চামচ দিয়ে পরীক্ষা ক‌রে জেনে নিন কোনো রোগ হয়েছে কি না?

ঘুম থেকে উঠে একেবারে খালি পেটে এই টেস্ট করতে হবে। পানিও খাওয়া যাবে না। তাহলে এবার দেখে নিন চামচ দিয়ে এই সহজ পরীক্ষার পদ্ধতি-

১. একটি চা-চামচ নিয়ে তার তলা দিয়ে জিভের উপরে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে ঘষতে হবে। যাতে চামচটি লালায় সম্পূর্ণ ভিজে যায়।

২. এবার একটি প্লাস্টিক ব্যাগে ঢুকিয়ে তা সূর্যালোকে রেখে দিন।

৩. ১ মিনিট পর প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে চামচটি বের করে নিন।

৪. যদি চামচে লেগে থাকা লালা শুকিয়ে যাওয়ার পর কোনও গন্ধ বা কোনরকম দাগ না হয়, তাহলে জানবেন আপনার দেহের ভিতরের অঙ্গ একদম ঠিক আছে।

৫. চামচে খুব দুর্গন্ধ হলে জানবেন ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে।

৬. অ্যামোনিয়ার মতো ঝাঁঝালো গন্ধ হলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।

৭. মিষ্টি বা কোনও ফলের মতো গন্ধ হলে আপনার ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা।

৮. চামচে সাদা দাগ শ্বাসযন্ত্রের কোনও সংক্রমণের ফল হতে পারে।

৯. বেগুনি রঙের দাগ হলে রক্ত চলাচলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে বা রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে এরকম হয়ে থাকে।

১০. হলুদ রঙের দাগ হলে থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা হতে পারে।

১১. এবং দাগ যদি কমলা রং ধারণ করে তাহলে কিডনির সমস্যায় ভুগতে পারেন। কারণ কিডনির সমস্যা দেখা দিলে রক্তে ক্যারোটিন-সদৃশ উপাদান জমা হতে থাকে। এর ফলেই কমলা রঙের দাগ হয়।

লো ব্লাড প্রেসার হ‌লে যা করবেন..

উচ্চরক্তচাপের মতোই নিম্ন রক্তচাপও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। লো ব্লাড প্রেসারের আরেক নাম হাইপোটেনশন।

অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে লো ব্লাড প্রেসার হতে পারে। প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়ে থাকে।

চিকিৎসকের মতে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশপাশে থাকে তাহলে তা লো ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়। প্রেসার যদি অতিরিক্ত নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না তখন এ রোগ দেখা দেয়।

এ ছাড়া অতিরিক্ত ঘাম, ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হওয়া, দেহের ভেতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে যেমন: রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে এবং অপুষ্টিজনিত কারণে লো ব্লাড প্রেসার দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের প্রথম ৬ মাস হরমোনের প্রভাবে লো প্রেসার হতে পারে। মাথা ঘোরানো বা মাথা হালকা অনুভূত হওয়া, মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা, চোখে অন্ধকার দেখা, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, খুব বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক দ্রুত হৃদকম্পন, নাড়ি বা পালসের গড়ি বেড়ে গেলে বুঝবেন প্রেসার কমে গেছে বা আপনি লো-ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত হয়েছেন।

লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। তবে নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অযথা অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটা উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে কম ক্ষতিকর ও স্বল্পমেয়াদী সমস্যা। আর প্রেসার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়, আসুন লো ব্লাড প্রেসারের প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা জেনে নিই –

লবণ-পানি : লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। কারণ এতে সোডিয়াম আছে। তবে পানিতে বেশি লবণ না দেয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, এক গ্লাস পানিতে দুই চা-চামচ চিনি ও এক-দুই চা-চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের চিনি বর্জন করাই ভালো।

কফি-হট চকলেট : হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেতে পারেন। স্ট্রং কফি, হট চকোলেট, কমল পানীয়সহ যে কোনো ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। আর যারা অনেক দিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন, তারা সকালে ভারী নাশতার পর এক কাপ স্ট্রং কফি খেতে পারেন।

কিশমিশ : কিশমিশ হাইপার টেনশনের ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক-দুই কাপ কিশমিশ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো পানি খেয়ে নিন।

বিটের রস : বিটের রস হাই ও লো প্রেসার দুটোর জন্য সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

বাদাম : লো-প্রেসার হলে পাঁচটি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন। এটা পেসার বাড়াতে সহায়তা করে।

পুদিনা : ভিটামিন ‘সি’, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে পুদিনাপাতা। পুদিনাপাতা বেটে এতে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।

যষ্টিমধু : আদিকাল থেকেই যষ্টিমধু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে রেখে দিন। ২-৩ ঘণ্টা পর পান করুন। এছাড়া দুধে মধু দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।

কোকাকোলা পানে শরী‌রে যে প্র‌তি‌ক্রিয়া হয়

বিখ্যাত কোমল পানীয় কোকাকোলা। এটা শরীরের জন্য কত ক্ষতিকর তা বোঝাতে কোকাকোলার সাথে পয়সার বিক্রিয়া কিংবা কোকাকোলা গরম করলে কী বিক্রিয়া হয়, তা নিয়ে বহু ভিডিও আমরা প্রায় সবাই দেখেছি। কিন্তু তারপরও কি কোকাকোলা খাওয়া একদিনের জন্য বাদ দিয়েছি আমরা?

মিষ্টি এই পানীয় আসলেই শরীরের ভেতরে কীভাবে কাজ করে তা জানতে বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণা করেছেন ফার্মাসিস্ট নিরাজ নায়েক। আর তিনি যা পেয়েছেন সেটা সত্যিই চিন্তিত হওয়ার মতো।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি স্টার অনলাইন জানিয়েছে, কোকাকোলা খাওয়ার এক ঘণ্টা পর এটি শরীরের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা একটি গ্রাফের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন নিরাজ। সেখানে দেখা গেছে, প্রথম চুমুক দেওয়ার পর থেকে ৬০ মিনিট পর পর্যন্ত সাতটি ধাপে এই কোমল পানীয় শরীরের মধ্যে বিক্রিয়া করে।

একটি ৩৩০ মিলিলিটারে এক ক্যান কোকাকোলা পানের মাধ্যমে ১০ চা চামচ পরিমাণ চিনি সরাসরি আপনার শরীরে প্রবেশ করে। যা প্রতিদিন গ্রহণযোগ্য চিনির পরিমাণের মাত্রার প্রায় আড়াই গুণ।

এ বিষয়ে নিরাজ তাঁর নিজস্ব ব্লগে লিখেছেন, চিনির মাত্রাটা এতটা বেশি যে এটা সরাসরি গ্রহণ করলে যে কারো বমি পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু কোকাকোলার ভেতরে থাকা ফসফরিক এসিড এই অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদকে হালকা করে দেয় ফলে আরামসে পানীয়টি গলধঃকরণ করেন আপনি।

পুষ্টিবিদ ইলা এলার্ড মেট্রো ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘কোক সম্পর্কে এই ভয়ঙ্কর তথ্য আপনাকে চমকে দেবে। তবে এসব জানার কারণে উপকার যেটা হয়েছে সেটা হলো এখন থেকে কোকাকোলা পানের আগে সেটা ভেবে আপনি বিরত থাকবেন।’

শরীরের ভেতরে কোকাকোলার প্রতিক্রিয়া নিরাজ দেখিয়েছেন কয়েকটি ধাপে :

প্রথম ১০ মিনিট পরে : ১০ চা চামচ চিনি আপনার শরীরের ভেতরের ব্যবস্থাকে আঘাত করে। এটার অতিরিক্ত মিষ্টতার কারণে আপনি বমিও করে দিতে পারেন। কিন্তু এর রেসিপিতে থাকে ফসফরিক এসিড। আর এটাই অতিরিক্ত মিষ্টতা কমিয়ে দেয় যাতে আপনি এটা পান করতে পারেন।

২০ মিনিট পরে : আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় আর ইনসুলিনের বিস্ফোরণ ঘটে। প্রচুর পরিমাণ চিনি যকৃতের মধ্যে চর্বি তৈরি করে।

৪০ মিনিট পরে : এই সময়ের মধ্যে ক্যাফেইন পুরোপুরি শোষিত হয়ে যায়। আপনার রক্তচাপ বাড়তে থাকে। এতে করে আপনার যকৃত বা লিভারে আরো চিনি ঢুকে পড়ে।

৪৫ মিনিট পর : এই সময় আপনার শরীরের ডোপামিন উৎপাদন বেড়ে যায় এবং আপনার মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জাগায়। মাদক হেরোইন যেভাবে কাজ করে ঠিক সেভাবেই এটা আপনার ওপর কাজ করে।

