ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ও খরচ

বিনির্মাণ: স্টার্টআপদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটা হল মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা। তথ্যের অভাব, উটকো ও জটিল প্রক্রিয়া, দুর্নীতি এবং প্রকৃত সাহায্যকারীর অভাবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন পাওয়া আমাদের অনেকের জন্যই একটা বাজে অভিজ্ঞতা। আমরা প্রায়ই এই বিষয়ে ফোন এবং ইমেইল পেয়ে থাকি। কিন্তু তথ্যের অভাবে আমাদের যাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।
যাই হোক, এ ব্যাপারে বেশ গবেষণার পর সমস্যার সমাধানে এটি আমাদের একটি বিনীত প্রচেষ্টা। চলুন দেখা যাক বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি এবং খরচ কেমনঃ

ট্রেডমার্ক কারা দেয়ঃ
ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং ট্রেডমার্ক বিধি, ১৯৬৩ অনুসারে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন দিয়ে
থাকে।

ট্রেডমা‌র্ক আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
* মার্ক/লোগো/ডিভাইসের নাম, প্রতিরূপ অথবা বিবরণ,
* আবেদনকারীর নাম,
* আবেদনকারীর ঠিকানা ও জাতীয়তা,
* আবেদনকারীর পদমর্যাদা (যেমন: মার্চেন্ডাইজার/কারখানার মালিক/সেবা প্রদানকারী/অন্যান্য),
* মালামাল/সেবার সবিস্তার বিবরণী ও ধরণ,
* মার্ক ব্যবহারের তারিখ (তা বাংলাদেশে ব্যবহৃত হোক কিংবা ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত হোক),
* সাধারণ/নির্দিষ্ট মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) যা পরবর্তীতেও নথিভুক্ত করা যায়।

ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াঃ
১. প্রাপ্যতা খোঁজ করাঃ ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করার আগে খুঁজে নিন যে ট্রেডমার্কটি ইতোমধ্যেই ব্যবহৃত কিংবা অন্য কারো দ্বারা রেজিস্টার্ড হয়ে গিয়েছে কি না।
২. আবেদনঃ DPDT থেকে আপনার রেজিস্ট্রেশন ফরম সংগ্রহ করুন এবং ঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিন।
৩. আবেদনের স্বীকারোক্তিঃ আবেদনের রসিদের উপর রেজিস্ট্রার সরকারি নথিভুক্তকরণ রসিদ ইস্যু করেন। ঐ ডকুমেন্টে ট্রেডমার্ক সম্পর্কিত যাবতীয় নথিভুক্ত বিবরণ থাকে। যেমন: আবেদন নম্বর, আবেদনের তারিখ, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি।
৪. আবেদনপত্র যাচাইঃ আবেদনপত্র গ্রহণের পর রেজিস্ট্রার ২টি বিষয় যাচাই করে দেখেনঃ
(ক) স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য এবং
(খ) আইনের দাবীর সাথে সাধারণ সম্মতি।
৫. স্বীকৃতির চিঠিঃ যদি আবেদনপত্রটি সব দাবীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তখন রেজিস্ট্রার ঐ মার্কটির বিরোধিতা প্রাপ্তির জন্য ট্রেডমার্কস জার্নালে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য একটি স্বীকৃতির চিঠি ইস্যু করেন। নতুবা, রেজিস্ট্রি আপত্তি সংক্রান্ত লিখিত জবাব চেয়ে আপত্তি উত্থাপন করেন।
৬. আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যানঃ বিভিন্ন কারণে আপনার আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। তবে যাই হোক, যখন এটা ঘটবে আপনি অবশ্যই তিন মাসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিবেন এবং এই বিষয়ে শুনানির আবেদন করবেন, তা না হলে আপনার আবেদনপত্র পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।
৭. আবেদনপত্র গ্রহণঃ যদি পরীক্ষক আবেদনপত্র এবং দাবীর প্রতি সন্তুষ্ট হন, রেজিস্ট্রার সেই মার্কটিকে ট্রেডমার্কস জার্নালে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য গ্রহণ করেন।
৮. বিরোধিতাঃ যখন ট্রেডমার্কটি বিরোধিতার জন্য ট্রেডমার্কস জার্নালে বিজ্ঞাপন দিবে, প্রকাশের তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে যেকোনো ব্যক্তি রেজিস্ট্রারের কাছে ফরম TM-5-এ বিরোধিতার নোটিস দিতে পারবে।
৯. রেজিস্ট্রেশনঃ যদি বিরোধিতার মেয়াদের মধ্যে কোন বিরোধিতা না আসে অথবা প্রতিপক্ষ যদি আবেদনকারীর পক্ষে স্থির অবস্থান নেয়, রেজিস্ট্রার তখন নির্ধারিত ফী গ্রহণ করে ঐ ট্রেডমার্কের জন্য রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করতে বাধ্য হবে।
১০. রেজিস্ট্রেশনের তারিখঃ ট্রেডমার্কের রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হবে নথিভুক্ত করার তারিখ।
১১. রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদের সময়কালঃ একটি রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক প্রাথমিকভাবে নথিভুক্ত হওয়ার তারিখ থেকে সাত (৭) বছরের জন্য বৈধ হয় এবং এরপর প্রতি দশ (১০) বছর পরপর রেজিস্ট্রেশন রি‌নিউ করা যায়।
১২. প্রয়োজনীয় সময়ঃ সবকিছু ঠিকঠাক চললে এই পুরো প্রক্রিয়ার জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি লাগা উচিৎ নয়। কিন্তু প্রায়শই এটা দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। DPDT-তে আপনাকে সবকিছুই ম্যানুয়ালি পূরণ করতে হবে। সুতরাং সময় বেশি লাগলে অপেক্ষা করুন এবং যদি আপনার কোন জরুরি অবস্থা থাকে তাহলে দ্রুত শুরু করুন।
১৩. খরচঃ সবকিছুর উপর নির্ভর করে আসল খরচ দুই থেকে চার হাজারের বেশি হওয়া উচিৎ নয়; কিন্তু আপনার বাজেটে এর সাথে কিছু ‘স্পীড মানি’ গুণতে হবে। আমাদেরকে দোষারোপ করবেন না; এই অনিয়মগুলো দূর করার জন্য আপনারও দায়িত্ব আছে। এরপর যখন আপনার কাছে কেউ অতিরিক্ত অর্থ চাইবে, তখন নাছোড়বান্দা হোন এবং এটা বন্ধ করার জন্য যতদূর যেতে হয় যেতে থাকুন।



^
^
#ট্রেডমার্ক #রেজিস্ট্রেশনের, ট্রেডমার্ক পদ্ধতি ও খরচ, ব্র্যান্ড নিবন্ধন, সদ্যজাত কোম্পানি. @ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন, কোম্পানী রেজিস্ট্রেশন; ট্রেড মার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি; ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন; ট্রেডমার্ক খরচ; ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি ও খরচ | ব্র্যান্ড কি?

No comments:

Post a Comment