আধুনিক যুগে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া একটি আউটপুট
ডিভাইসের নাম প্রিন্টার৷ কোনো টেক্সট, ডকুমেন্ট বা যে কোনো ছবির হার্ডকপি সংরক্ষণ করার জন্য
প্রিন্টারের অবদান অপরিসীম৷ বাজারে অনেক রকমের প্রিন্টার পাওয়া যায়, তার
মধ্যে লেজার প্রিন্টার, ইঙ্কজেট প্রিন্টার, ডটমেট্রিক্স, বাবলজেট, সলিড ইঙ্ক, টোনার বেইজড প্রিন্টার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রিন্টার হল একটি পেরিফেরাল যন্ত্র। যা মানুষের বোধগম্য গ্রাফ, ছবি, শব্দ, লেখা কাগজে ছাপায়। সবচেয়ে সাধারণ প্রিন্টার দুটি হল সাদা-কালো এবং রঙিন।
দ্রুত ও উন্নতমানের টেক্সট ডকুমেন্ট প্রিন্টিংয়ের জন্য লেজার প্রিন্টারই সেরা। তবে এর দাম অনেক বেশি বলে অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লেজার প্রিন্টার অধিক ব্যবহৃত হয়।
ক্ষুদ্রব্যবসা ও বাসায়
ব্যবহারের জন্য ইঙ্কজেট প্রিন্টার অধিক জনপ্রিয়। লেজার প্রিন্টারের চেয়ে
অনেক কম মূল্যে পাওয়া যায় বলেই এর জনপ্রিয়তাও বেশি। ইঙ্কজেট প্রিন্টারের কার্ট্রিজের দাম বেশি হলেও
হাজার খানেক টাকা বাড়তি খরচ করে CISS (Continuous Ink Supply System) বা ড্রাম সিস্টেম করে নেওয়া যায়। এতে প্রতি পৃষ্ঠার প্রিন্টিং খরচ ১৫-২০ পয়সায় কমে আসে।
যদি রঙিন প্রিন্টের পরিকল্পনা না থাকে তবে সাদাকালো ইঙ্কজেট প্রিন্টার নিতে
পারেন। আর টেক্সট ও ছবি প্রিন্টের পাশাপাশি ডকুমেন্ট স্ক্যান, কপি, ফ্যাক্স
ইত্যাদি সুবিধা চাইলে নিতে হবে মাল্টি ফাংশনাল ইঙ্কজেট প্রিন্টার।
প্রিন্টার কিনুন জেনে বুঝে!
কাজের প্রয়োজনে প্রিন্টার এখন কমবেশি সবারই প্রয়োজন। প্রিন্টার বলতে
সাধারণভাবে আমরা বুঝি ডকুমেন্ট প্রিন্টার যার মাধ্যমে টেক্সট, ইমেজ কিংবা
গ্রাফিক্সের প্রিন্ট করা হয়। জরুরী এই ডিভাইস অফিস-আদালত শিক্ষা ও
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে এখন ব্যক্তিজীবনেও বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তাই প্রযুক্তি বাজারে প্রিন্টারের চাহিদাও আজকাল কম নয়। কিন্তু অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা ঠিক কোন ধরণের প্রিন্টার নেবেন সেটা বুঝে উঠতে পারেন
না। আবার কালির রিফিল বিবেচনায় কোনটি গ্রাহকের জন্য সুবিধানজক হবে, সেটি না
জানার ফলে দোকানদারের পরামর্শই তাদের শেষ ভরসা!অন্যদিকে প্রিন্টার
সম্পর্কে ক্রেতার পরিষ্কার ধারণা না থাকার কারনে বেশিরভাগ সময়ই কাজের
উপযোগী মেশিনের পরিবর্তে দোকানদারের সুবিধামত প্রিন্টার গছিয়ে দেয়ার ঘটনা
ঘটে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই রায়ান্স নিউজের গ্রাহকদের জন্য প্রিন্টার সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য উপস্থাপন করার জন্যই এই প্রতিবেদন-
কারিগরি দিক বিবেচনায় প্রিন্টারের রকমফের
সিঙ্গেল ফাংশন প্রিন্টার: এ ধরণের প্রিন্টারে শুধু
প্রিন্ট এর কাজই হয়ে থাকে। কেবলমাত্র ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন থাকলে
সিঙ্গেল ফাংশন প্রিন্টার কেনা উচিত।
অল-ইন-ওয়ান প্রিন্টার: এ ধরণের প্রিন্টারে প্রিন্টের
পাশাপাশি স্ক্যান, ফটোকপি, ফ্যাক্সসহ বেশকিছু কাজ চলে। দামে কিছুটা বেশি
হলেও অন্যদিক থেকে অনেক কাজ ও খরচের হ্যাপা কমাবে অল-ইন-ওয়ান প্রিন্টার।
লেজার প্রিন্টার: এ ধরণের প্রিন্টার একসাথে প্রচুর
ডকুমেন্ট বিরতিহীনভাবে প্রিন্ট করতে পারে। তাছাড়া অন্যন্য প্রিন্টারের চেয়ে
এর প্রিন্টের গতিও অনেক বেশি।
ইঙ্কজেট প্রিন্টার: ভাল মানের রঙিন ছবি, গ্রাফিক্স ও
যেকোন রকমের ফিগার প্রিন্টের ক্ষেত্রে ইঙ্কজেট সেরা। এ ধরণের প্রিন্টার
নিখুঁত ইমেজ দেয়, তাই প্রিন্ট করতে অধিক সময় নেয়। ইঙ্কজেট প্রিন্টার অবশ্যই
বাসা-বাড়ি, শিক্ষার্থী বা সাধরণ কাজের জন্য নয়। কারণ এর ইঙ্ক কার্টিজ বেশ
ব্যয়বহুল!
কাজের ক্ষেত্র ও প্রয়োজনভেদে কোন ধরণের প্রিন্টার কারা কিনবেন
প্রিন্টার কেনার আগে প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে আসে, সেটি হলো- ঠিক কী
কাজের জন্য কিনবেন? আগেই বলা হয়েছে প্রিন্টার আজকাল অফিস আদালতে বাইরে
দোকানপাট এমনকি ঘরেও ব্যবহৃত হয়। তাই কাজ ও প্রয়োজনের বিবেচনায় কোন ধরণের
ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন ধরণের প্রিন্টার উপযোগী তা উল্লেখ করা হলো।
১. ঘরোয়া কাজের প্রয়োজনে
ঘরোয়া কাজের জন্য সাধারণত রঙিন ও সাদাকালো প্রিন্ট, কিছুক্ষেত্রে ছবির
মত অবজেক্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়। এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী ইঙ্কজেট ঘরানার
প্রিন্টার। দামে তুলনামূলক সস্তা, ব্যবহারে সহজ ও সহজে বহনযোগ্য বলে এই
ধরণের প্রিন্টার ঘরোয়া কাজের জন্য নির্বাচন করা উচিত।
২. অফিসিয়াল কাজের জন্য
অফিস-আদালতে সাধারণত বেশি সংখ্যক ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়। তাই
এ ধরণের কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী হল লেজার প্রিন্টার। এই ঘরানার
প্রিন্টার একটানা অনেক সংখ্যক ডকুমেন্ট অনায়াসে প্রিন্ট করতে সক্ষম। এছাড়া
মাল্টিফাংশন লেজার প্রিন্টারে প্রিন্টের পাশাপাশি ফটোকপি, স্ক্যান ও
ফ্যাক্স করারও সুযোগ রয়েছে। আর কালার লেজার প্রিন্টার রঙিন প্রিন্ট করা
যায়।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন
হয়, সেক্ষেত্রে সেখানেও লেজার প্রিন্টার উপযোগী। অনেক সময় বিভিন্ন কাজের
প্রয়োজনে রঙিন প্রিন্ট বা কপি করার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে কালার লেজার বা
মাল্টিফাংশন কিংবা অল-ইন-ওয়ান ঘরানার প্রিন্টার উপযোগী।
৪. শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিভিন্ন কাজ যেমন- নোটপত্র প্রিন্ট, অনলাইন
ডকুমেন্ট প্রিন্ট, অ্যাসাইনমেন্টে বা হোমওয়ার্কের জন্য টেক্সটের পাশাপাশি
গ্রাফ-চার্ট ইত্যাদি প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত
ঘরানার মাল্টি ফাংশন কিংবা কালার লেজার প্রিন্টার বেশি কাজের। অবশ্য অনেক
সময় মাল্টি ফাংশনও কাজে লাগে, সেক্ষেত্রে পার্সোনাল মাল্টিফাংশনাল
প্রিন্টার কেনা যেতে পারে।
৫. ক্রিয়েটিভ প্রিন্টিংয়ে কাজে
ক্রিয়েটিভ প্রিন্ট অর্থাৎ হাই রেজুলেশন ডিজাইন, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির
ক্ষেত্রে ইঙ্কজেট প্রিন্টার এর বিকল্প নেই। তবে প্রফেশনাল কাজের ক্ষেত্রে
সস্তা ইঙ্কজেট কখনওই কেনা উচিত নয়, এতে কালার কম্পোনেন্ট সঠিক মাত্রায় থাকে
না। হাই রেজুলেশন ইঙ্কজেট প্রিন্টারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ ইঙ্ক পট ইঙ্কজেট
প্রিন্টার ব্যবহার করা উচিত।
৬. ক্ষুদ্র ব্যবসার কাজে
ক্ষুদ্র ব্যবসায় অনেক ধরণের কাজে প্রিন্টের প্রয়োজন হতে পারে। যদি কেবল
এক ধরণের প্রিন্ট করার কাজ থাকে তবে, মনোক্রোম লেজার প্রিন্টার খরচ
সাশ্রয়ী। আর যদি প্রিন্টভিত্তিক ব্যবসা যেমন ফটোকপি ও ডকুমেন্ট প্রিন্টের
জন্য হয়ে থাকে, তবে মাল্টিফাংশনাল কিংবা অল-ইন-ওয়ান প্রিন্টারে একসাথে
সবধরণের কাজ হাসিল করতে পারবেন।
প্রিন্টার ও কালির মূল্য বিবেচনায়
প্রিন্টার ও কালির দাম বিবেচনায় অনেক গ্রাহক প্রিন্টার পছন্দ করে থাকেন।
তাদের কাজের ধরণ, গতি, পরিমাণ ও খরচ পোষানোর বিবেচনায় কোন প্রিন্টার
উপযোগী হবে তার ধারণা উল্লেখ করা হলো-
লেজার প্রিন্টার: লেজার প্রিন্টার সাধারণত কেবল
সাদাকালো প্রিন্ট করে থাকে। তবে কালার প্রিন্টের জন্য রঙিন লেজার
প্রিন্টারও রয়েছে। লেজার প্রিন্টার সাশ্রয়ী। কারন এর কালির টোনার সুলভে
পাওয়া যায় এবং খুব অল্প খরচে রিফিল করা যায়। বাংলাদেশের বাজারে ক্যানন,
এইচপি, স্যামসাং, ব্রাদার, প্যানটাম ইত্যাদি ব্র্যান্ডের লেজার প্রিন্টার ৭
হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।
ইঙ্কজেট: কালার ও হাই এন্ড ইমেজ প্রিন্ট করার জন্য
ইঙ্কজেট প্রিন্টার সবচেয়ে উপযোগী। এ ধরণের প্রিন্টার বেশ ধীর গতিতে কাজ
করে। বাজারে বিভিন্ন দামের ইঙ্কজেট প্রিন্টার রয়েছে। ব্র্যান্ড ও মডেল ভেদে
দেশের বাজারে ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দামের
