কম্পিউটার ও ইন্টার‌নেট ব্যবসা করুন

বর্তমান যুগ বিজ্ঞা‌ন ও প্রযু‌ক্তির যুগ। এই প্রযু‌ক্তির যু‌গে পড়া‌লেখা থে‌কে শুরু ক‌রে কাজকর্ম, বি‌নোদন সব ক্ষে‌ত্রেই ক‌ম্পিউটার আর ইন্টার‌নে‌টের প্র‌য়োজন। শহর, গ্রাম সর্বত্রই এর সমান কদর। ক‌ম্পিউটার ও ইন্টার‌নেট ব্যবসা স্মার্ট এবং চা‌হিদা সম্পন্ন। এই ব্যবসায় ল‌সের কোন ভাবনা নেই। নিজ এলাকাতেই দিতে পারেন কম্পিউটার, ইন্টার‌নেট ও কম্পিউটার পার্টস বিক্রির দোকান।

কম্পিউটার, ইন্টা‌নেটের ব্যবসা কর‌তে চাই‌লে এই সম্প‌র্কে সামান্য জ্ঞান থাক‌লেই হবে। ত‌বে এর সা‌থে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার যোগ কর‌তে চাই‌লে এটা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। আবার ক‌ম্পিউটার ব্যবসায় এর বি‌ভিন্ন পার্ট‌সও বি‌ক্রি করা যায়। এলাকায় পরিচিতি থাক‌লে খুব অল্প সম‌য়ে ভা‌লো মুনাফা অর্জন সম্ভব।

কম্পিউটার ব্যবসা শুরু কর‌বেন যেভা‌বে
ব্যবসায় সফলতার মূল চা‌বিকা‌ঠি হ‌চ্ছে সততা, সুন্দর আচরণ ও ধৈর্য্য। এ‌টি অবশ্যই মে‌নে চল‌তে হ‌বে। যে কোন ব্যবসার জন্য পুঁজি নিয়ে ভাবনা থাকে সবার। তাই স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে হলে বে‌শি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দামি কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ না এনে স্বল্প মূল্যের যন্ত্রপাতি দিয়ে শুরু করা যায়। এ জন্য ছোটখাটো একটি দোকান নিলেই হয়। এ সময় কোনো কর্মচারী না রাখাই ভা‌লো। ব্যবসার শুরুতে খুব কম পণ্য দিয়ে শুরু করলেও ক্ষতি নেই। কারণ প্রথম দিকে সুনাম ও পরিচিতিই প্রধান ব্যাপার। এই ব্যবসার যন্ত্রাংশ কিনতে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পুঁজি লাগবে। টাকার পরিমাণ দোকানের জায়গার ওপর নির্ভর করবে। সব মিলিয়ে এক থে‌কে দেড় লাখ টাকা হলেই ভা‌লোভা‌বে শুরু করা যায়।

যা যা প্র‌য়োজন
শুধু ক‌ম্পিউটার ও ইন্টার‌নেট ব্যবসার জন্য নি‌চের সামগ্রী প্র‌য়োজন:
১। ক‌ম্পিউটার (যে কোন কনফিগা‌রেশন হ‌লেই চল‌বে, হার্ড‌ডিস্কের জায়গা বে‌শি হ‌লে ভা‌লো),
২। ইন্টার‌নেট কা‌নেকশন,
৩। দোকান,
৪। ডে‌কো‌রেশন (শুরু‌তে অল্প টাকার ম‌ধ্যে)।
এরপর আপনার পু‌জির উপর নির্ভর ক‌রে নি‌চের সামগ্রীগু‌লো নি‌তে পা‌রেন। ব্যবসা শুরুর পর গ্রাহ‌কের চা‌হিদা অনুযায়ীও এসব সামগ্রী বাড়া‌তে পা‌রেন।
৫। প্রিন্টার,
৬। স্ক্যানার,
৭। ফ‌টোক‌পি মে‌শিন,
৮। আই‌পিএস/ইউ‌পিএস।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
দোকান ও জায়গার ডেট ও জামান‌তের কাগজপত্র অবশ্যই কর‌তে হ‌বে এবং সয‌ত্নে নি‌জের কা‌ছেও রাখ‌তে হ‌বে।
য‌দি স্বল্প প‌রিস‌রে এই ব্যবসা শুরু ক‌রেন, ত‌বে প্রাথ‌মিক অবস্থায় নি‌চের কাজগু‌লো না কর‌লেও চল‌বে। কিন্তু ব্যবসা‌কে সি‌কিউর রাখতে ও ব্যবসা য‌দি বিস্তৃত এবং ব্যাপক প‌রিস‌রে গ‌ড়ে তো‌লেন তাহ‌লে প্রথমেই দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স। এরপর দোকানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিন সার্টিফিকেটও করাতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার হতে এই টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।

