কেউ অজ্ঞান হলে করণীয়

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এমন একটি অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি বাইরের উদ্দীপক প্রয়োগে কোনো সাড়া দেয় না। যেকোনো পরিমাণ উদ্দীপনায় দেখে অজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায় বোঝা যায়। যদি আলো ফেললে চোখের তারা সংকুচিত হয়, সেটাকে বলে স্টেট অব সুপার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোখের তারায় আলো ফেললে কোনো প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয় না এবং চোখের তারা প্রসারিত হয়ে যায়। কখনো কখনো আবার সঙ্গে খিঁচুনি থাকে।
সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
* হেড ইনজুরি বা মাথায় আঘাত
* ইপেলপসি বা মৃগীরোগ
* হিস্টিরিয়া
* পয়জনিং বা বিষক্রিয়া
* শক
* ডায়াবেটিস
* মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধা
* হিটস্ট্রোক
* মূর্ছা যাওয়া
* হার্ট অ্যাটাক
* মস্তিষ্কে সংক্রমণ

প্রতিক্রিয়ার মাত্রা
এগুলো রোগীর সাড়া দেওয়ার বিভিন্ন স্তর।
রোগীর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো হতে পারে—

** রোগীকে কোনো প্রশ্ন করলে সে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিতে পারে এবং স্বাভাবিক কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারে।
** কেবল সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
** রোগী কোনো প্রশ্নের কেবল অস্পষ্টভাবে সাড়া দিতে পারে।
—নির্দেশ মান্য করা
—কেবল ব্যথা প্রদানে সাড়া দেওয়া
—কোনো কিছুই কোনো সাড়া না দেওয়া

ফার্স্ট এইড
* প্রথমেই রোগীর কোনো বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা উচিত যে রোগীর কোনো রোগ রয়েছে কি না। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মৃগীরোগ ইত্যাদি এবং রোগী কোনো অসুস্থতার জন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করছিল কি না। এসব তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন কিংবা মৃগীরোগের ক্ষেত্রে।
* রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কি-না, সেটি পরীক্ষা করে দেখুন।
* রোগীর শ্বাসপথে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে, যেমন—জিহ্বা পেছনের দিকে চলে গেলে সেটি মুক্ত করুন।
এ ক্ষেত্রে দুই চোয়ালের কোনো বুড়ো আঙুল দিয়ে সামনের দিকে ঠেলুন।
মাথা একপাশে কাত করে দিন।
* প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিন।
* মুখে কিছু খাওয়াবেন না।
* কৃত্রিম দাঁত থাকলে সেটা সরিয়ে ফেলুন এবং এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
* রোগীর কাপড়চোপড় ঢিলা করে দিন।
* রোগীকে গরমে রাখুন।
* রোগীর পা ওপরে তুলুন এবং মাথার নিচের দিকে রাখুন। তবে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে এমন করা যাবে না।
* রোগীকে একলা রেখে যাওয়া যাবে না।
* রোগীর মলমূত্র পরিষ্কার করুন।
* রোগীর খিঁচুনি হলে জিহ্বায় যাতে কামড় না লাগে, সে জন্য দুই সারি দাঁতে মাঝে শক্ত কিছু রাখুন, যেমন—চামচ।
* যদি উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকে তাহলে কোল্ড স্পনজিং করুন।
* বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নিন।
* মাথায় আঘাত লাগলে রক্তপাত বন্ধ করতে ক্ষতস্থানে শক্ত ব্যান্ডেজ বাঁধুন। ক্ষতে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করবেন না।

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

No comments:

Post a Comment