চাকরি খুঁজে পাওয়ার কার্যকরী উপায়

বাংলাদেশে চাকরি খোঁজা এখন আর খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আপনি যদি এই মুহূর্তে চাকরির খোঁজে থেকে থাকেন, হোক সেটা আপনার প্রথম চাকরি অথবা আপনার ১০ নাম্বার চাকরি তবে আপনি সঠিক- জায়গায় এসেছেন। আপনি যদি কিছু টিপস অনুসরণ করেন তবে আপনি নিজেকে একজন সুদক্ষ চাকরি সন্ধানী রূপে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারেন।

বাংলাদেশে চাকরি খুঁজে পাওয়ার কিছু সহজ টিপস
বাড়ি থেকেই চাকরি খোঁজা শুরু করুন :
আপনার পরিবারের সদস্যদের কাছেই হয়ত চাকরির অনেক সম্ভাব্য চাকরিদাতার লিংক থাকতে পারে যা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই নেই। সুতরাং চাকরি খোঁজার সুবাদে প্রথম এবং সবচেয়ে সহজ জায়গাটি হল নিজের বাড়ি। আপনার বাবা-মা, ভাই-বোনদের, চাচা-মামা-খালু, চাচি-মামী-খালা ইত্যাদি আত্মীয়-স্বজনদের প্রশ্ন করুন যে তাদের এমন কোনো পরিচিত সূত্র আছে কিনা যেখান থেকে তারা আপনাকে চাকরির সন্ধান এনে দিতে পারে। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে সরাসরি চাকরি না চেয়ে আপনি তাদের কাছে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হল আপনার উপর আপনার আত্মীয়-স্বজনদের ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা যাতে করে তারা আপনাকে চাকরিদাতার কাছে রেফার করতে পারেন।
আপনার নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন :
আপনি যখন চাকরির সন্ধান করতে যাবেন তখন আপনার বন্ধু এবং সহকর্মীরাই আপনাকে অনেক সহায়তা করতে সক্ষম হবে। তারা যদি এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন যেখানে আপনিও কাজ করতে ইচ্ছুক তবে অবশ্যই তাদেরকে জানান এবং কোনো সুযোগ থাকলে আপনাকে রেফার করার কথা বলুন। এমনও যদি হয় যে তারা আপনাকে আপনার মন মত সাহায্য করতে পারছেন না তবে অন্তত সে প্রতিষ্ঠানে কোনো চাকরির সুযোগ রয়েছে কিনা তা সম্পর্কে জেনে নিন। চাকরি সন্ধান করার আরেকটি কার্যকারী উৎস হল অ্যালামনাই। এমনও যদি হয় যে আপনি আপনার স্কুল বা ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্রদের ব্যক্তিগতভাবে চিনেন না, তবুও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা মঙ্গলজনক। নিজেকে একই স্কুল বা ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিন এবং আপনি যে একই ধরণের মন-মানসিকতা ও মানসম্পন্ন বৈশিষ্ট্যের ধারক তা প্রকাশ করুন। আপনাদের মধ্যে যদি সর্বজনীন কিছু থেকে থাকে তবে তা আপনার চাকরি পাবার সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে।
ইন্টারনেটই আপনার সেরা বন্ধু :
বাংলাদেশে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি অন্যতম সেরা বিকল্প। বিগত কিছু বছর ধরে চাকরির বিজ্ঞাপন প্রদানের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট নির্মাণের নিরলস প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকের কাছে ফেইসবুক হচ্ছে চাকরির সন্ধান করার প্রথম কোনো ওয়েবসাইট। ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে অজস্র চাকরির সুযোগের সন্ধান রয়েছে, তবে সেগুলো জানতে আপনাকে সবসময় চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। এই গ্রুপগুলো ছাড়াও আপনি কিছু চাকরি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট, যেমন Bikroy-এ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে চাকরির সন্ধান পাবেন। এ ওয়েবসাইটগুলোর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সুবিধাও রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, খুব সহজেই চাকরির বিজ্ঞাপনগুলোতে নজর রাখতে পারবেন। আরেকটি উত্তম উপায় হচ্ছে একটি LinkedIn প্রোফাইল রাখা, কেননা এর মাধ্যমে আপনি সহজেই বেশ গোছানো ভঙ্গিমায় আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারবেন।
খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখুন :
আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশে খবরের কাগজ এখনও প্রাসঙ্গিক। প্রায় সব খবরের কাগজেই একটি পৃথক কলাম থাকে যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরির বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকে। যদিও প্রিন্ট মিডিয়াতে চাকরির বিজ্ঞাপন প্রদানের হার ক্রমাগত কমছে, তবুও এখন পর্যন্ত এই পুরনো পন্থা চাকরির সন্ধান করার জন্যে বেশ কার্যকর।
নিজেই নিজেকে চাকরি দিন অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করুন :
অনেক সময়ই আমরা হয়ত কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে থাকি এবং কখনও অফিসের গতানুগুতিক সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারি না। এমন অনেক উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি আছেন যারা অফিসের গতানুগুতিক সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারার দরুন ভাল মানের কাজ করতে পারছেন না। এ ধরণের ব্যক্তিরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এর অর্থ হল আপনি আপনার সুবিধামত একই সময়ে একাধিক ক্লায়েন্ট বা কোম্পানির হয়ে কাজ করতে পারবেন। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি নিজেই একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে ব্যবসায়ের অবকাঠামো অবশ্যই নির্ভর করবে ব্যবসা কি ধরণের হবে এবং কি পরিমাণ মূলধন নিয়ে সেটি শুরু করা যাবে তার উপর। যদিও ব্যবসাকরাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তবে এই ঝুঁকি নিয়ে সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হলে তা হবে লাভজনক। বহু স্থানীয় ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই পন্থাটি অত্যন্ত কঠিন হলেও বেশ ফলপ্রসূও বটে।

চাকরির সন্ধান করা শুনতে হয়ত অনেক সহজ একটি ব্যাপার মনে হতে পারে কিন্তু চাকরির বাজার যদি মন্দা থাকে তবে সেক্ষেত্রে এটি প্রকৃত অর্থেই বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। তবে আপনি অবশ্যই নিরাশ হবেন না এবং সবসময় চেষ্টা করতে থাকবেন। আপনি যদি চাকরি পেতে সক্ষম না হয়ে থাকেন তবে ভলান্টিয়ার বা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করুন, এতে করে আপনি একাধারে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন এবং কানেকশন বৃদ্ধি করতে পারবেন যা আপনাকে একসময় প্রকৃত চাকরির সুযোগ এনে দেবে।

আপনাকে ওয়েবসাইটের ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। আপনার যদি কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হয় তবে সেগুলো এড়িয়ে চলুন। আশা করা যায়, এই টিপসগুলো যদি আপনি মেনে চলেন তবে আপনার চাকরি খোঁজার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment