যুক্তরাষ্ট্র ও রা‌শিয়ার সাম‌রিক শ‌ক্তি

সামরিক শক্তিতে যার দৌড় বেশি, বিশ্বে তার কর্তাগিরি তত বেশি। এ ছাড়া নিজের দেশের সুরক্ষার বিষয়টা তো আছেই। তাই সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৌড়ঝাঁপের শেষ নেই। নিজেদের অন্যদের থেকে শক্তিশালী প্রমাণে সব লেগে থাকে নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কার ও বেচা-কেনার প্রতিযোগিতা।
এই পাল্লায় বিশ্বের কোন দেশ কতটা এগিয়ে তার তালিকা তৈরি করেছে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেস্ক নামের একটি ওয়েবসাইট। ১৩৩ দেশের সামরিক বাহিনীর ৫০টি তথ্য বিশ্লেষণ করে ২০১৭ সালের জন্য তালিকাটি করা হয়েছে।
১৩৩টি দেশের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরেই প্রথম দশের তালিকা দখল করেছে যথাক্রমে রাশিয়া, চীন, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক, জার্মানি ও মিসর। তালিকায় শেষের পাঁচটি দেশ হলো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, মৌরিতানিয়া, সিয়েরালিয়ন, সুরিনাম ও ভুটান।

তালিকা তৈরি করতে গিয়ে দেশগুলোর মানবসম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, ভৌগোলিক গুরুত্ব, বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীর শক্তি ছাড়াও সৈন্যদের দক্ষতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

প্রকাশ করা নতুন এই তালিকা থেকে দেশগুলোর সামরিক শক্তির পার্থক্য স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এতে যুদ্ধাস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ করার উপযোগী জনবলও বিবেচনায় নেওয়া হয়।

তালিকায় বাংলাদেশে রয়েছে ৫৭তম অবস্থানে। আর বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সম্পর্কে থাকা প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার রয়েছে ৩১ নম্বরে।
দেখে নেওয়া যাক সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিস্তারিত-

যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মোট সেনাসদস্য ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭ ৫জন। রয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮৪টি ট্যাংক, ৪১ হাজার ৬২টি বিভিন্ন ধরনের সাঁজোয়া যান, তিন হাজার ২৩৩টি কামান ও এক হাজার ৩৩১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের যান। বিমানবাহিনীতে মোট বিমানের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৬২টি। দেশটির বিমানবাহিনীকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক হিসেবে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৯টি বিমানবাহী রণতরী, আটটি ফ্রিগেট, ৬৩টি ডেস্ট্রয়ার ও ৭০টি সাবমেরিনসহ ৪১৫টি তরী।

রাশিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের পর সামরিক শক্তির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। তবে মার্কিনিদের থেকে তাঁদের সেনা সদস্য অনেক বেশি। দেশটিতে মোট ৩৩ লাখ ৭১ হাজার ২৭ জন সেনা রয়েছে। রয়েছে ২০ হাজার ২১৬টি ট্যাংক, ৩১ হাজার ২৯৮টি বিভিন্ন ধরনের সাঁজোয়া যান, ১০ হাজার ৫৯৭টি কামান ও তিন হাজার ৭৯৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের যান। রাশিয়ার বিমানবাহিনীতে মোট বিমানের সংখ্যা তিন হাজার ৭৯৪টি। নৌবাহিনীতে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরী, ছয়টি ফ্রিগেট, ১৫টি ডেস্ট্রয়ার ও ৬৩টি সাবমেরিনসহ ৩৫২টি তরী।

সম্ভাবনাময় যে ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারেন- ১

প্রথমআ‌লো: আমি কিছু ছোট ব্যবসা, যা নারী-পুরুষ উভয়ই করতে পারেন, তার ওপর ধারাবাহিক লিখব। যার প্রথম পর্ব এটি। আপনাদের কারও উপকারে আসলে ভালো অনুভব করব।

ধরুন আপনি একজনকে ভালোবাসেন। তার জন্য আপনি সবকিছু করতে পারেন। সবকিছু ছাড়তে পারেন। এমনকি আপনি আপনার জীবনও বাজি ধরতে পারেন। এটার অর্থ এই নয় যে, আপনি সকলের জন্য এমনটি করতে পারেন। এটা আপনি করতে পারেন শুধু তার জন্য, যাকে আপনি ভালোবাসেন।
অনেকে বলেন আমি ব্যবসা করব। ব্যবসা আমি ভালোবাসি। চাকরিবাকরি আমার ভালো লাগে না। কিন্তু তিনি জানেন না আসলে তিনি কি করতে চান। ব্যবসা তো হাজার হাজার আছে। সব ব্যবসা করতে কি আপনার ভালো লাগবে? সব ব্যবসা করতে কি আপনি জীবন বাজি ধরতে পারবেন? সব ব্যবসা কি আপনার চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে মিলে যাবে?
আগে ঠিক করুন আসলে আপনি কি ভালোবাসেন। কি করতে আপনি নিজকে প্রস্তুত করছেন? সে কাজটা যত ছোটই হোক না কেন, আপনার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ঠিক থাকলে, কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা আর পরিশ্রম আপনাকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাবে। যদি এমন কিছু না থাকে তাহলে নিজেকে নিয়ে একটু গবেষণা করুন। দেখুন কি করতে আপনার ভালো লাগে কিংবা কি করতে ভালো লাগে না।
এমন কিছু আছে যে, অন্য কেউ কাজ করে আর আপনি সেটার প্রতি আসক্ত। মনে মনে ভাবেন আমি যদি করতে পারতাম। তাহলে তার ওপরই পরিকল্পনা করুন, প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আবার এমনটিও করতে পারেন—২৫টি ব্যবসার তালিকা করুন। এর থেকে আপনার পছন্দের পাঁচটি বাছাই করুন। এই পাঁচটির ভালো ও মন্দ উভয় দিক একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করুন। এরপর দেখুন কোনটি আপনার পছন্দ ও সামর্থ্যের (মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক) সঙ্গে মিলে যায়। সেটি করার জন্য প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। সব সময় অভিজ্ঞ পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
এই ধারাবাহিকে আমি চেষ্টা করব সম্ভাবনাময় কিছু ব্যবসার আলোচনা করতে। প্রতি ব্যবসার জন্য আপনার নির্দিষ্ট দক্ষতা প্রয়োজন হবে। প্রতিটি ব্যবসাতেই আপনার কিছু প্রযুক্তির সমন্বয় প্রয়োজন হবে। যদি দেখেন যে ব্যবসাগুলো ইতিমধ্যে অন্য কেউ শুরু করেছেন, তাহলেও আপনার জন্য ভালো যে, আপনি প্রতিযোগিতা করে বাজার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক আজকের পর্ব। আজকের পর্বে থাকছে স্বাধীন (Independent) ইভেন্ট প্লানিং ব্যবসার ওপর আলোচনা।

প্রথম পর্ব

১। স্বাধীন ইভেন্ট প্ল্যানার (Independent Event Planner)
দিন যতই যাচ্ছে মানুষের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে, নারী-পুরুষ উভয়ইকেই ঘরে ও বাইরে ঘরের কাজ, অফিসের কাজ ও ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তাই বলে ছোটখাটো উপলক্ষগুলো তো আর থেমে থাকতে পারে না। এই ধরুন ছেলেমেয়ের জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, বোনের গায়েহলুদ, অফিসের পার্টি, নতুন পণ্যের প্রচার, বিভিন্ন ধরনের পুনর্মিলনীর জন্য আপনিই হতে পারেন তাদের একমাত্র ভরসা। এ জন্য আপনাকে হতে হবে পেশাধারী। উন্নত দেশে ইভেন্ট প্লানিংয়ের জন্য লাইসেন্সিং ও সার্টিফিকেট ব্যবস্থা আছে, যাতে আপনি পেশাধারী হতে পারেন। দেশে যদি এরকম কোনো কোর্স থাকে তবে করে নিতে পারেন। যদি না থাকে তবে ইভেন্ট প্ল্যানিংয়ের ওপর কিছু বই পড়তে হবে। আপনার প্রধান কাজ হবে পরিকল্পনা, ডিজাইন, সমন্বয় ও সম্পাদন করা।
একটা উদাহরণ দিই। আমি নিউইয়র্ক থেকে ঠিক করলাম, আগামী নভেম্বরে ঢাকাতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর দুই দিনের একটা ওয়ার্কশপ করব। আমি গুগল করে আপনার ওয়েবসাইট/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দেখলাম আপনি একজন পেশাধারী ইভেন্ট প্ল্যানার। আমি আপনাকে আমার চাহিদা জানলাম যে, আমার বাজেট এক লাখ টাকা। দুই দিন ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ওয়ার্কশপ হবে, ২০০ লোকের ব্যবস্থা থাকতে হবে, হল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে, প্রজেক্টর, হোয়াইট বোর্ড থাকতে হবে, ফ্রি পানি ও রিফ্রেশমেন্ট থাকতে হবে ইত্যাদি। আমি এও বললাম যে, আমার আমন্ত্রিত অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র পাঠতে হবে এবং তাদের উপস্থিতি নিতে হবে।
একজন পেশাধারী ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে আপনার অবশ্যই এগুলোর সঙ্গে সংযোগ থাকবে। আপনি সেমিনার রুম ভাড়া করলেন, খাবারের ব্যবস্থা করলেন, নিমন্ত্রণপত্র পাঠালেন এবং দুই দিনের সেমিনারটি তদারকি করলেন। সবকিছুর খরচ সর্বমোট এক লাখ টাকা হলো। এবার আপনার ফি। এটা আপনি দুইভাবে করতে পারেন। একটা হলো মোট খরচের ওপর নির্দিষ্ট হারে (সাধারণত ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে) ফি। যদি আপনার ফি মোট খরচের ১৫ শতাংশ হয় তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ফি হবে ১৫ হাজার টাকা। তা ছাড়া ইভেন্ট অনুসারেও আপনি ফি ধার্য করতে পারেন তবে শতাংশ হারে ফি হলো স্ট্যান্ডার্ড। এটা হলো একটা উদাহরণ। ফি নির্ধারণ হলো সম্পূর্ণ আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর।

আপনার বাজার কোথায়?
ইভেন্ট প্ল্যানারের জন্য দুটি বড় বাজার। ১) করপোরেট, ২) সামাজিক/ব্যক্তিগত।
করপোরেট ইভেন্ট যেমন ফান্ড রাইজিং পার্টি, পণ্য প্রমোশন, সেমিনার, এজিএম, কনফারেন্স, মিটিং, অফিস পার্টি, অ্যাপ্রিশিয়েসন পার্টি, সেলিব্রেশন পার্টি ইত্যাদি।
সামাজিক ইভেন্ট যেমন, জন্মদিন, বার্ষিকী, পুনর্মিলনী, গায়েহলুদ, বিয়ে, হোম পার্টি ইত্যাদি।

আপনি কি করবেন?
একজন পেশাধারী ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে আপনার প্রধান কাজ হবে পরিকল্পনা, ডিজাইন, সমন্বয় ও সম্পাদন করা।
—প্রপোজাল জমা (কোনো কোনো সময় কাজ পাওয়ার জন্য প্রপোজাল জমা দিতে হয়)।
—পরিকল্পনা করতে হবে (Research, Design, Plan)
—সাইট নির্বাচন করতে হবে।
—খাবার ও আনন্দ ব্যবস্থা।
—ট্রান্সপোর্টেশন।
—নিমন্ত্রণপত্র প্রেরণ।
—আমন্ত্রিতদের থাকার ব্যবস্থা।
—সমন্বয়।
—সাইট তদারকি।
—মূল্যায়ন নেওয়া (যদি দরকার হয়)।
—অন্যান্য।

শুরু করতে কেমন খরচ
এ ব্যবসাটি মূলত শহরকেন্দ্রিক। যেকোনো বিভাগীয় শহরে শুরু করা যায়। খরচ নির্ভর করে আপনি কোথায় ব্যবসাটি শুরু করবেন তার ওপর। শুরুতে অফিসের প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই করতে পারেন। নিজকে প্রস্তুত করার জন্য (কোর্স, ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন) বিজনেস কার্ড, ব্রোশিয়ার, ওয়েবসাইটের জন্য খরচ হবে। কিন্তু এসব করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। আগে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করে নিন। ছোট থেকে শুরু করুন। ছোট ছোট ইভেন্ট করলে বড় ইভেন্ট করার সাহস হবে। বিজনেস কার্ড, ব্রোশিয়ার, ওয়েবসাইট করার জন্য একজন কনটেন্ট লেখকের সাহায্য নেবেন। কারণ এসবই হলো আপনার ব্যবসার সেলস, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং পণ্য। শুরুতে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার দরকার নেই। ইভেন্টভিত্তিক কাউকে প্রয়োজনে নিতে পারেন। যোগাযোগ, মার্কেটিং ও প্রমোশনের জন্য কিছু খরচ আছে। কিন্তু প্রথম দিকে এগুলো নিজেরটা নিজে করবেন।

পেশাদারিত্ব
ব্যবসায়িক মন মানসিকতা থাকতে হবে। সততা, দায়বদ্ধতা ও গ্রাহক সেবার মন মানসিকতা যদি না থাকে তবে ব্যবসা থেকে দুরে থাকাই উত্তম। আপনার পেশাদারিত্ব আপনার জন্য ব্র্যান্ড হিসেবে কাজ করবে।
এখানে অনেক কিছু জড়িত। যেমন কীভাবে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করবেন। কী কী ধাপে একটি ইভেন্ট সম্পন্ন করবেন। কীভাবে সেলস ও বাজারিকরণ করবেন। বিজনেস কার্ড, ব্রোশিয়ার, ওয়েবসাইট করতে কী কী টেকনিক অবলম্বন করবেন। কীভাবে ইভেন্ট প্রপোজাল তৈরি করবেন। কীভাবে লিড জেনারেট করবেন। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসাটি করতে আগ্রহী হন তবে ইমেইল করবেন। আমি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে চেষ্টা করব।

আপনার ব্যবসায়ের যাত্রা শুভ হোক, সকলের জন্য শুভকামনা।
(চলবে)

আ হ ম করিম: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
ইমেইল: za19@outlook.com

জনপ্রিয় ১০ ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ

কোনটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ? পৃথিবীজুড়ে কোন অ্যাপের ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি? সর্বোচ্চ দামের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থেকে সবচেয়ে সস্তা ফোন পর্যন্ত কোনো অ্যাপের দাপুটে রাজত্ব? জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইওরি ডাটা’ গুগুল প্লে স্টোরে ডাউনলোডের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসের তালিকা প্রকাশ করেছে। আসুন জেনে নেই পৃ‌থিবী বিখ্যাত সেই ১০টি জনপ্রিয় অ্যাপসঃ

