দুই টাকার ডিজিটাল ব্যাংক 'ডাক টাকা'


ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন সুবিধার জন্য ডাক বিভাগের সহায়তায় নতুন ধরনের সেবা ‘ডাক টাকা’ চালু করতে যাচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগ ডি-মানি। মাত্র দুই টাকা জমা দিয়ে এর বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে।


ডাক টাকা কী?
চামড়া বা কাপড়ের তৈরি মানিব্যাগে আমরা দৈনন্দিন প্রয়োজনের টাকা রাখি। ‘ডাক টাকা’ অনেকটা একই কাজ করবে, তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
প্রযুক্তিবিশ্বে সুবিধাটি ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে বাজার-সওদা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব লেনদেন ব্যবহারের মোবাইল হ্যান্ডসেট দিয়েই তাত্ক্ষণিক সারা যাবে।


কেন এই ডাক টাকা?
প্রচলিত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। অনেক নথিপত্র দিতে হয়। টাকাও লাগে বেশ। এসব কারণে দেশের মানুষের বড় একটা অংশ ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে রয়েছে। বিশেষ করে যাদের আর্থিক সংগতি কম তারা খরচের ভয়ে ব্যাংকিং সেবায় যেতে চান না। এই শ্রেণিকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় নিয়ে আসাই ডাক টাকার আসল উদ্দেশ্য। এ পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষ কম ঝামেলায় সহজে ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন করতে পারবে।
করতে পারবে সঞ্চয়ও।


ডাক টাকার উদ্যোক্তা কারা?
আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (ফিন টেক) ডি-মানি ‘ডাক টাকা’ নামের এই ডিজিটাল মানিব্যাগ তৈরি করেছে। উদ্যোগটির সঙ্গে যুক্ত আছেন দেশের স্বনামধন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী, জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত টেকনোলজি ব্যাংকের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ও মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির এবং সিলিকন ভ্যালিতে দীর্ঘদিন কাজে অভিজ্ঞ আরেফ আর বশির। ডাক টাকায় অঞ্জন চৌধুরী চেয়ারম্যান, সোনিয়া বশির কবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং আরেফ আর বশির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডাক টাকাকে পরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবা হিসেবে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ডাক বিভাগের আট হাজারেরও বেশি ডাকঘর থেকে জনসাধারণকে এই সেবা দেওয়া হবে।


ডাক টাকার যাত্রা
আগে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না টাঙ্গাইলের মর্জিনা বেগমের। তবে মোবাইল ফোন ছিল একটি। মর্জিনা বেগমের সেই মোবাইল নম্বরটিই ডাক টাকার প্রথম হিসাব। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এই হিসাবটি খোলার মাধ্যমেই ডাক টাকার অবাণিজ্যিক (পরীক্ষামূলক) যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
উদ্বোধনীতে তিনি বলেন, গ্রাম বা ইউনিয়ন পর্যায়ে সাধারণত ব্যাংকের শাখা থাকে না। এসব এলাকার মানুষের ব্যাংকিং করতে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। এতে ঝামেলার পাশাপাশি ব্যয় বেশি হয়, সময়ও লাগে। ডাকঘরের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সহজ মাধ্যম হবে ডাক টাকা।
শিগগিরই ডাক টাকা সব সেবা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়ে যাবে। এর মধ্যে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সারা দেশে সেবাটি দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘ডাক টাকার চালুর মাধ্যমে দেশের আর্থিক লেনদেনে ডি-মানি নতুনধারা তৈরি করল। আমাদের তৈরি সফটওয়্যারটি শতভাগ দেশে তৈরি, অথচ আন্তর্জাতিক মানের। ডাক টাকার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষও সহজে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার অংশ হয়ে যাবেন। ’
এ বছরের মধ্যে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা তিন কোটি মানুষকে ডাক টাকার সেবায় যুক্ত করার লক্ষ্যের কথা জানান তিনি।


যেভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে
www.daaktaka.info ঠিকানার ওয়েবসাইটে গিয়ে খুব সহজ কয়েকটি তথ্য দিয়েই খুলে ফেলা যাবে অ্যাকাউন্ট। ওয়েবসাইটে দেওয়া ফরমে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নাম, মোবাইল নম্বর, বসবাসের বিভাগ ও জেলা লিখে সঙ্গে ছবি আপলোড করে দিলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার নিশ্চিতকরণ বার্তা চলে আসবে। এরপর নিকটবর্তী ডাকঘরে গিয়ে মাত্র ২ টাকা জমা দিলে নিজের পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি ডাক টাকাও চালু হয়ে যাবে। অনলাইনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে সরাসরি ডাকঘরে গিয়েও অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। পাশাপাশি ডাক টাকার প্রতিনিধিরা ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। চায়ের দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনবহুল স্থানে এই প্রতিনিধিরা আগ্রহী হয়ে খুলে দেবে অ্যাকাউন্ট।
ডাক টাকা খোলার পদ্ধতি ও ব্যবহারবিধি ভিডিওর মাধ্যমে অধিকাংশ ডাকঘরগুলোতেই দেখানো হচ্ছে।


চালু হওয়ার পর
অ্যাকাউন্ট চালু হওয়ার পর কেনাকাটা করে দাম মেটানোর সময় এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) ব্যবহার করে বা কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোডের ওপর মোবাইল ফোন ধরেই দাম পরিশোধ করা যাবে। ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট হবে ডাক বিভাগের পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে। কাজ করবে অ্যাপেও। সাধারণ ফিচার ফোন এবং স্মার্টফোন দুটিতেই খুলবে ডাক টাকার অ্যাকাউন্ট।


ডাক টাকার সুবিধা
ই-কমার্স বা সরাসরি কেনাকাটা সবই করা যাবে ডাক টাকায়। অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও লেনদেন করা যাবে। থাকছে অন্যান্য মোবাইল আর্থিক সেবার মতো ক্যাশইন, ক্যাশআউট, সেন্ড মানি, টপআপ এবং বিল পে সুবিধাও।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সেবাটি পেতে যে খরচ হবে তা বাজারে থাকা অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম হবে। পাশাপাশি ডাক টাকায় জমা করা টাকার ওপর ‘পোস্টাল সেভিংস’ হিসেবে পাওয়া যাবে ১২ শতাংশ সুদ।

No comments:

Post a Comment