কাউকে কুকুরে কামড়ালে দ্রুত আমাদের মাথায় যে রোগটির চিন্তা চলে আসে, সেটি হলো র্যাবিস। এটি অতি ভয়ংকর রোগ। সাধারণত র্যাবিস আক্রান্ত কুকুরের মাধ্যমে এটি ছড়ায়। র্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তি পানি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে এটি জলাতঙ্ক নামেও পরিচিত।
র্যাবিস তীব্র সংক্রমিত প্রাণঘাতী রোগ। এ রোগের মূল কারণ র্যাবডো (র্যাবিস) ভাইরাস। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, নেকড়ে, ঘোড়া, বানর, ইঁদুর, বেজি ইত্যাদি প্রাণী র্যাবিস জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হলে এবং মানুষকে কামড়ালে এ রোগ হয়। সাধারণত কুকুরের কামড়েই আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ র্যাবিস রোগ হয়। এসব প্রাণীর মুখের লালায় র্যাবিস ভাইরাস থাকে। এ লালা কামড় বা কোনো পুরোনো ক্ষতের মাধ্যমে বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং র্যাবিস রোগ সৃষ্টি হয়। যদি কুকুরের লালায় র্যাবিস জীবাণু না থাকে, তাহলে কুকুরের কামড়ে এ রোগ হবে না।
আগেই বলেছি, এ রোগটি হয় একটি ভাইরাস দিয়ে, যার রয়েছে স্নায়ুতন্ত্রের প্রতি বিশেষ আসক্তি।
কুকুরের উপসর্গঃ
প্রকৃত উপসর্গ
প্রকৃত উপসর্গ তৈরির এক সপ্তাহ আগে কুকুরটি সংক্রমিত হতে পারে।
প্রকৃত উপসর্গ তৈরির এক সপ্তাহ আগে কুকুরটি সংক্রমিত হতে পারে।
১. নীরব র্যাবিস
কুকুরের পাগুলো অসাড় বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কুকুর বুকে ভর দিয়ে চলে।
কুকুরের পাগুলো অসাড় বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কুকুর বুকে ভর দিয়ে চলে।
২. উন্মুত্ত র্যাবিস
প্রাথমিক উপসর্গ হলো, নাক লাল হওয়া ও খাদ্য গ্রহণে অনীহা। কুকুরটি দ্রুত অস্থির হয়ে পড়ে ও ছোটাছুটি করে। কুকুরটির ঊরু কুঁকড়ে থাকে ও মুখে শিকারির দৃষ্টি পরিলক্ষিত হয়। পেছনের পা অসাড় হয়ে যাওয়ার কারণে গলা দিয়ে বিকৃত আওয়াজ বের হয়।
র্যাবিসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো আক্রান্ত কুকুর ১০ দিনের মধ্যে মারা যায়।
মানুষের উপসর্গ
মানুষের ক্ষেত্রে রোগের সুপ্তকাল সাধারণত ছয় থেকে আট সপ্তাহ। তবে এটি ১০ দিনের কমও হতে পারে অথবা এক বছরেরও বেশি হতে পারে।
র্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ রেগে যায়, অস্থির থাকে এবং বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
রোগীর জ্বর হয়, ঢোক গিলতে ব্যথা ও খিঁচুনি হয়। এমনকি পানি দেখলে তার খিঁচুনি হতে থাকে। সে পানি খেতে চায় না। এ জন্য এ রোগকে জলাতঙ্ক রোগ বলে।
রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে মাংসপেশিতে সংকোচন হয়। এতে রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।উচ্চ শব্দ, উজ্জ্বল আলো এবং পানি পানের যেকোনো উদ্যোগ খিঁচুনি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট।
রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিন পর সাধারণত রোগীর মৃত্যু ঘটে।
সাধারণভাবে র্যাবিস আক্রান্ত মানুষের লক্ষণগুলো হলো :
পানির পিপাসা খুব বেড়ে যায়। রোগী পানি দেখলে খুব আতঙ্কিত হয় এবং ভয় পায়।
রোগী আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
রোগীর খাবার খেতে খুব কষ্ট হয়।
মুখ থেকে লালা বের করে।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যায়।
পানির পিপাসা খুব বেড়ে যায়। রোগী পানি দেখলে খুব আতঙ্কিত হয় এবং ভয় পায়।
রোগী আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
রোগীর খাবার খেতে খুব কষ্ট হয়।
মুখ থেকে লালা বের করে।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যায়।
চিকিৎসা
যদি কুকুরটির কামড়ানোর ১০ দিনের মধ্যে মারা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ওই কুকুরটি কামড়ানোর সময়ে র্যাবিস আক্রান্ত ছিল।
ক্ষতস্থান এবং চারপাশের ত্বক দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে।
যদি খাঁটি কার্বোলিক এসিড থাকে, তাহলে ক্ষতস্থানে সতর্কতার সঙ্গে ঢালবেন। শক্তিশালী পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট সলিউশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যান্টি র্যাবিস সিরাম দেওয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যান।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
No comments:
Post a Comment