হোয়াটসঅ্যাপ
হোয়াটসঅ্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। শুধু অ্যান্ড্রয়েড নয় বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনে এই ‘ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং’ অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। মেসেজিং ছাড়াও ভয়েস কলস, ভয়েস মেসেজেস, ইমেজ শেয়ারিং, গ্রুপ চ্যাটিং ছাড়াও আরও বেশ কিছু সুবিধা আছে হোয়াটসঅ্যাপে। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ কেনার সময় জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড করছেন।

ফেসবুক মেসেঞ্জার
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটিও একটি ‘ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং’ সার্ভিস। মোবাইল কিংবা ডেস্কটপেও ব্যবহার করা যায় ফেসবুক মেসেঞ্জার। এ অ্যাপে ছবি, ভিডিও, স্টিকার, অডিও ফাইল, ভয়েস ও ভিডিও কল আদান-প্রদান করা যায়। গত এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২০ কোটি।

ইনস্টাগ্রাম
মোবাইল কিংবা ডেস্কটপে ছবি আদান-প্রদানের এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি দিন দিন ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসগুলোর তালিকায় এটি তৃতীয় ইনস্টাগ্রাম। প্রতি মাসে এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০ কোটি। এর মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করছেন ইনস্টাগ্রাম। প্রতিদিন প্রায় ৭ কোটির বেশি স্থিরচিত্র ও ভিডিও আদান-প্রদান করা হয় ইনস্টাগ্রামে।

ফেসবুক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপসগুলোর মধ্যে আমাদের দেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি হলেও গোটা বিশ্বে এর অবস্থান চতুর্থ। তবে একসময় বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড ছিল ফেসবুক। কিন্তু এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। গত জুন পর্যন্ত ফেসবুকে মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২০০ কোটির কিছু বেশি।

ফেসবুক লাইট
ফেসবুকের অ্যাপ ‘ফেসবুক লাইট’ জনপ্রিয়তা বিচারে পাঁচে। দুই বছর আগে এ অ্যাপটি ছাড়ে ফেসবুক। সাশ্রয়ী দামের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ও কম গতির ইন্টারনেট চালাতে ফেসবুক লাইট কার্যকরী। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ অ্যাপটির ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ২০ কোটি। স্মার্টফোনে ‘ইনস্টলেশন’-এর জন্য ২ মেগাবাইটের চেয়ে কম জায়গা নেয় এই অ্যাপ।

উইশ
মোবাইল ই-কমার্সের জন্য উইশ ভীষণ জনপ্রিয় ব্রাজিল, চীন এবং উত্তর আমেরিকা ছাড়াও ইউরোপে। এই শপিং অ্যাপটি ফ্রি জনপ্রিয়তার দিক থেকে ছয়ে। ২০১৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোয় যাত্রা শুরু করে ‘উইশ’। সম্প্রতি এ প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।

স্ন্যাপচ্যাট
জনপ্রিয়তায় ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী চলছে স্ন্যাপচ্যাটের। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা অ্যাপটির প্রতিদিন ব্যবহারকারী প্রায় ১০ কোটির বেশি। ছবি আদান-প্রদান ছাড়াও মাল্টিমিডিয়া মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে স্ন্যাপচ্যাট বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন স্ন্যাপচ্যাটে ভিউয়ারের সংখ্যা এক কোটির বেশি। স্ন্যাপচ্যাটে প্রতিদিন ১ মিলিয়ন স্ন্যাপ তৈরি করা হয়।

সাবওয়ে সার্ফারস
ক্লান্তিহীন দৌড়ের মোবাইল গেম সাবওয়ে সার্ফারস। ডেনমার্কেল কিলো ও সাইবো গেমস সমন্বিতভাবে এ গেম তৈরি করেছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এটি ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসের তালিকায় আটে। প্রতি মাসে এ গেমের ডাউনলোডের সংখ্যা তিন কোটির বেশি।

স্পোটিফাই মিউজিক
গান ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য দারুণ জনপ্রিয় সুইডেনে তৈরি করা এ অ্যাপ। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর বর্তমানে অ্যাপটির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬০০ কোটি ডলার। এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী সংখ্যা ১৪ কোটি। গত জুলাই পর্যন্ত পয়সা খরচ করে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছিল ছয় কোটির বেশি।

মেসেঞ্জার লাইট
ফেসবুক লাইটের মতোই মেসেঞ্জার লাইট। জনপ্রিয়তায় এ অ্যাপটি দশম। ১০ মেগাবাইটেরও কম এই অ্যাপে বার্তা, ছবি ও ইন্টারনেট লিংক পাঠানো যাবে সহজে। স্টিকার দেখা যাবে। শতাধিক দেশে মেসেঞ্জার লাইটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি।

