এ্যান্টিবা‌য়ো‌টিক ‌সেবন ও ব্যাক‌টে‌রিয়া বিষ‌য়ে অজানা তথ্য

এ‌ন্টিবা‌য়ো‌টিক (Antibiotics), যা‌কে এ‌ন্টিব্যাক‌টে‌রিয়ালও (Antibacterials) বলা হয়। এ‌টি এ‌ন্টিমাই‌ক্রোবায়াল(Antimicrobial) জাতীয় ঔষধ (Drug)। এ‌ন্টিবা‌য়ো‌টিক ব্যাক‌টে‌রিয়া (Bacteria) সংক্রামণ প্র‌তি‌রো‌ধক চি‌কিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্য‌মে ব্যাক‌টে‌রিয়া দমন বা এর বৃ‌দ্ধি‌কে প্র‌তি‌রোধ করা যায়।
অ্যা‌ন্টিবা‌য়ো‌টিক চি‌কিৎসার এক‌টি শেষ পর্যায়। অনেকেই রেজিষ্টার্ড চি‌কিৎস‌কের চিকিৎসাপত্র ছাড়া ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খায়। এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। যার ক্ষ‌তি সরাস‌রি মানব দে‌হে প্রভাব সৃ‌ষ্টি ক‌রে।
অ্যান্টিবায়োটিক সঠিকভাবে না খেলে ওই অ্যান্টিবায়োটিক আর পরবর্তী সময়ে ভালোভাবে ওই ব্যক্তির শরীরে কাজ করে না বা অ্যান্টিবায়োটিকটি নিজেও অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া অনেক সময় ভুল করে বা হাত আন্দা‌জে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি। আবার খেতে খেতে মাঝপথেই অ্যান্টিবায়োটিক ছেড়ে দিই। এতে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে। 


ব্যাক‌টে‌রিয়া দমন বা রো‌গের সর্ব‌শেষ পদ‌ক্ষেপ হি‌সে‌বে রো‌গীকে এ‌ন্টিবা‌য়ো‌টিক ওষুধ দেয়া হয়। আর প্র‌ত্যেক রো‌গের জন্যই এ‌ন্টিবা‌য়ো‌টি‌কের ‌নি‌র্দিষ্ট ডোজ থা‌কে। যা সম্পূর্ণ করা আবশ্যক। এম‌বি‌বিএস ডাক্তা‌রের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এ‌ন্টিবা‌য়ো‌টিক গ্রহন করা সম্পূর্ণ নি‌ষিদ্ধ।
মানুষ ও প্রাণীর রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রকৃতিতে বিদ্যমান। একেক ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য একেক রকম হওয়ায় তা শনাক্ত করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) একটি সংক্রমণ। ব্যাক‌টে‌রিয়া মানুষের কিছু উপকার করে। আবার এটির আক্রমণে আমাদের শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি করে। আমরা জেনে না জেনে প্রতিনিয়ত ব্যাকটেরিয়ার সাথে বসবাস করছি। তবে একটু সচেতন হলেই ব্যাকটেরিয়াকে এড়িয়ে চলা যায়। তার জন্য চাই সংক্রমনটি সম্পর্কে জ্ঞান।
ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের মাইক্রো অরগ্যানিজম। এর মধ্যে কোনও কোনওটি আবার এককোষী। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে ব্যাকটেরিয়ার দেখা পাওয়া যায়। অনুকূল আবহাওয়ায় ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার খুব সহজে হয়।

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগঃ
যক্ষা, টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, এ্যানথ্রাক্স, কুষ্ঠ, ডিপথেরিয়া, বটুলিজম, গনোরিয়া, কলেরা,  পারটুসিস বা হুপিংকাশি, টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার, নিউমোনিয়া, সিফিলিস, রক্ত আমাশয় বা ব্যাসিলারী বা ডিসেট্রি।

ব্যাক‌টে‌রিয়ার অবস্থানঃ
সাধারণত অর্ধসিদ্ধ গরুর গোশত, কাঁচা দুধ ও জুস, দূষিত পানি ইত্যাদিতে এই ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করে। এ ছাড়া মুরগি ও গরুর গোশতেও ক্ষ‌তিকর ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করে। আর এ রোগ খাদ্যের মাধ্যমে প্রথমে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুতে রোগ সৃষ্টি করে এবং পরে প্রাণীগুলোর গোশতের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে অজানা কিছু চমকপ্রদ তথ্য-
* পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের অনেক পূর্ব থেকে ব্যাকটেরিয়ার দেখা মিলেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম প্রাণ হিসাবে ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
* কাজের টেবিলে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া থাকে তা টয়লেটে থাকা ব্যাকটেরিয়ার প্রায় ৪০০ গুণ বেশি।
* সঙ্গীকে চুম্বনের সময়ে দুটি মুখের মধ্যে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়ার আদান-প্রদান হয়।
* আমাদের প্রত্যেকের শরীরে গড়ে প্রায় ২ কিলোগ্রাম করে ব্যাকটেরিয়া বাস করে।
* আমাদের নাভীর মধ্যে প্রায় ১৪০০ ধরনের মাইক্রো অরগ্য়ানিজমের বাস রয়েছে।
* টয়লেটের বসার জায়গার চেয়েও বেশি ব্যাকটেরিয়ার বাস আমাদের মোবাইল ফোনে।
* আমাদের মানিব্যাগে রাখা প্রতিটি টাকার নোটে গড়ে ২৫০০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
* ঘা‌মের কার‌ণে শরী‌রে দুর্গন্ধ হয় না, দুর্গন্ধ হয় ব্যাক‌টে‌রিয়ার কার‌ণে।
কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন মানুষের ক্ষতি করে, তেমনই কিছু আবার মানুষের ভালো কাজেও লাগে। যেকোনো পরিবেশে, যেকোনও আবহাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া বাস করতে পারে। যে কোনও আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা এদের রয়েছে। ফলে এর হাত থেকে নিষ্কৃতির সুযোগ নেই। তাই ব্যাক‌টে‌রিয়া প্র‌তি‌রো‌ধে স‌চেতনতা ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার প্রসঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন কর‌তে হ‌বে।

No comments:

Post a Comment