ধূমপান ত্যাগ করা খুব সহজ কোনো ব্যাপার নয়। তামাকের ব্যবহার প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পূর্ণ ধূমপান ত্যাগের জন্য ৩০বার পর্যন্ত চেষ্টা করা লাগতে পারে।
গত জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্রের এফ.ডি.এ. (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সিগারেটে নিকোটিনের এর পরিমাণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করে যাতে ব্যাবহারকারীদের এর প্রতি আসক্তি কমে। গবেষকরা মনে করেন সিগারেটে নিকোটিন এর পরিমান কমিয়ে আনা গেলে ধূমপায়ীদের জন্য ধূমপান ছাড়াও সহজ হবে, একই সঙ্গে নতুন ধূমপায়ীদের ধূমপানে আসক্তি থেকে বিরত রাখাও সহজ হবে। ধূমপান ত্যাগের সহায়ক হিসেবে আছে চমৎকার কিছু বৈজ্ঞানিক উপায়।
উইসকনসিন ইউনিভার্সিটির টোবাকো রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টারভেনশন সেন্টারের ডিরেক্টর ড. মাইকেল ফিওরে ধূমপান ত্যাগের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
* ধূমপান ত্যাগ করার আগে প্রস্তুতি প্রথমেই এটা মনের রাখা জরুরি যে, ধূমপান ছাড়ার জন্য বিশেষ কোনো উপায় নেই, প্রকৃতপক্ষে ধূমপান ত্যাগ করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ কিন্তু আপনি চাইলে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন যাতে করে প্রক্রিয়াটা সহজ হয়। যদি আপনি ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, হুট করেই সিগারেট ছেড়ে দেয়া প্রায় অসম্ভব এক কাজ। তাই ধূমপান ছাড়ার আগে প্রথমেই কিছু পরিকল্পনা করে নেয়া ভালো। প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন আপনি ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন? এটা হতে পারে আপনার নিজের স্বাস্থ্যের জন্য অথবা পরিবারের ভালোর জন্য। এর মাধ্যমে আপনি আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের জানিয়ে দিতে পারেন যে, আপনি ধূমপান ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন এবং ওই সকল প্রভাবকগুলো চিহ্নিত করুন যেগুলো আবার আপনার ধূমপান শুরুতে ভূমিকা রাখতে পারে।
* নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায় নিকোটিনের বিকল্প হিসেবে নিকোটিন প্যাচ বা গাম ব্যাবহার করা যেতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এর মতে, এসব নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি খুব অল্প পরিমাণ নিকোটিন এর সাহায্যে আপনার ধূমপান ত্যাগের কিছু উপসর্গকে প্রশমিত করে। নিকোটিন হচ্ছে, টোবাকোর মধ্যে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি উপাদান।
* ধূমপান ত্যাগের ওষুধ গ্রহণ ধূমপান ছাড়ার জন্য কিছু নিকোটিনবিহীন উপায় ব্যাবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ভারেনিক্লাইন নামক ওষুধ যা বাজারে চেনটিক্স নামেও পরিচিত, ধূমপান ছাড়ার প্রথম কয়েক মাস এটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। জাইবান হচ্ছে, এ ধরনের আরেকটি কার্যকরী ওষুধ। এগুলো আপনার দেহের রিসেপ্টর এর নার্ভকে ব্লক করে নিকোটিনকে আপনার ব্রেনে ক্রিয়া করতে বাধা দেয়।
* কাউন্সেলিং অন্যান্য সকল পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সেলিং করাও ধূমপান ত্যাগে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এটা হতে পারে পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা কাছের কোনো মানুষের সঙ্গে অথবা কোনো প্রফেশনাল এর সঙ্গে।
* মেডিটেশন যদিও এটা নতুন একটা পদ্ধতি কিন্তু এরই মধ্যে ধূমপান ত্যাগে মেডিটেশনের ভূমিকার কথা জানা গেছে। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দুই দল মানুষের মধ্যে যারা নিয়মিত মেডিটেশনে অংশগ্রহণ করেছিল তারা নিজেদের ধূমপানের পরিমাণ ৬০% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছিল। অন্য দলের ধূমপানের পরিমাণে কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। সুতরাং ধূমপান ত্যাগে আপনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেডিটেশনকেও রাখতে পারেন।
* ব্যায়াম নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের ফলে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা হ্রাস পাবে। ধূমপান ছাড়ার উপসর্গ ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো যায়। বিশেষ করে জোরে হাঁটা বা দৌড়ানো, সাতার এবং সাইক্লিং এই ব্যায়ামগুলো বিশেষ উপকারী। ব্যায়ামের মাধ্যমে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়ার ফলে মাঝে মাঝে যে ওজন বৃদ্ধি লক্ষ করা যায় তা কমানো যায়।
* অর্থের প্রলোভন কথায় বলে টাকায় বাঘের চোখও মিলে। বেশ কয়েকটা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, টাকার বিনিময়ে ধূমপান ত্যাগ কার্যকর এক উপায়। প্রায় আড়াই হাজার ধূমপায়ীর ওপর এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ৬ মাস ধূমপান না করলে তাদের ৮০০ ডলার করে দেয়া হবে। ওই সমীক্ষার রেজাল্ট দেখে পরে সমীক্ষাচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মীদের জন্যেও একই সুবিধা চালু করেছিল!
* ধূমপান ছাড়ার দিন নির্ধারণ কেমন হবে যদি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করলেন অনেক হয়েছে, আজ থেকে ধূমপান আর না। এভাবে হুট করে ছাড়া যদিও বেশ কষ্টকর, কিন্তু উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চললে সারাজীবনের জন্য ধূমপান ছাড়তে পারবেন আশা করা যায়। আরেকটা উপায় হতে পারে, একটা ডেট ঠিক করে সেদিন থেকে পুরোপুরি ধূমপান ছেড়ে দেয়ার মনস্থির করা। তবে আপনি যেটাই করেন না কেন, জরুরি ব্যাপার হচ্ছে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগুতে হবে। হুট করে ধরলাম আর হুট করে ছেড়ে দিলাম এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে কখনোই এই বদভ্যাস ছাড়া যাবে না। হঠাৎ করে ভীষণ অবসাদের একটা দিন আসতে পারে। আবার হঠাৎ করেই সেলিব্রেট করার কোনো উপলক্ষ্য চলে আসতে পারে, পরিকল্পনা নিয়ে না এগোলে ঘুরেফিরে আবার পুরোনো বদ-অভ্যাস এ ফিরে যেতে পারেন।
* ই-সিগারেট যদি সব কিছুই বিফলে যায় তাহলে শেষ উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন ই-সিগারেট। ই-সিগারেটে নিকোটিন থাকে কিন্তু কোনো ক্ষতিকারক উপাদান নেই, যা আপনার ধূমপান ত্যাগে সিড়ি হতে পারে। যদিও এটা কিছুটা নতুন ধারণা এবং এটার ব্যাপারে খুব বেশি গবেষণা করা হয়নি তবুও এদের মধ্যে ক্যানসারের জন্য দায়ী কেমিক্যাল নেই। তবে এটাকে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগের সিড়ি হিসেবে দেখতে হবে। তবে এ সিগারেটের সঙ্গে বাজারের সিগারেট ব্যবহার করা যাবে না।
No comments:
Post a Comment