মা-মেয়ের অনলাইনে পোশা‌কের ব্যবসা

রোকেয়া আখতার (২৬) জন্মের ২০ দিন পর বাবাকে হারান, কিন্তু অভাবের সংসারে অভাব বুঝতে দেননি তার মা সালেহা বেগম (৫০)। জন্মের পর থেকে রো‌কেয়া দেখেছেন, এক মাত্র সন্তানের আবদার পূরণে সংসারে মায়ের অবদান। তাই কিছুটা বড় হবার পর যেভাবে পেরেছেন মাকে সাহায্য করেছেন তিনি।

এখন রোকেয়া ইডেন কলেজে ইংরে‌জির ছাত্রী। জামালপুরের গ্রামে মাকে রেখে আসলেও থেমে যায়নি মায়ের প্রতি তার কর্তব্য। ঢাকা আসার পর ৪ বছর ধরে তিনি শুরু করেছেন কাপড়-এর ব্যবসা। কাজ শুধু জামালপুরের কাপড় ঢাকায় আনা।

মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামে রোকেয়া। এখন তার মাসিক আয় প্রায় ২০ থে‌কে ২৫ হাজার টাকা। নিজের থাকা খাওয়ার খরচ চালিয়ে মাকেও টাকা পাঠাতে পারেন। এভাবে মা মেয়ে মি‌লে শুরু করেছেন কাপড় এর অভিনব ব্যবসা। যা এখন ওই এলাকায় সবার কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এমনকি ইডেন কলেজসহ ফেইসবুকেও তার কাপড়ের দারুন চাহিদা।

মাথায় কিভাবে এই আইডিয়া আসলো ? জানতে চাইলে সে বলে ”সবাই ফেইসবুক চালায়, আর এখন ঘরে ঘরে যেয়ে কাপড় বিক্রির দিনও নেই। আর হাতের কাজ করা কাপড়ের চাহিদা সবসময় বেশি। এই ভেবেই ফেইসবুকে ব্যবসা শুরু। আ‌গে শুধু নিজের হলে বিক্রি করতাম এখন এর পরিধি অনেক বেড়েছে।”
রো‌কেয়া অনলাইনে অর্ডার নেন, তারপর কিভা‌বে কি কর‌তে হ‌বে তা মাকে বলে দেন। মা কাপড় ও ডিজাইনের বিবরণ অনুযায়ী জামা বানিয়ে, পাঠিয়ে দেন সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্য‌মে। সব মিলিয়ে এক‌টি পোশা‌কে খরচ পরে ৫০০-৬০০ টাকা। আর এখানে তিনি তা বিক্রি করেন ১০০০-১২০০ টাকা। এছাড়াও কিছু পোশাক তৈ‌রির পর তার ছবি তুলে পোস্ট দিয়ে দেন ফেইসবুকে। এভা‌বেই মা-মে‌য়ে তাদের তৈ‌রি পোশাকের ব্যবসা চা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছেন।

ধুন্ধুমার ভাবেই চলছে মা মেয়ের কাপ‌ড়ের ব্যবসা। তার সাথেই বসা তার বান্ধবী জয়া জানান, এই সব কাপড় বুটিক হাউসগুলোতে ২০০০ এর মতন। সে অনুযায়ী এই পোশা‌কে ক্রেতা বিক্রেতা লাভ দুই পক্ষেরই।
কি কি ধরনের কাপড় বিক্রি করেন ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সাধারণত সুতি কাপড়ই বিক্রি করি। তবে এর মধ্যেও ভাগ আছে, কোনটা মোটা আবার কোনটা পাতলা। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক বানানো হয়। তবে কাপড়ে তেমন পার্থক্য না থাকলেও পার্থক্য আছে ডিজাইনে। ভরাট ফুল, কথা সেলাই, সিন্ধি ফুল, ক্রস ইত্যাদি পাওয়া যায়।”
তিনি আরও জানান কিছু অসুবিধার কথা, “ব্যবসাটা অনলাইন ভিত্তিক হবার কারণে সুবিধা যেমন আছে তেমন আছে অসুবিধাও। অনেকে অর্ডার দিলেও পরে নেয় না। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার অনেকে কাপড় কেমন হবে তাতেও ভরসা পায় না। মাঝে মাঝে কুরিয়ার থেকে মাল সঠিক সময়ে আসে না, এমনকি হারিয়েও যায়।”
কথা বলতে বলতে ফেইসবুকে তার তৈ‌রি পোশা‌কের পেইজ "কালারস অব লাইফ" এ গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০ হাজার লাইক। সাথে নানা ডিজাইনের কাপড়-এর ছবি ও তার মুল্য।

এভাবে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্তই যেন পাল্টে দিয়েছে রো‌কেয়ার জীবন। তাই তার মতে, ছোট হোক কিংবা বড় হোক; স্বপ্ন সবার দেখা উচিত। কিন্তু স্বপ্ন দেখে থেমে থাকলে হবে না, সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে।

৪ বছরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন রোকেয়া। জামালপুরের মহিলাদের মধ্যে রোকেয়া আজ এক পথপ্রদর্শকের নাম। শুধু এভা‌বে পোশা‌কের ব্যবসা করেই থেমে থাকতে চান না তিনি। অনলাই‌নের পাশাপা‌শি জামালপুরে নিজেই একটি পোশা‌কের শোরুম খুলতে চান। যেখানে পোশাক বিক্রি ও পোশা‌কের ডিজাইন সব করা হবে। এতে অ‌নেক নারীর কা‌জের সু‌যোগও হ‌বে, ব্যবসার পরিধিও বাড়বে।
রোকেয়া স্বপ্ন দেখেন আড়ং এর মতো একটা শোরুমের মালিক হবার। যেখানে নিজের সাথে সাথে পরিবর্তন করতে পারবেন আরও হাজার নারীর ভবিষ্যত। সাথে গড়ে তুলতে চান বিনামুল্যের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেখানে অবহেলিত নারীরা বিনা পয়সায় সাবলম্বী হতে পারবে।

এই কাজে নানা প্রতিবন্ধকতা আস্তে পারে বলে ধরেই নিয়েছেন তিনি। তবে রোকেয়া সকল বাধা ডিঙা‌নোয় প্রস্তুত। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আরও বহুদূরে এ‌গি‌য়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই সাথে চালিয়ে যেতে চান তার পড়ালেখাও।

#tumpatutu

^
^
edited by dearbangl24 : তৈরি পোশাক, কেম‌নে, কাপ‌ড়ের ব্যবসা, উপায়, অনলাই‌নে কাপ‌ড়ের ব্যবসা, কিভা‌বে, কাপড়, ব্যবসা, পোশাক,

No comments:

Post a Comment