নো‌বেল পুরষ্কার ২০১৬- যাঁরা পে‌লেন

নোবেল পুরস্কার প্রতিবছর অক্টোবর
মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে ঘোষণা করার ঐতিহ্যকে মেনে ২০১৬ সালে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। ঐ বৎসর থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্য সাধারণ
গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক তুলনারহিত কর্মকাণ্ডের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদেরকে ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়।
সুয়েডীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেদ নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল-এর মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। নোবেল মৃত্যুর পূর্বে উইলের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করে যান। অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়েছে ১৯৬৯ সালে। কারণ আলফ্রেড নোবেল তার উইলে অর্থনীতির কথা উল্লেখ করেননি।

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ১৮৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার নাম অনুসারে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়।

পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তিতে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর এই ছয়টি ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
এগুলোর মধ্যে কেবল শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় নরওয়ের অসলো থেকে। বাকিগুলো সুইডেনের স্টকহোম থেকে প্রদান করা হয়। আগামী ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬- আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে নো‌বেল জয়ী‌দের হা‌তে পুরষ্কার হস্তান্তর করা হ‌বে।

২০১৬ সা‌লে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন গায়ক ও গীতিকার রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান, সংগীত বিশ্ব যাকে চেনে বব ডিলান নামে। চলতি বছরের নোবেল শান্তি পদক পেয়েছে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস। চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন জাপানের নাগরিক ইয়োশিনোরি ওসুমি। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভা‌বে অধ্যাপক অলিভার হার্ট ও বেঞ্জট হোমস্ট্রম। রসায়নে যৌথভা‌বে নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী- ফ্রান্সের জ পিয়েরে সভেজ, যুক্তরাষ্ট্রের স্যার জে ফ্রেসার স্টডার্ট এবং নেদারল্যান্ডসের বার্নার্ড এল ফেরিঙ্গা। পদার্থে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের তিন বিজ্ঞানী- ডেভিড জে থৌলেস, এফ ডানকান এম হ্যালডেন ও জে মাইকেল কোস্টারলিৎজ।

সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন গায়ক ও গীতিকার রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান, সংগীত বিশ্ব যাকে চেনে বব ডিলন নামে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক ধারা সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে ডিলানকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয় বলে জানিয়েছে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলছে, ‘অ্যামেরিকার সংগীত ধারায় নতুন কাব্যিক দ্যোতনা সৃষ্টির' জন্য রক, ফোক, কান্ট্রি মিউজিকের এই কিংবদন্তিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে।

নোবেল জয়ী বব ডিলনের জনপ্রিয় গান, হাতে গিটার আর গলায় ঝোলানো হারমোনিকা তাঁর ট্রেডমার্ক। যার গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। ১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'-এ জর্জ হ্যারিসন, রবিশঙ্করের সঙ্গে ডিলনও ছিলেন।

বব ডিলন প্রথম গীতিকার হিসাবে সাহিত্যে নোবেল পেলেন। তার গান কেবল ৭০ বা ৮০'র দশকে নয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সমান জনপ্রিয়। কবীর সুমনের কণ্ঠে ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়' মূল গানটি বব ডিলানের- ‘‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট আ ম্যান ওয়াক ডাউন'' থেকে নেয়া।
ডিলানের বয়স এখন ৭৫। কিন্তু এখনো লিখে চলেছেন গান, সেই সাথে গাইছেনও। সংগীত শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সেই ১৯৫৯ সালে। তাঁর ‘ব্লোইন ইন দ্য উয়িন্ড', ‘মাস্টার্স অব ওয়ার', ‘এ হার্ট রেইন'স এ-গনা ফল', ‘লাইক এ রোলিং স্টোন' গানগুলো দ্রোহ ও স্বাধীনতার ভাব বহন করে। এই গানগুলো যুদ্ধবিরোধী ও নাগরিক আন্দোলনের অনেক সংগঠন মর্ম সংগীত হিসেবে ব্যবহার করে।

শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস। বাম বিদ্রোহীদের সঙ্গে ৫২ বছরের সংঘাত অবসানে তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ফার্ক বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সইয়ের জন্য নোবেল কমিটি হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসের খুব প্রশংসাও করে। এক বিবৃতিতে নোবেল কমিটি বলে, কলম্বিয়ায় পাঁচ দশক ধরে ফার্ক বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর চলা সংঘাত অবসানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন স্যান্তোস। সংঘাতে দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ঘরবাড়ি হারায় ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন জাপানের নাগরিক ইয়োশিনোরি ওসুমি।
প্রাণীকোষ কী করে ভাঙ্গে ও নিজের উপাদানকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে, সেই ‘অসাধারণ গবেষণার’ জন্য এ পুরষ্কার পাচ্ছেন ইয়োশিনোরি।
নোবেল কমিটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রাণীকোষের ঠিক কোন জটিলতার কারণে ক্যান্সার থেকে শুরু করে পারকিনসনসের মতো জটিল রোগ হয়, তা বুঝতে ইয়োশিনোরি ওসুমির গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ধারণাটি যদিও ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগ থেকেই জানা, কিন্তু দেহতত্ব ও চিকিৎসায় এর মৌলিক গুরুত্ব ১৯৯০ সালে ইয়োশিনোরির গবেষণার পরই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

চলতি বছর অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন অধ্যাপক অলিভার হার্ট ও বেঞ্জট হোমস্ট্রম। সোমবার রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস তাদের নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার এই দুই গবেষকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
অলিভার হার্ট যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বেঞ্জট হোমস্ট্রম ক্যামব্রিজেরই ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে কর্মরত আছেন। অর্থনীতিতে যে ‘চুক্তি তত্ব’ রয়েছে তাতে অবদান রাখায় এ বছর তাদের নোবেল প্রদান করা হয়েছে।

২০১৬ সা‌লে পদার্থবিদ্যায় যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের তিন বিজ্ঞানী। মঙ্গলবার রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস তাদের নাম ঘোষণা করেছে।
এই তিন বিজ্ঞানী হচ্ছেন, ডেভিড জে থৌলেস, এফ ডানকান এম হ্যালডেন ও জে মাইকেল কোস্টারলিৎজ। পুরস্কারের অর্থ ভাগাভাগি করে নিতে হবে এই তিন বিজ্ঞানীকে। এর এক ভাগ পাবেন ডেভিড জে থৌলেস আর বাকী অর্ধেক হ্যালডেন ও কোস্টারলিৎজকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে।
নোবেল কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এই বছরের বিজয়ীরা এক অজানা জগতের দুয়ার উন্মোচন করেছেন, যেখানে পদার্থ বিচিত্র অবস্থায় রুপান্তরিত হয়। এই গবেষণায় তারা উচ্চতর গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সুপার কন্ডাক্টর, সুপার ফ্লুইড ও পাতলা ম্যাগনেটিক ফিল্মের মতো বস্তুর অস্বাভাবিক আচরণ বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তাদের এই অগ্রণী কাজের জন্য ধন্যবাদ, যার মাধ্যমে এখন বস্তুর নতুন ও ভিন্ন আঙ্গিক খোঁজা হচ্ছে। বস্তুগত বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্সের নতুন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এখন অনেকেই আশাবাদী।’

এ বছর রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। বুধবার রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস তাদের নাম ঘোষণা করেছে।
এরা হলেন, ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব স্ট্রাসবর্গের শিক্ষক জ পিয়েরে সভেজ, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির স্যার জে ফ্রেসার স্টডার্ট এবং নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রনিংগেনের বার্নার্ড এল ফেরিঙ্গা।
নোবেল কমিটি তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আনবিক যন্ত্রে দেখা যায় এমন অতিক্ষুদ্র যন্ত্রের ডিজাইন ও এর নির্মাণের জন্য তাদেরকে এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। তারা যে যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন তা চুলের চেয়েও হাজার গুন বেশি সরু। তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং শক্তি সঞ্চার করা হলে এটি সুনির্দিষ্ট কাজ করতে সক্ষম।

No comments:

Post a Comment