পাখ-পাখালি পছন্দ করে
না এমন লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। কারণ এরা দেখতে সুন্দর, অত্যন্ত নিরীহ ও বৈচিত্র্যময়।
এসব কারণে পোষা পাখির বাজার বেশ বিস্তৃত ও চাহিদা সম্পন্ন। খাঁচার পাখির মধ্যে ঘুঘু
অন্যতম। সহজে ও অল্প জায়গায় পালন করা যায় বলে এর চাহিদাও ব্যাপক। তাই সখের পাশাপাশি
আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ঘুঘু পাখি পালন অত্যন্ত লাভজনক।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র মতে, পৃথিবীতে ৩৬টি ঘুঘুর প্রজাতি রয়েছে । এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৬টি প্রজাতি। আফ্রিকা, ইউরোপ, ভারতীয় উপমহাদেশে এসব পাখির দেখা মেলে বেশি। এসব ঘুঘু সাধারণত ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে। অনেক ক্ষেত্রে ২১ বছর পর্যন্তও বাঁচতে পারে। তবে
খাঁচার ঘুঘুর আয়ুষ্কাল সবসময় বেশি হয়ে থাকে।
গোলাম মোদাচ্ছেরের
ঘুঘুর খামারঃ
রাজশাহীর
পবা উপজেলার হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের ঘিপাড়া গ্রামের তরুণ
ঘুঘু প্রেমিক গোলাম মোদাচ্ছের, শখের
বশে কয়েকটি বিদেশি জাতের
ঘুঘু কিনে বাড়িতে লালন-পালন শুরু করেন। সেই
শুরু। এর
পর থেকে তাঁর সংরক্ষণে
ঘুঘুর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। একসময়
ঘুঘুর জন্য খামারই গড়ে
তুলতে হয় তাঁকে।
মাত্র দুই বছরের মাথায়
এখন তাঁর খামারে বিদেশি
ঘুঘুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০। এরই
মধ্যে তিনি অন্তত ৫৫
হাজার টাকার ঘুঘু বিক্রি
করেছেন। এভাবে
চলতে থাকলে কেবল ঘুঘু পালন
করেই প্রতি মাসে অন্তত
২৫-৩০ হাজার টাকা
আয় করতে পারবেন বলে
আশাবাদী এই শখের ঘুঘু
খামারি।
গোলাম মোদাচ্ছের
জানান, ঘুঘুর প্রতি তাঁর
ভালোবাসা শৈশব থেকেই। বাড়ির
আশপাশে ঘুঘুর ডাক শুনলে
বা ঘুঘু দেখলেই তিনি
সেগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা
করতেন। আবার কেউ যেন
শিকার করতে না পারে
সেদিকেও নজর রাখতেন। ঘুঘুর
প্রতি এই প্রেম থেকে
একসময় বাড়িতে এ জাতের
পাখি পালনের শখ জাগে।
তবে দেশি প্রজাতির ঘুঘু
খাঁচায় পালন করা দণ্ডনীয়
অপরাধ বলে তিনি সেদিকে
পা না বাড়িয়ে বিদেশি
জাতের ঘুঘু পালনের সিদ্ধান্ত
নেন।
প্রাথমিকভাবে
গোলাম মোদাচ্ছের ঢাকা থেকে বিদেশি
জাতের দুই জোড়া ঘুঘু
কিনে আনেন। এর মধ্যে
এক জোড়া ছিল গ্রে
ডায়মন্ড ডাভ বা ধূসর
বর্ণের ঘুঘু এবং অন্য
জোড়া সিলভার ডায়মন্ড। এই
ঘুঘু জোড়া অস্ট্রেলিয়ান জাতের।
এরপর থেকে তাঁর খামারে
ঘুঘুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বর্তমানে তাঁর খামারে বেশ
কিছু অস্ট্রেলিয়ান সাদা ঘুঘু রয়েছে।
সেখান থেকে ক্রস প্রজননের
মাধ্যমে বিভিন্ন রঙের ঘুঘু জন্ম
নিয়েছে তাঁর খামারে। আর
এসব ক্রস ঘুঘু দেখতেও
অনিন্দ্য সুন্দর।
গোলাম মোদাচ্ছের
বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর
উদ্দেশ্যে প্রথম দিকে এক
জোড়া দেশি ঘুঘুর সঙ্গে
অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘুর মিলন ঘটানো
হয়। এই সংকরায়নে ভালো
ফল পাওয়া যায়। গ্রে
ডায়মন্ড ও সিলভার ডায়মন্ড
ঘুঘুর ডিম ফুটে ১২
থেকে ১৪ দিনেই বাচ্চা
বের হয়। বড় হতে
সময় লাগে ২১ দিন।
এরপর আবার ওই ঘুঘু
দ্রুত ডিম পাড়ার উপযোগী
হয়ে ওঠে। এভাবে ঘুঘু
বছরে ১০ থেকে ১২
বার ডিম দেয় এবং
সমপরিমাণ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন
হয়।
এই পাখি খামারি জানান,
ডিম উৎপাদন উপযোগী এক
জোড়া গ্রে ডায়মন্ড ঘুঘুর
দাম দুই হাজার থেকে
সাড়ে তিন হাজার টাকা
পর্যন্ত হয়। আর এক
জোড়া সিলভার ডায়মন্ড ঘুঘুর
দাম হয় তিন হাজার
থেকে চার হাজার টাকা
পর্যন্ত। এ ছাড়া এক
হাজার থেকে এক হাজার
২০০ টাকার মধ্যে ১৫
দিন থেকে দুই মাস
বয়সের সিলভার ডায়মন্ড ঘুঘুর
বাচ্চা বিক্রি হয়। ছয়
মাস বয়স হলেই প্রতিটি
বাচ্চা ঘুঘু পরিপূর্ণতা লাভ
করে। ডিম পাড়ারও উপযোগী
হয়ে ওঠে।
ঘুঘুর খাবারঃ
ঘুঘু পালন করা সহজ
উল্লেখ করে মোদাচ্ছের জানান,
শস্যদানা হলো ঘুঘুর প্রধান
খাবার। এর মধ্যে ধান,
সরিষা, মসুর অন্যতম। তবে
প্রজননকালে ওদের ইটের উচ্ছিষ্ট
খাওয়াতে হয়। এছাড়াও ঘুঘু পাখি
গাছের কচিকুঁড়ি,
পিঁপড়া ও কীট-পতঙ্গও
খেয়ে থাকে।
ঘুঘুর রোগবালাইঃ
ঘুঘুর রোগবালাইও খুব কম হয়।
রোগের মধ্যে সাধারণত ঠাণ্ডা
লাগা রোগে এরা আক্রান্ত
বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা
প্রতিরোধক ট্যাবলেট বা সিরাপ পানিতে
মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। খাঁচায় বৈদ্যুতিক
বাতি জ্বালিয়ে রেখেও ঠাণ্ডার আক্রমণ
এড়ানো যায়।
আইনি বাধাঃ
দেশের পাখি আইনে দেশিয
ঘুঘু শিকার বা খাঁচায়
পালন করা আইনত দণ্ডনীয়
অপরাধ। তবে বিদেশি জাতের
ঘুঘু থাঁচায় পালন করতে
নিষেধ নেই। ঘুঘুর খামার করার
ক্ষেত্রে আইনি বাধা প্রসঙ্গে
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মীজানুর রহমান
বলেন, 'যেকোনো বন্য প্রাণী
খাঁচায় পালন করা দণ্ডনীয়
অপরাধ। কেউ যদি ঘুঘুর
খামার করতে চায়, তাহলে
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
অনুমতির প্রয়োজন আছে। অনুমতি নিয়ে
ঘুঘু পালন করা হলে
আমাদেরও কোনো আপত্তি থাকবে
না।'
No comments:
Post a Comment