রক্তচাপ কমে যাওয়া, লো প্রেশার, লো ব্লাড প্রেশার কিংবা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। এ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হচ্ছে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। যখন রক্তচাপ এরচেয়ে কমে যায় তখনই লো ব্লাড প্রেসার হয়েছে বলা হয়। লো ব্লাড প্রেসার খুবই সাধারণ একটি সমস্যা যা হাইপোটেনশন নামেও অধিক পরিচিত।
এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মু. সালাউদ্দিন বলেন, সাধারণত সিস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মি. মি. মার্কারি ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৬০ মি. মি. মার্কারির নিচে হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। প্রেশার যদি খুব বেশি নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃৎপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে অসুস্থতা দেখা দেয়। তাই প্রেশার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমাদের শরীরের জন্য উচ্চ রক্তচাপের মতো নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো ব্লাড প্রেশারও ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেশার হতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপের কারণ
* কোনো কারণে পানিশূন্যতা হওয়া।
* ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হওয়া।
* খাবার ঠিকমতো বা সময়মতো না খাওয়া।
* ম্যাল অ্যাবসরবশন বা হজমে দুর্বলতা।
* কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত থাকা।
* শরীরে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা।
* রক্তশূন্যতা।
শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে এবং অপুষ্টিজনিত কারণে লো ব্লাড প্রেশার দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের প্রথম ছয় মাস হরমোনের প্রভাবে লো প্রেশার হতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ
মাথা ঘোরানো বা মাথা হালকা অনুভূত হওয়া, মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা, চোখে অন্ধকার দেখা বা সরষে ফুলের মতো দেখা বা চোখে ঝাপসা দেখা, শারীরিক দুর্বলতা এবং মানসিক অবসাদগ্রস্ততা, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া বা হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, খুব বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক দ্রুত হৃৎস্পন্দন, নাড়ি বা পালসের গতি বেড়ে গেলে বুঝতে হবে আপনি লো ব্লাড প্রেশারে আক্রান্ত হয়েছেন।
লো নাকি হাই প্রেশার—কোনটি বেশি খারাপ?
দুটোই খারাপ, তবে যখন প্রশ্ন করা হয় কোনটি বেশি খারাপ? নিঃসন্দেহে লো প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বেশি খারাপ। কারণ, হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে বা কোনো কারণে প্রেশার কমে গেলে তাৎক্ষণিক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে। এ জন্যই ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা রোধে শিরায় স্যালাইন দেওয়া হয়। তবে উচ্চ রক্তচাপও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
লো ব্লাড প্রেশারের চিকিৎসা
লো ব্লাড প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। যদি শরীরে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে নিম্ন রক্তচাপ হয়, তাহলে শুধু খাবার স্যালাইন মুখে খেলেই লো প্রেশার ঠিক হয়ে যায়। তবে যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন রক্তচাপ আছে, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
* নিম্ন রক্তচাপের ভুক্তভোগীরা অনেকক্ষণ একই স্থানে বসে বা শুয়ে থাকবেন না।
* অনেকক্ষণ ধরে বসে বা শুয়ে থাকার পর ওঠার সময় সাবধানে ও ধীরে ধীরে উঠুন।
* ঘন ঘন হালকা খাবার খান। বেশি সময় খালি পেটে থাকলে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
* খাবার সময় পাতে এক চিমটি করে লবণ খেতে পারেন।
* দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় গ্লুকোজ ও স্যালাইন রাখুন।
হঠাৎ প্রেসার কমলে করণীয় কী?
হঠাৎ প্রেসার উঠানামা করলে যেকোন বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তাই জেনে নিন প্রেসার কমে গেলে সাথে সাথে কী খাবেন।
লবণ-পানি
লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। এক গ্লাস পানিতে দুই চা-চামচ চিনি ও এক-দুই চা-চামচ লবণ মিশিয়ে খেতে হবে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা চিনি খেতে পারবেন না।
কফি-হট চকলেট
হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেতে পারেন। স্ট্রং কফি, হট চকোলেট, কোমল পানীয়সহ যে কোনো ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। আর যারা অনেক দিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন, তারা সকালে ভারী নাস্তার পর এক কাপ কফি খেতে পারেন।
কিশমিশ:
হাইপার টেনশনের ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিশমিশ। এক-দুই কাপ কিশমিশ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো পানি খেয়ে নিন। এছাড়া পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন।
পুদিনা:
ভিটামিন ‘সি’, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান। যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে। পুদিনা পাতা বেঁটে এতে মধু মিশিয়ে পান করুন।
যষ্টিমধু:
আদিকাল থেকেই যষ্টিমধিু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে পান করুন। এছাড়া দুধে মধু দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
বিটের রস:
বিটের রস হাই ও লো প্রেসার- উভয়টির জন্য সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে। হাইপার টেনশনের রোগীরা দিনে দুই কাপ বিটের রস খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন
হাইপার টেনশনের ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিশমিশ। এক-দুই কাপ কিশমিশ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো পানি খেয়ে নিন। এছাড়া পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন।
পুদিনা:
ভিটামিন ‘সি’, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান। যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে। পুদিনা পাতা বেঁটে এতে মধু মিশিয়ে পান করুন।
যষ্টিমধু:
আদিকাল থেকেই যষ্টিমধিু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে পান করুন। এছাড়া দুধে মধু দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
বিটের রস:
বিটের রস হাই ও লো প্রেসার- উভয়টির জন্য সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে। হাইপার টেনশনের রোগীরা দিনে দুই কাপ বিটের রস খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন
বাদাম
লো-প্রেসার হলে পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন। এটা পেসার বাড়াতে সহায়তা করে।
স্যালাইন
শরীরে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে নিম্ন রক্তচাপ হলে শুধু খাবার স্যালাইন মুখে খেলেই প্রেসার বেড়ে যায়। লো ব্লাড প্রেসারে খাবার স্যালাইন সবচেয়ে উপযোগী এবং তাৎক্ষণিক ফলদায়ক।
লো ব্লাড প্রেসারে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট এবং গ্লুকোজ খেলেও কিন্তু ভাল উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সময় মতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
তবে যেসব ওষুধে রক্তচাপ কমে বা লো প্রেসার হয়, সেসব ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান হোন। যাদের দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
No comments:
Post a Comment