জীবন বৃত্তান্ত : ‌যে বিষয়গুলো অপ্র‌য়োজনীয়

একজন নিয়োগকর্তা সাধারণত অল্প কয়েক সেকেন্ড ব্যয় করেন কারো জীবন বৃত্তান্ত বা সিভি দেখতে। যদিও চাকরির জন্য জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করতে গিয়ে অনেকেই যেন ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়া শুরু করেন। আর এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কথার বদলে বহু অপ্রয়োজনীয় কথা চলে আসে। এ লেখায় তুলে ধরা হলো এমন কিছু বিষয়, যা জীবন বৃত্তান্তে রাখার প্রয়োজন নেই। 

১. অবজেকটিভ
অনেকেই সিভিতে অবজেক্টিভ (objective) নামে একটি অংশ রাখেন। এটি রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আপনি কী চাইছেন এ বিষয়গুলো মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয় নিয়োগকর্তার কাছে। তার বদলে তারা চাইবে যেন নির্দিষ্ট পদে আপনি কাজগুলো করতে পারছেন, এ নিশ্চয়তা।

২. অন্য ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা
অপ্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা আপনার কোনো চাকরিক্ষেত্রে সুবিধা
নয় বরং অসুবিধা ডেকে আনতে পারে। তাই অভিজ্ঞতা শুধু একই ক্ষেত্রের হলেই লিপিবদ্ধ করুন।

৩. অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য
জীবন বৃত্তান্তে ব্যক্তিগত বাড়তি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোই শুধু তুলে ধরুন।

৪. অনেক ফোন নাম্বার
সিভিতে আপনার একটি বা দুটি ফোন নাম্বার থাকাই যথেষ্ট। অনেক ফোন নাম্বার থাকলে তা বাদ দিন।

৫. শখ
আপনার শখ নিয়ে নিয়োগকর্তারা মাথা ঘামাবেন না। তাই এগুলো সিভি থেকে বাদ দিন।

৬. স্থূল মিথ্যা
কিছু মিথ্যা আছে দেখলেই বোঝা যায়। আর এ ধরনের মিথ্যা সিভিতে যোগ করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ এগুলো চাকরি হারানোর কারণ হতে পারে।

৭. অতিরিক্ত লেখা
কোনো সিভিতেই বাড়তি লেখার প্রয়োজন নেই। কারণ অতিরিক্ত লেখা থাকলে সঠিক তথ্য পাওয়ার আগেই তা বাতিল হয়ে যেতে পারে।

৮. অতিরিক্ত বুলেট পয়েন্ট
সিভিতে কোনো বিষয়ই যেন অতিরিক্ত না হয় এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনি বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা যেন অতিরিক্ত হয়ে না যায়।

৯. রেফারেন্স
আপনার নিয়োগকর্তা যদি রেফারেন্স চায় তাহলে ভিন্ন বিষয়। কিন্তু সাধারণত এটি রাখার প্রয়োজন হয় না।

১০. অসঙ্গত সাজানো
আপনার সিভি যদি সঠিক নিয়ম অনুযায়ী সাজানো না হয় তাহলে তা বরং নিয়োগকর্তাকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

১১. আমি, আমার, সে....
সিভিতে আমি, আমার কিংবা সে... শব্দগুলো ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

১২. অতীতের চাকরির জন্য বর্তমান কাল
কাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। আপনি অতীতের কোনো চাকরির বর্ণনায় বর্তমান কাল ব্যবহার করতে পারবেন না।

১৩. অদ্ভুত ইমেইল ঠিকানা
আপনার ইমেইল ঠিকানাটি যেন পেশাদার ভাব বহন করে সেজন্য সতর্ক হোন। এগুলো যেন অদ্ভুত নামের না হয়।

১৪. অপ্রয়োজনীয় শব্দ
যে কোনো অপ্রয়োজনীয় শব্দই আপনার সিভিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এগুলো বাদ দিন।

১৫. অফিসের ফোন
আপনি বর্তমানে যে চাকরিতে রয়েছেন সেখানকার ফোন নাম্বার না দিয়ে বরং ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার দিন।

১৬. হেডার, ফুটার, টেবিল, ইমেজ ও চার্ট
সিভিতে বর্ণনা করা উচিত ভাষার মাধ্যমে। এতে হেডার, ফুটার, টেবিল, ইমেজ ও চার্ট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। অবশ্য আপনার খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় থাকলে ভিন্ন কথা।

১৭. আপনার বসের নাম
কর্মক্ষেত্রে আপনার বসের নাম সিভিতে দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

১৮. প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নাম
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গোপনীয়তার স্বার্থে নানা ধরনের গোপন নাম ও শব্দ ব্যবহার করে। এসব অন্য কোথাও দেওয়া উচিত নয়।

১৯. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিংক
আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিংক সিভিতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এটি যদি পেশাদার কোনো বিষয় হয় তাহলে ভিন্ন বিষয়।

২০. অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা
ধরুন কোনো একটি ক্ষেত্রে আপনার ১৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এ অভিজ্ঞতা তাদের যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে সিভিতে লিখলে বিপদে পড়বেন। এক্ষেত্রে বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই সতর্কভাবে অভিজ্ঞতার কথা লিখতে হবে। যেমন যদি তাদের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় তাহলে লিখুন ৫+ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এ ক্ষেত্রে।

২১. বেতনের তথ্য
আপনি কত বেতন পাচ্ছেন কিংবা কত চান এ বিষয়টি সরাসরি আলাপ করাই ভালো।

২২. পুরনো ফন্ট
অতীতে যে ফন্টগুলো জনপ্রিয় ছিল এগুলো এখন ব্যবহৃত হয় না। তাই মানসম্মত ফন্ট ব্যবহার করুন।

২৩. অতিরিক্ত নকশা করা ফন্ট
কিছু ফন্ট রয়েছে অতিরিক্ত নকশা করা। এগুলো বাদ দিন।

২৪. বিরক্তিকর শব্দ
কিছু শব্দ রয়েছে যা বিরক্তিকর হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের শব্দ বাদ দিন।

২৫. যে কারণে আপনি চাকরি চান
চাকরি চাওয়ার কারণ যাই হোক না কেন, এ বিষয়টি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।

২৬. মতামত
সিভিতে আপনার কোনো বিষয়ে মতামত প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নেই। এখানে শুধু অবস্থা বর্ণনা করতে পারবেন।

২৭. ছোট অভিজ্ঞতা
যে অভিজ্ঞতা আপনার অল্প সময়ের জন্য এসব তুলে না ধরাই ভালো। এক্ষেত্রে সাধারণত ছয় মাসের কম সময়ের চাকরির অভিজ্ঞতা কোনো কাজে লাগে না।

No comments:

Post a Comment