২১ সাল থে‌কে কম‌বে পরীক্ষা,‌ পা‌ল্টে যা‌বে বই

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করার কাজ চলছে। পাঠ্যসূচির যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক ছিল, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখছে কমিটি। ২০২১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত পাঠ্যবই আসবে। প্রাথমিকের শিশুদের বইয়ের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হবে।’

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘২০২১ সালে প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণি, ২০২২ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম, ২০২৩ সালে পঞ্চম ও অষ্টম, ২০২৪ সালে একাদশ এবং ২০২৫ সালে দ্বাদশ শ্রেণির পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমের বই পাবে শিক্ষার্থীরা। নতুন পাঠ্যক্রমে কনটেন্ট পড়ার চাপ কমিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে আনা হবে।’

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে—মাধ্যমিক স্তর থেকে বিভাগ তুলে দেওয়া হবে। নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ—এসব বিভাজন আর থাকছে না। নবম ও দশম শ্রেণিতে সবাইকে একই শিক্ষাক্রমে একই পাঠ্যবই পড়তে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে।

মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে সর্বশেষ পরিবর্তন আনা হয় ২০১৩ সালের শিক্ষাবর্ষে। পাঁচ বছর পর পর পরিবর্তন আনার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে পরিবর্তন আসছে আট বছর পর। আর প্রাথমিকে সর্বশেষ শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছিল ২০১১ শিক্ষাবর্ষে। ১০ বছর পর এবার ফের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই প্রথম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম একসঙ্গে পরিবর্তন ও সমন্বয় করা হচ্ছে। আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে কোনও সমন্বয় করা হতো না।  এছাড়া, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার বিষয়েও কাজ চলছে।

বর্তমানে প্রথম শ্রেণির আগে সরকারি স্কুলে একটি শ্রেণি আছে। আগামী দিনগুলোতে প্রথম শ্রেণির আগে সরকারি স্কুলেও দুটি শ্রেণিতে পড়তে হবে শিশুদের। আর  প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রেখে ধারাবাহিক মূল্যায়নের লক্ষ্যেও কাজ চলছে।

সূত্রমতে, শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কাজ হবে কয়েকটি ধাপে। প্রথম ধাপে শিক্ষাক্রমের ত্রুটি, বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে বিশেষজ্ঞরা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা খুঁজে বের করবেন। এরপর একাধিক কর্মশালা ও গবেষণা শেষে নতুন পাঠক্রম তৈরি করা হবে। আগামী বছরের (২০২০) মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই শিক্ষাক্রমে পরিমার্জনের কাজ চূড়ান্ত করা হবে।

বর্তমানে এনসিটিবির পাঠক্রম অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি করে পাঠ্যবই এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি করে পাঠ্যবই পড়তে হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। নবম ও দশম শ্রেণিতে ২৭টি এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৯টি পাঠ্যবই আছে। তবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ আলাদা থাকায় নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ের বই পড়তে হয় না।

মাদ্রাসায় ধর্মীয় চারটি বিষয়—কোরআন, আকাইদ ও ফিকাহ, হাদিস এবং আরবির পাঠক্রমেও পরিবর্তন আসছে।

প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকের ১০টি লার্নিং এরিয়া ঠিক রেখে কিছু বিষয় একত্রিত করে পাঠ্যবই কমিয়ে দেওয়া হবে।’ ‘উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নৈতিক শিক্ষা ও ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকলা এরকম একই বিষয়গুলোকে একত্রিত করে বই কমিয়ে দেওয়া হবে।’

কয়টি করে বই রাখা হবে জানতে চাইলে নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এই বিষয়টি কমিটি চূড়ান্ত করার পর জানা যাবে। তবে বই কমিয়ে দেওয়া হবে। শিশুদের কাছে বই যেন বোঝা না হয়, পাঠে যেন তারা আনন্দ পায়, সেদিকে গুরুত্ব দিয়েই পরিমার্জনের কাজ চলছে।’

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বই কমানোর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে কনটেন্ট কমিয়ে দেওয়া। একটি বইয়ে অনেক কনটেন্ট থাকতে পারে। সমস্যা কনটেন্ট লোড নিয়ে। যে কনটেন্ট রয়েছে সেটা যে ওভারলোডেড, তা নয়। কনটেন্টের যে বিষয়গুলো যে শ্রেণিতে শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই বিষয়গুলো মুখস্থ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। সে কারণে ওভারলোডেড হয়ে যায়। আমরা সেগুলো মিনিমাইস করার চেষ্টা করবো। এখনও যে কনটেন্ট পড়ানো হয়, সেগুলো যে বেশি তা নয়, তবে কন্ট্রাক্ট আওয়ারসহ এখনও সিক্রোনাইজ করা আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে—যখন যে প্রশ্নের দরকার নেই, সেই প্রশ্ন যদি করেন, তাহলে পুরো বইটি শিশুকে পড়তে হচ্ছে। অথচ ওই সময়ে তাকে বিষয়টি না জানলেও চলে, কিন্তু  তাকে বাধ্য হয়ে পুরোটা পড়তে হচ্ছে। এই জায়গায় শিশুরা সাফার করছে।’

অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান আরও  বলেন,  ‘আমরা চাইবো ধারাবাহিক মূল্যায়নে নিয়ে যেতে। পরীক্ষার লোড কমিয়ে আনতে। যাতে শিশুর অ্যাক্টিভিটিজ বেশি থাকে, কনটেন্টে মনোযোগ কম থাকে। এখন যে প্রেসারটা দেওয়া হয়—সেটা কমাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

পরীক্ষায় লোড কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেটা ১০০ নম্বরের পরীক্ষা, সেটা চলে যাবে ৫০ নম্বরে। বাকিটা চলে যাবে ধারাবাহিক মূল্যায়নে। পরীক্ষা এখন যে সময় নিয়ে হয়, সেটাও কমে যাবে। প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই এই পরিবর্তন আনা হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা হলো—২০৩০ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা,  উন্নত দেশে পরিণত হতে রূপকল্প ২০৪১ অর্জন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের সঙ্গতি রাখা।

শীতলপা‌টি‌তে ভাগ্যবদল আয়েশা আক্তারের : Shitalpati

"শ্রীমঙ্গ‌লের আয়েশা আক্তার শীতলপাটি বি‌ক্রি করে‌ছেন ৯ মাসে ১২ লাখ টাকা"

আয়েশার অবসর সময় কাটে শখের কাজ সুঁই-সুতা দিয়ে কাপড়ে বাহারি ডিজাইন করে। ছেলে-মেয়েসহ নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। এভাবেই স্বামী-সংসার সামলে সুখেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখে হঠাৎ তার স্বামী স্ট্রোক করে মারা যান। তখন তিনি অনুভব করেন, বাকি জীবন চলার জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।

তখন থেকেই শুরু হয় আয়েশার সংগ্রামী জীবন। তার শখের কাজ সেলাইকে অবলম্বন করে শুরু হয় পথচলা। সেই সঙ্গে সামান্য পুঁজিতে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। দুজন নারী কর্মচারীকে নিয়ে দেন একটি টেইলার্স। নিজের তৈরি কারুকাজ করা কাপড় ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন পেজ ‘রঙিলার’ মাধ্যমে বিক্রি করতে থাকেন।

এভাবে চলতে থাকে একবছর। তারপর বাসার কাছেই একটি কাপড়ের শো-রুম দেন। তবে অনলাইন থেকে অফলাইনেই আয়েশার কাপড় বেশি বিক্রি হতে থাকে। এর বেশ কিছুদিন পর ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ ‘উই’তে যুক্ত হন তিনি।

এ ব্যাপারে আয়েশা বলেন, ‘উইতে দেশীয় পণ্যের এমন সুন্দর প্লাটফর্ম দেখে অনেক ভালো লাগে। সত্যি বলতে, এ গ্রুপে যুক্ত হই ক্রেতা হিসেবে। কারণ নিজে ভালো কিছু কেনাকাটা করবো এটাই ছিল উদ্দেশ্য। আস্তে আস্তে সবার পোস্ট দেখে গ্রুপকে বোঝার চেষ্টা করি। পাশাপাশি নিজেরও কিছু করার ইচ্ছে জাগে। ৩ মাস পর উইয়ের অনলাইন আড্ডায় যুক্ত হই। এতে মনে হয়, আমি কিছু একটা করতে পারবো।’

ফলে গ্রুপের মডারেটর নিগার ফাতেমার দেশীয় পণ্যের সিলেবাস দেখে সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নিজের এলাকার এমন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন, যা ঐতিহ্য বহন করে। তারপর ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদের পরামর্শে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শীতলপাটি নিয়ে কাজ শুরু করেন।

jagonews24

তবে কাজের শুরুটা ছিল বেশ কঠিন। কারণ করোনায় দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। তারপর পণ্যটি ছিল বিলুপ্তির পথে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত আয়েশার প্রায় ৪ লাখ টাকার অর্ডার আসে অনলাইনে। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাসে তার শীতলপাটি ও শীতলপাটি দিয়ে তৈরি ফিউশনের পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।

এতে অনেক উদ্যোক্তাই শীতলপাটি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন। তিনি শীতলপাটি দিয়ে টেবিল ম্যাট, স্যান্ডেল, টিস্যুবক্স, ওয়ালমেট, ব্যাগ, পার্স, পেনহোল্ডার, গয়নাসহ অনেক আইটেম তৈরি করে বিক্রি করেন। আমেরিকার শিকাগো ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকেও তার শীতলপাটির অর্ডার এসেছে। খুব তাড়াতাড়িই তিনি সেসবের ডেলিভারি দেবেন।

jagonews24

আয়েশা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য ছিল হারিয়ে যাওয়া এ পণ্যকে সবার মাঝে ফিরিয়ে আনা। ইনশাআল্লাহ, আমি তা পেরেছি। গ্রুপ থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। সব চেয়ে বড় অর্জন হলো, আমাকে উই থেকে লোকাল প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমার স্বপ্ন শীতলপাটি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও জনপ্রিয় করে তোলা।’

অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসায়ী ভিসায় নাগ‌রিক সুযোগ : Australian VISA for Bangladesh

অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন হতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিজনেস মাইগ্রেশন ভিসাপ্রত্যাশীরা। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্বর্গরাজ্য বলা হয় ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপ-মহাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে। যাবতীয় নাগরিক সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য দেশটি অনেকের কাছেই প্রথম পছন্দ। আর ব্যবসায়ীদের জন্য দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিয়ে চালু রয়েছে বিভিন্ন ভিসা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের দেশটিতে স্বাগত জানাতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটি সরকার। বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মতো এখন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও বিজনেস মাইগ্রেশনের আওতায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিতে পারেন অস্ট্রেলিয়াতে।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশিদের জন্যও বিজনেস মাইগ্রেশনে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়িক দক্ষতার আলোকে এই অভিবাসন নীতিমালা তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। বর্তমানে সেই নীতিমালার আওতায় প্রভিশনাল সাবক্লাস ১৮৮ ও সাবক্লাস ১৩২ ভিসার আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ অর্থবছরে প্রায় দ্বিগুণ ভিসা প্রদানের ঘোষণাও দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। আবশ্যিক শর্ত পূরণ করতে পারলে এই ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ কাজে লাগানোর ভালো সময় এটা।

ভিসার ধরন
ভিসাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভিসা হচ্ছে সাবক্লাস ১৩২ বিজনেস ট্যালেন্ট পার্মানেন্ট ভিসা। এই ভিসা মঞ্জুর হলে আবেদনকারী সরাসরি স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের সুযোগ পান। এ ছাড়া প্রভিশনাল ভিসা অর্থাৎ প্রথমে অস্থায়ী এবং পরে স্থায়ী এ ধরনের কিছু ভিসা রয়েছে। সাবক্লাস ১৮৮ ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী এবং বিনিয়োগ (বিজনেস ইনোভেশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট) এ শ্রেণিতে কয়েক ধরনের ভিসা রয়েছে। এগুলো হলো ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী ১৮৮ এ, বিনিয়োগ ১৮৮ বি, উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ১৮৮ সি এবং প্রিমিয়াম বিনিয়োগ ১৮৮ ডি। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী (বিজনেস ইনোভেশন) ভিসার শর্তপূরণ কিছুটা সহজসাধ্য। যেসব ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে চার বছরের ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা এ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ ভিসার মেয়াদ প্রায় চার বছরের জন্য হলেও পরবর্তীকালে ভিসা সাবক্লাস ৮৮৮-এর অধীনে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যাবে।

ভিসার শর্ত
ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী সাবক্লাস ১৮৮ এ ভিসায় আবেদনের জন্য ৮ (আট) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার অথবা প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি থাকতে হবে। ব্যবসা, নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি সব সম্পত্তি মিলিয়ে এ অর্থ হতে হবে, যা আবেদনকারী এবং তাঁর স্ত্রী/স্বামীর আলাদা কিংবা দুজনের একত্রে মালিকানা মিলিয়ে হতে পারে। ৫ কোটি টাকা ভিসা মঞ্জুর হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় আনার যোগ্য হতে হবে। এ ছাড়া এমন একটি ব্যবসার মালিকানা থাকতে হবে যে ব্যবসার বার্ষিক আয় কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার মালিকানাও গ্রহণযোগ্য, তবে সে ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে সর্বনিম্ন ৩০ বা ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকার শর্ত রয়েছে। একই ধরনের অন্যান্য আবশ্যিক শর্তের সঙ্গে সাবক্লাস ১৮৮ বি বিনিয়োগ ভিসায় ব্যবসার মালিকানা থাকতে হবে ১৫ লাখ ডলার অথবা প্রায় ৯ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে সম্পত্তির মালিকানা থাকতে হবে প্রায় ১৪ কোটি টাকার।

ভিসার পয়েন্ট
সাবক্লাস ১৮৮ এ এবং ১৮৮ বি এ দুটি ভিসায় পয়েন্ট টেস্টভিত্তিক ভিসা। অর্থাৎ এ ভিসায় আবেদন করতে আবেদনকারীকে সর্বনিম্ন ৬৫ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে। এ পয়েন্টগুলো বয়স, সম্পত্তির পরিমাণ, ইংরেজি ভাষা দক্ষতা, শিক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে পেতে হয়। যেমন আবেদনকারীর বয়স ২৫ থেকে ৩২ বছর হলে এর জন্য ৩০ পয়েন্ট, ৩৩ থেকে ৩৯ বছরের জন্য ২৫ পয়েন্ট।

সরাসরি পার্মানেন্ট ভিসা
সাবক্লাস ১৩২ এ বিজনেস ট্যালেন্ট ভিসাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়; কারণ, সরাসরি পার্মানেন্ট ভিসা। এ ভিসায় উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক ইতিহাস ১৩২ এ এবং উদ্যোগমূলক মূলধন উদ্যোক্তা ১৩২ বি নামের দুটো শ্রেণি রয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল উদ্যোক্তা ১৩২ বি ভিসায় কোনো অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হয়। এ জন্য সাবক্লাস ১৩২ এ সিগনিফিকেন্ট বিজনেস হিস্ট্রি স্ট্রিম আরেকটি সহজতর ভিসা। এ ভিসায় ১৮ কোটি টাকা টার্নওভার সম্পন্ন ব্যবসায় অংশীদারত্ব থাকার আবশ্যিক শর্ত রয়েছে। এ ছাড়া আবেদনকারীও তাঁর স্ত্রীর ক্যাশ, জায়গা-সম্পদ, স্বর্ণালকার—সব মিলিয়ে ৯ কোটি টাকার সম্পত্তি থাকতে হবে।
উল্লিখিত সব ভিসার আবশ্যিক শর্তেই কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন প্রতিটি বিজনেস ভিসার আবেদনকারীকেই সর্বোচ্চ ৫৫ বছর বয়সী হওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রতিটি ভিসার ক্ষেত্রেই মূল ভিসায় আবেদনের আগে দেশটির যেকোনো রাজ্য সরকার কর্তৃক মনোনয়ন পেতে হবে। সেই সঙ্গে বিজনেস মাইগ্রেশন ভিসায় অভিবাসন বিভাগের মনোনয়ন ও আবেদন করার আমন্ত্রণ পেতে আবেদনকারীকে অবশ্যই যথাযথ দক্ষতা নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় তাঁর আগ্রহ বা এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (EOI) ব্যক্ত করতে হবে। আবেদন করার জন্য সরকার আমন্ত্রণ জানালে তবেই এ ভিসা পেতে আবেদন করা যাবে। তবে এ ভিসায় আগ্রহীদের প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন অভিবাসন আইনজীবীরা।

লেখক: অভিবাসন আইনজীবী, 
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। kawsar.khan.au@gmail.com