চাকরির পেছনে না ছুটেই স্বাবলম্বী

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পূর্ব থানাপাড়া গ্রামের জাহেদুল ইসলাম (৩২) চাকরির পেছনে ছোটেননি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। সেই লক্ষ্য পূরণের পথে এক বছর ধরে বাড়িতে পাখির খামার করেছেন তিনি। তাঁর খামারে কোয়েল, তিতিরসহ নানা জাতের পাখি রয়েছে। পাখির ডিম ফোটানোর কাজটাও নিজেই করেছেন তিনি। খামারের পাখি বিক্রি করে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয়ও করছেন।


 
উপজেলা সদরের পূর্ব থানাপাড়া গ্রামে জাহেদুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, কোয়েল, তিতির, লাভ বার্ড, কবুতরসহ নানা ধরনের পাখি নিয়ে খামার করেছেন তিনি। পাখির ডিম ফোটানোর জন্য নিজেই তৈরি করেছেন ইনকিউবেটর (ডিম ফোটানোর যন্ত্র)।

 
জাহেদুল ইসলাম বলেন, তাঁর পড়াশোনা নবম শ্রেণি পর্যন্ত। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ১৯৯৮ সালে টেলিভিশন মেরামতের কাজ শেখেন। এরপর কয়েক বছর ধরে এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এ পেশায় আয় তেমন ভালো না হওয়ায় এক বছর ধরে বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করে তা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে তাঁর খামারে কেবল কোয়েল পাখিই রয়ছে সাত শ। এর মধ্যে প্রতিদিন পাঁচ শ কোয়েল ডিম দেয়। তিন টাকা দরে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেন তিনি।

 
জাহেদুল বলেন, ‘নিজের খামারে কোয়েলসহ বিভিন্ন পাখি উৎপাদন করার অনেক দিনের শখ ছিল। সে জন্য ইনকিউবেটর কেনারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাম এমন একটি যন্ত্রের। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই তৈরি করব। পরিত্যক্ত রেফ্রিজারেটরের খোল, সার্কিট, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, হিটার, ফ্যানসহ কিছু যন্ত্র দিয়ে তৈরি করলাম ইনকিউবেটর। ছয় শ ডিমের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই ইনকিউবেটর তৈরিতে খরচ পড়েছে সাত হাজার টাকা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে ১০০টি ডিম ইনকিউবেটরে দিই। ১৮ মার্চ ১০০ ডিমের মধ্যে ৮৪টি থেকে বাচ্চা ফোটে। এ যন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলে ১৭ দিনে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব। তবে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে আমার বাচ্চা ফোটাতে ২০ দিন সময় লেগেছে।’


জাহেদুল বলেন, বর্তমানে তাঁর খামারে পুরুষ কোয়েল জোড়া এক শ টাকা, স্ত্রী কোয়েল দেড় শ টাকা, লাভ বার্ড ও বাজরিগার পাখি জোড়া আড়াই হাজার টাকা, ময়ূরপঙ্খি কবুতর জোড়া তিন হাজার টাকা ও তিথির পাখি জোড়া তিন হাজার টাকা দামে বিক্রি করেন। তাঁর খামারে কোনো কর্মচারী নেই। তাঁর স্ত্রী সাথি বেগমই সব দেখাশোনা করছেন।
জাহেদুল ইসলামের স্ত্রী সাথি বেগম বলেন, ‘স্বামীর খামারে দেখাশোনা করছি, কাজ করছি, এতে তো লজ্জার কিছু নেই। এই খামারের আয় থেকে আমার দেবরের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের খরচ চলছে।’

No comments:

Post a Comment