নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মো. মনজুর ইলাহী।
বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৫১৪তম পর্বে জন্মের আগেই বিয়ে নির্ধারিত হয়ে থাকে কি না, সে সম্পর্কে টেলিফোনে জানতে চেয়েছেন এক দর্শক। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : সবাই বলে বা অনেক হুজুরও বলেন যে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—এই তিনটি আল্লাহ আগেই নির্ধারণ করে রাখেন। আমি জন্ম-মৃত্যু বিশ্বাস করি; কিন্তু বিয়ে আল্লাহ জন্মের আগে নির্ধারণ করে রাখেন, এটা নিয়ে আমার একটু দ্বিধা আছে। অনেকে বলে যে আমি যদি এটা বিশ্বাস না করি, তাহলে গুনাহ হবে। এই বিষয়টি একটু জানতে চাই।
উত্তর : এটা আসলে তাকদিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। তাকদিরকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারিনি, যে কারণে এমন একটি বিভ্রান্তিতে আমরা পড়ে যাই এবং প্রশ্ন তুলি। আসলে আল্লাহতায়ালা যে তাকদির নির্ধারণ করেছেন, সেটি সৃষ্টিরও আগে, এটা হাদিসেও এসেছে। ফলে এই তাকদিরটি কী আসলে? এটা কি বাধ্য করা নাকি অন্য কিছু?
আল্লাহর তাকদিরের চারটি স্তর। তাকদিরকে বোঝার জন্য সেই চারটি স্তর আগে বুঝতে হবে। প্রথমত হচ্ছে, আল্লাহ সবকিছু জানেন, আল্লাহ যা জানেন তা লিখে রেখেছেন, যা লিখে রেখেছেন তা তিনি চান এবং যা তিনি হওয়াতে চান, তা তিনি সৃষ্টি করেন। এই চারটি স্তর থেকে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ জোর করে কারো ভালো-মন্দ করেন না বা একজনের বিয়ের ব্যবস্থা করেন না। এখানে সৃষ্টির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
এই তাকদিরের সঙ্গে মানুষের দায়িত্ববোধের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ যে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন অথবা পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন, সেটা তাকদিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আল্লাহ বলে দিয়েছেন, তাকদির তার জায়গায় থাকবে। কিন্তু আল্লাহ বলে দিয়েছেন, তোমাদের ভালো-মন্দের একটা সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তাকদির হচ্ছে আল্লাহর ভাবনা, এটা মানুষের বিষয় নয়। অতএব, এটি নিয়ে মানুষের নাড়াচাড়া করার কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ শুধু তাকদিরে বিশ্বাস করবে, এটুকুই। এটাকে নিয়ে গবেষণা করার কোনো সুযোগ নেই। বিনা বাক্যব্যয়ে, কোনো যুক্তি-অযুক্তি ছাড়া আল্লাহ আমাদের যা বলেছেন, আমরা সবটাই বিশ্বাস করব। আমরা শুধু আল্লাহর বিধিবিধানগুলো মেনে চলব। তা মেনে চললে আমরা পুরস্কার পাব এবং ভঙ্গ করলে আমরা শাস্তি পাব। এখানে তাকদিরকে দলিল হিসেবে আনা যাবে না। এই ব্যাপারে সব ওলামায়ে কেরাম এবং সাহাবায়ে কেরাম একমত।
বিয়ের ব্যাপারে তো উদ্যোগ-আয়োজনের ব্যাপার থাকে। অভিভাবক আছে, তাঁদের কিছু তৎপরতার প্রয়োজন হয়। এখানে সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং এর ফলও পাওয়া যায়। আমরা তো আশপাশে দেখেছি, বিয়ে হচ্ছে না। কিন্তু প্রচেষ্টা চালিয়েছে, বিয়ে হয়ে গেছে। এভাবে না হওয়ার উদাহরণ তো খুবই কম। এটা আল্লাহর হাতে বলে আমি বসে থাকব, তার সুযোগ নেই। আল্লাহর হাতে তো সবকিছুই। যে যেটার উপযুক্ত, সে সেটাই পেয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment