কর ও মূল্য পরিশোধসাপেক্ষে গ্রাহকরা আজ থেকেও অনিবন্ধিত সিম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে অনিবন্ধিত সিম নিয়ে শেষ মুহূর্তে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সিম নিবন্ধন নিয়ে বারবার মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির অবস্থান পরিবর্তন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স ও মূল্য পরিশোধসাপেক্ষে অনিবন্ধিত সিম নিবন্ধনের সুযোগ, ট্যাক্স আরোপের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না দেয়া এবং অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করতে অপারেটরগুলোর সময় প্রার্থনার কারণে এ জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বিটিআরসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল পূর্ব নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও সব মোবাইল সংযোগ আজ ১ জুন থেকেও একই নিয়মে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। তবে জরিমানা হিসেবে সিম প্রতি ট্যাক্স ও মূল্য পরিশোধ করতে হবে গ্রাহককে।
বিটিআরসির আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনিবন্ধিত সিম যে ব্যবহারকারী এত দিন ব্যবহার করে এসেছেন, তিনি আগামী দুই মাস পর্যন্ত সেটি আর চালু করার সুযোগ পাবেন না। দুই মাস পর নির্ধারিত নিয়মে অর্থাৎ ১৫০-২০০ টাকা খরচ করে সিমটি আবার চালু করা যাবে।
তবে আগের নিয়ম থেকে সরে এসে বিটিআরসি গতকাল বলেছে, নির্দিষ্ট ট্যাক্স পরিশোধের মাধ্যমে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন সম্পন্ন করে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিমটি আবার চালু করা যাবে। তবে অনিবন্ধিত সিম ১৮ মাস পর যে কোন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে পারবে অপারেটররা।
এ ব্যাপারে বিটিআরসি সেক্রেটারি সারওয়ার আলম গতকাল শেষবেলায় বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো রকমের অর্থ ব্যয় ছাড়াই ৩১ মে মধ্যরাতেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে। এরপর অনিবন্ধিত সিম বন্ধ হয়ে যাবে। আর ১ জুন থেকে অনিবন্ধিত সংযোগও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে, তবে সে জন্য সংযোগমূল্য প্রয়োজন হবে।’
তবে এ সংযোগমূল্য কিভাবে নির্ধারিত হবে এবং তা কিভাবে কালেক্ট করা যাবে সে বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইলফোন অপারেটররা গতকাল সন্ধ্যায় বিটিআরসিকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা চেয়ে অপারেটররা বলছেন, ‘এটি ইমপ্লিমেন্ট (কার্যকর) করতে তাদের অনেক সময় লাগবে।’
একটি শীর্ষ মোবাইলফোন অপারেটররের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘সিম ট্যাক্স নেয়ার কথা আইন অনুসারে এনবিআরের। কিন্তু এ বিষয়ে এনবিআরের কোনো নির্দেশনা নেই। আর বিটিআরসি আমাদের এক দিন আগে মঙ্গলবার এক নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, সিম ট্যাক্স দিয়ে রি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এক দিনে আমরা এ মেকানিজম কিভাবে ঠিক করব!’
নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স নিয়ে সিম নিবন্ধনে বিটিআরসির ওই নির্দেশনা মানতে আরো এক মাস সময় প্রয়োজন হবে বলেও চিঠিতে জানায় অপারেটরগুলো।
চিঠিতে আরো বলা হয়, যে সব সংযোগ রেজিস্ট্রেশন করা হবে সেগুলোর জন্য কাস্টমাররা আগেই সিম ট্যাক্স দিয়েছে। পুনরায় তাদের কাছ থেকে সিম ট্যাক্স নেয়া হলে তা ডাবল ট্যাক্সেশন হবে।
অন্য দিকে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে বিটিআরসিকে অপারেটররা বলেছে, ৩১ মে (গতকাল) জিরো আওয়ারেই অনিবন্ধিত সব সিম বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলছে, আউটগোয়িং লক করে দেয়া সহজ হলেও ইনকামিং বন্ধ করতে হবে ম্যানুয়ালি। এ জন্য অপারেটরদের ভিন্নতায় সময় লাগবে তিন থেকে ৫ দিন। চিঠিতে আরো বলা হয়, যদি আনরেজিস্টার্ড সিম রেজিস্ট্রেশনের অপশনই খোলা থাকে, তাহলে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে কাস্টমারকে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হয়ে থাকে, সে কোডটি কিভাবে পাঠানো হবে?
তবে বিটিআরসি এ রকম চিঠি গতকাল পেয়েছে বলে জানালেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি।
এ দিকে অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করে দেয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করেছেন টেলিকম আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার অনিক আর হক। গতকাল এর শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়নি। আজ ১ জুন এর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন অনিক আর হক।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা ইউটিলিটি সার্ভিস। আপনি চাইলেই এটা ‘গায়ের জোরে’ বন্ধ করে দিতে পারেন না। আপনি কোন আইনে এটা বন্ধ করবেন সেটি গ্রাহকদের জানাননি।’
অনিক এর আগে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করার পর আদালত তা খারিজ করে দিয়েছিল।
এ দিকে মোবাইলফোন অপারেটরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যানুসারে বায়েমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সংযোগ রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক নিবন্ধন করেছেন। বিটিআরসির হিসাবে, মোবাইলফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১৯ লাখ। সেই হিসেবে প্রায় আড়াই কোটি সিম অনিবন্ধিত রয়ে গেছে।