ইমপিচমেন্ট কী, কেন ও কিভাবে করা হয়? Impeachment

এখন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পকে অপসারণ করা হবে কিনা সেক্ষেত্রে আগামী জানুয়াতি সিনেটে ভোট হবে। তবে সিনেটে যেহেতু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত তাই সেখানে এটি পাস হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলে খবরে বলা হয়।

বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কি তাকে সংসদীয় বিচারের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া বা ইমপিচ করা হতে পারে?


যা থাকছে...ইমপিচমেন্ট (অভিশংসন) করা হলো ট্রাম্পকেঅভিশংসন বা ইমপিচমেন্ট বলতে কি বুঝায়?অভিশংসন কী, কেন ও কিভাবে করা হয়?অভিশংসন কি?যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অভিশংসন কী?অভিশংসন কীভাবে করা হয়?ইতিহাস

ইমপিচমেন্ট (অভিশংসন) করা হলো ট্রাম্পকে
বিশ্বের অন্যতম আলোচ্য বিষয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইমপিচ করতে যে পরিমাণ ভোট প্রয়োজন, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে প্রথম দুই অভিযোগের ভোট গণনায় ওই পরিমাণ ভোট পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের চেয়ারের অনুমোদন দেয়ার পর।

তার বিরুদ্ধে দু'টি অভিযোগের ক্ষেত্রেই অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পড়েছে প্রতিনিধি পরিষদে। প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে ২৩০ ভোট পড়েছে অভিশংসনের পক্ষে এবং ১৯৭ ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ২১৬ ভোটের বেশি সংখ্যক ভোট পড়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্প হলেন অভিশংসিত হওয়া তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এখন উচ্চকক্ষ সিনেটে ট্রাম্পের বিচার হবে। মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেটে যদি একইভাবে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট পড়ে তাহলে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নিতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দু'জন সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী তার বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ এনেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুটি হলো, তিনি তার পদ ব্যবহার করে তার ডেমোক্র্যাট রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছিলেন, এবং দ্বিতীয়টি হলো অভিশংসনের তদন্তকাজে সহায়তা করতে অস্বীকার করে তিনি কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন।

অভিশংসন বা ইমপিচমেন্ট বলতে কি বুঝায়?

ইমপিচমেন্ট (Impeachment) শব্দের বাংলা অর্থ হলো অভিশংসন। "অভিশংসন" বিশেষ্য পদ এর আবিধানিক অর্থ প্রকাশ্যে অভিযুক্ত করণ। ইংরেজি impeachment হলো noun। পার্লামেন্টে বা বিশেষ ট্র্যাইবুনালে বাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা, অক্ষমতা কিংবা জনস্বার্থ বিরোধী অন্য কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত করে অপসারণ করাকে বলা হয় ইমপিচমেন্ট ।

অভিশংসন কী, কেন ও কিভাবে করা হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে পড়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট। এরপর এই প্রস্তাবে ভোট হবে মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানে যদি একইভাবে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট পড়ে তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদায়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষকে নিয়ে এমন প্রক্রিয়া কিভাবে হয়। এই অভিশংসন প্রক্রিয়া কী?

অভিশংসন কি?
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঘটনা বিরল। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। 
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যেখানে আইন তৈরি করা হয়, তারা দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ তাকে অভিশংসন করা যেতে পারে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে: ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ নেওয়া অথবা অন্য কোন বড় ধরনের কিম্বা লঘু অপরাধ।’

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অভিশংসন কী?
ইতিহাসের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঘটনা বিরল। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ তাকে ইমপিচ করা যেতে পারে।

১৮ ডিসেম্বর সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে এ অভিশংসন প্রস্তাব পাস হলেও চূড়ান্ত অভিশংসনের জন্য দেশটির উচ্চকক্ষ সিনেটে প্রস্তাব উঠবে। সেখানে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে অভিশংসিত হলে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে হবে ট্রাম্পকে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দেশটির আইন তৈরি করা হয়। আইনপ্রণেতারাই দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে: "রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ নেওয়া অথবা অন্য কোন বড় ধরনের কিম্বা লঘু অপরাধ।"

অভিশংসন কীভাবে করা হয়?
অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস থেকে। এটি মার্কিন কংগ্রেসের একটি অংশ। এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে এটি সেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হতে হবে।
আর সেটা পাস হলে পরের ধাপে বিচার অনুষ্ঠিত হবে সিনেটে, যেটা কংগ্রেসের দ্বিতীয় অংশ।
এটা অনেকটা আদালত কক্ষের মতো, যেখানে সিনেটররা বিচারক বা জুরি হিসেবে কাজ করবেন। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট দোষী কি নির্দোষ।
প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে হলে এই সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিতে হবে।

ইতিহাস
ট্রাম্পের আগে সর্বশেষ যে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তিনি বিল ক্লিনটন। ১৯৯৮ সালে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে ভোট পড়েছিল প্রতিনিধি পরিষদে।
এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬৮ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তবে ক্লিনটন কিংবা জনসন তাদের কাউকেই সিনেটে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।
অর্থাৎ অভিশংসন মানেই এটা নয় যে এর প্রক্রিয়া শুরু হলেই প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।
তবে একজন প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। তিনি রিচার্ড নিক্সন। ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডালে জর্জরিত হয়ে ১৯৭৪ সালে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। ধারণা করা হয়, প্রক্রিয়াটি শুরু হলে তাকে হয়তো প্রেসিডেন্টের পদ থেকে শেষ পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হতো।

ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। তবে কাউকেই সিনেট পদচ্যুত করেনি।
১৯৯৮ সালে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে ভোট পড়েছিল প্রতিনিধি পরিষদে।
এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬৮ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
সে হিসেবে বলা যায় ইমপিচমেন্টের অর্থ এটা নয় যে এর প্রক্রিয়া শুরু হলেই প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্টের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।



#অভিশংসন, #impeachment, #ইমপিচমেন্ট

No comments:

Post a Comment