পাবলো পিকাসো: বিশ্বখ্যাত এক চিত্রশিল্পীর গল্প

বি‌ডিপ্র‌তি‌দিন: বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর বাড়িতে একদিন এক অতিথি এসে ভীষণ অবাক; বাড়িতে অনেক কিছুই আছে, কিন্তু পিকাসোর কোনো চিত্রকর্ম নেই। এত বড় একজন শিল্পীর বাড়িতে তার নিজের আঁকা ছবি নেই।

কৌতূহল মেটাতে তিনি পিকাসোকে জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘কী ব্যাপার, বাড়িতে আপনার আঁকা কোনো ছবি নেই কেন?’ পিকাসো দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলেন, ‘আমার এত টাকা কোথায়, যে বাড়িতে পিকাসোর ছবি থাকবে? তার ছবিগুলোর যে দাম!’ এই হলো পাবলো পিকাসো।
১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন এই বরেণ্যশিল্পী। পাবলো পিকাসোর পুরো নাম পাবলো দিয়াগো হোসে ফ্রান্সিসকো ডি পওলা জোয়ান নেপোমেসিনো মারিয়া ডি লস রেমেডিওস সিপ্রিয়ানো ডি লা সান্টিসিমা ত্রিনিদাদ রউস ই পিকাসো। তার বাবার নাম ডন জোসে রুইজি ব্লাসকো ও মায়ের নাম মারিয়া পিকাসো লোপেজ।


তিনি ছিলেন বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, মৃিশল্পী, মঞ্চ নকশাকারী, কবি এবং নাট্যকার। এককথায় বহুমুখী প্রতিভার এক সমন্বয় ঘটেছিল পাবলো পিকাসোর চরিত্রে। বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী শিল্পী হিসেবেই সবাই তাকে চেনেন।
কিউবিস্ট আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও এই চিত্রশিল্পী। গঠনকৃত ভাস্কর্যের উদ্ভাবন, কোলাজের সহ-উদ্ভাবন এবং চিত্রশৈলীর বিস্তৃত ভিন্নতার কারণে তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেন।
পিকাসোর বাবা ছিলেন বার্সেলোনার চারুকলা বিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বাবার হাত ধরেই অল্প বয়সে আঁকাআঁকিতে পিকাসোর ঝোঁক তৈরি হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পিকাসো তার বাবার অসমাপ্ত কবুতরের একটি চিত্র চমৎকার নিখুঁতভাবে আঁকেন। তার বাবার চিত্রটি দেখে মনে হলো পিকাসো বাবাকে অতিক্রম করে গেছেন। এরপর পিকাসোর বাবা পেইন্টিং ছেড়ে দেন। পিকাসো ১৪ বছর বয়সে মাদ্রিদের রয়্যাল একাডেমিতে পড়াশোনা করতে যান। ১৯ বছর বয়সে প্রথম শিল্প সমালোচকদের নজরে আসেন।