দোকা‌নের জায়গা ক্যামন হ‌বে
* দোকা‌নের জায়গা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই দোকান যেখা‌নে দি‌বেন, সে জায়গাটার আশপা‌শে জনসাধার‌ণের আনা‌গোনা থাক‌তে হ‌বে, সহ‌জেই সবার দৃ‌ষ্টি‌গোচর হয় এমন জায়গা নির্বাচন কর‌তে হ‌বে।
* প্রাথমিকভাবে ১২ ফুট বাই ১২ ফুট জায়গা হলেই শুরু করা যাবে।
* ক‌ম্পিউটার টে‌বিল বসা‌তে হ‌বে।
* দোকানের ভেতরে পণ্যের ওজন অনুযায়ী কাচ, কাঠ বা হার্ডবোর্ডের তাক লাগাতে হবে।

*** উপ‌রোক্ত মা‌নের জায়গা না হ‌লেও চিন্তার কোন কারন নেই। যেখা‌নে আপ‌নি সু‌বিধা ম‌নে কর‌বেন, প্রাথ‌মিকভা‌বে সেখান থে‌কেই ব্যবসা শুরু করুন। তারপর আপনার ব্যবসাই ব‌লে দি‌বে আপনা‌কে কি কর‌তে হ‌বে, কোথায় যে‌তে হ‌বে।

কী কাজ বা কী বিক্রি করবেন
* ক‌ম্পিউটা‌রে অ‌ডিও ভি‌ডিও গান, ছ‌বি, নাটক লো‌ড দি‌বেন।
* বি‌ভিন্ন ডকু‌মে‌ন্ট লেখা‌লে‌খির কাজ কর‌বেন।
* ইন্টা‌নে‌টে বি‌ভিন্ন ফর্ম পূরণ, রেজাল্ট দেখার কাজ কর‌বেন।
* ফ‌টোক‌পির কাজ কর‌বেন।
* প্রাথ‌মিকভা‌বে ফ‌টোশ‌পের চার/পাঁচ‌টি কাজ শি‌খে এর কাজও কর‌তে পা‌রেন। এটা‌ থে‌কে লাভ ভা‌লো আ‌সে।
* পুঁজি ও গ্রাহ‌কের চা‌হিদা অনুযায়ী মাউস, কি বোর্ড, পেনড্রাইভ, পাওয়ার সাপ্লাই, র্যাম, ম‌ডেম, ইউএস‌বি ক্যাবল, মে‌মো‌রি কার্ড, চার্জার, মোবাইলের চার্জার, লাইট, চার্জার লাইট, ব্যাটারি, মোবাই‌লের বি‌ভিন্ন এ‌ক্সেস‌রিজ, ইত্যা‌দি রাখ‌তে পা‌রেন।

এছাড়াও এলসিডি ও এলইডি মনিটর, ইউপিএস, স্পিকার, কেসিং এবং নেটওয়ার্ক আইটেম, কানেক্টর, সুইস, রাউটারও রাখতে পারেন। এ ছাড়া হেডফোন, মাদার বোর্ড, প্রসেসর, ডিভিডি রাইটার, হার্ডডিস্ক, 'টিভি কার্ড, প্রিন্টার, স্ক্যানারও রাখা যায়।