যৌবন ধরে রাখতে এই নিয়মগু‌লো মে‌নে চলুন

যৌবন ধরে রাখতে আমরা সবাই চাই৷ কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় আসা পরিবর্তনগুলোকে আটকানো তো মুখের কথা নয়৷ তার জন্য প্রয়োজন নিয়ম মেনে কিছু রুটিন ফলো করা৷ তাহলে ৪০-এ আপনাকে হয়তো কুড়ির মতো লাগবে না, তবে অকালে বুড়িয়ে যাওয়াও আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না৷

১) যৌবন ধরে রাখার মূল মন্ত্রই হল সুস্থ, নির্মেদ শরীর৷ আর এর জন্য হাঁটার কোনও বিকল্প নেই৷ প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা করে হাঁটুন৷ মোবাইলে গান শুনতে শুনতে হাঁটা নয়, ঘড়ি ধরে একেবারে ব্রিস্ক ওয়াকিং৷ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে, হার্ট ভালো থাকবে৷ নিয়ন্ত্রণে থাকবে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিজ, কোলেস্টেরল, প্রেশারের মতো সমস্যা৷ ফলে আপনাকেও লাগবে ঝরঝরে৷
২) প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত একটা করে মরসুমী ফল রাখুন৷ তবে রোজ যদি আম, কলা, আনারস, কাঁঠাল খেতে থাকেন, তাহলে ওজন বেড়ে আপনাকে বয়সের থেকে আরও দশবছর বেশি বয়স্ক লাগবে৷ তাছাড়া ফল পুষ্টিগুণেও ভরপুর৷ ফলে থাকা ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে পুষ্টি যোগায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর আপনাকে রাখে তরতাজা৷
৩) দৈনন্দিন ডায়েট থেকে সবুজ শাকসব্জি বাদ দিলে কিন্তু চলবে না৷সবজি খেলে মানসিক উন্নতিসহ শারীরিক উন্নতিও হয়। মানুষ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।মোটের উপর সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে৷
৪) ওজন কমাতে গিয়ে বা স্রেফ ইচ্ছে করছে না বলে ব্রেকফাস্ট কখনওই বাদ দেবেন না৷তাহলে কিন্তু শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমের গোলমাল হয়ে বেশি করে খিদে পেতে থাকে৷ আর বারে বারে খেতে খেতে আখেড়ে আমরা নিজের ক্ষতিই ডেকে আনি৷
৫) যৌবন ধরে রাখতে হলে মিষ্টি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। চকোলেট, পেস্ট্রি, ব্রাউনি, আইসক্রেমর মতো খাবারে প্রচুর  কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট থাকে যা শরীরে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বাড়ায়। তাই এগুলি যতটা সম্ভব কম খান৷ তা বলে ডায়েট থেকে চিনি পুরোপুরি ছেঁটে ফেলবেন না৷ অল্প হলেও নিয়মিত খান৷ তাহলে শরীরের এনার্জি লেভেল ঠিক থাকবে৷ শরীর-মন জুড়ে স্বতস্ফূর্ততার অনুভূতি থাকবে৷
৬) বয়স বাড়ার প্রথম লক্ষণটাই দেখা যায় আমাদের ত্বকে৷ রিংকল্স, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, নির্জীব হওয়ার মতো ত্বকের সমস্যাগুলো শুরু হয় ৩৫-এর পর থেকেই৷ তাই বয়স তিরিশ হলেই নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নিন৷ ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং রোজ করুন নিয়ম করে৷আর মধ্য তিরিশের পর থেকে ব্যবহার করুন অ্যান্টি এজিং ক্রিম৷ মাসে অন্তত দুবার ফেস ম্যাসাজ করান৷ তবে খুব প্রয়োজন না হলে ফেসিয়াল করবেন না৷ দিনের বেলা সূর্যের আলো যেন সরাসরি ত্বকে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন৷ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করার জন্য এসপিএফ ৩০ বা এর বেশি উপাদান সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি।
৭) শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত ওজন খুব দ্রুত মানুষকে বুড়িয়ে দেয়৷ এমনকী কমিয়ে দেয় আত্মবিশ্বাসও৷ নিয়মিত ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে যৌবন ধরে রাখা সম্ভব৷ তা বলে একেবারে খাওয়া বন্ধ করেল কিন্তু হিতে বিপরীত হবে৷ শরীরের যাবতীয় গ্ল্যামার শেষ হয়ে, আপনার চেহারায় নেমে আসবে অকাল বার্ধক্য৷
৮) সুস্থ দীর্ঘ জীবন পেতে এবং যৌবন ধরে রাখতে  সকালে খানিকক্ষণ সূর্যালোকে থাকুন। সূর্যের আলোতে আছে ভিটামিন ডি যা হাড়কে মজবুত করে। এবং সঙ্গে মানসিক চাপ ও অবসন্নতাও কমিয়ে দেয়৷
৯) চেষ্টা করুন প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমোতে৷ সঙ্গে হাল্কা ব্যায়ামের অভ্যেস রাখতে পারলে উপকৃত হবেন আপনিই৷
১০) অ্যালকোহল, সিগারেট বা কোনও নেশার দ্রব্য বর্জন করুন৷
১১)এড়িয়ে চলুন স্ট্রেস৷ স্ট্রেসও খুব তাড়াতাড়ি চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে৷
১২) প্রয়োজন আনুন মানসিকতায়৷ বয়স যে আদতে বাড়ছে, এই সত্যিটা মেনে নিন৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পাল্টান৷ যা আপনার সাধ্যের মধ্যে রয়েছে, তা নিয়েই খুশি থাকার চেষ্টা করুন৷ অতিরিক্ত উচ্চাক্ঙ্খাকে জীবন থেকে একেবারে ছঁটে ফেলুন৷ আপনি ভালো থাকবেন, চারপাশের সবাইকে ভালো রাখতে পারবেন৷

