চলে গেলেন বাংলাদেশের বন্ধু নাগরিক ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মোহাম্মদ আলী ক্লে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ মোহাম্মদ আলী ক্লে আর নেই। শুক্রবার রাতে ফনিক্স এরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৮৪ সালে দুরারোগ্য পারকিসন রোগে আক্রান্ত হন। ৩২ বছর এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ৭৪ বছর বয়সে হেরে গেলেন তিনি। তিনবারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এ বক্সারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল। তিনি বলেন, ‘৩২ বছর পারকিনসন রোগের সঙ্গে লড়াই করে মোহাম্মদ আলী ৭৪ বছর বয়সে মারা গেলেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ মোহাম্মদ আলী ক্লে আর নেই। শুক্রবার রাতে ফনিক্স এরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৮৪ সালে দুরারোগ্য পারকিসন রোগে আক্রান্ত হন। ৩২ বছর এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ৭৪ বছর বয়সে হেরে গেলেন তিনি। তিনবারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এ বক্সারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল। তিনি বলেন, ‘৩২ বছর পারকিনসন রোগের সঙ্গে লড়াই করে মোহাম্মদ আলী ৭৪ বছর বয়সে মারা গেলেন।’
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের লুইসভিল কেন্টাকিতে আফ্রিকার-আমেরিকান এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ক্যাসিয়ার মার্কাস ক্লে (মো. আলী ক্লে)। তার বাবা ক্যাসিয়াস মার্কাস সিনিয়র ছিল পেশায় একজন
সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড পেইন্টার। মা ছিলেন গৃহিণী।কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ মানুষের অবজ্ঞার শিকার হন। শ্বেতাঙ্গ মানুষের চেয়ারে তাদের বসতে দেয়া হতো না। এমন কি একজন বিশ্বসেরা বক্সার হওয়ার পরও তাকে শ্বেতাঙ্গদের হোটেলে খাবার দেয়া হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা ও শ্বেতাঙ্গ মানুষের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি।
১৯৬৪ সালে ‘নেশন অব ইসলাম’ নামের একটি সংগঠনের সংস্পর্শে গিয়ে ইসলামকে বুঝতে শেখেন তিনি। ইসলাম শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ও ব্যবধান রাখে না বলে জানতে পারেন তিনি। এতে এক সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মোহাম্মদ আলী নাম ধারন করেন।
‘নেশন অব ইসলাম’ সংগঠনটির সঙ্গে ‘ইসলাম’ শব্দ থাকলেও তারা ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে সমন্বয় করে একটি নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল। বিষয়টি পরে বুঝতে পারেন মোহাম্মদ আলী। এতে ১৯৭৫ সালে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সুন্নী মুসলিম হন। এরপরই তিনি নিজেকে প্রকৃত মুসলিম বলে পরিচিত করতে থাকেন। এক সময় তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি বক্সিং ও ইসলাম- এই দুটোর মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয় তাহলে অবশ্যই আমি ইসলামকে বেছে নিবো’।
দেশের হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ যুদ্ধ যদি ২২ মিলিয়ন মানুষের স্বাধীনতা ও সমতা আনতে পারে তাহলে আমাকে কোনো তাগিদ দিতে হত না, আমি কালই তাতে অংশগ্রহণ করতাম।’
তার ধর্মের কারণেও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণে আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ‘আমাকে ভূমি কিংবা আল্লাহর আইন মানতে হবে। আমি আমার বিশ্বাসের ওপর দাঁড়ালে কোনো কিছুই হারাব না। এ কারণে আমি জেলে যাব। আমরা চারশ বছর ওই জেলেই ছিলাম।’
তার ধর্মের কারণেও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণে আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ‘আমাকে ভূমি কিংবা আল্লাহর আইন মানতে হবে। আমি আমার বিশ্বাসের ওপর দাঁড়ালে কোনো কিছুই হারাব না। এ কারণে আমি জেলে যাব। আমরা চারশ বছর ওই জেলেই ছিলাম।’
ইসলাম গ্রহণের পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের মধ্যে সাম্য ও ভেদাভেদ দূর করতে কাজ করে গেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৫ সাল থেকে ইসলামের সুফিবাদের সংস্পর্শে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুফিবাদ চর্চা করেন মোহাম্মদ আলী।
হট নিউজ :
কিংবদন্তি ক্লে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহন করে, ১৯৬১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর আগের নাম বদলে মুসলিম নাম গ্রহণ করেন ‘মোহাম্মদ আলী’। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্সারকে। বাংলাদেশের প্রতি তার ভালবাসা ছিল অপরিসীম। এমন কি তিনি ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। এই যুগের অনেকেই হয়তো খবর রাখি না। কিন্তু কিংবদন্তি এ বক্সার ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন। ঢাকার বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ তাকে স্বাগত জানান। এ দেশের মানুষের আতিথেয়তায় তিনি ছিলেন মুগ্ধ। বাংলাদেশ সরকার তখন তাকে এ দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।
বাংলাদেশের রূপ দর্শনে মুগ্ধ হয়ে দেশে ফিরে গিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন’। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে তার তিক্ততা ছিল দীর্ঘদিন। দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে চাননি তিনি। এই ‘অপরাধে’ যুক্তারষ্ট্রের সরকার তাকে একঘরে করে রাখে। কিন্তু মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে তাড়িয়ে দিলে কী হয়েছে? বাংলাদেশ তো আছে।’
বাংলাদেশে তাকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকেও দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার গভীর ভালবাসা-মততা ও রসবোধ বুঝা যায় আরেকটি ঘটনায়। ওই সফরে একটি প্রীতি ম্যাচে বক্সিং রিংয়ে যান তিনি। প্রীতি ম্যাচটিতে তিনি বাংলাদেশের এক শিশুর সঙ্গে অংশ নেন। সেই ‘লড়াইয়ে’ বাংলাদেশের ওই শিশুর ঘুসিতে রিংয়ে গড়িয়ে পড়েন মোহাম্মদ আলী। একটি শিশু ও সাধারণ মানুষের মনে আনন্দ দেয়ার জন্য কী করতে হয় তা তিনি ভালভাবেই জানতেন। রিংয়ে কৃত্রিমভাবে ‘কুপোকাত’ হয়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আরও বেশি জায়গা করে নেন।
No comments:
Post a Comment