ঢাকায় থাকেন ফারজানা মান্নান। সোমবার থেকে ১১ দিন আগে সামান্য হাঁচি হয় তার। তিনি বলেন এর দুই দিন পর তার ছেলের হাঁচি হয়। ফারজানা মান্নান বলেন `আমার বা আমার ছেলের আর কোন উপসর্গ ছিল না। আমাদের জ্বর,কাশি হয়নি। স্বাদ গন্ধও ঠিক ছিল। কিন্তু আমি সতর্কতাবশত আমার পরিবারের সবার করোনাভাইরাসের টেস্ট করাই।'
সেই টেস্ট করার পর দেখা যায় তিনিসহ তার পরিবারের আরো চারজনের করোনাভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে।
`আমার বাবা বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না যে তার করোনা পজেটিভ এসেছে। কারণ তার কোন উপসর্গ ছিল না। আমরা সিওর হওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার টেস্ট করাই, তখনও তার পজেটিভ আসে,' তিনি জানান। এভাবেই এক পরিবারে চারজন করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তাদেরকে ১০টি ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা।
এই ওষুধগুলোর মধ্যে ছিল এ্যান্টিভাইরাল ওষুধ মনলুপিলাভির, যেটা দিনে দুই বেলা আটটা করে খেতে হবে বলে চিকিৎসক পরামর্শ দেন। ফারজানা মান্নান বলছেন তিনি এই ওষুধের পরিমাণ দেখে দ্বিতীয় একটা মতামত নেয়ার জন্য আরেকজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
তিনি বলেন `দ্বিতীয় ডাক্তার আমার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেই বলেন আপনার খুব মাইল্ড উপসর্গ। এইসব ওষুধ খাওয়ার কোন দরকার নেই। আপনি শুধু ভিটামিন, সি, ডি ও জিঙ্ক খান। গরম পানির ভাপ নেন। আমিসহ আমার পরিবারের সবাই সেটাই করছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভাল আছি।'
যশোরের আরেকজন ব্যক্তি বলছেন গত দুই দিন আগে তার করোনভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। তিনি বলেন `আমার সারা বছর কাশি থাকে। সেটাকে আমি উপসর্গ হিসেবে দেখিনি। কিন্তু যেটা হয়েছে আমার দুর্বল লাগছিল। আমি ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া শুরু করি। কিন্তু দিনে আটটা `এমোরিভির ২০০' ওষুধ খাওয়াটা আমার জন্য বেশ অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিল।'
`এরপর আমি আমার পরিচিত আরেক ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। তিনি আমাকে বলেন, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খেতে আর ওই ওষুধটা বন্ধ রাখতে। এর সাথে আমাকে একটা সিটি স্ক্যান করতে বলা হয়েছে। যেহেতু আমি ভাল বোধ করছি এখন সিটি স্ক্যান করাবো কিনা ভাবছি,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মলনুপিরাভির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অনুমোদন এরই মধ্যে দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মুখে খাওয়ার ওষুধ হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন যখন তিনি তার চিকিৎসককে এই ওষুধের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন, তার চিকিৎসক জানান করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এ্যান্টিভাইরালের কখন দরকার?
ন্যাশনাল গাইডলাইন অন ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অব কোভিড-১৯-এ ‘মডারেট কেস'’ এবং ‘সিভিয়ার কেস’ ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এ্যান্টিভাইরাল ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। মাইল্ড বা মৃদু উপসর্গের ক্ষেত্রে এ্যান্টিভাইরাল ব্যবহারের কোন পরামর্শ দেয়া হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতালের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক এবং করোনাভাইরাস বিশেষায়িত ইউনিটে শুরু থেকে কাজ করছেন ডা. মো. মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন ‘সবক্ষেত্রে এ্যান্টিভাইরালের খুব বেশি প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। রোগী সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন সি, ডি, জিংক খেতে পারে। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়োটিকও দরকার নেই।’
‘বর্তমানের রোগীদের যে উপসর্গ সেখানে এ্যান্টিভাইরালের প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে যে কোন এ্যান্টিভাইরালের এ্যাডভার্স সাইড এফেক্ট (বিরূপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া) থাকতে পারে,’ বলছেন ডা. হাসান।
হাসান বলেন, ‘৪০০ বার বুকে এক্সরে করলে যে রেডিয়েশন শরীরে ঢুকে যায় একবার সিটি স্ক্যান করলে সেই রেডিয়েশন শরীরের ঢুকে যায়।’
তবে এ্যান্টিভাইরাল দেয়ার ক্ষেত্রে যদি কোন রোগী ঝুঁকিপূর্ণ হয় সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন লেভেল যদি নিচে নেমে যায়, করোনাভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়, ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন, এ্যাজমাটিক টেন্ডেন্সি থাকে তাহলে এ্যান্টিভাইরাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।’
‘কিন্তু মাইল্ড উপসর্গ নিয়ে যেসব রোগী রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটার দরকার নেই।'
ব্যয়বহুল চিকিৎসা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কোভিড আক্রান্ত রোগী বলছেন একটা এ্যান্টিভাইরাল ওষুধের দাম ৫০০ টাকা। পাঁচ দিনের একটা কোর্স সম্পন্ন করতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সঙ্গে অন্যান্য ওষুধ এবং টেস্ট তো রয়েছে।
তিনি বলেন ‘আমার পরিবারে দুইজন আক্রান্ত। এখন দুইজনের এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা বহন করা আমার জন্য অনেক কষ্টের হয়ে যাচ্ছে।’
সূত্র : বিবিসি