রোজার ক‌য়েক‌টি শারী‌রিক উপকারীতা

শুরু হয়েছে পবিত্র মাস রমজান। রমজান হচ্ছে ত্যাগ, প্রার্থনা, উদারতা এবং আত্মত্যাগের মাস।

আমরা সবাই কমবেশি রমজানের সময় প্রার্থনা ও উপবাসের আধ্যাত্মিক উপকারগুলো সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না দীর্ঘ একমাসব্যাপী রোযা রাখা কেন আপনার জন্য সর্বোত্তম? হ্যাঁ, এর কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। চলনু দেখে নেই এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলো।

খারাপ আসক্তি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে

রমজানের সঙ্গে রয়েছে আত্মনিয়ন্ত্রণের সম্পর্কে। খারাপ, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করার শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান। পবিত্র এই মাসে ৩০ দিনের জন্য আপনি যাবতীয় আসক্তি ছেড়ে দেয়ার পরে পুনরায় ওই পথে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আপনার মধ্য অনুভব নাও হতে পারে।

আপনার শরীর নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হবে। তাই খারাপ আসক্তি ছাড়ার জন্য রমজান হচ্ছে একটি আদর্শ সময়।

আপনার ক্ষুধাকে কমিয়ে দেয়

৩০ দিনে সংযমে দিনের বেলায় আহার থেকে বিরত থাকায় এটি ধীরে ধীরে আপনার পেটকে অনেক সঙ্কুচিত করে দেয়। এতে করে আপনার মধ্য অল্প অল্প স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পূর্ণ আগ্রহ জন্মাবে।

আপনি যদি আপনার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে চান সেক্ষেত্রে রমজান হচ্ছে আপনার জন্য উত্তম সময়। এটি আপনাকে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যতালিকা পুনর্বিন্যাসের জন্য উৎসাহ প্রদান করবে। পবিত্র মাস শেষ হয়ে গেলে এটি আপনার মধ্য কম ক্ষুধা অনুভূত হবে এবং আপনি বেশি বেশি খাওয়ায় প্ররোচিত হবেন না।

শরীর অধিক পুষ্টি উপাদান শোষণ করে

রমজানের সময় দীর্ঘ সময়ের জন্য রোজা আপনার বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে এবং আপনার শরীরকে খাদ্য থেকে আরো অধিক মাত্রায় পুষ্টি শোষণ করার সক্ষমতা এনে দেয়। এটি আপনার শরীরে ‘অ্যাডিয়েপনেক্টিন’ নামক হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে; যা দিনের বেলায় উপবাস এবং রাতের বেলায় দেরি করে আহারের সংমিশ্রণে উৎপন্ন হয়। এই হরমোন আপনার মাংসপেশিকে আরো পুষ্টি শোষনের সুযোগ করে দেয়।

রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

গবেষণায় দেখা গেছে তিন দিনের জন্য উপবাস কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকেই বৃদ্ধি করে না, বরং এটি পুনরুৎপাদন ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয়। যখন কয়েক ঘন্টার জন্য আপনার পাকস্থলী কোনো খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে তখন এটি মানুষের শরীরকে আরো অধিক শ্বেত রক্তকোষ উৎপন্ন করতে উৎসাহিত করে; যা আপনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এটা শরীরের স্টেম সেলগুলোকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং পুরো রোগ প্রতিরোধক সিস্টেমকে পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করে।

ফ্যাট বা চর্বির ভাঙ্গন

ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা গ্লুকোজকে ব্যবহার করার মাধ্যমে শরীরকে মেদহীন করে তুলে। গ্লুকোজ হচ্ছে চর্বির শক্তির প্রধান উৎস। এছাড়াও, এটি অপরিহার্য প্রোটিনের জন্য পেশির ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

চর্বি শক্তির জন্য ব্যবহার করা হলে তখন তা ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং অবশেষে এটি আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে হ্রাস করে। ওজন হ্রাসের ফলে এটি ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

খালি পেটে লিচু খেলে মৃত্যু হতে পারে!

হাইপোগ্লাইসিন নামক রাসায়নিকের কার‌ণে খালি পেটে লিচু খেলে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

২০১৫ সালের ২৯ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১১ শিশু। ওদের বয়স ছিল দেড় থেকে ছয় বছর। এই ঘটনার আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী ফল খেয়ে আরো অনেক শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতেও ১৯৯৫ সাল থেকে এভাবে শিশুর মৃত্যুর খবর আসছে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা পেটে শিশুরা লিচু খেলে কোনো সমস্যা নেই।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষকরা এতদিন কারণ হিসেবে লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিকের কথা বলে আসছিলেন। তবে সমপ্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে খালি পেটে লিচু খেলেই শিশুদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।
ভারতের বিহারে দুই বছর আগে মৌসুমী ফল লিচু খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩৯০টি শিশু। তার মধ্যে ১২২ জনই মারা গিয়েছিল। গবেষকরা এখন বলছেন, খালি পেটে লিচু খাওয়ার ফলেই তাদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।
লিচু মৌসুমী ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ভারত ও বাংলাদেশের কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি। আন্তর্জাতিক চিকিত্সা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানচেট’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরে যে বিষ তৈরি হয়, তার ফলেই সুস্থ-সবল শিশুদের হঠাত্ খিঁচুনি আর বমি শুরু হয়। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারা। আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।
বিহারে ‘লিচু রোগ’ বা বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ‘অজানা কীটনাশকের প্রয়োগ’—কেই এসব শিশুমৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হতো এতদিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে মৃত্যুর কারণটা লুকিয়ে থেকেছে ‘লিচু’ ফলের মধ্যেই। লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিহারের ঘটনায় বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি শিশুর চিকিত্সা সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ওই বাচ্চাগুলো আগের রাতে খাবার খায়নি অথবা কম খেয়েছিল। পরের দিন রাস্তায় পড়ে থাকা, নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা অপরিপক্ব লিচু একসঙ্গে অনেকগুলো খেয়ে ফেলেছিল তারা। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাগুলো।
মে থেকে জুলাই মাসেই লিচুর ফলন হয়ে থাকে। আর ওই সময়েই শিশুরা ওই উপসর্গ নিয়ে মারাও যায় সব থেকে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু বা লিচু জাতীয় ফল খেয়েই যে বিষক্রিয়ায় বহু শিশু মারা যায়, সেটা অনেক দিন আগেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গবেষণায় জানা গিয়েছিল। এরপর ‘জামাইকান ভমিটিং সিকনেস’ নামের ওই রোগটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়েছে, বলছে ‘ল্যানচেট’।

বস্তির ছেলে যেভা‌বে কোটিপতি

হাইয়ুক জন্মগ্রহন ক‌রেন একটি টেক্সটাইল কারখানা লাগোয়া বস্তিতে। স্কুলজীবনও শেষ করতে পারেননি। কিন্তু তিনিই এখন একজন কোটিপতি উদ্যোক্তা। তাঁর পু‌রো নাম ব্যাং জুন-হাইয়ুক। তাঁর গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেটমার্বেল গেমস করপোরেশন গত সাত বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় আইপিও সংগ্রহ করেছে। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।

দক্ষিণ কোরিয়ার মূল প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় বড় পদে রয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যরা। এখানে বংশানুক্রমিক রাজত্ব চলে। কিন্তু ব্যাং জুনের কাহিনি একেবারেই আলাদা। তিনি ২০০০ সালে প্রথম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান নেটমার্বেল কাজ করে মোবাইল গেম নিয়ে। গুগল প্লে স্টোরে এই কোম্পানির তৈরি মোবাইল গেমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ করে লিনিয়েজ ২ রেভল্যুশন ও মার্বেল ফিউচার ফাইট নামের গেম দুটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

নেটমার্বেলের ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যাংয়ের দখলে। কিছুদিন আগে আইপিও থেকে তিনি আয় করেছেন প্রায় ২৯০ কোটি ডলার। পড়াশোনা বেশি দূর না হওয়ায় এখনো ইংরেজিতে খুব একটা দক্ষ নন এই কোটিপতি। তবে গেম–সংক্রান্ত বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন হরহামেশা। গত বছরের জুনে লস অ্যাঞ্জেলেসে ইথ্রি গেমিং এক্সপোতে গেম দুনিয়ার হর্তাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। বিশ্বখ্যাত ব্যবসা সাময়িকী ফোর্বস ব্যাং জুনকে এশিয়া অঞ্চলের উদীয়মান উদ্যোক্তা হিসেবে অভিহিত করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যাং জুনকে তুলনা করে স্টিভ জবসের সঙ্গে। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতার জীবনের সঙ্গে কিছুটা মিলও আছে ব্যাংয়ের। স্টিভের মতোই নিজের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে একবার চলে গিয়েছিলেন তিনি। স্টিভ অ্যাপল ছাড়লেও প্রযুক্তি খাত ছাড়েননি। কিন্তু গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে ব্যাং নিয়েছিলেন কফিশপের ব্যবসা! এরপর আবার ফিরে আসেন নেটমার্বেলে। আর বনে যান কোটিপতি উদ্যোক্তা।

ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক অ্যানথিয়া লাই বলেন, ‘বাজার সম্পর্কে নিজের ভালো ধারণা ও নেতৃত্ব গুণেই কোম্পানিকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে ব্যাং। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে প্রয়োজন মতো অংশীদারত্বও তৈরি করেছেন তিনি।’

মাত্র আটজন কর্মী নিয়ে নেটমার্বেল শুরু করা এই ব্যবসায়ী নিজের গরিব থাকার দিনগুলো নিয়ে বলতে পছন্দ করেন না। পছন্দ করেন না গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও। তিনি শুধু নিজের কাজটাই করে যেতে যান।