের ভেতরে হয়ে থাকে। পলিপ দুই নাকেই হতে পারে।
সাধারনত পলিপ দুই ধরনের হয়ে থাকে-
১. ইথময়েডাল পলিপ, যা উভয় নাসারন্ধ্রেই হয়ে থাকে। এই ধরনের পলিপ শিশুদের কম হয়।
২. এন্ট্রোকোয়োনাল পলিপ, এটি শিশুদের বেলায় বেশি দেখা দেয়। দুই ধরনের পলিপ হওয়ার পেছনের কারণও ভিন্ন।
একুশে টিভি অনলাইন: পলিপ হওয়ার প্রধান কারণগুলো কি কি?
ডা.কামরুল হাসান: সাধারনত পলিপ অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। যাদের হাঁচি থাকে, সর্দি থাকে, তাদের মূলত পলিপ বেশি দেখা দেয়। হাপানি, চোখ চুলকানো নাক চুলকানোর কারণেও পলিপ দেখা দিতে পারে। তবে মূলত অ্যালার্জির কারণে দেখা দেয় পলিপ। এছাড়া বিভিন্ন ইশফেকশনের কারণে পলিপ হতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন : অপারেশন ছাড়া পলিপ চিকিৎসা সম্ভব কি না?
ডা. কামরুল হাসান : অপারেশন ছাড়া অবশ্যই পলিপের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে আগে পলিপ কোন অবস্থায় আছে সেটা দেখতে হবে। ধুলা-বালি,গরম এবং অ্যালার্জির কারণের পলিপ হতে পারে। সেজন্য আগে পলিপ হওয়ার কারণ নির্মাণ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। চিকিৎসকরা যে খাবারগুলো খেতে নিষেধ করেছেন তা খাওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে পলিপ ভালো হয়ে যেতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন: দীর্ঘদিন পলিপ বহন করলে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে কি না?
ডা.কামরুল হাসান: অবশ্যই, দীর্ঘমেয়াদী পলিপ হলে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বেশি আকার ধারণ করলে মেডিক্যাল চিকিৎসা সম্ভব নয়। তখন সেটাকে সার্জারি করতে হবে। মাঝে মাঝে নাক বন্ধ হয়ে যায়। রাতের বেলা দম বন্ধ হয়ে যায়। দিনের বেলায় বেশি ঘুমায়। দাঁতগুলো উচু হয়ে যায়। সারা সময় সর্দিভাব থাকে। কানে কম শোনে। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। পড়াশুনা মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। দিনে দিনে দুর্বল স্বাস্থ্য হয়ে যায়। এমনকি এক সময় শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
একুশে টিভি অনলাইন: পলিপের চিকিৎসা কি?
ডা. কামরুল হাসান : যদি পলিপ হয়ে গিয়ে থাকে। তাহলে দেখতে হবে এটি প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে নাকি অনেক পরে মানে দেরি করে রোগী ডাক্তারের কাছে এসেছেন। প্রাথমিক অবস্থায় যদি খুব ছোট থাকে তাহলে আমরা অ্যান্টি অ্যালার্জিক ড্রাগ দেই এবং একই সঙ্গে লোকাল অ্যাস্টেরয়েড স্প্রে হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাতে অনেকসময় দেখা যায় ওই পলিপ ছোট হয়ে মিশে যায়। আবার কখনও কখনও পলিপ চিকিৎসার জন্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য দিয়ে থাকি। আর সেটা ব্যবহারেও অনেক সময় পলিপ ছোট হয়ে যায়। আর যদি পলিপ বেশি বড় হয়ে গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তা নাক থেকে দূর হয় না। সেসব ক্ষেত্রে পলিপের অপারেশন জরুরি হয়ে পড়ে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পলিপ সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব।
একুশে টিভি অনলাইন: এ রোগ এড়াতে আপনার পরামর্শ কি ?
ডা.কামরুল হাসান : মূলত পলিপ থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। যেহেতু এটার কারণ অ্যালার্জি সেহেতু অ্যালার্জির সৃষ্টির জিনিসগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডা. কামরুল হাসান: একুশে পরিবারকেও ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment