গাউছিয়া কাপড়ের হাট : পোশা‌কের পাইকা‌রি বাজার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম পাইকারী তৈরি পোশাকের ব্যবসাস্থল গাউছিয়া মার্কেট। গাউছিয়া মার্কেটে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা মিলিয়ে দোকান রয়েছে অন্তত সা‌রে চার হাজার। দেশের আর কোথাও এক সাথে এত দোকান নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বাজারে সব ধরনের পণ্যই রয়েছে ক্রেতাদের হাতের নাগালে।

রাজধানী থেকে ২৪ কিলোমিটার পূর্বে ভুলতা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গাউছিয়া মার্কেটটি গড়ে ওঠে ১৯৭৯ সালে ছোট্ট পরিসরে। ধীরে ধীরে ১২০ বিঘা জমির ওপর মার্কেট সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে গাউছিয়া-১ ও গাউছিয়া-২ মার্কেটে পাইকারি কাপড়, শাড়ি, ওড়না, লুঙ্গি, গামছা প্রভৃ‌তি কাপড়
বিক্রি হয়।

ভুলতার গাউছিয়া হাট সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সারা দেশের কাপড় ব্যবসায়ীদের বিপণন-তীর্থ হয়ে ওঠে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের এই মোকাম। প্রায় তিন যুগ ধরে চলছে এই কাপড়ের হাট। আর দিন যত গড়াচ্ছে, এর ব্যাপ্তিও তত বেড়ে চলেছে। এই বস্ত্র-হাটের অলিগলিতে আলো-আঁধারিতে দোকানগুলোতে হাজারো ক্রেতার ভিড়ে পা ফেলা দায়। ব্যবসায়ীদেরও দিনরাতের ফারাক থাকে না। সপ্তাহের একটি দিন মঙ্গলবারে এখানে বিক্রিবাট্টা হয় অবিশ্বাস্য অঙ্কে, প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
বিশেষত্ব হলো, এই হাটের অধিকাংশ ক্রেতাই নারী। এই হাটকে ঘিরেই সারা দেশের ৩০ হাজার নারীর ভাগ্যের চাকা সচল হয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশের খুচরা বিক্রির দোকানগুলো ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন পাইকারী সবগুলো দোকান বন্ধ থাকে।
ভোর হওয়ার বেশ আগেই গাউছিয়া মার্কেটে শুরু হয়ে যায় হাঁকডাক। ক্রমেই বাড়তে থাকে দরদামের কোলাহল, কুলিদের ব্যস্ততা। মার্কেটের সামনে থাকে ভ্যান-রিকশার দীর্ঘ সারি। হাটের গা ঘেঁষে সড়কে থাকে ট্রাকের বহর। কাপড়ের বিশাল গাঁট উঠছে, নামছে। লোড নিয়ে চলেছে দূর-অদূর গন্তব্যে।

একসময় কেবল শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও চাদরের জন্য যে গাউছিয়া হাটের সুখ্যাতি ছিল তার প্রশস্ততা বেড়েছে অনেক। বর্তমানে হাটটি দেশের বড় তাঁতবস্ত্র বিপণনকেন্দ্র। রুমাল থেকে জামদানি শাড়ি, মাথার টুপি থেকে পাঞ্জাবি সব মেলে এই হাটে। ছাপা কাপড়, থান কাপড়, সুতি কাপড়, গজ কাপড়, সেলোয়ার কামিজ, থ্রি-পিস, ওড়না, শার্ট-প্যান্ট তো বটেই; রমজানে বাড়তি যোগ হয় জাকাতের কাপড়ও।

দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডের কাপড়ও পাওয়া যায়। অরবিন্দু ইন্ডিয়ান শার্টের কাপড় প্রতি পিস ৪০০ থেকে ৭০০ , চায়না ৩০০ থেকে ৪০০, সেঞ্চুরি চায়না ৩৫০, ইন্ডিয়ান ৩৫০ থেকে ৯০০, থাইল্যান্ড ২০০ থেকে ৪০০, শীতকালীন চেক প্রতি পিস ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন গার্মেন্টসের কাপড়ের দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়।
গাউছিয়া মার্কেটে প্যান্টের পিসের দামের স্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ইন্ডিয়ান কাপড় প্রতি পিস ৪০০ টাকা, চায়না কাপড় ৩৫০ টাকা এবং কোরিয়ান ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
মেয়েদের পোশাকের মধ্যে বুটিক থ্রিপিস ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, লিলেন চঙি ৪০০ টাকা, জয়পুরী সুতি প্রিন্ট ২৫০ টাকা, জর্জেট ১ হাজার টাকা, সিল্ক ১১০০ টাকা এবং নেট কাপড়ের থ্রিপিস ১৩০০ টাকায় পাওয়া যায়।
এছাড়া গজ হিসেবে বাংলা লিলেন প্রতিগজ ১৩০ টাকা, কটন ১৫০ টাকা, সুতি পভলিন ৪০ টাকা এছাড়া প্রতি গজ ৮০ থেকে ১৫০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায়।

স‌ত্যি বল‌তে, বাংলাদেশে নরসিংদীর বাবুরহাট এবং রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া বৃহৎ কাপড়ের ব্যবসার জন্য পরিচিত হলেও কাপড়ের বৈচিত্রতার কারণে দেশজুড়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ইসলামপুর মার্কেটের কদর একটু বেশি।

চট্টগ্রাম, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ, পাবনা, ভোলা, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের সব প্রান্তের পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখর থাকে গাউছিয়া হাট।
দোকান মালিকরা জানান, গাউছিয়া মার্কেটে পাইকারি কাপড়ের দোকান রয়েছে সাড়ে চার হাজারের বেশি। তবে মঙ্গলবার কোনো দোকান বন্ধ থাকে না। এদিন একেকটি দোকানে কম করে হলেও এক-দেড় লাখ টাকার বিক্রি হয়। কোনো কোনো দোকান ১০ লাখ টাকা পর্যন্তও বিক্রি করে। ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান জানান, প্রতি মঙ্গলবার সাড়ে চার হাজার পাইকারি দোকানদার এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করে। সে হিসাবে প্রতি মঙ্গলবারে এই মার্কেটে ৪০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়।

ভুলতা কাপ‌ড়ের বাজা‌রের ক্রেতা‌দের অ‌ভি‌যোগ, বেশির ভাগ সময় আমরা মঙ্গলবার ভোর রাতে হাটে আসি। সারা রাত গাড়িতে ভ্রমন করে আসার পরে আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোন জায়গা থাকে না। হাট মাত্র ১ দিন হওয়াতে ভালোভাবে কেনাকাটা না করেই ফিরতে হয়। হাটে অনেক সময় মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এজন্য নেই কঠোর কোন ব্যবস্থা।

মার্কেট কতৃপ‌ক্ষের দাবী, ক্রেতাদের সুবিধার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট। আমাদের মার্কেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। এখানে কোন প্রকার মালামাল চুরি হয় না। ব্যবসায়ীদের কোনো টোল জমা, খাজনা বা চাঁদা দিতে হয় না। চোর-বাটপার, ছিনতাইকারীর উৎপাতও নেই।
এছাড়াও গাউছিয়ায় একটি মহিলা রেস্ট হাউস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে মার্কেটের পাশেই তৈরি করা হবে অ্যাপার্টমেন্ট ভবন।'


^
^
wholesale cloth market in bangladesh, gowcia market bhulta, কাপ‌ড়ের হাট, gaocia cloth market, ভুলতা, wholesale readymade garments market in bangladesh, গাউ‌সিয়া কাপ‌ড়ের বাজার, পাইকা‌রি কাপ‌ড়ের বাজার, dhaka gaochia cloth market, gaochia bazar dhaka, পোশা‌কের হাট, বাজার, bangladesh cloth wholesale, হাট, কাপ‌ড়ের পাইকা‌রি বাজার, cloth market bd, gowcia market map, gaochia cloth market,

No comments:

Post a Comment