আউটসোর্সিং ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার সাথে থাকছে.. গুরুত্বপূর্ণ সফট্ওয়্যার, অনলাইন জগতের বিশেষ খবর, অতিপ্রয়োজনীয় টিপস & ট্রিকস- সহ আরও কিছু আপডেট তথ্য, যা আপনার অনলাইন জীবনকে সমৃদ্ধশালী করতে সহায়ক হবে- উন্মুক্ত ‘সংগ্রহশালা’
ভুল মাস্কের ভয়াবহ বিপদ
সংক্রামক রোগ: রাসূল সা:-এর নির্দেশনা এবং করণীয়
করোনায় নাগরিক ঐক্যের ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
করোনা ভাইরাসে ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে নাগরিক ঐক্যের পক্ষে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম কাজ করবে।
টিমের চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন- ডা. রিফাত হাসান রনি, ডা. বুশরা সাদিয়া। তারা দুজন করোনার চিকিৎসাসেবা প্রদানে সনদপ্রাপ্ত। এ টিমের নেতৃত্ব দেবেন ডা. শোয়েব মোহাম্মদ এবং ডা. রুবাইয়া আনোয়ার।নাগরিক ঐক্যের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চিকিৎসকদের পাশাপাশি শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে। একইভাবে দেশের কয়েকটি জেলায় সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
নিচের নম্বরে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যাবে -
ডা. শোয়েব মোহাম্মদ (০১৭১৯-৪৩৫১৮৫)
ডা. রুবাইয়া আনোয়ার (০১৭০৬-৩৪০২৫৭)
ডা. রিফাত হাসান রনি (০১৬৮০-৭৩৩১৮৪)
ডা. বুশরা সাদিয়া (০১৮৮৪-৯০৭৭২৯)
দেশে করোনা চিকিৎসার উপকরণ যেমন পরীক্ষার কিট, ডাক্তারদের সুরক্ষা উপরকরণের অভাব থাকার পরও নাগরিক ঐক্যের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিম প্রয়োজনে পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার করে অক্সিজেন, নেবুলাইজার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধসহ রোগীদের কাছে গিয়ে সেবা প্রদান করবে। তাদের করোনা পরীক্ষা এবং প্রয়োজন হলে সরকার অনুমোদিত হাসপাতালে ভর্তি এবং পরবর্তী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাগরিক ঐক্যের মেডিকেল টিমের সঙ্গে যোগাযোগের পর যাদের কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনের পরামর্শ দেয়া হবে, তারা তা পালন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন কিনা - তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সাত দিনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন! Increase Immunity
প্রতিমুহূর্তে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, ভাইরাস আমাদের দেহ আক্রমণের চেষ্টা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হওয়া দরকারি।
বারবার ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণের শিকার হলে এবং সুস্থ হতে বেশি সময় লাগলে বুঝতে হবে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে। তখন এটি বাড়ানো প্রয়োজন। কিছু পদক্ষেপ নিলে কয়েক দিনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বোল্ডস্কাই জানিয়েছে সাত দিনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায়।
গ্রিন ও ব্ল্যাক টি
গ্রিন ও ব্ল্যাক টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোয় খুব কার্যকর। তবে বেশি খাবেন না। দিনে এক থেকে দুই কাপ খান। শরীর ভালো রাখতে ক্যাফেইন (চা, কফি) জাতীয় খাবারের পরিবর্তে গ্রিন টি খান।
কাঁচা রসুন
রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে এলিসিন, জিংক, সালফার, সেলিনিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ই। এ ছাড়া রয়েছে অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এসব বিষয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর। সাত দিনের প্রথম দিন কাঁচা রসুন খান।
দই
দই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। এটি হজমের জন্যও ভালো। তাই দই খান। তবে খালি পেটে খাবেন না।
ওটস
এতে রয়েছে আঁশ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। প্রতিদিন খেলে রোগকে সহজে মোকাবিলা করায় সহায়তা পাবেন।
ভিটামিন-ডি
ভিটামিন-ডি হাড়ের জন্য ভালো। এটি হাড় মজবুত রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমরা জানি, ভিটামিন-ডি-এর ভালো উৎস হলো সূর্যের আলো। তবে খুব কড়া আলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। সকালের হালকা আলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
লেবুর শরবত
ভিটামিন-সি রোগবালাইের আক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। এটি দেহকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফ্রি রেডিক্যালসের হাত থেকে প্রতিরোধ করে। লেবুতে রয়েছে এই ভিটামিন-সি। তাই এই সাত দিন অবশ্যই লেবুর শরবত খান। এ ছাড়া ভিটামিন-সি পেতে কমলার রসও খেতে পারেন।
জিংক
শরীরে এনজাইমের কার্যক্রম ঠিকমতো চলার জন্য জিংক প্রয়োজন। জিংকের চাহিদা পূরণে সবুজ শাকসবজি এবং গমের আটার রুটি, শিম ইত্যাদি খেতে পারেন। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জিংক সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।
যে খাবারগুলো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বর্তমান বিশ্ব ধূকছে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে। এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। শরীরের সুস্থতা এবং রোগের আক্রমণে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে টিকে থাকতে প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার রক্ষা কবচ। কিছু খাবার আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সবসময় সুস্থ রাখে।
এমন কিছু খাবারের তালিকা এখানে দেয়া হলো। দেখে নিন-
১. ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবারে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাবারে কমলা, লেবু, পেয়ারা, টমেটো, লেবু, নারকেল, পেয়ারা, কালোজামের মতো খাবার রাখুন। বিটা-ক্যারোটিন যা শরীরের বলিরেখা দূর করে এবং রক্ত পরিশোধন করে।
২. মিষ্টি আলু
গাজরের মতো মিষ্টি আলুতেও থাকে বিটা-ক্যারোটিন। মানুষের শরীরে ঢুকে এটি হয়ে যায় ভিটামিন এ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এমনকি বুড়ো হয়ে যাওয়া ঠেকাতেও কাজ করে বিটা-ক্যারোটিন।
৩. চিকেন স্যুপ
বাসায় বানানো চিকেন স্যুপ মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকে কারনোসিন নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি ভাইরাস জ্বরের সংক্রমণ থেকে শরীরকে বাঁচাতে ভূমিকা রাখে।
৪. রসুন
রসুন রান্না করা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। কাঁচা রসুন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে, ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে ভালো কাজ করে রসুন। শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতেও কাজ করে এটি।
৫. আদা
খাবারের ঝাঁজ ছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেরও ভালো উৎস আদা। ফলমূল বা সবজি থেকে পাওয়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে কাজও করে তাড়াতাড়ি।
৬. দুধ ও দই
জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ ও দই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুধ হজম না হলে দুধের তৈরি খাবার খান। দিনে অন্তত ১০০ গ্রাম দই অথবা ১ কাপ দুধ খাবার চেষ্টা করুন।
৭. কাঠবাদাম
কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ যা খুবই শক্তিশালী একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি ঠাণ্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বজায় রাখে।
৮. ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার
ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধে খুব সাহায্য করে। গাজর, টোমাটো, কুমড়া বেশি করে খান। সারাদিনে ১ কাপ গাজরের জুস খেতে পারলে দারুণ উপকার পাবেন। গাজরের জুস দুধের থেকে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর।
৯. মধু ও দারুচিনি
মধু ও দারচিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১০. আমলকী
আমলকীর সাথে অল্প আদা ও খেজুর বেটে নিন। ভিটামিন সিতে ভরপুর আমলকীর এই চাটনি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।
১১. পানি
সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন। এছাড়া হারবাল চাও খেতে পারেন, কেননা তা শরীরকে নীরোগ রাখতে সহায়তা করে। সফট ড্রিঙ্ক কম খান।
১২. গ্রিন টি
তুলসি ও গ্রিন টি দেহের জন্য দারুণ উপকারী। এগুলো অর্গানিক, ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী, ক্যালোরি অনেক কম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। গ্রিন টি খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।
ডেঙ্গু জ্বরে পেঁপে পাতার রস বা নারিকেল তেল কি আসলেই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর?
ডেঙ্গু নিরসনে পেঁপে পাতার রসের ভূমিকার পরীক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ডেঙ্গুর কিছু প্রাকৃতিক সমাধানের কথা ছড়িয়ে পড়েছে - যার মধ্যে একটি হলো পেঁপে পাতার রস।
বলা হচ্ছে, পেঁপে পাতার রসের সাথে আরো কিছু উপাদান যোগ করে একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে পান করলে ডেঙ্গু থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
কিন্তু আসলেই কি পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে?
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, পেঁপে পাতার রস যে ডেঙ্গু নিরসনে ভূমিকা রাখে, এই দাবির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
"ডেঙ্গু নিরসনে পেঁপে পাতার রসের ভূমিকার পরীক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি যে এটি ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর।"
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরীক্ষা হলেও বৈজ্ঞানিক নীতি অনুসরণ করে কোনো ধরণের 'র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল'-এর মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়নি বলে জানান মি. মুজিবুর রহমান।
"কোন ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল হতে হবে। এছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে ঐ ওষুধটি কোন একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর।"
মি. রহমান বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে পেঁপে পাতার রসের কার্যকারিতার বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
তবে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে ডেঙ্গু রোগীকে পেঁপে পাতার রস খাওয়ানোর উপদেশ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
২০১৭ সালে ভারতে ৪০০ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় উঠে আসে যে পেঁপে পাতার রস খাওয়া রোগীদের রক্তকণিকার পরিমাণ অন্য রোগীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি বেড়েছে এবং তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অপেক্ষাকৃত কম। খবরটি তখন 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'তে প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়া পেঁপে পাতার রস খাওয়ানো ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে রক্ত নেয়ার প্রয়োজনীতার হারও কম হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।
ডেঙ্গুর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের নির্দিষ্ট পরিমাণে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটে।
নারিকেল তেল মাখলে কি আসলেই মশা কামড়ায় না?
পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে আরেকটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হচ্ছে - সেটি হলো পায়ে নারিকেল তেল মাখা।
নারিকেল তেল মশা তাড়ায় এবং তেল পায়ে মাখলে মশার কামড় থেকে বাঁচা সম্ভব - এই দাবির সাথে পুরোপুরি একমত প্রকাশ করেননি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা আখতার।
"মশা যেহেতু চামড়া ভেদ করে রক্ত পান করে, তাই চামড়ার ওপর ঘন যেকোন ধরণের তেলই মশাকে কিছুটা প্রতিহত করতে পারে বলে আমি মনে করি।"
তবে এক্ষেত্রে নারিকেল তেলের সাথে কীটনাশক জাতীয় কোন দ্রব্য মিশিয়ে নিলে আরো বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন মিজ. আখতার।
"ন্যাপথলিন বা কর্পূরের গুড়া বেশ ভাল কীটনাশক। নারিকেল তেলের সাথে কর্পূরের গুড়া মিশালে মশা নিবারনে তা আরো বেশি কার্যকর হতে পারে।"
এছাড়া কড়া গন্ধ থাকায় নারিকেল তেলের বদলে সরিষার তেলও মশা দূরে থাকতে কার্যকর হতে পারে।
বিবিসি বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় : How to Increase Immunity
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায় - চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীর মতে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে।
চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।
এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা।
মানুষ সচরাচর যে ধরণের খাবার খায়, সেগুলো হচ্ছে - শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার।
এ ধরণের খাবার শরীরের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর উপর।
দুগ্ধজাত খাবার
দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি।
মানুষের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়।
বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন, পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবারগুলোর পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোন ঘাটতি থাকবে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।
তিনি বলেন, যেমন শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
ভিটামিন 'বি' এবং 'সি' জাতীয় খাবার
এই ভিটামিনগুলো পানির সাথে মিশে যায়। এগুলো শরীরে জমা হয়না। চিকিৎসক কল্লোলের মতে, প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
এই ভিটামিনগুলো পানিতে মিশে যাওয়ার কারণে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।
শরীরের নার্ভ-এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই দুই ধরণের ভিটামিন কাজ করে।
শরীরের ভেতরে বিক্রিয়ার কারণে যেসব সেল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো সারিয়ে তুলতে কাজ করে ভিটামিন সি।
দুধ এবং কলিজার মধ্যে ভিটামিন বি আছে। টক জাতীয় যে কোন ধরণের ফল- লেবু, আমলকী, কমলা, বাতাবিলেবু এবং পেয়ারাতে ভিটামিন সি আছে।
চা-কফি কতটা খাবেন?
অতিমাত্রায় চা-কফি পান করা শরীরের জন্য ভালো নয় বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসক মি: কল্লোল।
"ধরুন একজন ব্যক্তি যদি দিনে সাত কাপ চা খায়, এবং প্রতি কাপে এক চামচ চিনি থাকে তাহলে তিনি কিন্তু প্রতিদিন সাত চামচ চিনি খাচ্ছেন। এই সাত চামচ চিনি শরীরের জন্য ভয়াবহ।" বলছিলেন মি: কল্লোল।
চা-কফিতে এমন অনেক উপাদান থাকে যার কোনটি শরীরের জন্য ভালো এবং কোনটি শরীরের জন্য খারাপ।
ভাত বেশি খাবেন না
একজন মানুষ প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খাবেন, তার ৬০ শতাংশ হওয়া উচিত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা।
এর পর ৩০ শতাংশ হতে হবে প্রোটিন এবং ৫ শতাংশের মতো থাকবে চর্বিজাতীয় খাবার।
মি: কল্লোল বলেন, "আমাদের দেশে দেখা যায়, শর্করা প্রচুর খাওয়া হচ্ছে কিন্তু সে পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা হয়না।"
তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে সেটি শরীরের ভেতরে ঢোকার পর ফ্যাট বা চর্বিতে রূপান্তর ঘটে।
অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবার সুষমভাবে খেতে হবে।
"আপনি হয়তো মনে করছেন যে আপনি প্রচুর পরিমাণে তেল, চর্বি, ঘি বা মাখন জাতীয় খাবার খাচ্ছি না। তাহলে আমার শরীরে এতো চর্বি জমা হয় কীভাবে?"
নিয়মিত ব্যায়াম অথবা অন্য যে কোন ধরণের শারীরিক পরিশ্রম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম করে তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে।
শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সাথে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছবে। তখন শরীরের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদন শুরু হবে।
সুতরাং প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রমের সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। মি: কল্লোল বলেন, এমন ধরণের পরিশ্রম করতে হবে যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে রেহাই মিলবে?
চিকিৎসক মি: কল্লোল বলেন, এর সাথে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া কিংবা না হওয়ার সম্পর্ক আছে কিনা সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। একজনের শরীরে কতটুকু জীবাণু ঢুকছে এবং সে জীবাণুটির আক্রান্ত করার ক্ষমতা কতটা সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
"ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। সে ভাইরাস যখন আমার শরীরে ঢুকছে, তখন আমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম অ্যাকটিভেট (কার্যকরী) হচ্ছে সাথে-সাথে। তখন আমার শরীর সাথে-সাথে সেটির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সুতরাং যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, এবং যে মশাটি কামড়াচ্ছে সেটির ভেতরে যদি জীবাণুর পরিমাণ কম হয়, সেক্ষেত্রে আমার শরীর ভালো রিঅ্যাক্ট (সাড়া) করবে।"
"বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন"
কর্মস্থলে করোনামুক্ত থাকার উপায়
বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসে স্তব্ধ, লড়াইয়ের আপ্রাণ চেষ্টায় সর্বমহল। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় সব দেশেই। প্রাণনাশের আশঙ্কায় গৃহবন্দি হচ্ছে মানুষ। তবুও কিছু মানুষকে যেতে হচ্ছে কর্মস্থলে। তাদের জন্য আতঙ্কটা আরও বেশি। ফলে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দিনের বেশিরভাগ সময় যেখানে থাকতে হয়; সেখানে তো কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতেই হয়। তাহলে জেনে নিন নিরাপদ থাকার উপায়-
ডেস্ক পরিষ্কার রাখুন
অফিসে ডেস্কে বসে কাজ শুরু করার আগেই চারপাশ ভালোভাবে মুছে নিন। কি-বোর্ড, কম্পিউটার, মাউস, ফোন ও অন্যান্য জিনিস জীবাণুমুক্ত করে নিন। এছাড়াও যেসব জিনিসে আপনি হাত দেন, সেগুলোও মুছে নিন। ওয়াইপ বা ব্লিচিং দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে মুছতে হবে।
একাধিকবার হাত ধোবেন
অফিসে থাকাকালীন একাধিকবার হাত ধুতে হবে। যতবার সম্ভব; ততবার হাত ধুতে হবে। কাজ করে খাওয়ার আগে হাত ধোবেন। দরজার হাতল ধরার পর হাত ধোবেন। বাড়ি যাওয়ার আগেও হাত ধুয়ে বের হবেন। যদি সাবান না থাকে, তাহলে স্যানিটাইজার লাগিয়ে নিন। তবে পানি ও সাবানে যতটা পরিষ্কার হয়, স্যানিটাইজারে তা হয় না।
করমর্দন করবেন না
সাধারণত মানুষের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস। তাই যতটা সম্ভব করমর্দন থেকে বিরত থাকবেন। কাজের জায়গায় অন্যদের দূর থেকেই অভিবাদন জানান। প্রয়োজনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন। অন্য কারো সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন।
স্মার্টফোন পরিষ্কার
ফোন থেকে ভাইরাস ছড়ানোর প্রবণতা থাকে। কেননা ফোন সবসময় ব্যবহার করা হয়। তাই সেটি পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। ফোনের স্ক্রিন ও ব্যাক কভার ভালোভাবে ওয়াইপস দিয়ে মুছে নিন। তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেন পানি না ঢোকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেকক্ষণ ধরে মুছতে হবে।
মাস্ক পরুন
কর্মস্থলে মাস্ক ব্যবহার করুন। নিজের এবং অন্যের নিরাপত্তায় সবাইকেই এ কাজটি করতে হবে। বিশেষত হাঁচি-কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন। বিশেষ করে যারা সড়ক নিয়ন্ত্রণে (ট্রাফিক) কাজ করেন তাদের জন্য মাস্ক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
পিপিই পরুন
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসক বা সেবকরা পারসোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) পরুন। তা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গিয়ে নিজেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য পিপিই’র ব্যবস্থা করা উচিত।
করোনা রোগীর প্রকৃত লক্ষণ Corona Symptoms
করোনাভাইরাস হঠাৎ করেই ভয়ানক হয়ে ওঠে না। আক্রান্তের প্রথমদিন থেকে লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে ছয়-সাত দিন লাগে মারাত্মক রূপ নিতে। তবে শরীরে অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে ছয়-সাত দিন এমনিতেই সেরে যায় কোভিড-১৯ নামক রোগটি।
করোনার লক্ষণগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রথম দিন থেকে তৃতীয় দিন উপসর্গ হালকা জ্বর, তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০২। চতুর্থ দিনে এসে বাড়বে জ্বরের মাত্রা, বাড়তে থাকবে গলা ব্যথা। মাথাব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দেবে ডায়রিয়া।
পঞ্চম দিনে শরীরে দেখা দিবে অবসাদ, শুকনো কাশি আর মাংশপেশিতে ব্যথা শুরু হবে। এর পরদিনে জ্বর থাকবে ১০০ ডিগ্রির মতো, পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, ডায়রিয়া বা বমি।
সপ্তম দিনে এসব উপসর্গ আরও তীব্র হয়। অষ্টম ও নবম দিনে জ্বরের ও শ্বাসকষ্ট আর তীব্র হয়ে নিউমোনিয়ায় রূপ নেবে।
তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রে তা পাঁচ কিংবা ছয় দিনের মাথাই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। শরীরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ কিংবা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলেই কেবল মারাত্মক দিকে যায় রোগটি।
গণমাধ্যমকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। যাদের আইসিইউ লাগবে তাদেরকেই সাপোর্ট দিতে হয়। যাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, তাদেরও তেমন একটা ওষুধ লাগে না।
করোনায় আক্রান্ত এক তরুণীর অভিজ্ঞতা : প্রথম দিন শুকনো কাশ, দ্বিতীয় দিন গলা ব্যথা
করোনা আতঙ্কে ক্রস্ত গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতী ভাইরাসের কবল থেকে সুস্থ হয়ে যে মানুষ ফিরে আসছে না, তা নয়। এবার তেমনই একটি অভিজ্ঞতার কথা শুনল নেটিজেনরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজন্দা হালিতি নামে এক তরুণী তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। সেই কথাই তিনি লিখেছেন ইন্টারনেটে।
২২ বছরের ওই তরুণী ইতালির বাসিন্দা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আর পাঁচজনের মতো তার শরীরেও যে করোনা ভাইরাস বসা বেঁধেছে তা তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। শুকনো কাশি হয়েছিল তার। তারপর ক্রমশ করোনা তার খেল দেখাতে শুরু করে। দুর্বল হয়ে পড়েন তরুণী। প্রথম দিন শুকনো কাশির পাশাপাশি হালকা কফ ও গলা ব্যথা হয় তার। দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় তীব্র মাথা ব্যথা। সঙ্গে দুই চোখে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। তৃতীয় দিন থেকে শুরু হয় জ্বর। বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারতেন না তিনি। এই সময় তার শুকনো কাশি, মাইগ্রেন, জ্বর এই সব উপসর্গই দেখা দিতে শুরু করে। এরপর তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। অদ্ভুতভাবে চতুর্থ দিন জ্বর একেবারে উধাও। শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। মনে হত যেন বুকে উপর কেউ পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। এরপরই তিনি করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
চিকিৎসকের পরামর্শে এরপর তিনি সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে চলে যান। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ। তার আর কোনো সমস্যা নেই। আর তাই করোনা ভাইরাস নিয়ে কাউকে আতঙ্ক না ছড়িয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
করোনা আতঙ্কে কাঁপছে এখন পুরো দুনিয়া। এই অবস্থা কী করতে হবে, ২২ বছরের ইতালির তরুণী সেই কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।
করোনার লক্ষণ দেখা দিলে যে ওষুধ খাবেন? Corona Medicine
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বহু মানুষ মারা গেছেন।
ভাইরাসটিতে আক্রান্ত কিনা তা বোঝা মুশকিল। কারণ সাধারণ সর্দি-কাঁশি, গলা ব্যথা, জ্বর এগুলো আক্রান্ত ব্যক্তিরাই পরীক্ষার পর করোনা ধরা পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর-সর্দি, হাঁচি-কাঁশি গলা ব্যথা এই উপসর্গগুলো কারো দেখা দিলে নিজ উদ্যোগে অন্তত ১৪ দিন হোম কোয়ারিন্টিনে থাকুন। এই সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হচ্ছে।
তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হচ্ছে- এই উপসর্গ দেখা দিলে বাসায় থেকে কী ধরণের ওষুধ খাবেন? নিজের যত্ম নেবেন কীভাবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন বিজিএমইএ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
করোনার প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর-কাঁশি, সর্দি, গলা ব্যথা দেখা দিলে তারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাসায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এই উপসর্গগুলোর যে কোন একটি দেখা দিলে তারা ৫টি পরামর্শ মেনে চলতে বলেছেন এবং তার সাথে রোগ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে বলেছেন।
পাঁচ পরামর্শ মেনে চলতে হবে
১। অন্তত ১৪ দিন বাসায় অবস্থান করতে হবে।
২। প্রচুর পানি পান করতে হবে।
৩। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যেন অন্য কেউ আক্রান্ত না হতে পারে।
৪। ফল-মূল ও শাক-সবজি খেতে হবে।
৫। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
লক্ষণ অনুযায়ী যে ওষুধ খেতে হবে
১. জ্বর-ব্যথা থাকলে নাপা (এক্সটেন্ড ৬৬৫ এমজি)। ভরা পেটে দিনে তিনবার খেতে হবে (প্রয়োজন মত)।
২. ফেক্সো (১২০ এমজি)। শুধুমাত্র রাতে খেতে হবে (৭ দিন)।
৩. সিভিট (২৫০ এমজি)। সকাল এবং রাতে চুষে খেতে হবে (২ সপ্তাহ)।
৪. এন্টাজল নাসাল (০.১ পারসেন্ট)। শ্বাস-কষ্ট হলে ২ ফোটা করে, দুই নাকের ছিদ্রে, দিনে ৩ বার নিতে হবে।
৫. ক্যাপসুল পিপিআই (২০ এমজি)। সকাল এবং রাতে। খাওয়ার ২০ মিনিট আগে খেতে হবে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বাবা–মায়ের যা জানা জরুরি
বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) নিয়ে আলোচনা এখন মানুষের মুখে মুখে। বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় লোকজনের মধ্যে ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধে অনেক দেশ শহর অবরুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা অবরুদ্ধ করার মতো বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে।
বয়স্কদের জন্য ঝুঁকি বেশি থাকলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। এ অবস্থায় সন্তানদের সুরক্ষায় বাবা–মায়ের জন্য কিছু প্রশ্নের জবাব ও করণীয় ঠিক করেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। এর মধ্যে শুরুতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস আসলে কী।
‘নভেল’ করোনাভাইরাস কী?
নভেল করোনাভাইরাস হচ্ছে করোভাইরাস গোত্রের একটি নতুন সদস্য। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। পরে এই ভাইরাসে আক্রান্তের ফলে সৃষ্ট রোগের নামকরণ হয় কোভিড–১৯। ‘কো’ শব্দটি এসেছে করোনা থেকে, ‘ভি’ ভাইরাস থেকে, ‘ডি’ হচ্ছে ডিজিজ এর প্রথম অক্ষর, আর ২০১৯ সালে ভাইরাসটি সম্পর্কে প্রথম জানা যায় বলে কোভিড শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘১৯’। গত ১১ মার্চ কোভিড–১৯ কে প্যানডেমিক বা বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে প্যানডেমিক ঘোষণা করে ভাইরাসটি কতটা ভয়াবহ তা বোঝানো হয়নি, বোঝানো হয়েছে বিশ্বের ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়া পরিস্থিতিকে।
অনলাইনে অনেক তথ্য, কী করা উচিত?
অনলাইনে করোনাভাইরাস সম্পর্কে অনেক মিথ ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে নিরাপদ থাকতে হয়, ভাইরাসটির সঙ্গে সংস্পর্শ ঘটার দুশ্চিন্তা থাকলে কী করা উচিত সে সম্পর্কে ভুলভাল তথ্যের অভাব নেই। আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে হলে সতর্ক থাকতে হবে আপনি কোথা থেকে তথ্য ও পরামর্শ নিচ্ছেন। ইউনিসেফও কোভিড-১৯ সম্পর্কে তথ্য ও নির্দেশনা সম্পর্কিত একটি পোর্টাল খুলেছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটেও এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য একটি কার্যকরী বিভাগ রয়েছে। আপনার দেশের এবং এলাকার কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা করোনাভাইরাসের সময়ে ভ্রমণ, শিক্ষা এবং অন্যান্য নির্দেশনার সবশেষ সুপারিশ ও সংবাদ আপনি পেতে পারেন সেখানে।
কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়ায়?
ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি–কাশির ফোঁটা থেকে, ভাইরাসটি দিয়ে দূষিত যেকোনো বস্তুর উপরিভাগ থেকে ছড়ায়। যেকোনো বস্তুর ওপর ভাইরাসটি কয়েক ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। তবে সাধারণ জীবানুনাশকও ভাইরাসটিকে মারতে পারে।
করোনাভাইরাসের লক্ষণ কি?
