ওযু করার নিয়ম

(কুরআন হাদীস সম্মত) যেভাবে অজু করবেন-
অজু ছাড়া নামাজ হয় না। অজু ছাড়া পবিত্র কোরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। আর সর্বক্ষণ অজু অবস্থায় থাকা পুণ্যের কাজ। পরকালে তা উচ্চমর্যাদার অধিকারী হওয়ার মাধ্যম। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৭৩, তিরমিজি : ৫৫) 

অজু শব্দের আভিধানিক অর্থ সৌন্দর্য ও পবিত্রতা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় অজু হলো মুখমণ্ডল ও হাত-পা পানি দ্বারা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ করা। (তারিফাত : ১/৮৪)



অজুর ফরজগুলো
অজুর ফরজ চারটি—
এক. পূর্ণ মুখমণ্ডল বা চেহারা একবার ধৌত করা। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)
মুখমণ্ডলের সীমানা হলো, দৈর্ঘ্যে চুলের উৎপাদনস্থল থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত, প্রস্থে এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত। (আল কামুসুল ফিকহি : ১/৩৭৩)
দুই. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬, বুখারি, হাদিস : ১৮০)
তিন. মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা। (মুসলিম, হাদিস : ৪১২)
চার. উভয় পা টাখনুসহ একবার ধৌত করা।
(সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬, বুখারি, হাদিস : ১৮০)

অজু বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত
তিনটি শর্ত একই সঙ্গে বিদ্যমান না থাকলে অজু শুদ্ধ হবে না। 
এক. যেসব অঙ্গ অজুর মধ্যে ধৌত করা আবশ্যক, সেসব অঙ্গের পুরো অংশে পানি পৌঁছতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৯)
দুই. এমন কোনো বস্তু অজুর অঙ্গে থাকতে পারবে না, যেগুলো চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে প্রতিবন্ধক। যেমন—মোম, আঠা ইত্যাদি। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৭)
তিন. অজু ভেঙে যায় এমন কোনো কিছু না-হওয়া। অজু করার সময় অজু ভেঙে যাওয়ার মতো কোনো কিছু সংঘটিত হলে অজু শুদ্ধ হবে না। পুনরায় করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ১/১৮১)

অজুর বিশেষ কিছু মাসয়ালা
♦ যদি দাড়ি ঘন হয়, তাহলে ঝুলে থাকা পশম ছাড়া দাড়ির উপরিভাগ ধৌত করা ওয়াজিব। (আসার : ১/২০)
♦ দাড়ি পাতলা হলে দাড়ির ওপরের ভাগ ধৌত করলে হবে না। বরং দাড়ির ভেতরে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে। (ইবনে আবি শায়বা : ১/১৪)
♦ দাড়ির ঝুলে থাকা পশমগুলো ধোয়া ও মাসেহ করা ওয়াজিব নয়। (ইবনে আবি শায়বা : ১/১৪)
♦ নখে এমন কোনো বস্তু লেগে থাকলে যার কারণে নখ পর্যন্ত পানি পৌঁছতে পারবে না, যেমন—মোম, আঠা ইত্যাদি তাহলে সেগুলো পরিষ্কার করে এমনভাবে ধৌত করতে হবে, যেন সর্বাঙ্গে পানি পৌঁছে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৩৬৭)
♦ নখের ময়লা ইত্যাদি চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে প্রতিবন্ধক হয় না। (মজমাউজ জাওয়ায়েদ : ১/২৩৮) অর্থাৎ ময়লা যদি এমন মিহি হয়, যার ভেতর দিয়ে পানি পৌঁছা সম্ভব, এমন অবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে পানি পৌঁছা সুনিশ্চিত হয়, ততক্ষণ সন্দেহ না করা ভালো।
♦ সংকীর্ণ আংটিকে যদি নাড়াচড়া করা ছাড়া ভেতরে পানি না পৌঁছে, তাহলে তা নাড়াচড়া করতে হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৩)
♦ ক্ষত স্থানে ধোয়ার কারণে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে ক্ষতস্থানে লাগানো ওষুধের ওপর মসেহ করলেই হবে। (সুনানে কুবরা : ১১২৯)
♦ অজুতে মাথা মাসেহ করার পর যদি কেউ চুল চেঁছে ফেলে, তাহলে পুনরায় মাসেহ করতে হবে না। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৩৮৪)
♦ অজু করার পর যদি কেউ নখ কাটে বা মোছ চেঁছে ফেলে, তাহলে পুনরায় সেগুলো ধৌত করতে হবে না। (বুখারি : ১/৩০১)

অজুর সুন্নাতগুলো
অজু পরিপূর্ণ ও সুন্দর হওয়ার লক্ষ্যে অজুর সুন্নতগুলোর ওপর নিয়মিত আমল করা উচিত। অজুর সুন্নতগুলো হলো—
১। অজুর শুরুতে নিয়ত করা। (বুখারি, হাদিস : ১)
২। বিসমিল্লাহ পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯২)
৩। উভয় হাতকে কবজি পর্যন্ত ধৌত করা। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬২২৫)
৪। মিসওয়াক করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২)
৫। কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)
৬. যদি রোজাদার না হয়, তাহলে ভালোভাবে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৮)
৭। প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩৩১)
৮। পুরো মাথা মাসেহ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯৭)
৯। উভয় কানের ভেতরে ও বাইরে মাসেহ করা। (আবু দাউদ : ১১৬)
১০। দাড়ি খিলাল করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৩)
১২। আঙুল খিলাল করা। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৮)
১৩। ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোকে মেজে-ঘসে ধোয়া। (আবু দাউদ : ১২৭)
১৪। প্রথম অঙ্গ শুকানোর আগেই পরের অঙ্গ ধৌত করা। (বুখারি : ১৩৭)
১৫। অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় তারতিব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল, তারপর হাত ধোয়া, তারপর মাথা মাসেহ করা। এরপর পা ধৌত করা। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)
১৬। বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান হাত ধোয়া এবং বাঁ হাত দ্বারা প্রথমে ডান পা ধৌত করা। (নাসায়ি : ১১১)
১৭। মাথার সামনের অংশ থেকে মাসেহ শুরু করা। (মুসলিম : ৩৪৬)
১৮। গর্দান মাসেহ করা। (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৬১৪২)



* মাওলানা মুফতি তাজুল ইসলাম,
   বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

No comments:

Post a Comment