ঘুরতে কে না ভালোবাসে। তাছাড়া ইট-পাথরের যান্ত্রিক নগরের ব্যস্ততায় হাঁপিয়ে ওঠা নাগরিক জীবন মাঝেমধ্যেই হারিয়ে যেতে চায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। খুঁজে ফেরে একটু অবসর। অনেকেই ঘুরতে যান দেশ-বিদেশের নানান দর্শনীয় স্থানে। অথচ দেশের গ্রামগুলো যে, প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা তা হয়তো অনেকেই খেয়ালই করেন না।
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলা। এই উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রাম সুন্দর। ষড়ঋতুর সব ঋতুতেই গ্রামগুলো ধারণ করে অনন্য রূপ। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সারল্যের মতোই এখানকার মানুষজনও সহজ-সরল। এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম একেকটি রূপের খনি। উত্তর শালন্দার, মমিনপুর, ঝিনাইকুঁড়ি, বড় হরিপুর, খয়ের পুকুরসহ সব গ্রামই মনোমুগ্ধকর। কিছু গ্রামে রয়েছে মেঠো পথ আবার কোথায়ও রয়েছে পিচঢালা সরু পথ, পথের দুই ধারে গাছ আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। কয়েকটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনাসহ কয়েকটি শাখা নদী। নদীগুলোর দুই ধারের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। গ্রামগুলোতে মাটির ঘরবাড়ির প্রভাব লক্ষ্যণীয়। রয়েছে ইটের পাকা বাড়িও। গ্রামে গ্রামে ক্ষেত-খামারে কৃষকের কাজের ব্যস্ততা। কণ্ঠে মাটি ও মানুষের গান। নদীর জল বা পুকুরে পাড়ার ছেলেমেয়েদের অবাধ সাঁতার, আবহমান বাংলাদেশের চিরাচরিত রূপের সবকিছুই রয়েছে এখানকার গ্রামগুলোতে। গ্রামে গ্রামে মেঠো পথে চলতে গেলে দুই পাশের ফসল ভরা মাঠ দেখলেই মন ভরে যায়।
শীতকালে প্রকৃতি এখানে অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ধারণ করে। সবুজ ক্ষেতে মুক্তোর মতো ঝকঝকে শিশির হাতছানি দেবে আপনাকে। ধান চাষের পাশাপাশি শীতকালে শাক-সবজির বিপুল সমারোহ দেখতে পারবেন এখানে।
যা দেখবেন
গ্রামের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি এখানে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। পার্বতীপুর বড় রেল জংশন হওয়ায় এখানে দেখা যাবে পুরোনো সময়ের অনেক অবকাঠামো, রয়েছে বদ্ধভূমি। আরো আছে লোকোমোটিভ কারখানা, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, উত্তর পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ প্রকল্প, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
থাকবেন যেখানে
পর্যটকদের থাকার জন্য স্টেশনের কাছেই রয়েছে দু, একটি আবাসিক হোটেল। এ ছাড়া রেলস্টেশন থেকে অল্পকিছু দূরত্বে হলদিবাড়ি নামক জায়গায় পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে বেশ ভালো মানের গেস্ট হাউজ। তবে জেলা শহর দিনাজপুরে রয়েছে বেশ কিছু হোটেল। যেখানে এক রাত্রি যাপনের জন্য ২০০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে বিভিন্ন মানের হোটেল। রয়েছে সরকারি গেস্ট হাউস।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস রয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায়। হক, হানিফ, নাবিলসহ রয়েছে একাধিক পরিবহন। ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা চমৎকার। ঢাকা থেকে দিনাজপুর বা নীলফামারীগামী যেকোনো ট্রেনে যাওয়া যাবে পার্বতীপুর। অল্প সময়ে যেতে চাইলে বিমানেও যাওয়া যাবে। সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট নেমে আধা ঘণ।টা থেকে পয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব পার্বতীপুরে।
No comments:
Post a Comment