একুরিয়ামের ব্যবসা যেভাবে শুরু করবেন, চাহিদা প্রচুর : Color Fish Business

একুরিয়াম হচ্ছে এমন ধরনের চারদিক কাচ ঘেরা জল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাত্র যেখানে মাছ, উদ্ভিদ রাখা সম্ভব। একুরিয়াম কেবল শখ কিংবা শোভাবর্ধনকারী নয় এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে বেশ। কারণ, মানুষ সৌন্দর্যের পূজারি। প্রকৃতির (Nature) বিচিত্র বাহারই মাছ যখন স্বচ্ছ কাঁচের জলজবাগানে ঘুরে বেড়ায় তা দেখতে কার না ভালো লাগে। 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে রাজধানীর কাঁটাবনে গড়ে উঠেছে অ্যাকুরিয়ামের  জমজমাট ব্যবসা। পাশাপাশি নিউমার্কেট, গুলশান এবং  বনানীতে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও এর যাবতীয় উপকরণ পাওয়া যায়। 


দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একুরিয়াম ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলে। যদিও একটা সময় একুরিয়ামে মাছ (Fish) পালন ছিল ব্যয় সাধ্য। কিন্তু এখন তা নয়। সৌখিনতা এবং ক্রয় ক্ষমতার কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একুরিয়াম। ইচ্ছে করলে আপনি অংশীদার হতে পারেন।

একুরিয়াম ব্যবসা করার সবচেয়ে বড় কারণ হল এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া। এখন মানুষ পোষা কুকুর বিড়াল বা পোষা পাখি পালনের জন্য বেশি আগ্রহী। ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বা ঘরের সামুদ্রিক একটা ছোঁয়া পেতে অনেকেই নিয়ে আসছেন অ্যাকোরিয়াম। একুরিয়ামের কাস্টমার দোকানে শুধু একুরিয়াম কিনতে আসেন না মাছ মাছের খাবার (Food) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসও কিনতে আসে। সাধারণত একুরিয়ামে যেসব মাছ পালন করা হয় সেগুলো বিদেশি জাতের মাছ। একটা সময় এই একুরিয়ামের দাম অনেক বেশি থাকলেও এখন সাধ্যের মধ্যে।

বর্তমানে একুরিয়ামের বাজার সম্ভাবনাময় একটি বাজার। তাই একুরিয়ামের ব্যবসা আপনি করতে পারেন। একুরিয়ামের ব্যবসা শুরু করার আগে সর্বপ্রথম দেখে নিতে হবে ব্যবসাটি যেখানে করবেন সেখানে একুরিয়ামের চাহিদা আছে কিনা। ঠিক করার পর দোকানের ফার্নিচারগুলোর মধ্যে নিজের জন্য বড় দুটি একুরিয়াম রাখবেন যেখানে আপনার মাছগুলো রাখবেন। তারপর বিক্রির জন্য কয়েকটি একুরিয়াম বানিয়ে নেবেন। এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের একুরিয়াম দিয়ে শুরু করবেন। ছোট জারগুলো আনবেন। একুরিয়াম আপনি নিজেও তৈরি করতে পারেন।

উপকরণ : অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালনের জন্য যেসব উপকরণ দরকার তাহলো- মোটা বালি, পাথর, জলজ উদ্ভিদ, ফিল্টার, এয়ার মটর বিশেষ ক্ষেত্রে এয়ার এক্সিকিউটর, এনার্জি বাল্ব, ওয়াটার হিটার এবং  রাবারের পাইপ।

কোন ব্যবসায় কত টাকার পুঁজি লাগবে সেটা মূলত নির্ভর করে কোথায় এবং কেমন পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করবেন। একুরিয়াম ব্যবসা করতে প্রথমে ফার্নিচার বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। অন্যান্য জিনিস কিনতে ধরুন ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। সরকারি বিভিন্ন বৈধ কাগজপত্রের জন্য আপনাকে আরো দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হতে পারে।

পরিবেশ সৃষ্টি : মাছ পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যাকুরিয়ামে পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর এজন্য উপকরণগুলো একেক করে  সাজাতে হবে। অ্যাকুরিয়ামে পানি দেয়ার আগে উদ্ভিদ লাগানোর জন্য তলা প্রস্তুত করতে হয়। এক্ষেত্রে মোটা বালি, পাথরের কুচি এবং রঙিন দ্রব্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তলা প্রস্তুত হলে ভেলিসনেনিয়া, সেরাটোফাইলাম, ওয়াটার স্পাইট, অ্যানাক্যারিশ, ঝাঁঝি, জলজ পদ্ম, শাপলা এসবের যে কোনো  উদ্ভিদ রোপণ করতে পারেন। এগুলো শুধু শোভাবর্ধনই নয়, এর উপকারিতাও আছে। মাছের বর্জ্য থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে পরিবেশ অনুকূূলে রাখে। সব কাজ শেষে পরিষ্কার পানি দিয়ে অ্যাকুরিয়াম ভর্তি করতে হবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণের জন্য অ্যাকুরিয়ামে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা করে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে হবে।


র‌ঙিন মাছ : বাহারি মাছের অধিকাংশই বিদেশি। এ ধরনের মাছের মধ্যে গোল্ড ফিশ অনন্য। ওরা শান্ত প্রকৃতির হয়। দেহের গঠন অনুযায়ী গোল্ড ফিশ দুই ধরনের। লম্বা ও ডিম্বাকৃতি। এগুলো হলো: রুইকিন, ওয়াকিন, জাইকিন, কমেট, ওরান্ডা, ফান্টাইল, রানচু,  ব্লাক মোর, ভেইল টেইলসহ আরো শতাধিক। 

অন্য মাছের মধ্যে অ্যানজেল, টেট্রা জেব্রা, এলিফ্যান্ট নোজ, ক্যাট ফিশ, সাকিং ক্যাট, সিলভার শার্ক, রেইনবো শার্ক, টাইগারশার্ক, এলবিনো শার্ক, টেলিচো, অস্কার, ফ্লাওয়ার হর্ন, হাইফিল নোজ, ব্লাক গোস্ট, ব্লু আকারা, ব্লু গোড়ামি, রোজি বার্ব, টাইগার বার্ব, ফাইটিং ফিশ, সোর্ড টেইল, ব্ল্যাক মলি, গ্লাসফিশ, টাইগার বাথ, রেইনবো অন্যতম। আর দেশি  প্রজাতির মধ্যে রয়েছে খলিশা, পুঁটি, চান্দা, মলা, পটকা, টেংরা, বেলে, কৈ, চিংড়িসহ ছোটজাতীয় মাছ। এক সময় থাইল্যান্ড, চীন, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশ থেকে মাছের পোনা আমদানি হতো। এখন অধিকাংশ পোনা এদেশেই উৎপাদন হয়।


র‌ঙিন মাছের খাদ্য : মাছের ওজনের প্রায় ৫% হারে সকাল বিকাল দুইবার খাবার দিতে হয়। এজন্য শুকনো টিনজাত, প্যাকেটজাত এবং প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে। শুকনো খাদ্যের মধ্যে আছে আটা, ময়দাসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের মিহি গুঁড়া। টিনজাত খাবারের মধ্যে সিদ্ধ নরম সবজি, চিংড়ি, লবস্টার, বিভিন্ন প্রাণীর হৃৎপিণ্ড, যকৃত, কিডনি এবং ডিমের কুসুম। আর প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন-এককোষী প্রাণী, কেঁচো, প্লাংকটন, লার্ভা ও টিউবিফেক্স। এছাড়া বাজারে র‌ঙিন মা‌ছের কৃত্রিম খাবারও পাওয়া যায়।


অন্যান্য : অ্যাকুরিয়ামে বায়ু সঞ্চালন অত্যাবশ্যক। তাই কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে।  অ্যাকুরিয়ামের সৌন্দর্য বাড়াতে এর তলদেশের মাটি দিয়ে পাহাড়, পর্বত, নালা এসব তৈরি করা যায়। এছাড়া শামুক কিংবা ঝিনুকের খোল অথবা চীনামাটির টুকরো দিয়েও সাজাতে পারেন।


পরিচর্যা : র‌ঙিন মা‌ছের ব্যবসার অন্যতম শর্ত হ‌লো মা‌ছের প‌রিচর্যা। মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বজায় রাখতে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। এর অবহেলায় মাছের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।  পানির রঙ ঘোলাটে, লাল বা সবুজ বর্ণ কিংবা গন্ধ বের হলে সাথে সাথে পরিবর্তন করা উচিত। এ কাজ সপ্তাহে একদিন করলে ভালো হয়। প্রথমে মাছগুলো একটি পানির পাত্রে রাখতে হবে। এরপর একটি লম্বা রাবারের পাইপ অ্যাকুরিয়ামের তলদেশে রেখে মুখ দিয়ে একটু বাতাস টেনে ছেড়ে দিয়ে নিচে রাখা খালি বালতি বা পাত্রে পানি রাখতে হবে। এরপর পুনরায় পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে পুকুর কিংবা নলকূপের পানি ব্যবহার করা যাবে। তবে আয়রনের পরিমাণ বেশি হলে পানি অবশ্যই ফুটিয়ে ঠান্ড‌া করে ছেঁকে নেয়া উচিত। পানিতে অ্যাকুরিয়ামসল্ট মিশানো উত্তম। শীতে অ্যাকুরিয়ামের পানি সাধারণত ঠান্ডা থাকে। তাই এ সময় ডুবন্ত হিটার ব্যবহার করতে হবে। অ্যাকুরিয়ামে পাথরের নিচে ওয়েটডাস্ট ফিল্টার স্থাপন করতে হয়। এর সাথে এয়ার এক্সিকিউটর রাখতে হবে। এর মাধ্যমে যখন বাতাস বের হবে তখন ঊর্ধ্বচাপের সৃষ্টি হবে। ফলে ময়লাগুলো ধীরে ধীরে ফিল্টারের নিচে জমা হবে। এজন্য যন্ত্রটি সবসময় চালু রাখা দরকার।


রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার : অন্য মাছের ন্যায় বাহারি মাছেও রোগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই অ্যাকুরিয়ামকে সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এজন্য নিয়ম জে‌নে ফরমালিন, ডেটল, সেভলন, লবণ এসব ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। যদি রোগ হয়েই যায় তখন চিকিৎসা  জরুরি। অ্যাকুরিয়ামে পালিত মাছে যেসব রোগ হতে পারে; এর মধ্যে লেজ পচা, অ্যাঙ্কর, কোষ্ঠকাঠিন্য, সাদা দাগ রোগ অন্যতম। 

অ্যাকোয়ারিয়ামের যত্ন নেওয়ার পাঁচটি সহজ উপায়ঃ

সঠিক পরিচর্যা না হলে অ্যাকোয়ারিয়াম আবর্জনাতে ভরে যেতে পারে। খারাপ হয়ে যেতে পারে পা‌নির মানও।

রঙিন মাছে ভরা অ্যাকোয়ারিয়াম বাড়িতে রাখতে পছন্দ করেন অনেকেই। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা না হলে অ্যাকোয়ারিয়াম আবর্জনাতে ভরে যেতে পারে। খারাপ হয়ে যেতে জলের মানও। এর ফলে মাছের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। হতে পারে মৃত্যুও। দেখে নিন কী ভাবে সহজেই যত্ন নেওয়া যেতে পারে অ্যাকোয়ারিয়ামের।
১। সাইক্লিং

অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ ছাড়ার আগেই এই কাজটি সেরে নেওয়া প্রয়োজন। আসলে জলের মান মাছের জন্য উপযুক্ত করে তোলার পদ্ধতির নামই সাইক্লিং। মাছ ছাড়ার অন্তত এক সপ্তাহ আগে জলে অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই ধরনের অণুজীব জলের আবর্জনাকে বিয়োজিত করে সেই জল মাছের বসবাসের উপযোগী করে তোলে। বাজার থেকেই এই উপাদান কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু মনে রাখবেন অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ থাকলে কোনও মতেই সাইক্লিং করা উচিত নয়।

২। পা‌নির মান নিয়ন্ত্রণ

অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে প্রাকৃতিক ভাবেই অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট কিংবা নাইট্রাইট জাতীয় যৌগ উপস্থিত থাকে। কিন্তু এই ধরনের যৌগগুলির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে মাছের স্বাস্থ্যের পক্ষে তা খারাপ হতে পারে। একই ঘটনা ঘটতে পারে জলের অম্লত্বর ভারসাম্য নষ্ট হলেও। এই পদার্থগুলির মাত্রা মাপার জন্য বিশেষ ধরনের কিট কিনতে পাওয়া যায় বাজারে। প্রতি সপ্তাহে এই উপাদানগুলির মাত্রা পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। জলের মান ঠিক রাখতে প্রতি সপ্তাহে অ্যাকোয়ারিয়ামের এক তৃতীয়াংশ জল বার করে দিয়ে পরিশুদ্ধ জল ঢালতে হবে।

৩। মাছের খাবার

সব মাছ একই ধরনের খাবার খায় না। এমনকি, এক এক ধরনের মাছ জলের এক এক স্তর থেকে খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করে। কাজেই অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকা মাছের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার না মিললে যেমন মাছের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে তেমনই অতিরিক্ত খাবারও তৈরি করতে পারে সমস্যা। আবার এই খাবার অ্যাকোয়ারিয়ামে বাড়াতে পারে আবর্জনাও।

৪। কী মাছ কিনবেন

মাছ দেখতে ভাল লাগলেই কিনে ফেলা উচিত নয়। কোন মাছ কোন উষ্ণতার জলে থাকে, কতটা স্থান প্রয়োজন কিংবা একাধিক প্রজাতির মাছ একই সঙ্গে থাকতে পারে কি না তা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছের সংখ্যা অতিরিক্ত না হয়ে যায়।

৫। তলদেশ সাফাই

অ্যাকোয়ারিয়ামের তলদেশে থাকা পাথর নিয়মিত পরিষ্কার না করলে তা অত্যন্ত নোংরা হয়ে যেতে পারে। প্রতি সপ্তাহে এই পাথর পরিষ্কার করা উচিত। বর্তমানে সাইফন কিংবা ভ্যাকিউম যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই এই তলদেশের পাথর সাফ করা যায়।






Aquarium fish business, color fish business, একুরিয়ামের বাজার, একুরিয়ামের ব্যবসা, র‌ঙিন মা‌ছের ব্যবসা, Aquarium Business, একুরিয়ামের মা‌ছের ব্যবসা, র‌ঙিন মা‌ছের চাষ, Aquarium fish, একুরিয়ামের মা‌ছ

No comments:

Post a Comment