স্তন ক্যান্সার মোকাবিলায় করণীয়গুলো

আজকাল নারীদের স্তন ক্যান্সার যেন একটি সচরাচর রোগ হয়ে উঠেছে। এই রোগটির নাম শুনলেই যেন নারীরা আতঙ্কে শিহরিত হয়ে ওঠেন।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সারের পরই স্তন ক্যান্সারের ক্যান্সারের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি। স্তন ক্যান্সার পুরুষদেরকেও আক্রান্ত করতে পারে। তবে নারীদের মধ্যেই এর প্রকোপ দেখা যায় বেশি।

স্তন ক্যান্সারের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধ বয়স, স্তনে ক্যান্সার বা জমাটবদ্ধ পিণ্ডের অতীত ইতিহাস, ঘন স্তন টিস্যু, অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন নি:সরণ, দেহের অতিরিক্ত ওজন, মদপান, ক্ষতিকর রশ্মির বিকিরণ, হরমোনগত চিকিৎসা এবং পেশাগত বিপত্তি।

যদিও বংশগতি এবং স্তন ক্যান্সারের অতীত ইতিহাস এড়ানো সম্ভব নয় তথাপি আপনি চাইলে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারেন। যেমন…..

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে
স্তন ক্যান্সারের একটি বড় কারণ অতিরিক্ত ওজন। যা আপনি চাইলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। প্রতিটি নারীর জন্যই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখাটা একটি মৌলিক লক্ষ্য। বিশেষ করে মেনোপোজের পর। আপনি যদি স্থুলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি শুধু নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিই বাড়িয়ে চলেছেন। যার মধ্যে স্তন ক্যান্সারও একটি। কারণ মেনোপোজের পর আপনার দেহের বেশিরভাগ ইস্ট্রোজেন আসে ফ্যাট টিস্যু থেকে। আর ফ্যাট টিস্যু যতবেশি হবে ততই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়বে এবং আপনার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে চলবে।

ধুমপান ত্যাগ করুন
আমরা সকলেই জানি যে, ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এতে ফুসফুস ক্যান্সারও হতে পারে। তবে আমাদের অনেকেরই জানা নেই ধুমপান আরো নানা ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত। মেনোপোজের আগের নারীদের ধুমপানের কারণে স্তন ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

আকণ্ঠ মদপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন
যে নারীরা প্রতিদিন মদপান করেন তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকি থাকে। এমনকি প্রমাণও রয়েছে সামান্য মাত্রার মদ পানেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করুন 
লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস খাওয়া কমিয়ে দেওয়াই ভালো। প্রতিদিন উচ্চ আঁশযুক্ত এবং নানা ধরনের ফলমূল ও সবজি খান বেশি করে। আর যতটা সম্ভব সংরক্ষিত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার এড়িয়ে চলুন।

স্ট্রেস কমান
আজকাল স্ট্রেস নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়াতে প্রধান ভুমিকা পালন করে। এমনকি এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। স্ট্রেস দেহের হরমোনের মাত্রায় হেরফের ঘটিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নষ্ট করতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন
একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যে নারীরা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসে। অনেক গবেষণায়ই প্রমাণিত হয়েছে শরীচর্চা স্তনের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। শরীচর্চায় স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৫% কমে আসে।

বাচ্চাকে স্তনের দুধ খাওয়ালে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে বাচ্চাকে স্তনের দুধ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যত দীর্ঘ সময় ধরে আপনার বাচ্চাকে স্তনের দুধ খাওয়াবেন ততই আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসবে এবং আপনার বাচ্চাও স্বাস্থ্যবান থাকবে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাবেন না
স্তন ক্যান্সারের আরেকটি বড় কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি। তবে অল্প বয়সীদের মধ্যে এই ঝুঁকি কম। আর গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মনিয়ন্ত্র বড়ি ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও চলে যায়।

মেনোপোজ পরবর্তী হরমোন এড়িয়ে চলুন
মেনোপোজের পরে যদি আপনি হরমোন চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন তাহলে তা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করবেন। মেনোপোজ পরবর্তী হরমোন নেওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে।

No comments:

Post a Comment