অ্যাপেন্ডিসাইটিস : সতর্ক হোন প্রথম থেকে

অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি অতি সাধারণ রোগ। পেটের ভেতর বৃহদন্ত্রের শুরুতে হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের মতো একটি অংশ আছে, তাকে অ্যাপেন্ডিকস বলে। এই অ্যাপেন্ডিকসে ইনফেকশন হলে তাকে বলা হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে সে দেশে প্রতি একশ' জনে সাতজনের অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়। প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি অ্যাপেন্ডিসেকটমি অর্থাৎ অ্যাপেন্ডিকসের অপারেশন হয় সে দেশে। আমাদের দেশে যদিও কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবুও এই রোগ এদেশে ব্যাপক। সাধারণত তরুণ বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে, তের থেকে তেইশ' বছর বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হয়। সাধারণত সমৃদ্ধ পরিবারের ছেলেমেয়ে যারা বেশি প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের এই রোগ বেশি হয়।


এই রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে- প্রথমে সারা পেট ব্যথা, পরে তলপেটের ডানদিকে ক্রমাগত ব্যথা হয়। নড়তে চড়তে গেলে এই ব্যথা বাড়ে। ব্যথার সঙ্গে বমি, জ্বর, প্রস্রাবের সমস্যা, পায়খানার সমস্যা, খাবারে অনীহা, পেট ফেঁপে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা হচ্ছে অ্যাপেন্ডিসেকটমি, অর্থাৎ ফেঁপে যাওয়া অ্যাপেন্ডিকসটা অপারেশন করে ফেলে দেওয়া। এটি একটি ছোট অপারেশন। সাধারণত দু-একদিনের মধ্যেই রোগী বাসায় ফিরে যেতে পারেন। বর্তমানে লেপারোস্কপির সাহায্যেও চমৎকারভাবে এই অপারেশন করা যায়।

যথাসময়ে চিকিৎসা না করালে আপাত অতি সামান্য এই রোগ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে ও পচে যেতে পারে, পুজ জমে যেতে পারে, এমনকি সারা পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা যথেষ্ট জটিল এবং অনেক সময় আপাত নিরীহ এই রোগ জীবন সংশয় করতে পারে। 

বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ, ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগের জটিলতা অনেক বেশি হয়। তাই জটিলতা এড়ানোর জন্য উচিত দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। আর এ ক্ষেত্রে যাতে রোগ নির্ণয়জনিত বিলম্ব না হয় সেজন্য ওপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে, এমনকি সন্দেহ হলে, একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে।


অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ 
শিশু ইউরোলজি বিভাগ, 
ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment