থানকুনি পাতার অসাধারণ সব ওষুধি গুণ
আপনার
চারপাশে এমন কিছু ভেষজ আছে যেগুলো শুধু আপনার ব্যয়ই কমাবে তাই নয়, সাথে সাথে রোগ থেকেও
পরিত্রাণ দিবে আপনাকে। থানকুনি এমনি একটি উপকারী ভেষজ। চিকিৎসার অঙ্গণে থানকুনি পাতার
অবদান অপরিসীম।
প্রক্রিয়াজাতকরণের
মাধ্যমে বহু রোগের উপশমই হয় এই থানকুনির ভেষজ তেল থেকে। খাদ্য উপায়ে থানকুনি সরাসরি
গ্রহণ রোগ নিরাময়ে যথার্থ ভূমিকা পালন করে। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন-
থানকুনি, টেয়া, মানকি, তেতুরা, আদামনি, দোলামনি, থুলকুঁড়ি, মানামানি ইত্যাদি। এটি সাধারণত
পুকুরের তীরে পাওয়া যায়।
ডাক্তাররা
বলেন, যদি আপনি থানকুনি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনাকে আর পেটের ব্যথাতে ভুগতে হবে
না। আবার এটা শুধুমাত্র ঊষর প্রান্তর তাজা রাখে তাই নয় বরং বুদ্ধি বিকাশেও সাহায্য
করে। এটি শৈশব থেকেই খেতে পারেন। তারুণ্য ধরে রাখতে এবং সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে থানকুনি
অনেক উপকারী।
গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। ছোট্ট
প্রায় গোলাকৃতি পাতার মধ্যে রয়েছে ওষুধি সব গুণ। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়।
থানকুনি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ।
এর ইংরেজি নাম Centella এবং ল্যাটিন নাম Centella Aciatica. থানকুনি পাতা দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। চিকিৎসার অঙ্গনে থানকুনি
পাতার অবদান অপরিসীম। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে।
খাদ্য উপায়ে এর সরাসরি গ্রহণ রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
অঞ্চলভেদে থানকুনি পাতাকে আদামনি, তিতুরা, টেয়া, মানকি, থানকুনি,
আদাগুনগুনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, নামে ডাকা হয়। তবে বর্তমানে
থানকুনি বললে সবাই চেনে।
ভেষজের দুনিয়াতে থানকুনির স্থান রয়েছে অনেক উপরে। কারণ এর রয়েছে
নানান গুণ। থানকুনি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। কোনো প্রকার যত্ন ছাড়াই জন্মে। মাটির উপর লতার
মতো বেয়ে ওঠে। পাতা গোলাকার ও খাঁজকাটা। সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশেই থানকুনি গাছ
বেশি জন্মে। তাই পুকুরপাড় বা জলাশয়ের পাশে থানকুনির দেখা মেলে বেশি।
থানকুনির ভেষজ গুণাবলি ছাড়াও অনেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এটি রোপণ
করে, তাছাড়া থানকুনি দিয়ে অনেক সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তৈরি করা যায়। থানকুনির
নানা ভেষজ গুণ রয়েছে। আমাদের দেশের অনেকে থানকুনি পাতার ভর্তা ও খায়।
থানকুনির ভর্তা কিভাবে করা যায়-
উপকরণ
থানকুনি পাতা ৪০-৫০তি, রসুন একটি, কাচা মরিচ একটি, লবণ পরিমাণ মত।
প্রস্তুত প্রণালী
থানকুনি পাতা কুচি কুচি করে কেটে মরিচ, রসুন,লবন মিশিয়ে বাটায় বেটে
নিলেই ভর্তা প্রস্তুত হয়। থানকুনি পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। ভর্তা করে
বা কাঁচা পাতা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। থানকুনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন
ও খনিজ পদার্থ।
থানকুনির অন্যান্য উপকার
থানকুনির Bacoside A এবং
Bacoside B উপাদান মস্তিষ্কের কোষের গঠন করতে সাহায্য করে এবং রক্তসংবহন বাড়ায়।
বাচ্চাদের কথা স্পষ্ট
না হলে ১ চামচ থানকুনির পাতার রস গরম করে খাওয়ালে কথা স্পষ্ট হবে।
প্রতিদিন সকালে থানকুনির
রস ১ চামচ ও ৫/৬ ফোঁটা হলুদের রস সামান্য চিনি বা মধুর সাথে খাওয়ালে বাচ্চাদের লিভারের
সমস্যার সমাধান হয়।
বয়স বাড়ার ফলে নিজেকে
দুর্বল অনুভূত হয়, সেই ক্ষেত্রে থানকুনির রস প্রতিদিন পান করলে তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন।
চেহারা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দুধ এর সাথে এক গ্লাস থানকুনি পাতার রস পান করতে হবে,
যার ফলে আপনার কনফিডেন্স আরো বেড়ে যাবে।
থানকুনি পাতা সকল ধরনের পেটের রোগের মহৌষধ। পাতা বেটে ভর্তা করে
বা ঝোল করে খেলে বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটব্যথা সেরে যায়।
থানকুনি চুল পড়া বন্ধ
করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রেও থানকুনির গুণ অপরিসীম।
আলসার, এগজিমা, হাঁপানি, চুলকানি ও অন্যান্য চর্মরোগ থেকে মুক্তি
লাভে থানকুনি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন খালি পেটে ৪
চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে ৭ দিন খেলে রক্ত দূষণ ভাল হয়।
বেগুন/পেপের সাথে থানকুনি
পাতা মিশিয়ে শুঁকতা রান্না করে প্রতিদিন ১ মাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত থানকুনির রস খেলে ত্বক ও চুল সুন্দর থাকে। জ্বর, পেটের পিড়া,
আমাশয়, আলসার, বাতের ব্যথা বিভিন্ন অসুখের ওষুধ হিসেবে এটির ব্যবহার রয়েছে। থানকুনির ব্যবহার আরও বিভিন্নভাবে করা যায়। যেমন- স্কিনের
উজ্জলতা এবং নতুন চুল গজাতে এর ব্যবহার বলে শেষ করা যায় না।
অল্প পরিমাণ আমগাছের ছাল,
আনারসের কচিপাতা ১টি, কাচা হলুদের রস, ৪/৫ টি থানকুনি গাছের শিকড়সহ ভাল করে ধুয়ে একত্রে
বেটে রস করে খালি পেটে খেলে পেটের পীড়া ভাল হয়। ছোট বাচ্চাদের জন্য এটি আরও কার্যকর।
থানকুনি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
সংবহনতন্ত্রের স্থায়ীভাবে স্ফীত ও বর্ধিত শিরা কমাতে সহায়তা করে।
কোনো পুরাতন ক্ষত নিরাময়
না করতে পারলে সেদ্ধ থানকুনি পাতার প্রলেপ দিলে অনেক বেশি উপকার হয়।
থানকুনি পাতা চামড়া মসৃণ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনর্গঠনে
সাহায্য করে। স্কিনের মৃতপ্রায় কোষের জন্য থানকুনি অনেক উপকারী।
থানকুনির রস মৃতপ্রায় কোষ পুনরায় সংগঠিত করতে পারে। এবং শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়, যার
ফলে শুষ্ক ত্বক মসৃণ হয়ে যায়।
দাঁতের নানান রোগ ভাল
করার পেছনে থানকুনি পাতার বিকল্প নেই। রক্তপাত, মাড়ি ও দাঁত ব্যথার ক্ষেত্রেও পাওয়া
যাবে সুফল। যদি থানকুনি পাতার রস নিয়ে পানি কুলি করা হয়, দাতের ব্যথা অনেক কমে যাবে।
একটি বড় বাটির মধ্যে থানকুনি পাতার প্রলেপ করে দিলে শরীরের ফোঁড়াতে ভাল ফলাফল শীঘ্রই
পেতে পারেন।
জর ও আমাশয়ে থানকুনির
পাতার রস খেলে উপকার হয়।
No comments:
Post a Comment