করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এ ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের জীবন শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাণঘাতি এ ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সাথে আইসোলেশন (Isolation), হোম কোয়ারেন্টাইন - (Home Quarantine) ও কোয়ারেন্টাইন (Quarantine) সবচেয়ে আলোচিত ও বহুল ব্যবহৃত শব্দ। আমরা অনেকেই জানিনা যে করোনা পরিস্থিতিতে কখন কোন অবস্থায় থাকতে হবে। করোনা প্রকোপ ঠেকাতে এসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রত্যেকের জন্য জরুরী। এ তিনটা বিষয় সম্পর্কে কতটা ধারণা আছে আপনার। আসুন জেনে নিই-
আইসোলেশন - Isolation
কারও শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে এবং টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে, মোট কথা করোনা হয়েছে ধরা পড়লে তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হবে রোগীকে। অন্য রোগীদের কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় তাদের জন্য। অন্তত ১৪ দিনের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হয়। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। তাদের পরিবার-পরিজনের সাথেও এই সময় দেখা করতে দেয়া হয় না। একান্ত দেখা করতে দেওয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মেনে।
এই অসুখের কোনও প্রতিষেধক এখনও সন্ধানে নেই। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময় কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ দিয়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হন। তবে যাদের রোগে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের পক্ষে সেরে ওঠাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
কোয়ারেন্টাইন - Quarantine
করোনার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পরেই তার উপসর্গ দেখা দেয় না। অন্তত সপ্তাহখানেক সে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে জানে। তাই কোনও ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে এলে বা রোগীর সংস্পর্শে এলে তার শরীরেও করোনাভাইরাস বাসা বাঁধতে পারে। বাসা আদৌ বেঁধেছে কি না বা সে আক্রান্ত কি না এটা বুঝে নিতেই কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয় রোগীকে। অন্য রোগীদের কথা ভেবেই কোয়ারেন্টাইন কখনও হাসপাতালে আয়োজন করা হয় না। করোনা হতে পারে এমন ব্যক্তিকে সরকারি কোয়ারেন্টাইন পয়েন্টে রাখা হয়।
কমপক্ষে ১৪ দিনের সময়সীমা এখানেও। এই সময় রোগের আশঙ্কা থাকে শুধু, তাই কোনও রকম ওষুধপত্র দেয়া হয় না। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়। বাইরে বের হওয়া বন্ধ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। যেহেতু রোগের জীবাণু ভেতরে থাকতেও পারে, তাই মাস্ক ব্যবহার করতেও বলা হয়। বাড়ির লোকেদেরও এই সময় রোগীর সাথে কম যোগাযোগ রাখতে বলা হয়।
হোম কোয়ারেন্টাইন - Home Quarantine
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘হোম আইসোলেশন বলে কিছু হয় না। আইসোলেশন বাড়িতে রেখে সম্ভবও নয়। বরং হোম কোয়ারেন্টাইন বলাটা অনেক যুক্তিযুক্ত। কোনও ব্যক্তি যখন নিজের বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনের সব নিয়ম মেনে, বাইরের লোকজনের সাথে ওঠাবসা বন্ধ করে আলাদা থাকেন, তখন তাকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলে। সম্প্রতি আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে না এলে রোগীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এক্ষেত্রেও ন্যূনতম ১৪ দিন ধরে আলাদা থাকার কথা। কোনও ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে এলে, বা রোগীর সংস্পর্শে এলে তার শরীরেও বাসা বাঁধতে পারে কোভিড-১৯। বাসা আদৌ বেঁধেছে কি না বা সে আক্রান্ত কি না এটা বুঝে নিতেই এই ব্যবস্থা নিতে হয়। এক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধির বাইরে কোনও আলাদা ওষুধ দেয়ার প্রশ্নই নেই।
পানি, ভাল করে খাওয়া-দাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর নানা পথ্য, এসব দিয়েই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
No comments:
Post a Comment