জ্বর, কাশি, ঘন ঘন নিশ্বাস নেওয়া। পরিস্থিতি গুরুতর হলে সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া ও প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। ভাইরাসটি খুব কম ক্ষেত্রেই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। অসুস্থতার লক্ষণগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ও ঠান্ডা লাগার মতো। এ কারণে কোভিড-১৯ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। সুরক্ষার বিষয়গুলো একই এটা মনে রাখা খুব জরুরি। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশির সময় নাক–মুখ কুনুই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। টিস্যুটি পরে ঢাকনাসহ বিনে ফেলতে হবে। ফ্লু এর টিকা রয়েছে। তাই নিজের এবং শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর উপায় কী?
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আপনি নিজের জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য চারটি সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। সাবান ও পানি বা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোন। হাঁচি-কাশির সময় হাতের ভাঁজ করা কুনুই বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। সঙ্গে সঙ্গে টিস্যু ময়লার বিনে ফেলে দিন। জ্বর বা ঠান্ডা লেগেছে ব্যক্তির কাছাকাছি যাবেন না। আপনি বা আপনার শিশুর জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিন।
মেডিকেল মাস্ক কি পরা উচিত?
আপনার হাঁচি-কাশি হলে অন্যদের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আপনাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে মাস্ক পরার দরকার নেই। মাস্ক ছিঁড়ে গেলে বুঝতে হবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি এড়াতে সেগুলো যথাযথভাবে ফেলে দিন। শুধু মাস্ক ব্যবহার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢাকতে হবে। ঠান্ডা-জ্বর রয়েছে ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
শিশুদের কি কোভিড-১৯ হয়?
এটা নতুন ধরনের ভাইরাস। তাই এটি সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি। শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কিভাবে ক্ষতি করে সে সম্পর্কে আরও জানতে হবে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, ভাইরাসটিতে যেকোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত শিশুদের আক্রান্তের খবর কম পাওয়া গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসটি ভয়াবহ। বিশেষ করে বয়স্ক এবং আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য তা ভয়াবহ।
আমার সন্তান কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে কি করব?
অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এটা এখন ফ্লু এর মৌসুম। ফলে পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়ম-কানুন ভালোভাবে মেনে চলতে হবে।
আমার সন্তানকে কি স্কুলের বাইরে রাখা উচিত?
যদি আপনার সন্তানের মধ্যে কোভিড-১৯ লক্ষণ দেখা যায়, তবে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং যথাযথ নিয়ম মেনে চলুন। লক্ষণ দেখা দিলে আপনার সন্তানকে বাড়িতেই রাখুন। অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানো রোধে জন সমাগমস্থল থেকে দূরে রাখুন। সুস্থ থাকলে স্কুলেই রাখুন। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যদি কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মেনে আপনার সন্তানের পড়াশোনা নিশ্চিত করুন। স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের তদারকি নিশ্চিত করাও জরুরি যাতে তারা কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকে। কারণ নজরদারি না রাখলে অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকিরও মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
আমার পরিবারের ভ্রমণের সময় কি সতর্কতা নেওয়া উচিত?
যে দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে যাওয়ার আগে সেই দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, প্রবেশের পর কোয়েরেন্টিনের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য বিষয় দেখে নেওয়া জরুরি।
অন্তঃসত্তা নারীর মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের কি করোনাভাইরাস হতে পারে?
এ ব্যাপারে এখনো যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মাধ্যমে গর্ভের সন্তান করোনাভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে কিনা বা সম্ভাব্য কি ক্ষতি হতে পারে সন্তানের। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও অন্যদের মতো সর্তকর্তা ব্যবস্থা নিতে হবে।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত মা কি সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন?
যেসব মা আক্রান্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছেন এবং জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের লক্ষণ রয়েছে, তাঁদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। মায়ের বুকের দুধের উপকারিতার বিষয়টি বিবেচনা করে এবং শ্বাসকষ্টজনিত অন্য ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে মায়ের দুধের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায় মা সন্তানকে দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখতে পারেন। তবে এর আগে অবশ্যই তাঁকে সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লক্ষণ রয়েছে মায়েরাও দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে মাস্ক পরে, হাত ধুয়ে এবং সব ধরনের বস্তুর উপরিভাগ জীবানুনাশক করার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।