অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার একটি শেষ পর্যায়। অনেকেই রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র ছাড়া ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খায়। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। যার ক্ষতি সরাসরি মানব দেহে প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক সঠিকভাবে না খেলে ওই অ্যান্টিবায়োটিক আর পরবর্তী সময়ে ভালোভাবে ওই ব্যক্তির শরীরে কাজ করে না বা অ্যান্টিবায়োটিকটি নিজেও অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া অনেক সময় ভুল করে বা হাত আন্দাজে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি। আবার খেতে খেতে মাঝপথেই অ্যান্টিবায়োটিক ছেড়ে দিই। এতে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে।
এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওয়াইজা রহমান।
চিকিৎসাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়
প্রশ্ন : কোন ধরনের রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে না?
উত্তর : যখন রোগী চিকিৎসকের কাছে আসবেন, চিকিৎসক কিন্তু অবশ্যই তখন চিকিৎসাপত্রে লিখে দেবেন যে আপনি এই ওষুধটা এত ঘণ্টা পরপর, এত দিন খাবেন, খাবার আগে কিংবা পরে কিংবা দুধের সঙ্গে খেতে পারবেন না। সব সুন্দর করে তাকে লিখে দেবেন। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে কি, আমরা সবাই চিকিৎসক, শুধু হয়তো আমাদের ডিগ্রি নেই। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের সমস্যাটা এ রকম হয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তারা ফার্মেসিতে চলে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯২ ভাগ ওষুধ বিক্রি হয় ফার্মেসিতে চিকিৎসাপত্র ছাড়া। এটা আসলে আমাদের দেশে একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। এই ওষুধ যারা কিনছে, তাদের মধ্যে চিকিৎসাপত্রের বিষয়টিই নেই। কিংবা ওই খানে ফার্মেসির যে ভদ্রলোক, তাকে ওষুধটি দিচ্ছে ধরেই নিলাম, একজনের ডায়রিয়া হয়েছে। বাচ্চাদের ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে আমরা ধরেই নিই এটা ভাইরাস দিয়ে হবে। একে আমরা রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া বলি। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।
সাধারণ সর্দি-জ্বরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই। তখন হয়তো ফার্মেসিওয়ালাও বলছে, আপনি দুটো মেট্রোনিডাজল নিয়ে যান। কিংবা আরো অন্য ওষুধ নিয়ে যান। রোগী কিন্তু খুব খুশি তার সমস্যাটা কমে যাচ্ছে। এরপর তার আশপাশে যখন অন্যদের এ রকম সমস্যা হচ্ছে, অন্যকেও আবার বলছে ওই একইভাবে। চিকিৎসাপত্র ছাড়া ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়।
উত্তর : যখন রোগী চিকিৎসকের কাছে আসবেন, চিকিৎসক কিন্তু অবশ্যই তখন চিকিৎসাপত্রে লিখে দেবেন যে আপনি এই ওষুধটা এত ঘণ্টা পরপর, এত দিন খাবেন, খাবার আগে কিংবা পরে কিংবা দুধের সঙ্গে খেতে পারবেন না। সব সুন্দর করে তাকে লিখে দেবেন। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে কি, আমরা সবাই চিকিৎসক, শুধু হয়তো আমাদের ডিগ্রি নেই। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের সমস্যাটা এ রকম হয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তারা ফার্মেসিতে চলে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯২ ভাগ ওষুধ বিক্রি হয় ফার্মেসিতে চিকিৎসাপত্র ছাড়া। এটা আসলে আমাদের দেশে একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। এই ওষুধ যারা কিনছে, তাদের মধ্যে চিকিৎসাপত্রের বিষয়টিই নেই। কিংবা ওই খানে ফার্মেসির যে ভদ্রলোক, তাকে ওষুধটি দিচ্ছে ধরেই নিলাম, একজনের ডায়রিয়া হয়েছে। বাচ্চাদের ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে আমরা ধরেই নিই এটা ভাইরাস দিয়ে হবে। একে আমরা রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া বলি। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।
সাধারণ সর্দি-জ্বরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই। তখন হয়তো ফার্মেসিওয়ালাও বলছে, আপনি দুটো মেট্রোনিডাজল নিয়ে যান। কিংবা আরো অন্য ওষুধ নিয়ে যান। রোগী কিন্তু খুব খুশি তার সমস্যাটা কমে যাচ্ছে। এরপর তার আশপাশে যখন অন্যদের এ রকম সমস্যা হচ্ছে, অন্যকেও আবার বলছে ওই একইভাবে। চিকিৎসাপত্র ছাড়া ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়।
অ্যান্টিবায়োটিক সঠিকভাবে না খেলে কী হয়?
প্রশ্ন : অ্যান্টিবায়োটিকের বিভিন্ন ডোজ থাকে যে এই অ্যান্টিবায়োটিক আট ঘণ্টা পর পর খেতে হবে বা ১২ বা ২৪ ঘণ্টা পর খেতে হবে। আমরা অনেক সময় এই ঘণ্টা না মেনে চার বা ১৬ ঘণ্টা পর এ রকম যদি খাই অথবা যেটা সাত দিন খাওয়ার কথা, সেটা তিন দিন খাওয়ার পর তার লক্ষণ চলে গেছে, তখন বন্ধ করে দিই। তাহলে কি ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : আসলে অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, রোধ করা আমাদের উদ্দেশ্য। অপ্রয়োজনীয় বিষয়টি চিকিৎসকের মনে করতে হবে। রোগী যদি মনে করে আমার দুদিনে জ্বর কমে গেছে, আমি আর অ্যান্টিবায়োটিক খাব না। এখানেই সমস্যা। আসলে খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ-সংক্রান্ত যে গবেষণা হচ্ছে, সেখানে দেখা গেছে ৪৮ ভাগ রোগী, যাঁরা অ্যান্টিবায়োটিক কেনেন দোকান থেকে, তাঁরা একটি ডোজ কেনেন। একটি অথবা দুটো ট্যাবলেট কেনেন। বিষয়টি এই ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে যেতে ত্বরান্বিত করছে।
উত্তর : আসলে অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, রোধ করা আমাদের উদ্দেশ্য। অপ্রয়োজনীয় বিষয়টি চিকিৎসকের মনে করতে হবে। রোগী যদি মনে করে আমার দুদিনে জ্বর কমে গেছে, আমি আর অ্যান্টিবায়োটিক খাব না। এখানেই সমস্যা। আসলে খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ-সংক্রান্ত যে গবেষণা হচ্ছে, সেখানে দেখা গেছে ৪৮ ভাগ রোগী, যাঁরা অ্যান্টিবায়োটিক কেনেন দোকান থেকে, তাঁরা একটি ডোজ কেনেন। একটি অথবা দুটো ট্যাবলেট কেনেন। বিষয়টি এই ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে যেতে ত্বরান্বিত করছে।
অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয় কেন?
প্রশ্ন : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্সি কথাটি ব্যাপক প্রচারিত। বিষয়টি আসলে কী?
উত্তর : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্সকে আমরা বলতে পারি যে এই সময়ের বার্নিং ইস্যু। কিন্তু খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বুঝতে পারি না অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স কিংবা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স কী? কিংবা কাকে বলে?
আমি খুব সহজভাবে বলার চেষ্টা করব। একজন রোগী যেকোনো অসুখের জন্য, একটি সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খায়। অ্যান্টিবায়োটিক এই নামটা কিন্তু মোটামুটি শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলে জানি ও বলি। আমরা বলি যে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দিয়েছে বা অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক যখন আমরা খাই, সেটা যখন একজন চিকিৎসক দেবেন, আপনি জানেন যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর উনি খাবেন, কত দিন খাবেন—এভাবে করে একটি চিকিৎসাপত্রে লেখা থাকে। কিন্তু প্রায়ই যেটা হয়, এ রকম কোনো নিয়মকানুন আমরা মানি না। এমনকি চিকিৎসকের কোনো চিকিৎসাপত্র ছাড়াই খেয়ে ফেলি।
আমরা এটা কখন খাচ্ছি? ইনফেকশনের ক্ষেত্রে। অনেক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস জীবাণু খুব দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। প্রচুর পরিমাণ জীবাণু আমার শরীরে। তাদের মেরে ফেলার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক। আমার যেটা হলো, আমি অ্যান্টিবায়োটিকটা পেলাম, তবে এই অ্যান্টিবায়োটিকটা যথাযথ পরিমাণে, যথাযথ কাজের হলো না। তখন কী হবে? অ্যান্টিবায়োটিক যখন খাচ্ছে একজন মানুষ, তখন ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যখন সঠিক নিয়ম অনুসারে একজন মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে না, তখন শুধু ব্যাকটেরিয়াগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মারা যাচ্ছে না।
এই জীবাণু যখন মারা যাবে না, সে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন উপায় খুঁজবে যে সে কীভাবে বেঁচে থাকবে? আপনি যেভাবে বেঁচে থাকতে চাইছেন, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুও বেঁচে থাকতে চাইছে। তখন সে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আরো শক্তিশালী হবে। তার বিরুদ্ধে আপনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সেও আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এবং সে আরো শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করবে। তবে আপনি কিন্তু তত দিনে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা খাচ্ছেন না। এরা তখন খুব শক্তিশালী হয়ে আপনার শরীরে বসে আছে।
উত্তর : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্সকে আমরা বলতে পারি যে এই সময়ের বার্নিং ইস্যু। কিন্তু খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বুঝতে পারি না অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স কিংবা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স কী? কিংবা কাকে বলে?
আমি খুব সহজভাবে বলার চেষ্টা করব। একজন রোগী যেকোনো অসুখের জন্য, একটি সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খায়। অ্যান্টিবায়োটিক এই নামটা কিন্তু মোটামুটি শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলে জানি ও বলি। আমরা বলি যে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দিয়েছে বা অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক যখন আমরা খাই, সেটা যখন একজন চিকিৎসক দেবেন, আপনি জানেন যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর উনি খাবেন, কত দিন খাবেন—এভাবে করে একটি চিকিৎসাপত্রে লেখা থাকে। কিন্তু প্রায়ই যেটা হয়, এ রকম কোনো নিয়মকানুন আমরা মানি না। এমনকি চিকিৎসকের কোনো চিকিৎসাপত্র ছাড়াই খেয়ে ফেলি।
আমরা এটা কখন খাচ্ছি? ইনফেকশনের ক্ষেত্রে। অনেক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস জীবাণু খুব দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। প্রচুর পরিমাণ জীবাণু আমার শরীরে। তাদের মেরে ফেলার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক। আমার যেটা হলো, আমি অ্যান্টিবায়োটিকটা পেলাম, তবে এই অ্যান্টিবায়োটিকটা যথাযথ পরিমাণে, যথাযথ কাজের হলো না। তখন কী হবে? অ্যান্টিবায়োটিক যখন খাচ্ছে একজন মানুষ, তখন ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যখন সঠিক নিয়ম অনুসারে একজন মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে না, তখন শুধু ব্যাকটেরিয়াগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মারা যাচ্ছে না।
এই জীবাণু যখন মারা যাবে না, সে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন উপায় খুঁজবে যে সে কীভাবে বেঁচে থাকবে? আপনি যেভাবে বেঁচে থাকতে চাইছেন, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুও বেঁচে থাকতে চাইছে। তখন সে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আরো শক্তিশালী হবে। তার বিরুদ্ধে আপনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সেও আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এবং সে আরো শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করবে। তবে আপনি কিন্তু তত দিনে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা খাচ্ছেন না। এরা তখন খুব শক্তিশালী হয়ে আপনার শরীরে বসে আছে।
একজন মানুষের জীবন যত দিন, ব্যাকটেরিয়ার জীবন কিন্তু কয়েক ঘণ্টা। কিংবা আমাদের দিন হিসেবে কিন্তু দু-একদিন। তার কিন্তু লাখ লাখ প্রজন্ম চলে আসছে। এভাবে করে সে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। আপনার অ্যান্টিবায়োটিকটিকে কিন্তু সে চিনে রাখল যে এটা আমার শত্রু। এরপর আপনি যখন এটা দেবেন, সে কখনোই আর কাজ করবে না। খুব ভয়ংকর কোনো সংক্রমণ বা অসুস্থতায়, আমাদের চিকিৎসকদের হাতে সেই রোগীর জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে না। সব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স বা অকার্যকর হয়ে যাবে। খুবই একটি ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে আমরা চলে যাব।
#অ্যান্টিবায়োটিক #antibiotic #এন্টিবায়োটিক
No comments:
Post a Comment