পর্যন্ত প্রিন্টার পাওয়া যায়। ইঙ্কজেট প্রিন্টারের কার্টিজ ব্যয়বহুল, তাই এ
ধরণের প্রিন্টারের খরচ অনেক বেশি।
প্রিন্টারের বর্তমান মূল্য তালিকা। (রায়ান্স কম্পিউটার)
প্রিন্টার কেনার খুঁটিনাটি
ডিজাইনের দিক থেকে প্রিন্টার খুব একটা পরিবর্তন না হলেও প্রযুক্তিগত দিক
দিয়ে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। মোবাইল প্রিন্টিং অপশন, ওয়ারলেস সংযোগ, এনএফসি
ইত্যাদি প্রযুক্তি বর্তমানে প্রিন্টারগুলোকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে
তুলেছে। প্রিন্টার কেনার আগে নির্ধারণ করুন প্রিন্টারটি কেনার উদ্দেশ্য কি
এবং এটি কে ব্যবহার করবে। তাছাড়া বাজেটের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে
যাতে করে আপনি সবচেয়ে ভালো মডেলের প্রিন্টারটি ক্রয় করতে পারেন।
কার কোন ধরনের প্রিন্টার প্রয়োজন?সাধারণত প্রিন্টার ব্যবহারকারীর ৩টি শ্রেণী রয়েছে-
হোম ইউজার- হোম ইউজারদের মধ্যে আছে ব্যক্তি, পরিবার বা
শিক্ষার্থী। যদিও তারা পরিমাণে খুব বেশি প্রিন্ট করবেনা কিন্তু তাদের
হোমওয়ার্ক এসাইন্মেন্ট থেকে শুরু করে ফটো বা আর্ট প্রজেক্ট যেকোনো কিছু
প্রিন্ট করার সম্ভাবনা আছে। তাদের জন্য মূলত স্বল্পমূল্যে একটি বহুমুখী
ইঙ্কজেট প্রিন্টার প্রয়োজন।
অফিস ইউজার- হোম অফিস বা ছোট অফিস ইউজার স্বল্প
পরিমাণে প্রিন্ট করতে পারে বা বেশিও প্রিন্ট করতে পারে। কিন্তু তাদের
উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রফেশনাল কোয়ালিটি আউটপুট পাওয়া। এদের অনেকের লেজার
প্রিন্টারের প্রয়োজন পরে আবার অনেকে সমমূল্যের কালার ইঙ্কজেট প্রিন্টার
ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত ভালো আউটপুট পান।
ছোট ওয়ার্কগ্রুপ- ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত ছোট
ওয়ার্কগ্রুপের জন্য প্রয়োজন ওয়ার্কহর্স প্রিন্টার যা বৃহত্তর চাহিদা মেটাতে
সক্ষম। এইচপি অফিসজেট প্রো ৫৭৬ডিডব্লিউ এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এছাড়া
লেজার প্রিন্টারগুলোও এই চাহিদা মেটাতে পারে।
প্রিন্টারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচারঃ
ইঙ্কজেট ভার্সেস লেজার- অফিসে ব্যবহারের জন্য লেজার
প্রিন্টার খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বর্তমানের ইঙ্কজেট প্রিন্টারগুলো
পূর্ববর্তী মডেলগুলো থেকে অনেক কর্মক্ষম এবং অফিস ও হোম ইউজারদের জন্য
উন্নত মডেলের ইঙ্কজেট প্রিন্টার রয়েছে। আপনি যদি ভালো পারফর্মেন্স পেতে চান
তাহলে স্বল্পমূল্যের লেজার প্রিন্টার কেনার চেয়ে আধুনিক ইঙ্কজেট প্রিন্টার
কিনুন। তাছাড়া একই মূল্যে অপেক্ষাকৃত ভালো, দ্রুততর এবং বিভিন্ন
ফিচারসম্পন্ন ইঙ্কজেট প্রিন্টার বাজারে পাওয়া যায়।
মাল্টি-ফাংশন মডেল- শুধু প্রিন্ট করে এমন প্রিন্টার
বর্তমানে নেই বল্লেই চলে। স্ক্যানার সংবলিত প্রিন্টার কিনলে ডকুমেন্ট কপি
বা ডিজিটাল ডকুমেন্ট তইরি করা অনেক সহজ হয়। বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আপনি
মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার ক্রয় করতে পারেন।
কানেক্টিভিটি- সব ধরনের প্রিন্টারই ইউএসবি/ ইথারনেট
পোর্টের সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। সাধারণত অফিসে
ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত মডেলগুলো ইথারনেটের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে।
প্রিন্টারের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াই-ফাই এর বিকল্প নেই।
ওয়াই-ফাই আপনাকে সহজেই প্রিন্টার ব্যবহার করতে এবং মোবাইলের সাথে সংযোগ
স্থাপন করতে সাহায্য করবে। ওয়াই-ফাই ছাড়া প্রিন্টার কেনার পূর্বে ভালোভাবে
চিন্তা করে নিন।
মোবাইল প্রিন্টিং- এমনকি সবচেয়ে কর্পোরেট-ফোকাসড্
প্রিন্টারগুলোও মোবাইল ডিভাইসের চাহিদাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি এবং মোবাইলের
মাধ্যমে প্রিন্ট করার কোনও না কোনও ব্যবস্থা রেখেছে। সরাসরি প্রিন্টিং এর
জন্য এমন অ্যাপ খুজুন যা অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং অন্যান্য মোবাইল
ডিভাইসের সাথে কাজ করে বা ইমেইলের মাধ্যমে(এইচপির ইপ্রিন্ট ও গুগোলের
ক্লাউড প্রিন্ট) বা থার্ড-পার্টি টেকনোলজির মাধ্যমে(অ্যাপেলের এয়ারপ্রিন্ট)
প্রিন্ট করতে পারে। এনএফসি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল ডিভাইসটি
প্রিন্টারের সাথে পেয়ার করতে পারবেন এবং ওয়াই-ফাই ও অ্যাপ ব্যবহারের
মাধ্যমে প্রিন্ট করার নির্দেশ দিতে পারবেন।
পেপার হ্যান্ডলিং- আপনার দৈনিক যতগুলো পেজ প্রিন্ট
করতে হয়, তার চেয়ে বেশি পেজ ধারন করতে পারে এবং প্রিন্টার বাছাই করুন। একটি
পার্সোনাল প্রিন্টার সাধারণত একটি সিঙ্গেল ট্রেতে ১০০ থেকে ১৫০টি পেজ ধারন
করতে পারে। কিছু কিছু প্রিন্টারে ডেডিকেটেড ফটো ট্রে আছে যা পেপার
সোয়াপিং কমিয়ে আনে। একটি বিজনেস প্রিন্টার সর্বনিম্ন ২৫০ পেজ ধারন করতে
পারে এবং উন্নত মডেলের প্রিন্টারগুলো সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ পেজ ধারন করতে
পারে। অফিসে ব্যবহারের জন্য মাল্টিপল পেপার ট্রে ওয়ালা প্রিন্টার শ্রেয়।
ডুপ্লেক্সিং- টু-সাইডেড প্রিন্টিং বা ডুপ্লেক্সিং
আপনার পেপার খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনতে পারে। কিছু কিছু প্রিন্টারে ম্যানুয়াল
