গা‌র্মেন্টস লট বা স্টক ব্যবসা

গার্মেন্টস ষ্টক লট ব্যবসা করে হতে পারেন সফল। আমা‌দের দে‌শে পোশাক শিল্প বা গা‌র্মেন্টস শিল্প খুবই সম্ভাবনাময় এক‌টি শিল্প। বাংলা‌দে‌শের সব থে‌কে প্র‌তি‌ষ্ঠিত শিল্প এই পোশাক শিল্প। এই শিল্প ঘি‌রেই গ‌ড়ে ও‌ঠে‌ছে নানান ব্যবসার প্রস‌স্থি। যা দিন‌কে দিন আরও সমৃদ্ধশালী হ‌য়ে ওঠ‌ছে। এটার ম‌ধ্যে অন্যতম হ‌লো গা‌র্মেন্টস স্টক লট ব্যবসা। ষ্টক লট বিভিন্ন সংখ্যার হতে পারে। হতে পারে শর্ট কোয়ান্টিটি ষ্টক লট অথবা লং কোয়ান্টিটি ষ্টক লট। সংখ্যার অনুপাতে এটা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
গার্মেন্টস শিল্পে স্টক-লট হচ্ছে কোন কারনে তৈরি পোশাক ক্রেতার কাছে ঠিক মত পৌঁছে দিতে না পারলে, গার্মেন্টসে তা স্টক হয়ে যাওয়া । গার্মেন্টস শিল্পে বেশ কয়েকটি কারনেই পোষাক স্টক হয়ে যায়। তন্মধ্যে শিপমেন্ট ক্যান্সেল, শিপমেন্ট ডিলে, কন্টিনিউয়াস রি-চেক, এলসি প্রব্লেম অন্যতম। কিছু কিছু বায়ার
বিভিন্ন অযুহাতে শিপমেন্ট ক্যান্সেল করে, যাতে সে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমমূল্যে পন্যগুলো ক্রয় করতে পারে। ধ‌রি, কোন কারণবশত: কিছু গা‌র্মে‌ন্টসের টি শার্ট স্টক হ‌য়ে গেলো। এ ক্ষেত্রে যা করা হয় তা হল, টিশার্ট পুরাই রেডি থাকে। আপনি শুধু তা কিনবেন আর বাজা‌রে বিক্রি করবেন। যাদের পুঁজি একেবারেই কম এবং যারা শোরুম বা সাধারণ দোকান দেওয়ার চিন্তায় আছেন তাদের জন্য এটা হ‌তে পা‌রে আদর্শ ব্যবসা।

স‌র্বোত্তম হ‌লো প্রথ‌মে আপ‌নি স্টক ল‌টের ধারণা নি‌য়ে, জে‌নে ও বু‌ঝে তারপর ছোট ছোট গার্মেন্টস স্টক কিনে লোকাল মার্কেটে বিক্রি করা শুরু করুন। এ‌তে মুনাফা খারাপ হবে না। ধীরে ধীরে সহ‌জেই ব্যবসা বড় করতে পারবেন।
 
যেখা‌নে পাওয়া যায়ঃ
কোথায় কোন মাল আছে তার খোঁজ খবর রাখুন, দেখুন ও বুঝুন। বিভিন্ন বাইং হাউস এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে; যারা ছোট ছোট লটে গার্মেন্টস আইটেম বিক্রি করে। এছাড়াও অনেক লোকাল ব্যবসায়ী আছেন। যারা লোকাল পার্টির কাছে মাল বিক্রি করে। আপনি তাদের সাথেও যোগাযোগ করুন। কোন পরিচিত বায়িং হাউস বা লোকাল ব্যবসায়ী থাকলে তাদের সাহায্য নিতে পারেন। সরাসরি গার্মেন্টস থেকে মাল নামানোর চাইতে এটা কম ঝামেলার।
অনেক লোকাল ব্যবসায়ী বা দালাল আ‌ছে। যাদের কাছে ভাল ভাল মালের কালেকশন থাকে। তাদের সাথে সম্পর্ক গ‌ড়ে তুলুন। কোথায় এবং কাদের কাছে, কি মাল আছে তা জানুন। য‌দি আপনার পুঁজি কম হয়, তাহ‌লে আপনার জন্য এটাই সব‌চে‌য়ে ভা‌লো। মা‌ঠে নাম‌লেই আপনি এই ব্যবসার ব্যাপারে অনেক কিছু বুঝে যাবেন। তখন আর কঠিন মনে হবে না। লোকাল ব্যবসায়ী বা দালাল‌দের সা‌থে ভা‌লো সম্পর্ক গ‌ড়ে তু‌লে তারপর ধী‌রে ধী‌রে বায়িং হাউস বা গা‌র্মেন্ট‌সের দি‌কে হাত বাড়ান। পরিচিত বা কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিন। এ‌ক্ষে‌ত্রে ব্যবসার কাজের অগ্রগতি দ্রুততর হবে।

