জ‌ন্ডি‌সের লক্ষণ ও চি‌কিৎসা

জন্ডিসের লক্ষণ কী?

হেপাটাইটিস ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার কারণে জন্ডিস হয়। এর লক্ষণ কী?

প্রশ্ন : ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হলে লক্ষণগুলো কী? কতদিন বা কত বছরের মধ্যে লক্ষণ আসতে পারে?
উত্তর : যদি দূষিত পানির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ বা ই সংক্রমণ হয়,তাহলে আক্রান্ত হওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে রোগীর মধ্যে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। কখনো জ্বর দেখা দিতে পারে, দুর্বলতা হয়, একটি অবসাদগ্রস্ততা তৈরি হয়। দুই চারদিনের মধ্যে তার প্রস্রাবের রং হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তখনই বুঝতে পারে তার জন্ডিস হয়েছে। এটি স্বল্পমেয়াদে ভাইরাসের ক্ষেত্রে।
আর দীর্ঘমেয়াদে যে লিভারের প্রদাহ করে হেপাটাইটিস বি বা সি, এতে অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বছরের পর বছর কোনো লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে এটি লিভারের ক্ষতি করতে পারে। যখন একটি পর্যায়ে গিয়ে লিভার সিরোসিস দেখা যায়, তখনই রোগীরা বুঝতে পারে। এ সময় তার দুর্বলতা হয়, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, কিছু কিছু শারীরিক লক্ষণ ফুটে ওঠে বা পায়ে পানি চলে আসে। সার্বক্ষণিক জন্ডিস দেখা দেয়। এই দুইভাবে এটি প্রকাশ হতে পারে। তখন শারীরিকভাবে আমরা রোগীকে দেখি এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
প্রশ্ন : সর্বনিম্ন কতদিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ করে?
উত্তর : হেপাটাইটিস বি বা সি থেকে যদি জন্ডিস দেখা দেয়,ভাইরাস ইনফেকশন হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই সাধাণত তার জন্ডিস দেখা দিতে পারে। আবার কখনো কখনো জন্ডিস দেখা দেওয়া ছাড়াও বছরের পর বছর এটি কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন : কতদিন পর রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়বে?
উত্তর : দূষিত কোনো সুঁইয়ের মাধ্যমে যদি হয় বা একটি কোনো অস্ত্রোপচার বা কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁর মনে হচ্ছে যে জীবাণু হয়তো ঢুকে যেতে পারে, তখনই বা ওই মুহূর্তে পরীক্ষা করলে সেটি ধরা পড়বে না। এটি ধরা পড়তে ছয় সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।

জন্ডিসের চিকিৎসা কী?

হেপাটাইটিস ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে জন্ডিসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর চিকিৎসা কী?

প্রশ্ন : জন্ডিস ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সমস্যার বেলায় কী চিকিৎসা করে থাকেন?
উত্তর : যদি হেপাটাইটিস এ বা ই আক্রান্ত হয়, আমরা সেটি রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারি। সে ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিকভাবে যদি বেশি দুর্বলতা থাকে, বমি বমি ভাব বেশি থাকে যে কিছুই খেতে পারছেন না বা যদি তার অন্যান্য সমস্যা থাকে, যেমন কেউ হয়তো জ্বরে ভুগছেন বেশি সময় ধরে বা কিছু এলোমেলো কথাবার্তা বা আচার-আচরণ দেখা দিচ্ছে—এ জাতীয় সমস্যা হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তি করার প্রয়োজন হয় না। তাকে আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। কিছু ওষুধ দিই। বাসাতেই থাকতে আমরা পরামর্শ দিই। সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে বা ছয় সপ্তাহের মধ্যে হেপাটাইটিস এ ও ই আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে যান।
প্রশ্ন : হেপাটাইটিস বি বা সি-এর মাধ্যমে আক্রান্ত হলে তার নিরাময় কি সম্ভব? কী ধরনের চিকিৎসা রয়েছে এ ক্ষেত্রে?
উত্তর : বাংলাদেশে চিকিৎসা সম্ভব। হেপাটাইটিস বি বা সি-এর সব ধরনের চিকিৎসা বাংলাদেশে রয়েছে। হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় মুখের খাওয়ার ওষুধ, ইনজেকশন দুটোই পাওয়া যায়। হেপাটাইটিস সি-এর ক্ষেত্রে শুধু আগে ইনজেকটেবল ওষুধ ছিল, এখন মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে সুন্দরভাবে আমরা চিকিৎসা করছি। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ওষুধটি পশ্চিমা বিশ্বে যেকোনো মূল্যে রোগীরা খাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে আমাদের দেশে রয়েছে। যে ওষুধের দাম আমাদের দেশে হয়তো ৫০০ টাকা পড়ে, এটি সেখানে পড়বে প্রায় ৮০ গুণ বেশি।

বেশি ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার খেলে জন্ডিস রোগীদের সমস্যা হয়?

জন্ডিস রোগীদের খাবারের বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বন্দ্বে ভোগেন।

প্রশ্ন : জন্ডিস রোগীর খাবারদাবার কেমন হবে?
উত্তর : খাবারের বিষয়ে বাড়তি কোনো পরামর্শ নেই। বাসায় যে খাবার রান্না করে খাওয়া হতো, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, সেই একই খাবার হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগীকে দেওয়া যাবে। তার জন্য আলাদাভাবে হলুদ বন্ধ করে বা মসলা বন্ধ করে রান্না করার কোনো প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গে জন্ডিসের কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন : অনেকে বেশি ঝাল বা বেশি মসলাযুক্ত খাবার খান। লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এগুলো কি বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে?
উত্তর : অতিরিক্ত মসলা বা তৈলাক্ত খাবারের কারণে তার একটু হজমের ব্যাঘাত হতে পারে। যেহেতু তার এমনিতেই ক্ষুধামান্দ্য থাকে, খাওয়ার রুচি কম থাকে, তখন এর জন্য তার সমস্যা হতে পারে। তবে লিভারের অসুখের সঙ্গে সরাসরি এর কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন : অনেকে জন্ডিস হলে পানি বা শরবত খাওয়ার প্রতি মনোযোগ দেন। অনেকে রাস্তায় গিয়ে আখের রস খান। এসব বিষয়ে কতটুকু সতর্কতা নেওয়া উচিত?
উত্তর : এটি খুবই অন্যায় কাজ। রাস্তার দূষিত পানির সংস্পর্শে থেকে যে আখের রস তৈরি করা হয়, যে পদ্ধতিতে এগুলো তৈরি করা হয়, সেটি ক্ষতিকর। কারো যদি জন্ডিস নাও হয়ে থাকে, এরপরও যদি এগুলো খায়, তার মধ্যে জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। যে বরফ বা দূষিত পানি দিয়ে এগুলো তৈরি হচ্ছে, সেগুলো দিয়ে জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আর জন্ডিস হলে কোনোভাবেই এগুলো খাওয়ানো ঠিক নয়।

এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৭৭তম পর্বে জন্ডিস বিষ‌য়ে কথা বলেছেন ডা. ফারুক আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।

No comments:

Post a Comment