সামান্য জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা কিংবা ডায়রিয়া। ভাবলেন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কী দরকার। স্থানীয় ফার্মেসিতে গেলেন। ফার্মেসিওয়ালা ডাক্তার নয়। রোগ সম্পর্কে তার জ্ঞান নেই। ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে নামেমাত্র ধারণা। সেই ধারণায় আপনাকে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দিলো। জ্বর হলে সাধারণত তিন দিন দেখতে হয়। তারপর রক্ত পরীক্ষা করানোর পর ওষুধ দিতে হয়। ভাইরাস জ্বর এমনিতেই সেরে যায়। সবসময় ওষুধ লাগে না।
প্যারাসিটামল জ্বরের উত্তম ওষুধ। সাধারণ জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কোনোই প্রয়োজন নেই। এটা চিকিৎসকদেরই কথা। আমাদের দেশে ৯০ শতাংশ ওষুধ বিক্রি হয় চিকিসৎকের পরামর্শ ছাড়া। ফলে ওষুধের অপব্যবহার হয় বেশি। অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কোর্স কমপ্লিট করতে হয়। না হলে ওই রোগে ওই অ্যান্টিবায়োটিক পরে কাজ করে না।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবীর মতো বিভিন্ন জীবাণুর ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধী অবস্থা বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এখন সারা বিশ্বেই উদ্বেগের বিষয়। অ্যান্টিবায়োটিক যখন তখন খাওয়া যায় না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তো নয়ই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিবায়াটিক ব্যবহারে বিধিবদ্ধ দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসকদের যথাসম্ভব কম আ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
প্রয়োজনের তুলনায় কম, অতিরিক্ত মাত্রায়, মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। বছরে বিশ্বে ৭০ হাজার লোক মারা যায় রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুুর মাধ্যমে। কোর্স শেষ না করলে রোগীর দেহে জীবাণু থেকে যায়। কোনোভাবে এই জীবাণু অন্যদের দেহে প্রবেশ করতে পারে। তখন ওই ব্যক্তিকে একই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যায় না। তাকে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়।
যিনি কোর্স শেষ করলেন না, তার শরীরে ওই অ্যান্টিবায়োটিক সহসা কাজ করবে না। আগে সাতটা খেলে পড়ে কাজ হতো। এখন আরো বেশি খেতে হবে। কারণ, নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে রেজিস্ট্যান্স বেশি হচ্ছে। কমমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করছে না। বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয় ডাক্তারদের। এটা বড়ই দুঃসংবাদ।
মফস্বলের গরিব মানুষ যারা, তারা বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। কিছু ডাক্তার আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন। রোগীর ক্ষতির দিকটা মোটেই ভাবা হয় না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। বাড়িয়ে দিচ্ছে মৃত্যু ঝুঁকি।
মুড়িমুড়কির মতো ওষুধ বিক্রি আমাদের দেশ ছাড়া কোথাও হয় না। কুসংস্কার আছে, অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সব রোগ ভালো হয়। সে কারণে অনেকে কিছু না ভেবেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। ভুল ওষুধ সেবন শুধু রোগ বাড়িয়েই দেয় না, মৃত্যুর কারণও হতে পারে। জ্বরের সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ প্যারাসিটামল। অথচ হরদম আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
পাশাপাশি যেসব ডাক্তার পরীক্ষা না করে অনুমান করে অ্যান্টিবায়োটিক দেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে বাজার সয়লাব। এরা কারা? কোন সাহসে জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এ অধিকার তাদের কে দিয়েছে। দ্রুত এসব ভুঁইফোড় কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু বড়দেরই নয়, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের নির্মম শিকার কোমলমতি শিশুরা। রাজধানীর শিশুরা বছরে গড়ে ১০ বারের বেশি অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পন্ন করছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য ওঠে এসেছে। কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ আমরা বোঝতে পারছি না। একই অ্যান্টিবায়োটিক বারবার গ্রহণ করা হয়। ফলে একসময় এই অ্যান্টিবায়োটিক আর শরীরে কাজই করবে না। এমনটা যদি শিশুকালেই হয়, বড় হওয়ার পরে কী হবে ভাবা যায়! শিশুদের ভাইরাল ডায়েরিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন নেই।
১২ থেকে ১৮ নভেম্বর বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো- অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ক্ষতির কারণ, বিনা প্রেসক্রিপশনে তা কিনতে বারণ। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে আমাদের সবার সচেতন হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
Safiq69@gmail.com
Safiq69@gmail.com
No comments:
Post a Comment