যা প্র‌য়োজনঃ
স্টক লট আই‌টেম এর বাপারে আপনার ধারনা অবশ্যই থাকতে হবে যে, কোন কোন গার্মেন্টস আইটেম কত দামে কেনা হয় এবং কত দামে তা বিক্রয় করা সম্ভব।
এছাড়াও ব্যবসার প্র‌য়োজ‌নে যখন কারও সা‌থে কথা বল‌বেন বা আমন্ত্রন জানা‌বেন, তখন অবশ্যই আপনার নি‌র্দিষ্ট এক‌টি ঠিকানা থাক‌তে হ‌বে। তা না হলে আপনার প্রতি মানু‌ষের আগ্রহ কমে যাবে।
এক্ষেত্রে খুব বেশি ঝামেলা করতে হবে না। দোকান, শোরুম বা অ‌ফিস না থাক‌লে, আপনার বাসার সামনের রুম অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য খুব বেশি কিছু লাগবে না। একটা টেবিল, দুইটা চেয়ার আর একটা কম্পিউটার। টেবিলে অবশ্যই কিছু কাগজপত্র থাকবে। এ‌তেই আপনার অফিস হয়ে গেল। যা দি‌য়ে প্রাথ‌মিক কাজ সহ‌জেই সম্পন্ন কর‌তে পার‌বেন। 

যেসব জায়গায় বি‌ক্রি কর‌বেনঃ
বা‌য়িং হাউস বা গার্মেন্টস থেকে শার্ট, টিশার্ট, বাচ্চা ও ম‌হিলাদের কাপড় এনে আপনার শহ‌রের মার্কেট, শোরুম, দোকানে বি‌ক্রি কর‌তে পা‌রেন। তাছাড়া প‌রি‌চিত বা বন্ধু বান্ধব, শুভাকাঙ্খী‌দের পোশা‌কের দো‌কা‌নেও বি‌ক্রি কর‌তে পা‌রেন। এ‌ক্ষে‌ত্রে লোক‌ভে‌দে বি‌ক্রির পর বা ক‌য়েক‌দিন পর মুল্য প‌রি‌শো‌ধের ব্যবস্থা রাখা ভা‌লো।
আপনার যদি লোকাল মার্কেটের ক্রেতা পরিচিত থাকে, তাহলে আপনি ভাল ভাল কোয়ালিটির গার্মেন্টস আইটেম বাজার মুল্যের চাইতে কম মুল্যে কিনে আপনি আপনার ওই ক্রেতার কাছে বিক্রয় করবেন। এ জন্য আপনি চাইলে কোন আইটেম এর স্যাম্পল নিয়ে লোকাল মার্কেট গুলোতে গিয়ে দেখাতে পারেন যে, আপনার কাছে এই আইটেম এতগুলো আছে এবং মূল্য এতো। এতে ক‌রে আপনার যেমন অভিজ্ঞতা বাড়বে, তেমনি বানিজ্যিক ধারনাও বৃ‌দ্ধি পা‌বে। 

লাভ কেমন হ‌বেঃ
স্টক লট ব্যবসায় লা‌ভের কোন লিমিট নেই। আপনি যদি ৯০ টাকা করে ১০০০ পিস মাল কিনেন এবং বিক্রি করতে পারেন ১০০ টাকায়। তাহলে ৯০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতি পিসে ১০ টাকা করে লাভ করে আপনার লাভ হবে ১০,০০০ টাকা।

কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরীঃ
না জে‌নে, না বুঝে কোন লট কেনা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে আপনার লস হবার সম্ভাবনা থেকে যাবে। বাজার দর হিসেব করে যা করা প্র‌য়োজন, তাই করবেন।
অ‌নেক সময় দেখা যায়, কোন কার‌ণে ক্রেতা‌কে স্যাম্পল দে‌খি‌য়েও, সময় মতো মাল ডে‌লিভারী দেয়া হ‌লো না বা যে মাল দি‌তে চে‌য়ে‌ছেন তা দি‌লেন না। আপনি চরম বিব্রত হলেন। সেই সাথে আপনার ক্রেতাও বিরক্ত হল। এক্ষেত্রে ক্রেতা হাতছাড়া হ‌য়ে যায়। তাই, কারো কাছে পণ্য দেখা‌নো বা অর্ডার নেয়ার আ‌গে আপনাকে ১০০% নিশ্চিত হতে হবে পণ্য‌টি আসলেই আছে কিনা বা দি‌তে পা‌বেন কিনা। কারণ, ব্যবসায় ক্রেতা বি‌ক্রেতার সম্প‌র্কের চে‌য়েও গুরুত্বপূর্ণ হ‌লো কথা অনুযায়ী কাজ করা।

এর সুবিধা সমূহঃ
* সহজে পাওয়া সম্ভব,
* বহু ধর‌নের ডিজাইন,
* দাম কম, তাই অনেক টিশার্ট কেনা যায়।

এর অসুবিধা সমূহঃ
* কাপড় মান সম্পন্ন নাও হ‌তে পারে,
* অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেলাই খরচ হতে পারে,
* ধোয়ার পর কাপড়ের রং উঠতে পারে,
* কাপড় হতে ভুশকী ঊঠতে পা‌রে,
* রং জ্বলে যেতে পারে,
* সাইজ ট্যাগ ভুল থাকতে পারে,
* এক সাথে অনেক বে‌শি কিনে রাখতে হয়।

বি‌শেষ কিছু কার‌ণে এই স্টক লট ব্যবসা না করাই ভালো। এরকম মানের পণ্য নিয়ে ব্রান্ডিং করা সম্ভব না। তবে প্রাথ‌মিক জ‌টিলতাকে জয় ক‌রে শুরু কর‌লে ভালো আয় হবে।

No comments:

Post a Comment