নিজ বা‌ড়ি‌তে আইসোলেশনে থাকবেন যেভাবে Home Isolesion

করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে বা এমন সন্দেহ হলে প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশপাশের লোকজন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর ও শুকনো কাশি। আপনার এরকম লক্ষণ দেখা দিলেই ‘সেল্ফ-আইসোলেশনে’ চলে যান। অর্থাৎ নিজেকে অন্যদের সংস্পর্শ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলুন।

এর উদ্দেশ্য হলো যাতে আপনার বাসা, পরিবার, কর্মস্থল, বা সামাজিক পরিমন্ডলে অন্য যে মানুষেরা আছেন, তাদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে না পারে।

আইসোলেশন কী?
আইসোলেশন বলতে ১৪ দিন ঘরে থাকা, কর্মস্থলে না যাওয়া, বিদ্যালয়ে অথবা জনসম্মুখে না বের হওয়া, গণপরিবহন এড়িয়ে চলা। বাড়িতেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকা।

যদি ওষুধপত্র ও অন্যান্য দৈনন্দিন জিনিসের প্রয়োজন হয় তা হলে দরজার সামনে রেখে যেতে বলতে হবে। কোনা অবস্থাতেই কারো সাথে দেখা করা যাবে না। এমনকি নিজের পোষা প্রাণীটিকেও স্পর্শ করা যাবে না। যদি একান্তই করতে হয় তা হলে স্পর্শ করার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

যেভাবে ‘সেল্ফ আইসোলেনে’ থাকবেন
ঘরে থাকুন। কর্মস্থলে, স্কুলে বা লোকসমাগম হয় এমন যে কোনো প্রকাশ্য স্থানে যাওয়া বন্ধ করে দিন। বাস, ট্রেন, ট্রাম, ট্যাক্সি বা রিকশা যাই হোক না কেন সকল পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে চলুন। এমন একটা ঘরে থাকুন যাতে জানালা আছে, ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। বাসার অন্য লোকদের থেকে আলাদা থাকুন। আপনাকে কেউ যেন 'দেখতে না আসে' তা নিশ্চিত করুন।

আপনার যদি বাজার-হাট করতে হয়, বা কোন ওষুধ বা অন্য কিছু কিনতে হয়, তাহলে অন্য কারো সাহায্য নিন। আপনার বন্ধু, পরিবারের কোনো সদস্য বা ডেলিভারি-ম্যান এটা করতে পারে। যারা আপনার জন্য খাবার বা জিনিসপত্র নিয়ে আসবে, তাদের বলুন আপনার ঘরের দরজার বাইরে সেগুলো রেখে যেতে।

ধরুন, আপনি এমন একটি বাড়িতে আছেন যেখানে একটি 'কমন রান্নাঘর' আছে যা সবাই ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে যার করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে তার এমন সময় সেই রান্নাঘরটি ব্যবহার করা উচিত যখন অন্য কেউ সেখানে নেই। তার উচিত হবে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে খাওয়া। ঘরের মেঝে, টেবিল ও চেয়ারের উপরিভাগ 'সারফেস' গুলো প্রতিদিন তরল সাবান বা অন্য কোনো ক্লিনিং প্রোডাক্ট দিয়ে পরিষ্কার করুন।

যদি এমন হয় যে আপনি নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্য বা ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে পারছেন না, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ হলো একে অপরের সংস্পর্শে আসা যতটা সম্ভব সীমিত করুন। যদি সম্ভব হয়, বাসার অন্য লোকদের থেকে কমপক্ষে ২ মিটার বা ৬ ফুট দূরে থাকুন।

ঘুমানোর সময় একা ঘুমান। করোনাভাইরাস সংক্রমণ যাদের জন্য বেশি বিপজ্জনক হতে পারে, যেমন- বয়স্ক মানুষেরা, তাদের থেকে দূরে থাকুন। আইসোলেশনে থাকা কোনো ব্যক্তির সাথে যারা এক বাড়িতে বসবাস করছেন, তাদের জন্য পরামর্শ হলো: তাদের ঘন-ঘন হাত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার নিয়ম হলো, সাবান ও পানি ব্যবহার করে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে, বিশেষ করে সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে আসার পর।

আপনার বাড়িতে কেউ আইসোলেশনে থাকলে তোয়ালে, টুথপেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার বা এরকম কোনো টয়লেট্রিজ সবাই মিলে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির আলাদা একটি বাথরুম ব্যবহার করা উচিৎ। তা সম্ভব না হলে নিয়ম করুন যে যিনি আইসোলেশনে আছেন তিনি বাথরুম ব্যবহার করবেন সবার শেষে। ব্যবহারের পর সম্ভব হলে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করবেন।

যিনি আইসোলেশনে আছেন তার ফেলা বা সংস্পর্শে আসা সব রকম আবর্জনা একটি বিনব্যাগে ভরে তা আবার আরেকটি ব্যাগে ভরুন। যদি তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হয়, তাহলে এই আবর্জনা কীভাবে ফেলতে হবে, সে ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সূত্র : বিবিসি

No comments:

Post a Comment