রুগ্ন কুকুর-বিড়ালের ঠাঁই অভিনেতা আফজালের বাড়িতে

বিপন্ন প্রাণীর প্রতি দয়া দেখিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অভিনেতা আফজাল খান। রাস্তায় চলতে গিয়ে যেখানেই তিনি আহত কিংবা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত কুকুর-বিড়াল দেখেন তুলে নেন পরম মমতায়, চিকিৎসা দেন। পরিপূর্ণ সুস্থ করে রেখে দেন নিজেরই বাসায় গড়ে তোলা আশ্রয়কেন্দ্রে।

আফজাল খান একজন তরুণ অভিনেতা। বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। বাসা তার খিলগাঁওয়ে। নিজ বাসার চারতলার পুরোটাই ছেড়ে দিয়েছেন এমন সব বিপন্ন প্রাণীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে। নয়া দিগন্তের প্রতিবেদককে বলেন, দুস্থ মানুষের আশ্রয়স্থল আছে; কিন্তু এ ইট পাথরের শহরে প্রাণীদের তো কেউ নেই।

তিনি জানান, এক দিন রামপুরা রোডে রাত ৯টায় গাড়ি চালিয়ে খিলগাঁও তার নিজ বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে একটা কুকুর। খোঁজ নিয়ে দেখলেন একটা প্রাইভেট কারের তলায় পিষ্ট হয়ে ডান পা তার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে রাস্তায় সে অনেকক্ষণ পড়ে থেকে ছটফট করতে থাকে। কখনো সে ডানে যেতে চেষ্টা করছে, কখনো বা বাঁয়ে। কখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আশপাশে থাকা জনগণের কাছে আসতে চাইছে। কিন্তু এমন রক্তাক্ত কুকুকের কাছে ভয়ে কেউ ভিড়তে চাইছে না। ভয় পাচ্ছে যদি কামড়ে দেয়। কিন্তু এমন দৃশ্য দেখে আফজাল খানের হৃদয়ে নাড়া দেয়। তিনি গাড়িতে বসে না থেকে নেমে পড়েন। সড়কে প্রাণ হারাতে বসা কুকুরটার কাছে গিয়ে তুলে নেন নিজের গাড়িতে। দ্রুত ছুটে যান গুলশানে পশু চিকিৎসক ডা: আজমত আলীর কাছে। তিনি সাথে সাথে আহত রক্তাক্ত কুকুরটার চিকিৎসা দেন। অস্ত্রোপচার করে একটি পা কেটে ফেলেন। এরপর দীর্ঘ দিন এ কুকুরটাকে তার ওই খিলগাঁওর বাসায় গড়ে তোলা আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে ড্রেসিং করে সুস্থ করে তোলেন।

প্রাণীদের প্রতি এমন আরো ভালোবাসার কথা ওঠে আসে একজন তরুণ অভিনেতা আফজাল খানের মুখে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তিন তলায় তার এমন কাজের আরো বর্ণনা দেন। জানান, রাজধানীর একজন গৃহিণী একটা ভাতের মাড় ফেলে দেন একটি বিড়ালের গায়ে। কারণ বিড়ালটা ঘরের মধ্যে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে নানান ধরনের ঝামেলা করত। এক দিন ওই গৃহিণী রাগে বিড়ালটার গায়ে ভাতের গরম মাড় ছুড়ে দেন। এতে বিড়ালটার অনেকাংশ পুড়ে যায়। গরম ভাতের মাড়ে ঝলসে যাওয়া বিড়ালটাক আফজাল খান পান তার নিজের বাসার পাশে ডাস্টবিনের এক কোণে। কোলে তুলে নেন, সেখান থেকে তুলে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।

তিনি জানান, গত সাত বছরে রাস্তার কুকুর-বিড়াল নিয়ে কাজের বিবরণ। তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য ছাড়া তার নিজস্ব আয়ের উৎস থেকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে রাস্তার বিভিন্ন রকমের এক্সিডেন্ট, পুড়ে যাওয়া, কেটে যাওয়া, পড়ে যাওয়া, আহত হওয়া, অসুস্থ হওয়া কুকুর-বিড়াল চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলছেন।

বর্তমানে তার বাসায় ৩১টি দেশী বিড়াল, ৪টি বিদেশী ও ৫টি দেশী কুকুর রয়েছে বলে তিনি জানান। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি অন্ধ ও বিকৃত কুকুর-বিড়ালও রয়েছে। যার খাবার, চিকিৎসা নিজ খরচে বহন করে আসছেন। ইতোমধ্যে তিনি তার মতো করে একটি দল তৈরি করেন। যেখানে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে। তার পরিকল্পনা তিনি অনেক বড় আকারে আলাদা জায়গায় কুকুর-বিড়াল নিয়ে কাজ করতে চান।

তবে আফজাল খান জানান, তার একার পক্ষে এভাবে প্রাণীদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বড় আকারে কাজ করতে হলে আর্থিক এবং সরকারি সাহায্য প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment