বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি হচ্ছে হার্টের অসুখের প্রধান উপসর্গ। তবে শুধু বুক ব্যথা আর একটু শ্বাসকষ্ট হলেই তাকে হার্টের অসুখ মনে করা ঠিক নয়। তবে হার্টের অসুখ হয়েছে বলে সন্দেহ হলে চিকিৎসকের কাছে থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। বুক ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আরো অনেক রোগেরই উপসর্গ। কাজেই সেটি নিশ্চিত না হলে শুধু শুধু হার্টের অসুখের কথা ভেবে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
অনেক সময় কোনো অসুখ ছাড়াও ভয়ে, প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে, উত্তেজনায় এবং অত্যাধিক শারীরিক পরিশ্রমে হৃদরোগের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মানসিক অস্থিরতা বা উদ্বেগের কারণে যাদের বুক ব্যথা, বুক ধড়ফড় ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় (যেমন- হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীরাও বুকে ব্যথার অনুভূতি প্রকাশ করে) তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা হচ্ছে- সাইকোথেরাপি ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কিছু ওষুধপত্র। এ ক্ষেত্রে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞই চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ণয় করবে। এ ছাড়া অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হৃদপিণ্ডকে অনেক বেশি রক্ত পাম্প করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও বুক ধড়ফড় ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দেয়। অন্যদিকে শ্বাসতন্ত্রের অসুখ, যেমন- হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি অসুখে হার্টের অসুখের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
আবার থাইরয়েড গ্রন্থির যে অসুস্থতায় থাইরক্সিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের ক্রিয়াও বেড়ে যায় এবং বুক ধড়ফড় অনুভূত হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত বদহজম, পেটে গ্যাস হওয়া, পেপটিক আলসার ইত্যাদি কারণেও বুকে চাপ লাগা অনুভূতি, বুক ব্যথা ও সামান্য শ্বাসকষ্টের অনুভূতি দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বুক ব্যথা মূলত পেটের ওপরের অংশ জুড়ে হয়ে থাকে। আর হার্টের অসুখে বুক ব্যথা হয় বুকের বামপাশে। এ সব অসুস্থতাই চিকিৎসায় সেরে ওঠে। চিকিৎসা চালিয়ে গেলে সুস্থ থাকা যায়। কাজেই হৃদরোগের মতো উপসর্গ দেখা দিলেই হৃদরোগ হবে বলে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে বিষয়টি সন্দেহমুক্ত হতে হবে।
হৃদরোগের মধ্যে অ্যানজাইনার ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা (বিশেষ করে বামপাশে), বুক চেপে ধরা অনুভূতি হয়। ব্যথা অনেক সময় কাঁধে ও বাম হাতে ছড়িয়ে যেতে পারে। ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড় করে। সাধারণত ঠান্ডা আবহাওয়ায় অ্যানজাইনার ব্যথা বাড়ে। সিঁড়ি বেয়ে উঠলে ভারি জিনিস বহন করলে, বেশি খেলে, অতিরিক্ত পরিশ্রমেও এই ব্যথা বাড়বে। আর হার্ট অ্যাটাকের সময় অ্যানজাইনার উপসর্গগুলো আরো তীব্রভাবে দেখা দেয়। সঙ্গে শরীর ঘামতে থাকে, বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়, গা- হাত- পা ঠান্ডা হয়ে যায়, সংজ্ঞা লোপ পেতে পারে। এক্ষেত্রে উপসর্গের তীব্রতা ও আকস্মিকতা এতটাই প্রকট হয় যে, অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে যাওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করে।
কাজেই শেষ কথা হচ্ছে- হৃদরোগ হয়েছে বলে সন্দেহ হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শঙ্কামুক্ত থাকুন এবং যথাযথ চিকিৎসা নিন। কিংবা অন্য রোগের কারণে একই উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকলে সেটি নির্ণয় করে তার চিকিৎসা নিন।
ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
No comments:
Post a Comment