মাতৃভাষা বলে বাংলাকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। বাংলা একটি সুশৃঙ্খল ভাষা।
বাংলার আন্তশৃঙ্খলা অত্যন্ত জটিল এবং সুন্দর। এই বিষয়গুলোই আয়ত্ত করতে হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য।
বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য বর্ণ থেকে শুরু করে আধুনিক সাহিত্য পর্যন্ত জানতে হবে। স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পর্কে জানতে হবে। স্বরবর্ণের মধ্যে কয়টি মৌলিক ধ্বনি আছে, কয়টি যৌগিক ধ্বনি আছে, ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে কতটি ফলা আছে, কতটি বর্গীয় বর্ণ আছে—অর্থাৎ বর্ণের বিন্যাস, ধ্বনির বিন্যাস ভালো করে জানতে হবে। ব্যাকরণ অংশে সন্ধি ও সমাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ভুল ও শুদ্ধ বানান শিখতে হবে, জানতে হবে শব্দের বিচিত্র ব্যবহার। জানতে হবে শুদ্ধ বাংলা বাক্য, প্রচলিত ভুল শব্দ ও বাক্যের শুদ্ধিকরণ।
বিসিএস পরীক্ষায় যাঁরা প্রশ্ন করেন, তাঁদের যাচাই করার উদ্দেশ্য থাকে প্রার্থী শুদ্ধভাবে বাংলা জানে কি না কিংবা বাংলার অন্তর্নিহিত কাঠামোর বিষয়ে সচেতন কি না।
তাই প্রচলিত ভুল শব্দগুলো বর্জন করতে হবে। সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ও পরিভাষা—এগুলোয় গুরুত্ব দিতে হয়। এগুলো থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে।
সাহিত্য অংশে প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে পাঁচটি ও আধুনিক যুগ (১৮০০-বর্তমান পর্যন্ত) থেকে ১৫টি প্রশ্ন থাকে। প্রশ্ন আসতে পারে, চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেছেন, কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছে, কোন ভাষায় রচিত, কয়জন পদ রচয়িতা ছিলেন? এসব ভালোভাবে জেনে যেতে হবে। আরাকানকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্য গড়ে উঠেছিল। একসময় আমাদের এখান থেকে প্রচুর মানুষ আরাকানে গিয়েছিল। সেখানে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছিল। সেই আরাকান রাজসভাকেন্দ্রিক সাহিত্য নিয়েও প্রশ্ন হতে পারে।
আধুনিক যুগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ থেকে প্রশ্ন থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে প্রতিবছরই একাধিক প্রশ্ন থাকে।
মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক সাহিত্য থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন—প্রশ্ন হতে পারে, নিচের কোন গ্রন্থটি ১৯৭১ সালে রচিত হয়েছে? অপশনে চারটি গ্রন্থের নাম থাকতে পারে, সবই মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক। কিন্তু একটি গ্রন্থ হয়তো ১৯৭১ সালে বেরিয়েছে, সেটি জানতে হবে। আবার নারী সাহিত্যিক যাঁরা আছেন, তাঁদের সৃষ্টিকর্মও গুরুত্বপূর্ণ।
পুরনো পত্রপত্রিকা সম্পর্কেও জানতে হবে। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ কোনো পুরস্কার পাওয়া লেখকের সৃষ্টিকর্ম থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে।
ড. সৌমিত্র শেখর, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment