রাসূল সা: নির্দেশিত ৫টি অব্যর্থ চিকিৎসা ও প্রতিষেধক

রাসূল সা: যেমন আমাদেরকে আখিরাতে মুক্তির পথ ও পদ্ধতি দেখিয়েছেন, তেমন বিভিন্ন রকম রোগবালাই ও অসুস্থতা থেকে নিরাপদ থাকার বহু পথ বাতলে দিয়েছেন। তিনি অনেক চিকিৎসার কথা আমাদের বলে গেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা: প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তিনি নিজে থেকে কিছুই বলেন না। যা বলেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহির ভিত্তিতেই বলে থাকেন।’ যার কারণে তিনি যত চিকিৎসার কথা বলেছেন, সেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা; সেটি প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ হোক।


আমাদের এ জীবনে যে কোনো অসুখ থেকে বাঁচার আপাত দৃষ্টিতে সব উপায় যদি বন্ধ হয়ে যায়, সব পথ যদি রুদ্ধ হয়ে যায়; তবুও একজন মুমিন হিসেবে রাসূলুল্লাহর সা: বাতানো সব এবং সর্ব রোগের চিকিৎসা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ও শেষ অবলম্বন হিসেবে ঠিকই থেকে যায়। আজ আমরা তেমন পাঁচটি চিকিৎসার কথা বলব যেগুলোতে আল্লাহ তায়ালা সব রোগবালাই থেকে আমাদের সুস্থ ও নিরাপদ থাকার উপাদান নিহিত রেখেছেন।

১. কালো জিরা (Black Cumin/ Fennel Flower): 
কালোজিরাতে আছে ফসফেট,লৌহ ও ফসফরাস। এছাড়াও রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন:
“কালোজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে। (বুখারী পর্ব ৭৬ অধ্যায় ৭ হাদিস নং ৫৬৮৮; মুসলিম ৩৯/২৯ হাঃ ২২১৫)। অর্থাৎ কেউ যদি কালো জিরাকে গ্রহণ করেন; সেটি সরাসরি খাওয়া হতে পারে আবার তেল বানিয়ে পান করা হতে পারে অথবা ভর্তা করে খাওয়া হতে পারে। আল্লাহ তাকে সব রোগ থেকে আরোগ্য লাভের তাওফিক দান করবেন। সুতরাং আমাদের উচিত নিয়মিত কালো জিরা খাওয়া বা তেল বানিয়ে পান করা।

কালোজিরা থেকে প্রকৃত উপকার পেতে হলে অবশ্যই তার ব্যবহার পদ্ধতি জেনে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
কখনো কালোজিরার তেল, কখনো পাউডার, কখনো মধু বা অন্যান্য জিনিসের সাথে মিশ্রণ, কখনো ফোটা আকারে ঢেলে, কখনো ব্যান্ডেজ করে এবং ব্যবহারের সঠিক সময় ও নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়গুলো গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে জানতে হবে।


২. মধু (Honey): 
মধু মহান আল্লাহ তা’আলার একটি বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামতে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এর মধ্যে মানুষের জন্য শেফা রয়েছে। অর্থাৎ মানুষের জন্য আরোগ্য লাভের উপাদান মধুতে রয়েছে। 
নবী সা: নিজেও মধু পছন্দ করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
'মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে।' (বুখারি : ৫২৪৮)।
বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে, আরোগ্য লাভের দু’টি পন্থা তোমরা অবলম্বন করবে। তার একটি হলো মধু পান করা আর অন্যটি হলো কুরআনে কারিমের তিলাওয়াত। যার কারণে কুরআনে কারিম তিলাওয়াত করা বা পড়ে ঝাড়ফুঁক করা যেমন চিকিৎসার কাজ দেয়, তেমনি মধুও মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘মধুতে শেফা আছে’ কিন্তু কোনো রোগের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তার মানে সব রোগের জন্যই মধু উপকারী।


৩. হেজামা বা সিঙ্গা লাগানো (Cupping Therapy): 
হিজামা (ইরেজিতে Cupping) আরবি শব্দ حجامة‎‎ যার অর্থ শোষণ।‎‏ হিজামা হল শিঙ্গা লাগানো নামক প্রচলিত চিকিৎসার আরবি নামকরণ। মাথাব্যথা, শরীরব্যথার মত অসুস্থতা নিরাময়ে এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। হাদিসে এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশংসা করা হয়েছে। রাসূল সা: নিজেও সিঙ্গা লাগিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, যদি কেউ বিশেষ কিছু সময়ে সিঙ্গা গ্রহণ করে তা হলে আল্লাহ তাকে সব রোগ থেকে আরোগ্য দেবেন।


ইবনু উমার বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করানো উত্তম, তা জ্ঞান বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাফেজের মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধি করে। কেউ রক্তমোক্ষণ করাতে চাইলে যেন আল্লাহর নামে বৃহস্পতিবারে তা করায়। তোমরা শুক্র, শনি ও রবিবার রক্তমোক্ষণ করানো পরিহার করো এবং সোমবার ও মঙ্গলবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধবার তা করাবে না। কারণ এইদিনই আইউব (আলাইহিস সালাম) বিপদে পতিত হন। আর কুষ্ঠরোগ ও শ্বেতরোগ বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।


৪. জমজমের পানি পান (Zamzam Water) :
জমজম কূপের পানির কোনও রং বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। সহিহ মুসলিমে এসেছে, ‘জমজমের পানি রোগের জন্য ওষুধ।’ এখানে রাসূলুল্লাহ সা: সাধারণভাবে রোগ বলেছেন অর্থাৎ সব রোগের ওষুধ হিসেবে বলেছেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘জমজমের পানি যে রোগের জন্য পান করা হবে সেই রোগ থেকেই আরোগ্য দেবে। এ হাদিসের সনদ নিয়ে কোনো কোনো মুহাদ্দিস কথা বললেও এটি হাসান বা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের হাদিস।

ইসলামের বিধান অনুযায়ী পানি উপবিষ্ট অবস্থায় পান করতে হয়। কিন্তু জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পানের বিধান রয়েছে। একজন মুসলিম জমজমের পানি পান করার সময় কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহ’র নাম নিয়ে তিন ঢোকে জমজমের পানি পান করবেন।
ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে জমজম হতে পানি পান করেছেন।


৫. আজওয়া খেজুর (Ajwah Dates) : 
আজওয়া খেজুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের খেজুর এবং এটি এক ধরনের বিশেষ খেজুর। এর দাম সাধারণ খেজুর থেকে একটু বেশি আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু।। যার মধ্যে আল্লাহ পাক রেখেছেন প্রচুর শেফা এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা। সহিহ বুখারিতে এসেছে, ‘যদি কেউ প্রতিদিন সকালে সাতটি করে আজওয়া খেজুর খায়, তা হলে ওই দিনে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো রোগ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। সুতরাং এটিও সব রোগের ওষুধ।

আজওয়া খেজুর সম্পর্কে, রাসুল(সা:) এর হাদিস: হযরত সাদ (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা:) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরবেলা সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ,বা যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আজওয়া খেজুর হলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানের খেজুর। (সহিহ বুখারী: ৫৩৫৭)।


উপরে বর্ণিত পাঁচটির মধ্যেই সব রোগে আরোগ্য রয়েছে। যেকোনো রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমাদের এই চিকিৎসা উপায়গুলো অবলম্বন করলে আল্লাহ আমাদের আরোগ্য দিতে পারেন।





#হিজামা কোথায় পাওয়া যায়, হিজামার উপকারিতা কি, মাথায় হিজামা, Hijama cupping, #মধুর উপকারিতা কী কী, ইসলামে মধুর উপকারিতা, benefits of Black Cumin, মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম, রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা, #কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, benefits of Ajwah Dates, কালোজিরা তেলের উপকারিতা কি, মধু কালোজিরার উপকারিতা, জমজমের পানি, benefits of honey, #জমজমের পানির উপকারিতা, জমজমের পানির রহস্য, জমজমের পানি পানের নিয়ম, জমজমের পানি পানের ফজিলত, জমজমের পানির ফজিলত, জমজমের পানির বৈশিষ্ট্য, জমজম কূপের পানির উপকারিতা, benefits of Zamzam water, #আজওয়া খেজুর, আজওয়া খেজুর দাম, আজওয়া খেজুরের ছবি, আজওয়া খেজুর খাওয়ার নিয়ম, আজওয়া খেজুরের ফজিলত, benefits of Cupping Therapy,

No comments:

Post a Comment