বাংলায় গুগল অ্যাডসেন্স চালু

এবার ‘বাংলা ভাষা’ যুক্ত করল জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের অ্যাড নেটওয়ার্ক ‌‘গুগল অ্যাডসেন্স’। মঙ্গলবার থেকে গুগল তাদের অ্যাড নেটওয়ার্কে বাংলা ভাষা যুক্ত করেছে বলে গুগল ব্লগ সূত্রে জানা গেছে।

২০০৩ সালে চালু হওয়া ‘গুগল অ্যাডসেন্স’ এর শুরু থেকেই বিজ্ঞাপন সুবিধা থেকে পিছিয়ে ছিল বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটগুলো। এই অ্যাডসেন্স চালুর ফলে অনেক লাভবান হবে বাংলাদেশ।

মূলত অ্যাডসেন্স হল—গুগলের লভ্যাংশ-অংশীদারী বিজ্ঞাপন প্রকল্প। যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটের মালিক কিছু শর্তসাপেক্ষে তার সাইটে গুগল নির্ধারিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৫ সালেই প্রতিষ্ঠানটি গুগল অ্যাডসেন্স প্রকাশকদের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পেমেন্ট দিয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে।

বিস্তারিত জানার লিংক www.adsense.googleblog.com

গুগল ব্লগে অ্যাডসেন্স টিমের ওই পোস্টে বলা হয়েছে, ‌‘আমরা অত্যন্ত আনেন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বাংলা ভাষাকে অ্যাডসেন্স পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করা হলো।’

‘গত কয়েক বছরে বাংলা কনটেন্টের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাডসেন্স সহজ উপায়ে কনটেন্ট থেকে নগদ অর্থ উপার্জনে প্রকাশকদের একটি মাধ্যম। ক্রমবর্ধমান বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে বিজ্ঞাপন সহজে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপনদাতাদের সহায়তা করবে।’

বাংলা ভাষার যেকোনো ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্সে যুক্ত করার জন্য গুগল অ্যাডসেন্সের অ্যাকাউন্ট করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্স কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের অনুমতি দেবে।

টাইফয়েড জ্বর : কারণ, প্র‌তিকার ও পরামর্শ

এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৪৩তম পর্বে টাইফ‌য়েড জ্বর বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. কে এফ এম আয়াজ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

টাইফয়েড জ্বর কেন হয়?
আমাদের দেশে টাইফয়েড বেশ প্রচলিত একটি জ্বর। কেন এই জ্বর হয়?
প্রশ্ন : একজন মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় কেন?
উত্তর : আমি একটু স্মরণ করব আমার শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রফিক উদ্দিন স্যারকে। স্যার একটি কথা বলতেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের দুটি জ্বরে চিকিৎসা জানলে তুমি ডাক্তারি করে খেয়ে-পরে থাকতে পারবে।’ কোনটি ভাইরাস, কোনটি টাইফেড জ্বর—সেটি বুঝতে হবে। কারণ, এর প্রকোপ এত বেশি আমাদের দেশে যে এটি নির্ণয় করা খুব জরুরি।
আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, তাতে ফিরে আসি। টাইফয়েড আসলে পানীয় খাদ্যবাহিত রোগ। অর্থাৎ সালমোনিলা টাইফি, প্যারাটাইফি এ ও বি জীবাণুগুলো সাধারণত খাবার ও পানি থেকে আসে, বিশেষ করে পানি। যদি ঠিকমতো ফুটানো পানি না পেয়ে থাকে, সেইটার মাধ্যমে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলি, অনেকেই বলেন, ‘আমি তো স্যার বাইরের খাবার খাই না, খেলেও গরম খাবার খাই।’ উদাহরণ হিসেবে বলে, ‘আমি তো স্যার ফুসকা-চটপটি খাই, সেটি তো আমাকে গরম করেই দিচ্ছে।’ আমি বলি, ‘ভালো। তবে সঙ্গে টকটা নেন না? ওই টকের পানি যেখান থেকে আসে, সেখান থেকে সমস্যা হতে পারে।’ সেখানে তো কয়েক ফোঁটা পানিই যথেষ্ট। তার সঙ্গে আমি আরেকটি বিষয় বলি। আমার বাসায় আমি পানি ফুটিয়ে খাই বা আমি পানি ফিল্টারে দিয়ে খাই, ঠিক আছে। তবে আমি পানি কতক্ষণ ফুটাই। এটা জানা খুব জরুরি। বলক ওঠার পর ৩০ মিনিট না ফুটলে জীবাণুর কিছু হয় না। আমি পানি ফুটাতে দিলাম, ১০ মিনিট বলগ উঠালাম, নামিয়ে ফেললাম, তাহলে জীবাণু তো মরবে না। এই সোর্স হলো টাইফয়েডের জীবাণু ছড়ানোর সোর্স। এগুলোকে প্রতিরোধ করাই হলো টাইফয়েড ঠেকানোর উপায়।

টাইফয়েড জ্বর, বুঝবেন যেভাবে

টাইফয়েড প্রচলিত জ্বর। তবে এখন চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। এগুলোর মাঝে টাইফয়েড জ্বরকে আলাদা করে চেনার উপায় কী?

প্রশ্ন : অন্য জ্বরের সঙ্গে টাইফয়েড জ্বরকে পার্থক্য করার উপায় কী?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে আমি একটি বিষয় যোগ করে নিই। আমি যেটি বলব, সেটি সাধারণ। তবে তার মানে এটিই নয়, সব রোগীর এটিই লক্ষণ। সাধারণত ভাইরাস জ্বরে অনেক জ্বর নিয়ে রোগী হাজির হয়। তবে টাইফয়েড জ্বরের যখন ইতিহাস নেই, তখন দেখি এই জ্বরটা সাধারণত রোগীর পাঁচ/সাত দিন আগে থেকে অল্প অল্প করে আসতে থাকে। রোগীর একবেলা জ্বর আসে, খারাপ লাগে। তবে একটু পর ভালো। রোগী ভাবে, আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। রোগী হয়তো ঠিকমতো খেয়ালও করে না। খেয়াল করলে দেখা যায়, জ্বর এলে আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে একবেলা করে আসছিল। এরপর দুবেলা/তিনবেলা করে আসে। যখন জ্বরের প্রকোপ বেড়ে গিয়ে একটি ভাইরাস জ্বরের মতো হচ্ছে, ১০৪ বা ১০৩ আসছে, তখন তারা আমাদের সামনে উপস্থিত হোন। এটা থেকে যেটা বোঝা যায় যে জ্বরটা ধীরে ধীরে ওঠে, সময়ের সঙ্গে বাড়ে এবং জ্বরের প্রথম দিকে লক্ষণ খুব কম থাকে। যখন সময় বাড়তে থাকে তখন দেখা যায়, জ্বরের পাশাপাশি পেটের কিছু সমস্যা হয়, বমি ভাব হয়। দেখা যায়, তার পায়খানা ঠিকমতো হচ্ছে না। প্রথম দিকে একটু কষা থাকে, তার পরের দিকে হালকা নরম হওয়া শুরু করে। পায়খানার গন্ধটা খুব খারাপ হয়ে যায়। রোগীর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। খাবারে একটি অন্য ধরনের গন্ধ পাওয়া শুরু হয়। ধীরে ধীরে রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা হতে সাধারণত সপ্তাহ দেড়েক সময় লাগে।

‘চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়’

যেকোনো রোগ বা জ্বরের ক্ষেত্রে অনেকেই না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
টাইফয়েড জ্বর আমাদের দেশের বেশ প্রচলিত জ্বর। এই জ্বরের ক্ষেত্রেও অনেকে না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক খান। এতে পরে রোগ জটিল হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন : টাইফয়েডের ক্ষেত্রে যদি কেউ নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খান এবং খাওয়ার পরও যদি জ্বর না কমে, সিএস রিপোর্ট ঠিকমতো না আসে, রোগ জটিল হয়ে যায়, তাহলে তাঁদের বেলায় করণীয় কী?
উত্তর : এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত দুটো জিনিস করতে পারি। একটি হলো আগে রোগীর ইতিহাসটা নিই। এটি খুব জরুরি। দিনে জ্বর কীভাবে শুরু হলো, বোঝা জরুরি। ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন করে রোগীকে দেখতে হবে।
টাইফয়েড জ্বরে সাধারণত দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে দেখা যায়, স্পিন ও লিভার বড় হয়ে যাচ্ছে। এটা আমরা, ক্লিনিশিয়ানরা দেখতে পারে। কারণ, এটি তো আন্ত্রিক জ্বর। আমরা এটি দেখতে পাই। তিন নম্বর হলো ট্রিপল অ্যান্টিজেন বা এগলুটেশন টেস্টগুলো করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাওয়া যেতে পারে। আপনি টাইটার দেখতে পারেন। এ ছাড়া তিন সপ্তাহের পরে গিয়ে প্রস্রাবে টাইফয়েড ধরা পড়ে। তো, সেই সময় কালচার করা যেতে পারে। তবে জ্বর হয়ে গিয়ে চিকিৎসকের জন্য সবচেয়ে কঠিন, রোগীর জন্য সবচেয়ে সহজ।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী কোনো পদ্ধতি নেই যে অ্যান্টিবায়োটিক চলা অবস্থাতেই ব্লাড কালচার করা যায়?
উত্তর : হ্যাঁ, করা যায়। আমরা ফ্যান পদ্ধতিতে ব্লাড কালচার করে থাকি। তবে এর ক্ষেত্রেই একই কথা, যদি সাত বা আট সপ্তাহ পার হয়ে যায়, এতেও অনেক সময় আসতে চান না। এটি অবশ্যই একটি জটিল প্রক্রিয়া। তখন চিকিৎসকদের এটিও চিন্তা করতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেন অ্যান্টিবায়োটিক শুরু না করে। একজন লোকও যদি এটি শুনে কথাটি মেনে চলেন, সেটি হবে আজকের অনুষ্ঠানের সফলতা।

টাইফয়েড জ্বর : কিছু পরামর্শ

টাইফয়েড জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা জরুরি। না হলে রোগ জটিল হয়ে উঠতে পারে।

প্রশ্ন : টাইফয়েড জ্বরের ক্ষেত্রে কী পরামর্শ দিয়ে থাকেন?
উত্তর : সব সময় আমি বলি যে অ্যান্টিবায়োটিকটা না জেনে খাবেন না। টাইফয়েড এমন একটি জ্বর, যেখানে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হয় ন্যূনতম ১৪ দিন। অন্য জ্বরের মতো সাত দিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে টাইফয়েড জ্বর সরে যায় না। এ কারণে রোগ নির্ণয় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
টাইফয়েডের মূল পরীক্ষা হলো ব্লাড কালচার। এটা প্রথম সাত দিনের মধ্যে করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। আপনি যদি না জেনে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন, তাহলে দুটো সমস্যা দেখা দেবে। এক, কালচার নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন না এটি টাইফয়েড কি না। এরপর কালচার করলেন। ফলে বোঝা যাবে না এই অ্যান্টিবায়োটিকটি কি আমি সাত দিন খাওয়াব, নাকি ১৪ দিন খাওয়াব। এটি এক নম্বর সমস্যা।
দুই নম্বর সমস্যা হলো, অনেকেই টাইফয়েডের জন্য নিজে নিজে চিন্তা করে নেন যে আমি টাইফয়েডের পরীক্ষা করাব এবং গিয়ে ওউডাল টেস্ট নামক একটি টেস্ট করে থাকেন। এখানে জানা প্রয়োজন, ওউডাল টেস্ট সাধারণত দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে পজিটিভ হয় না। তাহলে এটি একটি অত্যন্ত ভুল প্রক্রিয়া। এখন বলাই হয় এটি না করতে। তাই আপনি যদি এটি করে চিন্তা করেন, আমার টাইফয়েড হয়েছে কি হয়নি, তাহলেও রোগ নির্ণয়ে একটি গণ্ডগোল থেকে যাবে। অ্যান্টিবায়োটিকটা কত দিন খেতে হবে, সেটি বোঝা যায় না।
তিন নম্বর সমস্যা যেটা দেখা যায়, আপনি এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলেন, যেটি আসলেই টাইফয়েডের বিরুদ্ধে কাজ করে। ওই গ্রুপের একটি অ্যান্টিবায়োটিক দোকানদার বা আরেকজন ডাক্তার সাহেব দিয়ে দিয়েছেন। আপনি খাচ্ছেন, জ্বর কমে গেল। পাঁচ দিনের দিন জ্বর কমে গেল। সপ্তম দিন আপনি দেখলেন জ্বর ভালো হয়ে গেছে। অ্যান্টিবায়োটিক আপনি বন্ধ করে দিলেন। ঠিক পরের সপ্তাহে জ্বরটা ফেরত আসবে। যখন ফেরত আসবে, আপনি ও আপনার চিকিৎসক উভয়েই সংকটে পড়ে যাবে। বোঝা যাচ্ছে না জ্বরের কারণ কী? এই রোগীরাই দেখা যায় দীর্ঘ মেয়াদে জ্বরে ভুগতে থাকে এবং রোগ নির্ণয় হয় না। তাই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার আগে আপনি পরামর্শ নেন আমি শুরু করব কি না, কোন রোগের কারণে শুরু করব। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি যেই অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন, সেটি কেন দিচ্ছেন। আমি আমার রোগীকে বলি, এটা জানার অধিকার আপনার রয়েছে।