ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
*** গুনাহগার না হওয়ার জন্য কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করা জায়েজ হবে কি?
একই পাত্র-পাত্রী স্বামী-স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আগের বিয়ের কথা লুকিয়ে বাবা-মা, পরিবার, সমাজের মন রক্ষার জন্য পুনরায় বিয়ে করা যাবে কি?
প্রথম বার পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করার পর; আবার সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করা কি জায়েজ হবে?
দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে কি কোন গুনাহ হবে?
* বিবাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন বিধান। এর মাসলা-মাসায়েল ব্যপক। আপনারা যেহেতু বালেগ সুতরাং আপনারা বিবাহ করতে পারেন। ইসলামী নিয়মে বিবাহের জন্য দুটি বিষয় প্রয়োজন। যথাঃ
১. ইজাব (প্রস্তাব) এবং
২. কবুল (গ্রহন) ।
আপনাদের মধ্যে যে কোন একজন তার ওলী অর্থাৎ নির্ভরশীল এর মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাবে এবং অন্যজন যদি তা গ্রহন করে; তাহলে সাক্ষী উপস্থিত থাকা শর্তে আপনাদের বিবাহ হয়ে যাবে। সরাসরি একজন আরেকজনকে প্রস্তাব পাঠাতে পারবে না। এছাড়াও বিবাহতে আরো কিছু সুন্নত রয়েছে। ইজাব ও কবুল হওয়ার পর আপনারা একজন আরেক জনের জন্য হালাল।
বিবাহে আরো কিছু শর্ত থাকতে হবেঃ
১. পাত্রী ইসলামিকভাবে যোগ্য হতে হবে। যেমনঃ অমুসলিম হওয়া যাবে না।
২. উভয়পক্ষ পরস্পরের শব্দ শ্রবণ করতে হবে।
৩. দু’জন স্বাধীন পুরুষ অথবা একজন স্বাধীন পুরুষ ও দু’জন স্বাধীন নারীর সাক্ষী হওয়া।
পুনরায় বিয়ে করা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই। ইসলাম আপনার প্রথম বিয়েটাই হিসাবে নিবে, পরে কয়বার বিয়ে করলেন এতে কোন সমস্যা নেই।
পরিবারকে না জানিয়ে বিবাহ করা যাবে কোন সমস্যা নেই। যদি ছেলে মেয়ে উভয় রাজি এবং বৈধ স্বাক্ষী থাকে।
তাছাড়া এরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এবং এটা এখন আপনাদের জন্য জরুরী। কারণ এখন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী আপনারা বেশিদিন পবিত্র থাকতে পারবেন না, তাই আপনাদের মেলামেশাটা হালাল করে নিতে হবে।
বিদ্রঃ বিয়েতে দেনমোহর বা কাবিননামার টাকা যা ধার্য করবেন সেটা অবশ্যই দিয়ে দিবেন। তারপর আপনার স্ত্রীকে ধরার অধিকার পাবেন। অবশ্যই আপনি দেয়ার চেষ্টা করবেন, মাফ চাইলে হবে না। কিন্তু যদি সে মন থেকে আপনাকে জানায় যে, সে টাকার দাবি ছেড়ে দিয়েছে; তাহলে কোন সমস্যা নেই। তবে আপনি স্ত্রীর কাছে যাওয়ার আগে এই নিয়ত রাখবেন না যে, আমি গিয়ে মাফ চেয়ে নিব বা এখন টাকা দেয়া লাগবে না বা স্ত্রী টাকার দাবি করবে না।
এছাড়াও বিয়ে আপনাকে কাউকে না কাউকে জানিয়ে করতেই হবে। যাদেরকে ইসলামের ভাষায় স্বাক্ষী বলে। যদি স্বাক্ষী রেখে বিয়ে করেন তাহলে ঠিক আছে।
খুবই শতর্ক থাকতে হবে, যখন আপনারা শত চেষ্টা করেও একে অন্যের হতে পারছেন না তখন। উপরন্তু যে কোন কারনেই হোক আপনাদের অনত্র বিবাহ খুব কাছাকাছি এসে গেছে। এমতাবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের ব্যবস্থা করতে হবে। কারন, তা নাহলে সে আপনার স্ত্রী হিসেবেই পরিগণিত হবে। আর অন্যত্র যদি বিবাহ হয়, তবে তালাকের ৪ মাস ১০ দিন পর সে অন্যত্র বিয়ে বসতে পারবে। যদি এরকম না করে তাহলে কঠিন গূনাহগার হবে। এমন সময় তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ হলো; যখন তার বিয়ের কথা চলছে বা ৪ মাস ১০ দিনের মধ্যেই বিবাহ হবে, তা কিন্তু কোন ক্রমেই হবে না। বরং এমন সময় তালাক দিতে হবে যাতে করে ৪ মাস ১০ দিন পর অন্যত্র বিয়ে করা যায় বা হয়ে যায়।
আরেকটি বিষয় হল, মিথ্যে থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনি বিবাহিত কিনা? তখন কৌশলে উত্তর দিতে হবে, মিথ্যা যেন না হয়।
* যদি গোপনে বিয়ে করার পর আপনারা আপনাদের বিবাহ টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা না করেন, তাহলে অনেক বড় গূনাহগার হবেন। অর্থাৎ যদি আপনারা এই নিয়তে বিয়ে করেন যে, মা-বাবা রাজি না হলে বা অন্য কোন কারণ ঘটলে আমরা নিজেদের বিয়ে ভেঙ্গে ফেলব! আপনাদের নিয়ত থাকতে হবেযে, আপনারা এই বিয়ে করছেন এতে কোন ধোকা নেই বা শরীয়তের কারণ ছাড়া একজন আরেক জনকে সুযোগ বুঝে ছেড়ে দিবেন না। এবং আপনারা প্রাণপণে চেষ্টা করবেন আপনাদের বিবাহ টিকিয়ে রাখার জন্য।
আপনি আরো জানার জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করুন। তারা আরো স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিবেন।
*** ইসলামে অমুসলিমদের বিবাহের বিধান জানতে চাই ?
* ইসলামে কি অমুসলিম বিবাহ হালাল বা বৈধ ?
হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করা কি ইসলামে জায়েজ আছে?
এক কথায়, অমুসলিমদের বিবাহ করা ইসলামে নিষিদ্ধ বা নাজায়েজ কাজ। তবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার তাকে বিবাহ করা বৈধ বা হালাল। যে কোন অমুসলিম নর বা নারী, মুসলিম হওয়ার পর তাকে বিবাহ করায় কোন সমস্যা নেই।
*** স্ত্রীর বোন বা ভাইয়ের মেয়ের সাথে বিবাহ কি জায়েজ ?
* স্ত্রী মারা গেলে বা স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হলে স্ত্রীর বোনের সাথে বা বোনের মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ। এমনিভাবে স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েজ। কিন্তু স্ত্রী যদি মারা না যায়, বা তালাকপ্রাপ্তা না হয় তাহলে স্ত্রীর বোনকে বা স্ত্রীর বোনের মেয়েকে, এবং স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েজ নয়, এটা হারাম।
*** আমি আমার বউ এর ছোট বোন অর্থাৎ আমার শ্যালিকাকে বিবাহ করেছি। এখন আমি তাদের দুজনকে নিয়েই ঘর করতেছি। দুজন দুই বাড়ীতে আছে। আমি জানতে চাই এভাবে কি দুজনকে বউ হিসেবে রাখা যাবে?
* আপনার প্রশ্নটির সম্পূর্ন বিস্তারীত বলেন নি! দুজন দুই বাড়িতে মানে আপনি তাদের দুজনকে দুটি ঘর বা আলাদা বাড়ি করে দিয়ে দুজনকে আলাদা করে রাখলেও বিবাহ হারাম হয়েছে।
যাই হোক, ইসলামে দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা হারাম। পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাবে দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। জাহেলী যূগে এরকম বিয়ের প্রচলন ছিল। আপনি আরো জানার জন্যে সুরা আলে ইমরান'র বিয়ে সংক্রান্ত আয়াতগুলো পড়তে পারেন।
মুল কথা হল, একসাথে দুই বোনকে বিয়ে করা হারাম ও কবীরা গূনাহ। তবে একবোন মারা যাওয়ার পর আরেক বোনকে বিয়ে করা যাবে। অর্থাৎ আপনার স্ত্রী যদি মারা যায়! এবং তার বিবাহযোগ্য কোন বোন থাকে, তবে তখন আপনি মৃত বউয়ের সেই বোনকে বিবাহ করতে পারবেন।
*** সৎ বোনকে বিয়ে করা কি যায়েজ?
সৎ বোনকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান কি?
* সৎ বোনের সাথে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন অনৈতিক এবং হারাম। ইসলাম সৎ বোনের সাথে বিবাহ বন্ধনকে হারাম করেছে।
*** স্বামীর ভাই বা বোনের ছেলের সঙ্গে বিবাহ জায়েজ কি না ?
* স্বামী মারা গেলে বা স্বামী তালাক দিলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর ভাইয়ের সাথে বা স্বামীর ভাইয়ের ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ। এমনিভাবে স্বামীর বোনের ছেলের সাথেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নাই।
*** ইসলাম যাদের সাথে বিবাহ হারাম করেছে?
১৪ জন মাহরেম পুরুষ বা নারীর সম্পূর্ন তালিকা জানতে চাই?
ইসলামে কাদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
* ইসলাম কিছু নারী পুরুষদের বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে যে চৌদ্দজনকে বিবাহ করা জায়েজ নয়। তারা হলেন-
"আর তোমরা ঐ সমস্ত নারীকে বিবাহ করো না, যাদেরকে তোমাদের পিতারা (বাপ-দাদা-নানা) বিবাহ করেছেন। কিন্তু যা অতীত হয়েছে, নিশ্চয় তা অত্যন্ত নির্লজ্জতা ও খুব ঘৃণার বিষয় এবং খুব নিকৃষ্ট প্রথা। তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতৃগণ এবং তোমাদের কন্যাগণ এবং তোমাদের বোনগণ এবং তোমাদের ফুপুগণ, এবং তোমাদের খালাগণ এবং ভ্রাতৃ কন্যাগণ এবং বোন কন্যাগণ এবং তোমাদের ঐ বোনগণ যারা দুধ পানের দরুন (বোন) হয়েছে, এবং তোমাদের স্ত্রীদের মাতৃগণ এবং তোমাদের স্ত্রীদের কন্যাগণ, যারা তোমাদের প্রতিপালনে রয়েছে এরূপ স্ত্রী থেকে, যাদের সাথে তোমরা শারীরিক সম্পর্ক করেছো। আর যদি তোমরা ঐ স্ত্রীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক না করে থাকো, তবে তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। আর তোমাদের ঐ পুত্রগণের স্ত্রীগণ যারা তোমাদের ঔরসজাত। আর এটাও নিষিদ্ধ যে, দুই বোনকে একত্রে (বিবাহ করে) রাখবে। কিন্তু যা (এই হুকুমের) পূর্বে হয়েছে (তা মাফ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাপরায়ন, অতীব করুণাময়।" (সূরা নিসা: ২২-২৩)
১- পিতা বা মাতা
২- দাদা বা দাদি
৩- নানা বা নানি
৪-শ্বশুর বা শ্বাশুরী
৫-দুধ মাতা বা দুধ পিতা
৬-আপন বোন বা ভাই
৭- দুধ বোন বা দুধ ভাই
৮-ফুপী বা চাচা
৯- মামা বা খালা
১০- ছেলে বামেয়ে এবং তাদের স্ত্রী ও স্বামীগণ।
১১- ভাতিজা বা ভাতিজী
১২- দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা বা এমন দুই মেয়েকে একত্রে বিবাহ করা হারাম যাদের একজনকে ছেলে ধরলে অপরের সাথে তাদের বিবাহ করা হারাম হয়। যেমন, ফুপু ও ভাতিজিকে একসাথে বিবাহ করা হারাম। কারণ ভাতিজিকে ছেলে ধরলে ফুপুকে বিবাহ করা জায়েজ নয়, এমনিভাবে ফুপুকে ছেলে ধরলে ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েজ নয়, তাই তাদের একসাথে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।
১৩- নাতী বা নাতনী
১৪- পুতী বা পুতীনী
*** নতুন বিয়ের পর রোজার মাসে সহবাস করা যাবে কি না?
রমজান মাসে সেক্স করা যায় কি?
ইফতারের পর অর্থাৎ রোজা ভাঙ্গার পর কি স্বামী স্ত্রীর মিলন হালাল? তখন কি কোন বাধা থাকবে?
* রমজান মাসে সহবাস বা যৌন মিলন করা যায়। ইসলামে এতে কোন রকম বাধা নেই। তবে হ্যা, রোজা রাখা অবস্থায় সহবাস করা হারাম।
ইফতারির পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন সমস্যা না থাকলে সহবাস করায় কোন বাধা নেই।