ফিঞ্চ ফ্রিঞ্জিলিডি পরিবারভুক্ত এক ধরণের ছোট গায়ক পাখি। গায়ক হওয়ায় যথারীতি তাদেরকে প্যাসারাইন পাখি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
খাঁচার পাখি ফিঞ্চ অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভজনক। এই পাখি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের একটি নির্দিষ্ট সীমায় উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের ঠাণ্ডা আদ্রতা থেকে দূরে থাকে। এদেরকে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব তাইমুরেও দেখা যায়। পুয়েরতো রিকো, পর্তুগাল, ব্রাজিল ও আমেরিকাতেও ফিঞ্চ অত্যন্ত পরিচিত।
আলোচনার বিষয় সমূহঃ
ছোট্ট পাখি ফিঞ্চ তার নিজগুনে এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং অন্যান্য সৌখিন পাখির মতই ফিঞ্চএর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ফিঞ্চের অনেকগুলো প্রজাতি আছে। যেমন- ডায়মন্ড ফায়ার টেইল ফিঞ্চ, লং টেল ফিঞ্চ, বাংলিশ ফিঞ্চ, জেব্রা ফিঞ্চ ও লেডি গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ এদের মধ্যে অন্যতম। এগুলোর মধ্যে জেব্রা ফিঞ্চ ও লেডি গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ অনেক জনপ্রিয়। এদের আদিনিবাস অস্ট্রেলিয়া। তবে সৌখিন পাখি হিসেবে এটি সারা বিশ্বে দেখা যায়।
ফিঞ্চ পালনের সুবিধাঃ
ফিঞ্চ পাখি খুব অল্প জায়গায় অল্প খরচে পালন করা যায়। এই পাখির খাবার ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুব কম।
সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করলে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রতি জোড়া পাখি থেকে ৩ থেকে ৬ টি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া ব্যবসায়িক দিক থেকেও ফিঞ্চ পালন অত্যন্ত লাভজনক।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
ফিঞ্চ পালনে প্রাথমিকভাবে দরকার পড়বে ছোট একটি খাঁচা। দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। পানি ও খাবারের পাত্র ২০-৪০ টাকা। ডিম পাড়ার হাঁড়ি ২০-৪০ টাকা।
খাঁচার মধ্যে শুকনো দূর্বাঘাস ও নারকেলের ছোবড়া দিয়ে রাখলে ওরা সুন্দর করে হাঁড়ির মধ্যে বাসা বাঁধবে। পাখির জোড়া প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
ফিঞ্চের দরদামঃ
প্রতি জোড়া জেব্রা ফিঞ্চ বা সাদা ফিঞ্চ পাখির দাম হবে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। স্ট্রবেরি নামেও ফিঞ্চ আছে। দেখতে স্ট্রবেরি ফলের রংয়ের মতো। ব্যবসায়ীরা স্টার ফিঞ্চ হিসেবে চেনে। এদের দাম একটু বেশি। আরও বেশি দামেরও ফিঞ্চ আছে।
ফিঞ্চ কোথায় পাওয়া যায়ঃ
বেশি দামের প্রতি জোড়া ফিঞ্চ এর দাম ৮ হাজার ৫শ’ টাকা। ব্যবসায়ীরা ফিঞ্চ না বলে এদের ভিন্ন ভিন্ন নামে চেনে।
বিভিন্ন রং এর ফিঞ্চ ভিন্ন ভিন্ন নামেই হয়ে থকে। পাখি সংগ্রহ করার জন্য মিরপুর ১নং (শুক্রবার), মিরপুর ১৪ নং (শনিবার), উত্তরা, কাটাবন, গুলিস্থান ও ধানমন্ডি (শুক্রবার) এসব এলাকায় বিকিকিনি হয়। তবে কাটাবনে সব ধরনের ফিঞ্চ পাওয়া যায়।
প্রত্যেক জেলা শহরের বিশেষ হাট বা বাজারেও পাওয়া যায়। অনলাইনের মাধ্যমেও সংগ্রহ করা যায়।
ফিঞ্চ পালন পদ্ধতিঃ
ফিঞ্চ সাধারণত মধ্য অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার উপযোগী। বর্তমানে আমাদের দেশে শৌখিন ও বাণিজ্যিকভাবে পালিত হচ্ছে। পালনের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। শখের জন্য পালতে চাইলে পাখির দোকানে গেলেই হবে।
ডিম পাড়ার পাত্র হিসেবে বাঁশের ঝুড়িও ব্যবহার করা যায়। ঝুড়িটি খাঁচার এক কোণে ঝুলিয়ে রাখলেই চলবে। এর মধ্যে শুকনো দূর্বাঘাস ও নারকেলের ছোবড়া দিয়ে রাখলে ওরা সুন্দর করে হাঁড়ির মধ্যে বাসা বাঁধবে। এছাড়া পাটের বস্তা বৃত্তাকারে কেটে ঝুড়িতে বসিয়ে দেওয়া যায়।
প্রাথমিক অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে পালন করতে তেমন খরচ হবে না। প্রতিজোড়া পাখির জন্য একটি করে ছোট আকারের খাঁচা ব্যবহার করাই ভালো। বড় খাঁচায় একসঙ্গে কয়েক জোড়া পালন করা যায়। তবে এতে ঝুঁকি আছে। কারণ এরা প্রচুর পরিমাণে মারামারি করে। ফলে পাখি ও ডিমের ক্ষতি হয়।
সব সৌখিন পাখি পালকেরা সব সময় এক রকম পাখি পালন করে না। বাজরিগার দিয়ে শুরু করলেও অনেকেই পরে আস্তে আস্তে ককাটেল, ডাভ, লাভ বার্ড বা ফিঞ্চের দিকে যায়। এর কারণ যেটা হতে পারেঃ Fence bird
ফিঞ্চ মুল্যবান পাখি, সহজেই পোষ মানে, ব্রিডিং সহজ, অসুখ-বিসুখ কম এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক ভাবে বেশ লাভজনক। আর বিচিত্র বর্ণের ফিঞ্চ সহজেই যে কোন পাখি প্রেমিককে কাছে টানে।
বাংলাদেশে কেইজ বার্ড হিসেবে পরিচিত পাখির মধ্যে জেব্রা ফিঞ্চ বেশ জনপ্রিয়। এই পাখি ঘাসভূমি ও বনাঞ্চলের প্রশস্থ অঞ্চল ও পানির কাছাকাছি জায়গায় বাস করে।
ছোট এ গানের পাখির গানের শব্দ স্ত্রী-পুরুষভেদে পার্থক্য আছে। ফিঞ্চ প্রাকৃতিক পরিবেশে ৫ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
খাঁচাতে কেইজ বার্ড হিসেবে এদের ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বাঁচতে দেখা গেছে।
ফিঞ্চের খাদ্যঃ
খাবার হিসেবে মিলেট, অঙ্কুরিত শিম, এগ ফুড কিংবা সবুজ শাক-সব্জি ফিঞ্চের খুব পছন্দ কিন্তু ক্যাটল বোন এবং গ্রিট পছন্দের তালিকায় আছে ।
Fence Bird ছোট দানাজাতীয় খাবার; যেমন- চিনা, কাউন, তিল, গুজিতিল— এ ধরনের ছোট বীজদানা খেয়ে থাকে।
ফিঞ্চের প্রজননঃ
মাত্র ৩ মাস বয়স হলেই এরা প্রজনন শুরু করে। ২টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিমের রং সাদা।
ফিঞ্চের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৪ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। বাচ্চা ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজেই খাওয়া শুরু করে।
ফিঞ্চ পাখির রোগ-বালাইঃ
ফিঞ্চ পাখির রোগের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। অযত্নের কারণে এরা রানীক্ষেত, ম্যালেরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই এসব রোগের প্রতিকার করতে প্রয়োজন অ্যান্টি-ভাইরাস, অ্যান্টি-বায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ। তবে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ওষুধ খাওয়ানো উত্তম। সেই সঙ্গে পাখির লালন-পালনে সঠিক মাপের খাঁচা ব্যবহার করা উচিত। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে এদের যত্নের দিকে। রোগ বালাইয়ে সবাই আক্রান্ত হয় এটাই স্বাভাবিক। সেটার প্রতিকারও আছে।
দিনে সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখাই ভালো। এতে ঠাণ্ডা লাগা থেকে রেহাই পাবে। শীত মৌসুমে লাইট জ্বালিয়ে রাখা যেতে পারে। যদি ঠাণ্ডা লেগেই যায় তবে ঠাণ্ডা প্রতিরোধক বড়ি বা সিরাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ১৫ দিন পর পর ভিটামিন-জাতীয় বড়ি বা ক্যাপসুল পানির সঙ্গে অল্প পরিমাণ মিশিয়ে ৩/৪ দিন পর্যন্ত দিলে রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বিশেষ সতর্কতাঃ
যে কোন প্রকার ভয় বা আতঙ্ক থেকে দূরে রাখতে হবে। তা না হলে ব্রিডিং হবে না।
একটি খাঁচায় এক থেকে তিন জোড়া পর্যন্ত ফিঞ্চ পালন করা যায়, কিন্তু ৪ অথবা ৫ জোড়া পালন করলে এরা প্রায় সবসময়ই ঝগড়া মারারিতে জড়িয়ে পড়বে । কলোনি ব্রিডের ক্ষেত্রেও মাত্রাঅতিরিক্ত পাখী রাখা উচিত নয়। ফিঞ্চ গোসল করা খুব পছন্দ করে তাই খাঁচায় পালন করার সময় এ বিষয়টি খেয়াল করতে হবে।
কবুতরের খাচার পাশে রাখা যাবে কি?কবুতর ছেরে পালি
ReplyDelete