১৯০৪ সালে মাদ্রিদের পড়াশোনা শেষে প্যারিসে চলে যান। সেখানে বন্ধু ম্যাক্স জ্যাকবের সহায়তায় ভাষা ও সাহিত্যে ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে ওঠেন। কিউবিস্ট ধারার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনে করা হয় পিকাসোকে। তার শিল্পকর্ম বৈচিত্র্যের জন্যও বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়। শৈশব ও কৈশোরে রিয়্যালিস্টিক ধারায়ও অতিপ্রাকৃতিক শৈল্পিক বিষয় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন পিকাসো। ১৯১০ সালের মধ্যেই কিউবিস্ট অঙ্কনশৈলী পূর্ণতা লাভ করতে পেরেছিলেন। সাধারণত রাতের বেলায় আঁকতে ভালোবাসতেন পিকাসো। রাত ১০-১১টা থেকে আঁকা শুরু করতেন; যা চলত সারা রাত ধরে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একের পর এক সৃষ্টি করে গেছেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। পিকাসোর ছবির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, শুধু ছবির বিষয়বস্তুই আপনার নজর কাটবে না, পাশাপাশি চিত্রের মধ্যে শিল্পীর পরিশ্রম আর মননের সমন্বয়ে নান্দনিক বোধ রয়েছে তাও অনুভব করবেন। পাবলো পিকাসোর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো- গোয়ের্নিকা, ল্যাঁ মুল্যাঁ দা ল গালেৎ, দ্য ব্লু রুম, ওল্ড গিটারিস্ট, সালত্যাঁবাঁক, সেলফ-পোর্ট্রটে, টু নুডস, আভাগঁর রমণীরা, থ্রি মিউজিশিয়ানস, স্কাল্পটর, মডেল অ্যান্ড ফিশবৌল, থ্রি ড্যান্সার্স, গিটার, গ্লাস অব আবস্যাঁৎ, সিটেড বাথার, পালোমা ইত্যাদি। পিকাসো একের পর এক ছবি আঁকার পাশাপাশি ভাস্কর্য গড়েছেন, প্রিন্ট ও খোদাইয়েরও কাজ করেছেন। মাঝে মাঝেই পিকাসো মেতে উঠতেন ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে। এটি তার খুব প্রিয় ছিল। এ ছাড়া ১৯৩৫-১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিন শতাধিক কবিতা লিখেছেন তিনি। এর ভিতর দিয়ে তার কবি সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

পিকাসোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, তিনি চিত্রকর্মের প্রত্যেক পর্যায়ে তার আগের পর্যায় থেকে সরে এসেছেন। সব সময় সচেতন অথবা অবচেতনভাবে এক একটা পর্যায়কে ভেঙে আর এক পর্যায়ে গেছেন।
তার চিত্রকর্মের সঙ্গেই তার গভীর আত্মিক যোগ ছিল। আগাগোড়া এক শিল্পীর জীবন তিনি কাটিয়ে গেছেন। তার প্রত্যেকটা ছবির মধ্যেই পাবলো পিকাসোকে খুঁজে পাওয়া যায়। পাবলো পিকাসোর অসংখ্য চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে তার সময়ে যে কোনো চিত্রশিল্পীর তুলনায় অনেক বেশি। যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন মানুষ পিকাসো। তিনি কোরীয় যুদ্ধ নিয়ে যেমন ছবি এঁকেছেন, তেমনি স্পেনের গৃহযুদ্ধের নির্মম ভয়াবহতাও পিকাসোর তুলির চোখ এড়ায়নি। ফ্যাসিজমের চরম বিরোধী ছিলেন তিনি। ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের চেয়ে কমিউনিজম সমর্থন করতেন। ১৯৫০ সালে ‘লেনিন পিস প্রাইজ’ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল এই মহৎ শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। পিকাসোর মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সালে তাকে নিয়ে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘সারভাইভিং পিকাসো। ’ ১৯৯৩ সালে ‘পিকাসো অ্যাট দ্য ল্যাপিন অ্যাজাইল’ নামে একটি নাটকও নির্মিত হয়। ২০১০, ২০১১ ও ২০১২-তেও তার একক চিত্র প্রদর্শনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়।

৫০ হাজারেরও বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে পিকাসোর। যার মধ্যে পেইন্টিংয়ের সংখ্যা ১৮৮৫টি, ভাস্কর্য ১২২৮টি, সিরামিক শিল্পকর্ম ২৮৮০, ১২ হাজারেরও বেশি পেনসিল ড্রয়িং ও রাফ ছবি রয়েছে। তার মৃত্যুর সময় অনেক ছবিই নিজস্ব সংরক্ষণে ছিল। আর কিছু ছিল বাজারে বিক্রির জন্য। পিকাসোর মৃত্যুর পর ফ্রান্স সরকারের বকেয়া রাজস্ব তার চিত্রকর্ম বিক্রির বিনিময়ে আদায় করা হয়। এই শিল্পকর্মগুলো পিকাসোর মৌলিক কাজ। স্পেন ২০০৩ সালে পিকাসোর সম্মানে ‘মাউসে পিকাসো মালাগা’ নামের একটি মিউজিয়াম তার জন্মস্থানে নির্মাণ করে। ১৯১৮ সালে পিকাসো বিয়ে করেছিলেন ওলগা খোখলোভাকে। রোমে এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানেই তাদের হানিমুন সারেন। এরপর তারা প্যারিসে ফিরে আসেন। সংসারে দুই সন্তান আসার পর তাদের মধ্যে খুনসুটি বেঁধে যায়। ১৯২৭ সালে পিকাসো ১৭ বছর বয়সী মেরি থেরেসে ওয়াল্টার নামে এক তরুণীর প্রেমে পড়েন। এরই মধ্যে খোখলোভার সঙ্গে তার আইনগত বিচ্ছেদ হয়।

পিকাসোর জীবনে নারীর ভূমিকা
নারী মাত্রই অনুপ্রেরণা। সব শিল্পীর জীবনেই নারী ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পিকাসোর জীবনেও তার ব্যাতিক্রম নয়। বিশ শতকের কিছুটা সময় তিনি মাদ্রিদে আর প্যারিসে কাটান। এ সময় তিনি প্রথম ভালোবাসার নদীতে সাঁতার কাটতে শিখেন। স্নিগ্ধ সৈকতে পা ফেলে প্রেমের তরী ভাসাতে হয়। পিকাসো ১৯০৪ সালে ফার্নানান্দে অলিভারের প্রেমে পড়েন। প্রথম ভালোবাসার দিনগুলো ছিল তুমুল আনন্দের। কিন্তু পাবলো পিকাসোর শিল্পীমন এক ভালোবাসায় খুব সম্ভবত আটকে থাকতে চায়নি। ফলে পিকাসো আবারও প্রেমে পড়েন এক নারীর। তার নাম মারসেল হামবার্ট। যার অনেক ছবিই তিনি কিউবিস্ট পিরিয়ডে এঁকেছেন। ধারণা করা হয়, প্রথম প্রেমের সব অপূর্ণতা এই নারী পূর্ণ করে দেন। পিকাসোর জীবনকে ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেন। ব্যক্তি জীবন, চিত্রকর্ম ও আঁকাআঁকিতে নতুন বাঁক নেয় মূলত পিকাসোর মারসেল হামবার্টের সঙ্গে সম্পর্ককালীন সময়েই। পিকাসো মারসেলের সঙ্গে তার প্রেম বহু চিত্রকর্মে তুলে ধরেন। কিন্তু ১৯১৫ সালে মারসেল আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে পিকাসো ভেঙে পড়েন। এরপর বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পিকাসো অনেক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময়ের সম্পর্কগুলোকে আসলে কতটা প্রেম বা ভালোবাসার মতো মহান শব্দ দিয়ে আখ্যায়িত করা যাবে তা নিয়ে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। সারজে দিয়াগিলেভ, জুয়ান কচটুয়ে, জিয়েন হুগো ও জুয়ান গ্রিস এ সময়কার প্রেমিকাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯১৮ সালের গ্রীষ্মে তিনি ওলগা খোখলোভাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর চিলিতে হানিমুন করেন পিকাসো। কিন্তু দুজনই দুই মেরুর বাসিন্দা। তাই এই বিয়েও কোনোমতে টিকেছিল। এ সময় দুই সন্তানের জনকও হন পিকাসো। কিন্তু তারপরও সংসার বেশি দিন টিকেনি। ওলগা চাইতেন প্রাচুর্য আর পিকাসোর স্বপ্ন চিত্রকর্ম। তাই একসময় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। পিকাসো আবার অন্য নারীর দ্বারস্থ হন। তবে বিয়ে থাকা অবস্থাতেই ১৯২৭ সালে পিকাসো ১৭ বছর বয়স্কা ম্যারি থিয়েরাস ওয়াল্টারের সঙ্গে গোপন অভিসার শুরু করেন। এ সময় খোখলোভা পৃথক হতে চাইলেও পিকাসো ডিভোর্স দিতে রাজি হননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের বিবাহের সম্পর্ক ছিল। তবে ম্যারির সঙ্গে পিকাসোর সম্পর্ক সবচেয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ছিল। পিকাসো ম্যারি যুগলের ঘরে মায়া নামের একটি কন্যারও জন্ম হয়। ম্যারি আশা করেছিলেন পিকাসো তাকে একসময় বিয়ে করবেন। কিন্তু পিকাসো তা করেননি। পিকাসোর মৃত্যুর পর রক্ষণশীল সমাজের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে ম্যারি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ১৯৪৪ সালে ফ্রান্সের স্বাধীনতার সময় পিকাসোর বয়স ৬৩। তখনো এক তন্বী-তরুণী ছাত্রীর সঙ্গে নতুন করে প্রেমে জড়িয়ে ছিলেন। তার সেই প্রেমিকা ছাত্রীর নাম ফ্রেঙ্কস গিলট। পিকাসোর তুলনায় ৪০ বছরের কনিষ্ঠ হলেও তাদের প্রেমিক জুটি ছিল অসাধারণ। এমনকি ক্লড ও পলেমা নামের তাদের দুই সন্তানও ছিল।

পনিটেইলওয়ালা সেই মেয়েটি
মেয়েটিকে কজনই চেনেন। আধুনিক সময়ের বিখ্যাত তুলির কারিগর পাবলো পিকাসোর মডেল। নাম লিডিয়া সিলভেত ডেভিড। পিকাসো তার ৪০টি শিল্পকর্মে লিডিয়াকে মডেল করেছিলেন। শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৪ সালে ভ্যালিরিউস গ্রামে। সেখানে পিকাসোর বাড়ি এবং বন্ধু টৌবির স্টুডিও ছিল। লিডিয়া ও তার মা সেখানে থাকতেন। তারা সেখানে ধাতব চেয়ারের ব্যবসা করতেন। একদিন লিডিয়া বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ পিকাসো পনিটেইলওয়ালা একটি মেয়ের ছবি নিয়ে সবার সামনে রাখলেন। সবাই তো অবাক! এ আর কেউ নন, লিডিয়া। পিকাসোর ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যাবে ছড়িয়ে থাকা চুলের অংশ, লম্বা গ্রীবা এবং কিউট চোখ দুটো। পিকাসো যত্নে এঁকেছিলেন পনিটেইলওয়ালা মেয়েটির ছবি। এরপর পিকাসো লিডিয়াকে মডেল হওয়ার প্রস্তাব করলেন। লিডিয়া রাজি হয়ে গেলেন। পিকাসো লিডিয়াকে দেখে নিজের কষ্ট ভুলে থাকতে পারতেন। কেননা বেশ কয়েক দিন আগে ফ্রাঁসোয়া গিও পিকাসোকে ছেড়ে গিয়েছিলেন। লিডিয়া আস্তে আস্তে পনিটেইলওয়ালা মেয়েটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো পিকাসো মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকেই জানাননি লিডিয়া তার শিল্পের মডেল।

পিকাসো যখন রোমানিয়ার চুলায়!
বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর একটিসহ মোট চারটি শিল্পকর্ম চুরি করার পর তা পোড়ানো হয়েছে। ২০১২ সালের অক্টোবরে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরের কুনসথাল জাদুঘরের গ্যালারি থেকে শিল্পকর্মগুলো চুরি হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে এগুলোর মধ্যে পাবলো পিকাসোরও একটি বিখ্যাত শিল্পকর্ম ছিল। শিল্পকর্ম চুরি ও নষ্ট করার এ ঘটনায় রোমানিয়ার ছয় নাগরিককে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বিচারকাজ শুরু হয়।
শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে পিকাসোর আঁকা ‘হারলেকুন হেড’, ফরাসি শিল্পী ক্লদ মনের ‘ওয়াটারলু ব্রিজ’, অঁরি মাতিসের ‘রিডিং গার্ল ইন হোয়াইট অ্যান্ড ইয়োলো’ ও জার্মান শিল্পী লুসিয়েন ফ্রেডের আঁকা ‘উইমেন উইথ আইজ ক্লোজড’। ছবিগুলোর দাম বর্তমান বাজার মূল্যে ১৩ থেকে ২৬ কোটি মার্কিন ডলার। ছবিগুলো পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি ধরা পড়ে রোমানিয়ার তদন্তকারীদের হাতে। অভিযুক্ত ছয় রোমানীয় নাগরিকের একজনের মা ওলগা ডোগারু শিল্পকর্মগুলো চুলায় পুড়িয়ে ফেলেন। ডোগারু স্বীকার করেন, তার ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রমাণ নষ্ট করার জন্য তিনি শিল্পকর্মগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। অথচ এত মূল্যবান এই চিত্রকর্মগুলো ছিল পৃথিবীর সম্পদ।

পিকাসোর বিখ্যাত ‘গোর্নিকা’
‘গোর্নিকা’ পাবলো পিকাসো কর্তৃক আঁকা একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম। এটি স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের সময়কার। গোর্নিকা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতিস্বরূপ। ১৯৩৮ সালে স্পেনীয় জাতীয়তাবাদী বাহিনীর নির্দেশে জার্মান এবং ইতালীয় যুদ্ধবিমান কর্তৃক উত্তর স্পেনের বাস্ক কান্ট্রি গ্রাম গোর্নিকায় বোমা বর্ষণের প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ হিসেবে এটি তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ বিয়োগান্তক এবং বিশেষ করে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের ওপর বর্বরতা যন্ত্রণা প্রকাশ করে। এই চিত্রকর্মটি একটি স্মারক অবস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বিয়োগান্তক চিরস্থায়ী অনুস্মারক, যুদ্ধবিরোধী প্রতীক এবং শান্তির প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠে। গোর্নিকা চিত্রকর্মটি সমাপ্তির পর একটি সংক্ষিপ্ত সফরে বিশ্বব্যাপী এর প্রদর্শন করা হয় এবং এটি দ্রুত বিখ্যাত ও ব্যাপকভাবে প্রশংসা অর্জন করে। এই সফর স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। স্পেন সরকারের একটি কমিশনের অধীনে ১৯৩৮ সালে প্যারিস আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য এই দেয়ালচিত্র বা মিউরালটি তৈরি করেন। চূড়ান্ত অবস্থায় ক্যানভাসের ওপর সাদা কালো তেলরঙে তৈরি এই ছবিটি ১১ ফুট ৬ ইঞ্চি দীর্ঘ এবং ২৬ ফুট প্রশস্ত।

মোনালিসা নিয়ে পড়েন বিপাকে
মোনালিসা তো চুরি হয়নি! পিকাসোকে জেল খাটানোর মতো ঘটনার সৃষ্টি হতে চলেছিল। মোনালিসা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে গেল অনেকগুলো ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। পুলিশি তদন্তে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো তাদের তালিকায় বিখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাসোও ছিলেন। পুলিশ মনে করেছিল বিখ্যাত এই শিল্পটি যে কোনো শিল্পীই চাইবেন তার কাছে রাখতে। আর সে কারণেই হয়তো প্রথম দিকে তাকে গ্রেফতারও করা হয়। আসলে সে সময় পিকাসো বিখ্যাত শিল্পী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। কিন্তু মোনালিসার সন্ধানে পুলিশ তার স্টুডিওতে তল্লাশি পর্যন্ত চালায়। সব মিলিয়ে পিকাসো খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কেননা তার কাছে ল্যুভ মিউজিয়াম থেকে চুরি যাওয়া অসংখ্য শিল্পকর্ম ছিল। তবে সেগুলো অন্য শিল্পকর্ম, মোনালিসা নয়। আর এসব তিনি চড়া মূল্যে কিনে নিতেন। সম্ভবত সে সময় ল্যুভ থেকে চুরি করা খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না। একসময় পিকাসো তার কাছে সংরক্ষিত থাকা সেই শিল্পকর্মগুলো প্যারিসের বাইরে নদীতে ফেলেও দিতে চেয়েছিলেন। এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় কী! বিখ্যাত শিল্পীর বাড়িতে পুলিশের হানা। আত্মমর্যাদা আর মানসম্মান নিয়েই টানাটানি লেগে গিয়েছিল।

No comments:

Post a Comment