ডুপ্লেক্সিং আছে। ম্যানুয়াল ডুপ্লেক্সিং আপনাকে বলে দেয় কিভাবে পেপারটি
রোটেট ও রিলোড করতে হবে।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফিচারঃ
ডিসপ্লে- অনেক পার্সোনাল প্রিন্টার ও কিছু কিছু বিজনেস
প্রিন্টারে ফ্রন্ট কনট্রোল প্যানেলে ছোট ডিসপ্লে আছে যা আপনাকে মেন্যু
সিলেক্ট করতে বা প্রিন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। যদিও
টিপিক্যাল ডিসপ্লেতে এক বা দুই লাইনের ক্যারেক্টার ভিত্তিক মেসেজ থাকে,
উন্নত মানের ও ফটো ওরিয়েন্টেড প্রিন্টারগুলোতে ফুল কালার এলসিডি থাকে। কিছু
কিছু মডেলে টাচ ক্যাপাবিলিটিও থাকে। মূলত যেকোনো ডিসপ্লেই ব্যবহারের
উপযোগী।
মিডিয়া কার্ড স্লট এবং ইউএসবি / পিকট্ব্রিজ পোর্ট-
আপনি যদি ইঙ্কজেট প্রিন্টারে ফটো প্রিন্ট করতে চান তাহলে এমন প্রিন্টার
বাছাই করা শ্রেয় যাতে ইন্টিগ্রেটেড মিডিয়া স্লট বা পিকট্ব্রিজ আছে। অবশ্য
এই পোর্টগুলো যদি আপনার কম্পিউটারে ইতিমধ্যে থেকে থাকে তাহলে নতুন করে
এগুলোর প্রয়োজন নেই। যদিও ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে সরাসরি কি ড্রাইভ থেকে
ডকুমেন্ট প্রিন্ট করা যায় কিন্তু এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে।
বাজেট অনুযায়ী প্রিন্টার ক্রয় করুনঃ
৩,০০০ থেকে ৬,৫০০ টাকা- এই মূল্যে আপনি সিঙ্গেল ফাংশন
ইঙ্কজেট প্রিন্টার পাবেন। কিন্তু এই মূল্যের মডেলগুলো অনেক স্লো হবে ও
ফিচার থাকবেনা বল্লেই চলে। এর কালি ব্যয়বহুল হবে। তাছাড়া এগুলোতে সবুজে
নীল, ম্যাজেন্টা এবং হলুদের সমন্বয়ে ট্রাইকালার কার্তুজ আছে যাতে একটি
কালার শেষ হয়ে গেলে পুরো কার্তুজ পরিবর্তন করতে হয়।
৬,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা- এই মূল্যে আপনি সিঙ্গেল ফাংশন
ইঙ্কজেট প্রিন্টার বা স্বল্পোন্নত ইঙ্কজেট মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার বা
ব্যাসিক মোনোক্রম লেজার প্রিন্টার ক্রয় করতে পারবেন। সিঙ্গেল
ব্যবহারকারীদের জন্য এই মূল্যের প্রিন্টারগুলো পরিমিত গতি ও পেপার
হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দিয়ে থাকে। কিন্তু এগুলোর কনট্রোল প্যানেল মধ্যম মানের
হয়ে থাকে। কালি বা টোনার ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। কিছু কিছু মডেলে পৃথক কালার
কার্তুজ থাকে কিন্তু বেশিরভাগ মডেলেই ট্রাইকালার কার্তুজ থাকে।
১২,০০০ টাকা- এই মূল্যে আপনি অটো ডুপ্লেক্সিং ও উন্নত
ইঙ্ক অপশনের মডেলগুলো পাবেন। তাছাড়া এই মূল্যে ব্যাসিক মোনোক্রম প্রিন্টার
পাওয়া গেলেও তা পূর্ববর্তী মডেলগুলোর তুলনায় কার্যকরী। এই রেঞ্জের
প্রিন্টারগুলোতে যথেষ্ট গতি আছে। বেশিরভাগ মডেলে ওয়াই-ফাই থাকার সম্ভাবনা
আছে।
২০,০০০ টাকা- এই রেঞ্জে আপনি দ্রুত গতি ও পেপার
হ্যান্ডলিং ক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্টার পাবেন। তাছাড়া অধিকতর নেটওয়ার্কিং
ফিচার ও অপেক্ষাকৃত ভালো কনট্রোল প্যানেল পাওয়া যাবে। ফিচারগুলোর মধ্যে
রয়েছে টাচস্ক্রীন, কালার ডিসপ্লে, ওয়াইড-ফরম্যাট ক্যাপাবিলিটি। এই রেঞ্জের
মোনোক্রম লেজার প্রিন্টারে ২৫০ পেজ ইনপুট ট্রে থাকতে পারে। কিন্তু এটি
অপেক্ষাকৃত স্লো হতে পারে।
৩২,০০০ টাকা- এই মূল্যে প্রিমিয়াম লেভেলের ফিচার পাওয়া
যাবে যেমন নেটওয়ার্কিং, বড় কালার এলসিডি, ওয়েব কানেক্টিভিটি। স্পীড ও
প্রিন্ট কুয়ালিটি ভালো হবে এবং ইঙ্ক খরচও কমে আসবে। লেজার মডেলগুলোর মধ্যে
আপনি পেতে পারেন দ্রুততর এবং নেটওয়ার্কেবল মোনোক্রম প্রিন্টার বা
বেয়ার-বোন্স কালার প্রিন্টার। কিন্তু টোনার খরচ বেশি হবে।
৪০,০০০ টাকা- এই মূল্যের লেজার প্রিন্টারগুলো
অপেক্ষাকৃত ভালো। আপনি ২৫০ পেজ ইনপুট ট্রে, নেটওয়ার্কাবিলিটি এবং ভালো
গতিসম্পন্ন প্রিন্টার পাবেন। টোনার খরচ এখানেও বেশি পরবে।
৫৫,০০০ থেকে ৬৫,০০০ টাকা- এই মূল্যের প্রিন্টারগুলো
মূলত ওয়ার্কগ্রুপের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফিচারগুলোর মধ্যে পাবেন মাক্সিমাম
র্যাম, স্ট্যান্ডার্ড ও অপটিক্যাল পেপার ট্রে, মাসিক ডিউটি সাইকেল
ইত্যাদি। টোনার খরচ কম হবে।
৮০,০০০ টাকা বা তার বেশি- আপনি যদি ৮০,০০০ এর চেয়ে
বেশি টাকা খরচ করতে পারেন তাহলে সবচেয়ে উন্নতমানের প্রিন্টার পাবেন। হাইয়ার
ক্যাপাসিটি কার্তুজের কারনে এক্ষেত্রে টোনার খরচ অনেক কম হবে। যদি আপনি
এমন কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান যেখানে প্রচুর প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়,
শুধুমাত্র তখনই এই মূল্যের প্রিন্টার কিনার কথা ভাবতে পারেন।
প্রিন্টারের বর্তমান মূল্য তালিকা। (বিডিস্টল)
বিশেষ সতর্কতা:
১। সকল প্রিন্টারে CISS/ড্রাম যুক্ত করা যায় না। তাই আগেই সিদ্ধান্ত নিন এবং বুঝেশুনে কিনুন।
২। ইঙ্কজেট প্রিন্টারকে প্রতিদিন অন্তত এক
পৃষ্ঠা সাদাকালো এবং প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক পৃষ্ঠা রঙিন প্রিন্ট করুন।
৩। প্রিন্টার ও ড্রাম একই সমতলে রাখুন। ড্রাম, প্রিন্টার হতে উঁচুতে রাখলে কালির অতিরিক্ত চাপে কার্ট্রিজ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
#প্রিন্টার । #লেজার প্রিন্টার । #ইঙ্কজেট প্রিন্টার । #দাম । #Printer । #Canon । #Epson । #HP । #Brother । #প্রিন্টারের দাম । #কালার প্রিন্টার ।
No comments:
Post a Comment