হ্যান্ডসেট নিবন্ধন ছাড়া মিলবে না কোন মোবাইল বা স্মার্টফোন সেবা। অবশ্য এখনো এই প্রক্রিয়াটি চালু হয়নি। দেশের মোবাইল ফোনের ৩০ শতাংশ আমদানি হয় অবৈধ পথে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি যেমন হয়, হ্যান্ডসেট চুরি কিংবা হারিয়ে গেলে সেটি খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর।
আবার চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেট আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে ব্যবহার হলে ফেঁসে যেতে পারে নিরীহ গ্রাহক। এমন নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের আওতায় আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। এতে মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক অপরাধ দমন, হ্যান্ডসেট চুরি, অবৈধ আমদানি ও নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, দেশে যে হ্যান্ডসেটগুলো বৈধভাবে আমদানি হচ্ছে কিংবা স্থানীয়ভাবে সংযোজন বা উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর ১৫ ডিজিটের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর নিয়ে একটি বৈধ ফোনের ডাটা বেইস তৈরি করা হবে। এতে মানুষ যখন মোবাইল ফোন কিনতে যাবে তখন তারা সেই সেটের আইএমইআই নম্বর দিয়ে জানতে পারবে যে তাদের সেটটি বৈধ নাকি অবৈধ। এ ছাড়া বিটিআরসি তাদের ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (ইআইআর) খসড়া নির্দেশনা তৈরি করবে, যার আওতায় দেশের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
সূত্র মতে, হ্যান্ডসেট নিবন্ধনে গ্রাহকদের খুব বেশি কিছু করতে হবে না। পুরো প্রক্রিয়াটির কাজ করবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এ বিষয়ে খসড়াও তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, মোবাইল সিম নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার সুফল মিলেছে। এতে এসংক্রান্ত অপরাধ অনেকটা কমেছে। হ্যান্ডসেট নিবন্ধন করলে এ ক্ষেত্রে আরো উন্নতি হবে। আগে থেকেই সিমের সঙ্গে এনআইডি সংযুক্ত করা আছে। এখন মোবাইল হ্যান্ডসেটের মধ্যে থাকা ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর মিলিয়ে নতুন আরেকটা ডাটা বেইস করবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ইআইআর ডাটা বেইস।
এই ডাটা বেইসের জন্য গ্রাহককে কিছুই করতে হবে না। সব তথ্য যেহেতু মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে আগে থেকেই আছে তারা এখন শুধু তিনটি বিষয়কে এক করে একটি ডাটা বেইস তৈরি করে বিটিআরসির কাছে হস্তান্তর করবে।
বিটিআরসির নির্দেশনা জারির দুই মাসের মধ্যে ইআইআর সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে অপারেটরদের। আইএমইআই নম্বর না থাকা হ্যান্ডসেট এ সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য এমন হ্যান্ডসেটের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
এ জন্য বিটিআরসি প্রণীত নির্দেশনার খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললে খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শেষে বাস্তবায়নে আরো দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ জানান, অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইআইআর ডাটা বেইস তৈরি করবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। পরে এটি জাতীয়ভাবে ইআইআরের সঙ্গে যুক্ত হবে। গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও সরকার সবার জন্যই সহায়ক হবে এ ব্যবস্থা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ
ইআইআর ডাটা বেইসে হ্যান্ডসেটগুলো থাকবে তিনটি শ্রেণিতে।
১। ব্ল্যাক,
২। হোয়াইট ও
৩। গ্রে।
১। ব্ল্যাক,
২। হোয়াইট ও
৩। গ্রে।
হোয়াইট বলতে বোঝানো হয়েছে বৈধভাবে আমদানি করা, বৈধভাবে দেশে তৈরি ও বিটিআরসিতে নিবন্ধিত হ্যান্ডসেট।
সতর্কতার তালিকায় থাকা হ্যান্ডসেট রাখা হবে গ্রে শ্রেণিতে। এই শ্রেণিভুক্ত হ্যান্ডসেট শুধু নির্দিষ্ট সিমে কাজ করবে। এসব হ্যান্ডসেট গ্রাহকদের নিবন্ধনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সময় নির্ধারণ করে দেবে।
চুরি হওয়া, আইএমইআই মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল আইএমইআই ও কিস্তিতে কেনা হ্যান্ডসেটের মূল্য পরিশোধ করা হয়নি, এমন আইএমইআই নম্বর থাকবে ব্ল্যাক শ্রেণিতে। এর বাইরে কিছু নম্বর ভিআইপি তালিকায় থাকবে।
বিদেশ থেকে উপহার হিসেবে নিয়ে আসা হ্যান্ডসেট অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে ক্রয় রসিদ বা অন্যান্য মূল দলিল দেখিয়ে নিবন্ধন করা যাবে।
হ্যান্ডসেট বিক্রি/ ক্রয় করতে চাইলে অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে এনআইডি থেকে আইএমইআই অনিবন্ধন করা যাবে। যে ওই হ্যান্ডসেট কিনবে, সে তার নামে সেটি নিবন্ধন করে নিতে পারবে।
No comments:
Post a Comment