বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনার যে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করেছে তার নাম কোভিড-১৯। দেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধ এবং এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে বিশ্ববাসীকে বেশ কিছু সাধারণ অথচ কার্যকর সতর্কতা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনা যেভাবে ছড়ায়
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
কোনো সুস্থ ব্যক্তি যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেওয়া হাঁচি বা কাশির সুক্ষ্মকণা শ্বাসপ্রশ্বাস বা হাতের স্পর্শের মাধ্যমে মুখে নেন, তখন তার দেহেও করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
ভাইরাসটির উৎসস্থল চীনের বেশ কিছু হাসপাতাল কোনো ব্যক্তির মাঝে দশ মিনিটের বেশি সময় ধরে হাঁচি দেওয়া বা কাশি দেওয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিলে তাকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করে। এছাড়াও, কোনো ব্যক্তি ইতোমধ্যেই আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ছয় ফুটের মধ্যে থাকলে তাকেও উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকির কাতারে ফেলা হয়।
পূর্বলক্ষ্মণ দেখা না দেওয়া ব্যক্তিদের থেকেও ছড়াতে পারে
করোনায় আক্রান্ত অনেকের মাঝে রোগের উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। এসব রোগীর মাধ্যমেও ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করতে পারে। কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা থাকায় এই রোগীদের থেকে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি ঠিক কতটা বেশি তা জানা যায়নি।
সামাজিক বিস্তার
এছাড়াও আক্রান্ত রোগীর লালা, থুথু বা সর্দির ফোটা থেকে কোনো বিদ্যালয়ের বেঞ্চ বা বাসের সিট সংক্রমিত হতে পারে। সেখান থেকে সহজেই তা অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে।
সুরক্ষার উপায়
নিয়মিত হাত ধোয়া
নিজের দুই হাত মাঝে মধ্যেই পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর হাতে সাবান লাগিয়ে হাতের তালু এবং পৃষ্ঠতল ঘষে ফেনা তুলুন। আঙ্গুলগুলোর মাঝেও একইভাবে পরিষ্কার করুন। এরপর আবারও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে
এরপর সেই টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে আবারও নিজের হাত পরিষ্কার করুন। হাঁচি বা কাশি আটকাতে কখনোই নিজের হাত বা কনুই ব্যবহার করবেন না।
মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে
করোনা ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো সম্ভব নয়। এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই চিকিৎসা সেবা নিন
আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনি সম্প্রতি কোথায় ভ্রমণ করেছেন, সেসব কথা তাকে খুলে বলুন।
পশুবাজার পরিহার
ভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলে জীবন্ত পশুর বাজার এড়িয়ে চলুন এবং পশুপাখিকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলুন
আক্রান্ত এলাকা থেকে ফিরে থাকলে ১৪ দিন নিজেকে জনসমাগম থেকে 'বিচ্ছিন্ন' রাখুন। এর মানে, এই সময় কর্মস্থল থেকে শুরু করে অন্যান্য জনসমাবেশস্থল এড়িয়ে চলতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত হটলাইন নম্বরসমূহঃ
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য পেতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই ১৩টি নম্বর সবসময় খোলা পাওয়া যাবে। করোনা ভাইরাস সার্ভিস সংক্রান্ত তথ্য পাবেন।
হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে- ১৬২৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনের নম্বরটিও (১৬২৬৩) এখন নভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য জানাতে ব্যবহৃত হবে। বাকি ১২টি নম্বর আইইডিসিআরের।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যারা ব্যবহার করতে পারেন তাদের জন্য ই-মেইল ও ফেসবুকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা অনেক বেশি সহজ হবে। আইইডিসিআর’র ফেসবুক একাউন্টটি হলো- (iedcr,covid-19controol room) এবং ই-মেইল একাউন্টটি হলো (iedcrcovid19@gmail.com)।
“কারও নমুনা সংগ্রহের যদি প্রয়োজন মনে হয়, তারাও (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন) আমাদের জানাবেন নমুনা সংগ্রহ করতে হবে কি না।”
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পরামর্শ
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভীত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া কিছু পরামর্শ মেনে চলতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
>> নিয়মিত জীবণুনাশক বা সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া উচিত।
>> কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন এমন ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন।
>> হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা হাতের কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
>> যেখানে সেখানে থুথু নিক্ষেপ করা যাবে না।
>> রান্না করার আগে ভালো করে খাবার ধুয়ে নিতে হবে।
>> যে কোনো খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
>> অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শে আসা যাবে না।
>> কাপড় একবার ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।
>> বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
>> বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরে ব্যবহার করা যাবে না। খালি পায়ে হাঁটা যাবে না।
>> পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অন্যের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।
>> স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুসরণ করে নিরাপদ থাকাই উত্তম পন্থা।
>> অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা উত্তম।
>> জনাকীর্ণ স্থানে সতর্ক থেকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
>> শিশু, বৃদ্ধ ও ক্রণিক রোগীদের অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে।
>> নিজেকে নিরাপদ রাখতে বিদেশ ভ্রমণ না করাই ভালো।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। বরং বাড়িতে থেকে হটলাইন নম্বরে ফোন করলে তারাই বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে বলে জানানো হয়েছে।
No comments:
Post a Comment