মূলত পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া, সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। সমাজে এমনও বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষ রয়েছে যারা কিনা স্বীয় স্ত্রীকে প্রেগনেন্সির একটি বিশাল অবস্থার মধ্যে রেখেই পরকীয়ার অন্ধকারে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি এ কারণে বিকৃত- কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনোই নিজের ঔরসজাত অনাগত সন্তান এবং প্রেমময়ী স্ত্রীর প্রতি উদাস থেকে এ ঘৃণ্য কাজে জড়াতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। মন্দ পরিণতি এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখিরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে- তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সঙ্কীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখিরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে- সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি-৫৬৪)
পরকীয়া বা ব্যভিচার নিকৃষ্টতর অপরাধ, দুনিয়া ও আখিরাতে এর বৃহৎ শাস্তি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর যে শাস্তির বিচারক স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সে শাস্তির ভার যে কত তা বোধোদয় কি সম্ভব?
পরকীয়ার শাস্তি বিবাহিত ও অবিবাহিতের জন্য দুই ভাবে ইসলাম নির্ধারণ করেছে- ১. একজন বিবাহিত অপরজন অবিবাহিত; ২. দু’জনই বিবাহিত।
অবিবাহিতের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত ও বিবাহিতের পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা। আর যদি দু’জনই বিবাহিত হয় তবে পাথর নিক্ষেপে হত্যা। নিম্নে বর্ণিত হাদিসটির মাধ্যমে এ বিধান সুস্পষ্ট বোঝা যাবে।
হজরত আবু হুরায়রা রা: ও যায়দ ইবনে খালিদ রা: থেকে বর্ণিত- দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে অভিযোগ উত্থাপন করল। একজন বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে দিন। অপরজন ছিল অধিক বুদ্ধিমান। সেও বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে দিন। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আচ্ছা বলো- লোকটি বলল, আমার ছেলে এই ব্যক্তির কাজ করত, সে তার স্ত্রীর সাথে জিনা করল। তখন তারা আমাকে বলল যে, আমার ছেলেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। তখন আমি আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে ১০০ বকরি ও আমার একটি বাঁদি দিয়ে দিলাম, তার পর আমি আলেমদের জিজ্ঞাসা করলাম। তারা বলল, আমার ছেলেকে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে, আর তার স্ত্রীকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।
তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘শোনো, আমার জান যার হাতে তার শপথ করে বলছি! আমি অবশ্যই তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করব। তোমার বকরি এবং বাঁদি তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তোমার ছেলেকে ১০০ বেত্রাঘাত করে হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। তার পর উনায়স আসলামি রা:-কে বললেন, হে উনায়স! এই লোকের স্ত্রীর কাছে যাও। যদি সে স্বীকার করে, তবে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করো। তার পর মহিলাটি জিনার কথা স্বীকার করলে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মুয়াত্তা মালিক, দারিমি)
পরকীয়া একটি বিষফল, যে বিষক্রিয়ায় নিষ্পাপ শিশুসন্তানকে হারাতে হচ্ছে মায়ের আদর। পরকীয়ার পথে সন্তান বাধা হওয়ায় সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করছে বিকৃত মস্তিষ্কের পিতামাতা নামক পরকীয়া অপরাধী। স্নেহময়ী মাকে রাক্ষুসীতে পরিণত করছে পরকীয়া, বাবাকে পশুতে পরিণত করছে।
উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান
শিক্ষার্থী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
No comments:
Post a Comment