শিশুর ডায়‌রিয়া হ‌লে করণীয় কি কি?

শিশুরা অবুঝ; তাই শিশুদের প্র‌তি প্র‌য়োজন হয় বাড়‌তি যত্ন, আর অসুখ বিসু‌খে নি‌বিড় প‌রিচর্যা ও সম‌য়োপযোগী পদ‌ক্ষেপ। বি‌ভিন্ন কার‌ণে শিশু‌দের রোগ বালাই হ‌য়ে থা‌কে। যার ম‌ধ্যে অন্যতম হ‌লো ডায়‌রিয়া।
ডায়রিয়া খুব প্রচলিত রোগ হলেও সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকিও হতে পারে। শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে মায়ের বুকের দুধ খুব জরুরি। বড়দের তুলনায় শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক সময় অভিভাবকরা বুঝতে পারে না যে কোনটি ডায়রিয়া, আর কোনটি ডিসেনট্রি !

ডায়রিয়া হলে অনেক সময় এ থেকে পানিশূন্যতা হতে পারে। পানিশূন্যতা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নি‌তে হ‌বে। শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে মা-বাবারও করণীয় আ‌ছে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে মা-বাবারা স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানোতে সতর্ক হ‌তে হ‌বে।
বি‌শেষ কিছু কার‌ণে বড়দের তুলনায় শিশুদের বেশি ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে বড়দের তুলনায় শিশুরা বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। তবে এর মধ্যেও কিছু শিশু বেশি ঝুঁকিপ্রবণ হয়। শিশুর ডায়রিয়া খুব মারাত্মক অবস্থায় চলে গেলে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। 


এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে শিশুর ডায়‌রিয়া বিষয়ে কথা বলেছেন আর পি মেডিকেলের শিশু বিভাগের পরামর্শক ডা. কবির হোসেন। নি‌চে হুবহু তা তু‌লে ধরা হ‌লোঃ

ডায়রিয়ার সময় পানিশূন্যতা হলে লক্ষণ কী?

প্রশ্ন : ডায়রিয়ার সময় পানিশূন্যতা হলে লক্ষণ কী?
উত্তর : বাচ্চার প্রস্রাবটা খেয়াল করতে হবে। ১২ বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার প্রস্রাবটা হচ্ছে কি না। এ ছাড়া তো মা-বাবা তেমন কিছু বুঝবেন না। তবে মা-বাবা সেটাই খেয়াল করবে যে বাচ্চা প্রস্রাব ঠিকমতো করছে কি না। সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

শিশুর ডায়রিয়া প্রতিরোধে কী করবেন?

প্রশ্ন : শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় কী?
উত্তর : ঘরে প্রাথমিকভাবে মায়েদের একটু সচেতন হতে হবে। কারণ, বাচ্চাদের সেবাটা মূলত মা করেন। বাচ্চাদের খাবার তৈরির সময় মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে যে হাত ধুয়ে খাবার তৈরি করবেন। খাবার যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কখনোই গৃহপরিচারিকা বা যারা খাবার তৈরি করতে পারে না, তাদের দিয়ে খাবার তৈরি করবেন না। আর যদি তৈরি করাতে হয়, তাহলে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবাই যদি সচেতন হয়, তাহলে অনেকাংশেই ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাবে।

প্রশ্ন : ডায়রিয়া যেন জটিল অবস্থায় না যায়, সে বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : আসলে ডায়রিয়া যখন হয়, একটি জীবাণু তো শরীরে ঢোকে। বাচ্চারা যেসব খেলনা দিয়ে খেলে অথবা বাইরের খাবারগুলো খায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে। মা-বাবা সচেতন হলে অনেকাংশে বাচ্চাদের সুরক্ষা দিতে পারবেন।

শিশুর ডায়রিয়া হলে কী খাওয়াবেন?

প্রশ্ন : ডায়রিয়া হলে কি স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো যায়?
উত্তর : এটি একটি ভালো প্রশ্ন করছেন। ছয় মাস বা এক বছরের আগে যদি ডায়রিয়া হয়, ল্যাকটোজজাতীয় খাবার অনেক সময় ডায়রিয়া বাড়িয়ে দেয়। তাই খাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। অনেকে না জেনেই কিছু স্যালাইন দিতে যায়। না জেনেই কিছু ওষুধ খাইয়ে দেয়। এগুলো আসলে প্রয়োজন নেই। এগুলো ডায়রিয়াকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এগুলো থেকে আমাদের একটু সচেতন থাকতে হবে।

প্রশ্ন : নবজাতকের ক্ষেত্রে, যারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কী করতে হবে?
উত্তর : তাদের ক্ষেত্রে বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। অনেকে ভুল ধারণা দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করে যে মায়ের বুকে হয়তো সমস্যা হয়েছে, এ জন্য বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। গ্রামে এ রকম একটি কুসংস্কার আছে। বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই। এটি বন্ধ করা যাবে না। ডায়রিয়ার মূল বিষয় হলো, আপনাকে পানিশূন্যতা ঠিক করতে হবে। পানিশূন্যতা হচ্ছে কি না বোঝার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন।

শিশুদের ডায়রিয়া কেন বেশি হয়?

প্রশ্ন : বড়দের ডায়রিয়া ও শিশুদের ডায়রিয়া—দুটোর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর : বড়দের ডায়রিয়া অপ্রচলিত। তবে ছোটদের ডায়রিয়া সাধারণত প্রচলিত। বড়দের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের চেয়ে অনেক কম। আর শিশুরা না বুঝেও অনেক জিনিস মুখে দিয়ে দেয়। এ জন্য শিশুদের পেটের সমস্যা বড়দের তুলনায় বেশি।

প্রশ্ন : আপনাদের কাছে যখন শিশুদের মা-বাবা এ সমস্যা নিয়ে আসছেন, তাঁদের প্রধান অভিযোগটি কী থাকে?
উত্তর : প্রথম বলে, আমার বাচ্চা পায়খানা অনবরত করছে। পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। তিন দিন বা পাঁচ দিন শুধু পানি বা মলই যাচ্ছে। পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। তার সঙ্গে অনেক বাচ্চা বমি নিয়ে আসে, জ্বর নিয়েও আসতে পারে।
আমাদের কাছে সাধারণত প্রথম দিনই চলে আসে। যখন একটি শিশুর ডায়রিয়া শুরু হয়, তখন মা-বাবাসহ আশপাশের লোকজন খুব আতঙ্কিত হয়ে যায়। আমরা সবাই জানি, ডায়রিয়া ও বমি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে এবং খুব দ্রুত নিস্তেজ করে ফেলে। এ জন্য মা-বাবা খুব উদ্বিগ্ন থাকে। তাঁরা খুব দ্রুত শিশুকে নিয়ে আসেন। ডায়রিয়ায় সাধারণত প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই আমরা রোগী বেশি পাই।

প্রশ্ন : প্রাথমিকভাবে কী পরামর্শ থাকে?
উত্তর : আমি মনে করি, প্রাথমিকভাবে মা-বাবাকে নিশ্চিন্ত করাই প্রথম কাজ। কারণ, সব হাসপাতালে এটা পরীক্ষা করার উপায় নেই যে ডায়রিয়াটি ভাইরাসজনিত কারণে হয়েছে, নাকি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রং, ইতিহাস, গন্ধ—এগুলো দেখেই আমাদের ধারণা করতে হবে বাচ্চার কী ধরনের ডায়রিয়া।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণত বলা হয়, স্যালাইনই খাওয়াবেন এবং একটু অপেক্ষা করবেন। পাতলা পায়খানার সঙ্গে যদি বমি থাকে এর জন্য কিছু ওষুধ দেব।

প্রশ্ন : পরীক্ষা করার দরকার পরে কখন?
উত্তর : ডায়রিয়া সাত দিন থাকলে সাধারণত এটি স্বল্পমেয়াদি ডায়রিয়া। সাত দিনের বেশি যদি হয় তাকে আমরা বলি দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া। ক্রনিক ডায়রিয়া হলে আমরা সাধারণত পায়খানা পরীক্ষা করি। স্বল্পমেয়াদি ডায়রিয়ায় সাধারণত পায়খানা পরীক্ষা করি না। সাধারণত ১০ বা ১৪ দিনের বেশি হলে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।

#‌শিশু #ডায়‌রিয়া #বাচ্চা #করণীয় #চিকিৎসা

No comments:

Post a Comment