কোথা থেকে কিনবেন
* পাইকারিভাবে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কিনতে যেতে পারেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের হাই ম্যানশন, গাউসপাক ভবন, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার, শেল‌টেকে। এ ছাড়া আইডিবি ভবনও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের বড় বাজার।
* মোবাইল এ‌ক্সেস‌রিজ এর জন্য গু‌লিস্তান পাতাল মা‌র্কেট ও মোতা‌লেব প্লাজায় যে‌তে পা‌রেন।

* এছাড়াও নিজ জেলা বা বিভাগীয় শহ‌রেও এসব সামগ্রী খুচরা ও পাইকা‌রি দা‌মে পা‌বেন।

দরদাম ও সতর্কতা
** কম্পিউটার যন্ত্রাংশের দাম ব্র্যান্ডভেদে কমবেশি হয়। তাই মোটামুটিভাবে এলসিডি ও এলইডি মনিটর ৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা, ইউপিএস ২২০০ থেকে ৫০০০ টাকা, স্পিকার ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকায় কেনা যাবে। আর কিবোর্ড ১৫০ থেকে ৮০০ টাকা, মাউস ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, পেনড্রাইভ ৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় কেনা যাবে। এ ছাড়া কেসিং ১৪০০ থেকে ৫০০০ টাকা, মডেম ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা, হেডফোন ১৫০ থেকে ১২০০ টাকা, মাদার বোর্ড ২০০০ থেকে ১২০০০ টাকা, র‌্যাম ৩০০ থেকে ৪০০০ টাকা, ডিভিডি রাইটার ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা, হার্ডডিস্ক ১০০০ থেকে ১০০০০ টাকা, টিভি কার্ড ১৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা, প্রিন্টার ৩০০০ থেকে দেড় লাখ  টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।

* বি‌ভিন্ন দোকান ঘু‌রে বা ইন্টার‌নে‌টে সার্চ দি‌য়ে বাজারদর সম্প‌র্কে ধারণা রাখা।
* ঢাকা শহ‌রে এসব কেনার জন্য বাজারদর সম্প‌র্কে পূর্ব ধারণা ও প‌রি‌চিত কারও সাহায্য নেয়া উ‌চিত। তা না হ‌লে দুষ্ট লো‌কের মি‌ষ্টি কথায় প্রতা‌রিত হবার সম্ভাবনা বে‌শি থা‌কে।
* আপনার ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠা‌নের নিরাপত্তার দি‌কে নজর দি‌তে হ‌বে।

লাভ কেমন
** শুধুমাত্র ক‌ম্পিউটার ও ইন্টার‌নেট ব্যবসায় প্র‌তি‌দিন যা বি‌ক্রি কর‌বেন তাই লাভ। সর্ব‌নিম্ন হিসাব ধ‌রে; ১০ টা গ্রাহক‌কে য‌দি ৳৩০ ক‌রে গান লোড ক‌রে দেন, তাহ‌লে ১০×৩০=৩০০ টাকা আর ইন্টার‌নে‌টের কাজ বাবদ ২০০ টাকা আয়। তাহ‌লে দুই‌টি কাজ মি‌লে ৫০০ টাকা আয় থেকে বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৳১০০ বাদ দি‌লে ৪০০ টাকা লাভ থা‌কে।

** পার্টস্ ব্যবসায় ব্র্যান্ড ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে লাভ কমবেশি হয়। ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ হয়। এলসিডি ও এলইডি মনিটরে লাভ থাকে গড়ে ২০ শতাংশ। এছাড়া স্পিকারে ২৫ থেকে ৩০, কিবোর্ড, মাউস, পেনড্রাইভ, নেটওয়ার্ক আইটেম, কেসিং, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ডিভিডি রাইটার, মাদার বোর্ডে ২০, কেব্ল্ আইটেম ও মডেমে ১০, হেডফোন ও র‌্যামে ৩০, হার্ডডিস্কে ৪০, টিভি কার্ডে ২৫ শতাংশ লাভ থাকে।

চাহিদাসম্পন্ন কিছু ব্র্যান্ড
প্রতিটি পণ্যেরই অনেক ব্র্যান্ড রয়েছে। এর মধ্যে চাহিদাসম্পন্ন ও মানসম্মত কিছু ব্র্যান্ড হলো_ মনিটরের মধ্যে ডেল, স্যামসাং, এইচপি, এচার ইত্যাদি।
ইউপিএসের মধ্যে পাওয়ার ম্যাড, মার্কারি ও ম্যাটপালো অন্যতম।
স্পিকার মাইক্রোল্যাব, ডিলাক্স, ক্রিয়েটিভ এবং মার্কারি বেশি বিক্রি হয়।
কিবোর্ড ও মাউসের মধ্যে এফোর টেক, ভেল্যুটপ, ডিলাক্স ও মার্কারির চাহিদা বেশি।
পেনড্রাইভের ব্র্যান্ড হিসেবে ট্রানসেন্ড, টুইনমস উল্লেখযোগ্য।
ইন্টারনেটের মডেম হিসেবে জুম আলট্রা, গ্রামীণ, বাংলালায়ন ও বোডাফোন অল সিম, কিউবি রাখতে পারেন। তবে মডেম রাখার আগে নিজ এলাকায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নেটওয়ার্ক আছে কি না তা যাচাই করে নি‌তে হ‌বে।
প্রিন্টার ও স্ক্যানারের মধ্যে এইচপি, ক্যানন ইত্যাদির চাহিদা বেশি।

ব্র্যান্ডভেদে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের ওয়ারেন্টি। পেনড্রাইভে লাইফ টাইম, মডেম ও হেডফোনে এক বছর, প্রসেসর ও ডিভিডি রাইটারে এক থেকে তিন বছর, প্রিন্টার, স্ক্যানার, টিভি কার্ড ও হার্ডডিস্কে এক বছর, ল্যাপটপ ও ইউপিএসে এক বছর এবং মনিটরে তিন বছরের ওয়ারেন্টি বেশির ভাগ কোম্পানি দিয়ে থাকে।

কিছু প্রয়োজনীয় কথা
* ব্যবসা শুরুর আগে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।
* ব্যবসার জন্য নিয়‌মিত সময় দেয়া ও প্র‌তি‌দিন এর ভা‌লো মন্দ দিক নি‌য়ে সৃজনশীল চিন্তা কর‌তে হ‌বে।
* প্র‌তি‌দি‌নের আয় ও ব্য‌য়ের হিসাব লি‌পিবদ্ধ ক‌রে রাখ‌তে হ‌বে এবং দিন‌ শেষে তা পর্যা‌লোচনা কর‌তে হ‌বে।
* যন্ত্রাংশ বিক্রির পাশাপাশি মেরামতেরও ব্যবস্থা রাখুন ।
* পরিচিতি বাড়াতে কম লাভে কাজ ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করতে পারেন।
* যন্ত্রাংশ কেনার সময় প্রতিটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেবেন।
* ব্যবসা ছোট বা বড় হোক এর প্রচারণা বাড়া‌তে হ‌বে। এজন্য বি‌ভিন্ন সোস্যাল মি‌ডিয়ার সরণাপন্ন হ‌তে হ‌বে।
* মা‌ঝে ম‌ধ্যে বি‌শেষ অফা‌র দি‌য়ে মাই‌কিং, বিল‌বোর্ড, দেয়াল লিখ‌নের ব্যবস্থা কর‌তে হ‌বে।
* স‌র্বোপ‌রি ব্যবসার ক্ষাতি‌রে নি‌জে‌কে ধৈর্যশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান হ‌তে হ‌বে। সা‌থে সা‌থে সতর্ক ও স‌চেতনভা‌বে ব্যবসা প‌রিচালনা কর‌তে হ‌বে।

^
^
dear bangla24 : ব্যবসার আই‌ডিয়া, ক‌ম্পিউটার ব্যবসা, উপায়, নিয়ম, ইন্টার‌নেট ব্যবসা, শুরু, ব্যবসা

2 comments:

  1. খুব সুন্দর করে লিখেছেন ভাইয়া

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগল। উপকৃত হলাম।

    ReplyDelete