৬০ মিনিট পর : আপনার শরীরের অন্ত্রের নিচের দিকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়া ও জিংকের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফরিক এসিড। যা বিপাককে হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার চিনি ও কৃত্রিম চিনির কারণে রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম দেহ থেকে বের হয়ে যায়।

এই সময়ের পরে ক্যাফেইনের মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য কাজ করতে শুরু করে। এর মানে এই সময় আপনার প্রসাবের বেগ আসে। অর্থাৎ এবার প্রসাবের মাধ্যমে আপনার শরীর ও হাড় থেকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, সোডিয়াম, ইলেকট্রোলাইট ও পানি বের হয়ে আসবে।

এ সময় আপনি খিটখিটে হয়ে যেতে পারেন। কারণ কোকের সঙ্গে আপনি যেটুকু পানি গ্রহণ করেছিলেন সেটুকুও আপনার শরীর থেকে বের হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ডেইলি স্টার অনলাইন কোকাকোলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের এক মুখপাত্র বলেন, ‘১২৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ আনন্দের সাথে কোকাকোলা পান করে আসছে। অন্য সব কোমল পানীয়র মতো এটাও পানের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত।’

কচুর লতির গুণাগুণ

বাংলাদেশে নানা ধরনের কচু পাওয়া যায়। পানি কচু, মুখি কচু, কচুর লতি, ওলকচু প্রভৃতি। তবে পুষ্টি ও গুণাগুণের দিক থেকে কচু এবং কচুপাতা অনেক উপকারী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো কচুর ডাঁটা এবং পাতায় পুষ্টির মোটামুটি সব উপাদানই থাকে। কচুতে আয়রন, মিনারেল এবং সব ধরনের ভিটামিন বিভিন্ন পরিমাণে থাকে। পাঠকদের সামনে কচুর ল‌তির কয়েকটি গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হলো:

আয়রন :
কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এটা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভস্থ অবস্থা, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি পাচ্ছে- এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি ভীষণ উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে।

ফাইবার :
এই সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এই আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘ বছরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যেকোনো বড় অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এটি।

ভিটামিন :
ভিটামিন ‘সি’ও রয়েছে কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যা সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী। ভিটামিন ‘সি’ চর্মরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।

কোলেস্টেরল বা চর্বি :
কিছু পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’ হাত, পা, মাথার উপরিভাগে গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা অবশ ভাব- এ সমস্যাগুলো দূর করে। মস্তিষ্কে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভিটামিন ‘বি’ ভীষণ জরুরি। এতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেয়। তাই ওজন কমানোর জন্য কচুর লতি খেতে বারণ নেই।

আয়োডিন :
খাবার হজমের পর বর্জ্য দেহ থেকে সঠিকভাবে বের হতে সাহায্য করে। তাই কচুর লতি খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব কম। আয়োডিনও বসতি গড়েছে কচুর লতিতে। আয়োডিন দাঁত, হাড় ও চুল মজবুত করে।

ডায়াবেটিস :
অনেকেই কচুর লতি খান চিংড়ি মাছ দিয়ে। চিংড়ি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। তাই যারা হৃদরোগী, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড প্রেশারের) ভুগছেন তারা চিংড়ি মাছ শুঁটকি মাছ বর্জন করুন।

ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকলে অল্প পরিমাণে চিংড়ি মাছ খেতে পারেন কচুর লতিতে। তবে মাসে এক দিন অবশ্য ছোট চিংড়ি মাছ দিয়ে খেতে পারেন। বড় চিংড়িতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, তাই পরিহার করা ভালো।

কচুর লতি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা নিঃসংকোচে খেতে পারেন কচুর লতি।

কচুর লতি যে কারণে খাবেন
* গরমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পানি থাকে। সে কারণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচুর ডাঁটা বা কচু রাখা যেতে পারে।
* এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ফোলেট, থায়োমিনও রয়েছে।

* কচু রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়।

* কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।

* শিশুদের কচুশাক বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। এতে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে।

* কচুতে অক্সলেট রয়েছে। তাই রান্নার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা খানিকটা চুলকায়। তাই কচুর তরকারি খাওয়ার সময় কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।

সতর্কতা

অনেক ক্ষেত্রে কচু খেলে শরীরে অ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা কচু খাবেন না।

মোবাইল ফোন আপনার ভয়াবহ ক্ষতি করছে!

ঘুম হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘুম শরীরকে চাঙ্গা করে পরবর্তী দিনের কাজের জন্য আমাদের তৈরি করে। অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা অবসাদ ও ক্লান্তি তৈরি করে কর্মোদ্দম কমিয়ে দেয়। আর এজন্য আপনার মোবাইল ফোন‌টিও দায়ী!
মোবাইল ফোন ছাড়া যেন আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। উঠতে বসতে খাইতে ঘুমাতে সব যায়গায় ফোন লাগবেই। এমন এক দিন কল্পনা করতে পারি না আমরা যেখানে ফোন ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারি !
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোনের শরীর থেকে উৎপন্ন রেডিয়েশের কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে দিনের পর দিন ঘুমের কোটা পূর্ণ না হওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাক, নানাবিধ হার্টের রোগ, হাই ব্লাড প্রেসার, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এখানেই শেষ নয়, আরও নানাভাবে মোবাইল ফোন আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।

ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বাড়ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে মাথার কাছে ফোন রেখে শুলে শরীরে রেডিয়েশনের প্রভাবে কোষেদের বিকাশে বাঁধার সৃষ্টি হয়। ফলে নানাবিধ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়।

মোবাইলের অ্যালার্ম ব্যবহার বন্ধ করুন
একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে যখন অ্যালার্ম সেট করার পর থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা তা অফ করছি, ফোন থেকে “রেডিও ট্রান্সমিশন” হতে থাকে। সহজ কথায় মোবাইলের শরীর থেকে অদৃশ্য তরঙ্গ বেরতে থাকে, যার প্রভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

সারা রাত ফোন চার্জ দেওয়া চলবে না
মাথার কাছে ফোন রেখে চার্জ দেওয়া বন্ধ করুন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমিয়ে পরার কারণে সারা রাত ধরে ফোন চার্জ হতে থাকে। যে কারণে মরাত্মক কিছু বিপদ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন, বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন চার্জ হয়ে গেলে যে কোনও সময় ব্যাটারি বাস্ট করার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

ঘুমানোর সময় ফোনটা কোথায় রাখ‌বেন?
দুটো কাজ করতে পারেন। এক, ফোনটা বন্ধ করে ডাইনিং টেবিলে রেখে নিশ্চিন্তে বেড রুমে ঘুমাতে পারেন। আর যদি বেশি প্রয়োজন হয় ফোনটা অন রেখে কিছুটা দূরে রাখুন। এমনটা করলে অন্তত রেডিয়েশনের বিষ গিলে মরতে হবে না কম বয়সে।

প্রসঙ্গত, গবেষকরা লক্ষ করে দেখেছেন ঘুমনোর সময় শরীর থেকে মোবাইল ফোনটিকে যদি কম করে ৩ ফুট দুরত্বে রাখা যায়, তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে।

ফোনের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে বাঁচতে কিছু উপায়
এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখাটা একান্ত প্রয়োজন, তা হল…

১. ফোনে কথা বলা কমান। দীর্ঘ ফোন কল এড়ানোর চেষ্টা করুন। আর যদি একান্ত এমনটা সম্ভব না হয়, তাহলে কয়েক মিনিট পর পর এক কান থেকে অন্য কানে ফোনটা নেবেন। এক ভাবে, এক কানে দিয়ে ফোনে কথা বলবেন না।

২. সম্ভব হলে ফোনে কথা বলার সময় হেড ফোন ব্যবহার করুন। এমনটা করলে ফোনের রেডিয়েশনের প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।

৩. সিগনাল যেখানে ভালভাবে আসছে না। সেখানে ভুলেও ফোন কল রিসিভ করবেন না। এমনটা করলে মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ সিগনাল দুর্বল থাকার সময় ফোন থেকে বেরনো রেডিও ওয়েভের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ব্রেনের উপর খুব খারাপ প্রভাব পরে।

৪. প্যান্টের পকেটে অথবা বুক পকেটে ভুলেও ফোন রাখবেন না। এতে শরীরের একাধিক অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

মে‌থির স্বাস্থ্য উপকারীতা

মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য—তিনটিই বলা চলে। স্বাদ তিতা ধরনের। এতে রয়েছে রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। যাঁরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়ার গতিটা অত্যন্ত ধীর হয়।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে।

বিশেষত কৃমি মরে। রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগী থেকে শুরু করে হৃদ্‌রোগের রোগী পর্যন্ত সবাইকে তাঁদের খাবারে মেথি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। মেথির গুণাগুণ দেখলে একে অন্যতম সুপারফুড বলা চলে।
মেথির উপকারিতা জেনে নিন

১. মেথিতে আছে প্রাকৃতিক তন্তু, যা ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। দিনে দুই-তিনবার মেথি

চিবাতে থাকলে বেশি না খেলেও পেট ভরা মনে হবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা মেথি কাজে লাগাতে পারেন।

২. শীত একটু একটু করে আসছে। বাড়ছে সর্দিকাশিও। নিয়মিত মেথি খেলে সর্দিকাশি পালাবে। লেবু ও মধুর সঙ্গে এক চা-চামচ মেথি মিশিয়ে খেলে জ্বর পালাবে। মেথিতে মিউকিল্যাগ নামের একটি উপাদান আছে, যা গলাব্যথা সারাতে পারে। অল্প পানিতে মেথি সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলার সংক্রমণ দূর হয়।

৩. চুল পড়া ঠেকাতে মেথি খেলে উপকার পাওয়া যায়। মেথি সেদ্ধ করে সারা রাত রেখে তার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় মাখলে চুল পড়া কমে।

৪. অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে মেথি। যাঁদের পেট জ্বালা বা হজমে সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত মেথি খেতে পারেন।

এতে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর করে। মেথি ঝরানো পানি খেলেও হজমের সমস্যা দূর হবে। এমনকি পেপটিক আলসার সারিয়ে তুলতেও সাহায্য করে।

৫. রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর অসাধারণ এক শক্তি থাকায় ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুব ভালো এই মেথি।

৬. নিয়মিত মেথি খেলে পেটে কৃমি হয় না। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

৭. মেথি আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতা, অর্থাৎ অ্যানিমিয়া রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করতে পারে।

৮. মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হলো মেথি। সদ্য মা হওয়া নারীর জন্য মেথি উপকারী।

৯. ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে মেথি, বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য মেথি কার্যকর। মেনোপজ হলে নারীর শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। হরমোনের এই পরিবর্তনের কালে মেথি ভালো একটি পথ্য।

১০. মেথি পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।

‘কোটা’ সংস্কারের আর কত দেরি, পাঞ্জেরি?

ছাত্রজীবন শেষ করে যাঁরা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন, তাঁদের কারও কাছে ‘কোটা’ স্বস্তির বিষয়। আবার কারও কাছে তা আতঙ্ক। কোটা এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়, যা নিয়ে আলোচনা করাটা কখনো কখনো বিব্রতকর। আবার এ নিয়ে কথা না বলাও একধরনের সুবিধাবাদিতা। এ দেশের তরুণসমাজ চায়, কোটাব্যবস্থা নিয়ে জোরদার আলোচনা হোক। সত্যিকারের একটা বিহিত হোক।

প্রশ্নটি যৌক্তিক। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা আর কত বছর থাকবে? কোন কোন ক্ষেত্রে কোটা থাকা উচিত, কতটা থাকা উচিত? যাঁরা একেবারেই কোটা পছন্দ করেন না, তাঁরা বলে থাকেন, যেহেতু আমাদের সংবিধানে সব নাগরিকের অধিকার সমান, তাহলে আবার কারও কারও বিশেষ অধিকার কেন?
আমাদের দেশে বিসিএসে নিয়োগে বর্তমানে ৫৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাঁদের নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রয়েছে ১ শতাংশ, যা পূরণ করা হয় সাধারণত ওপরের যেকোনো একটি কোটা থেকে। অর্থাৎ কোনো কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেখান থেকে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ হয়।
এ হিসাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, এ দেশে যে মেধাবী তরুণ, যিনি কোনো কোটায় পড়েন না (জেলা কোটা ছাড়া), তাঁর চাকরি পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। সংখ্যায় তাঁরাই বেশি আর তাঁদের লড়াইটাও বেশি। দিন-বছর শেষে তাঁদের বঞ্চনাও বেশি।
খুবই দুঃখজনক যে এ দেশে সাধারণ মেধা কোটা থেকে সংরক্ষিত কোটা বেশি এবং তা বছরের পর বছর চলছে। কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোনো সরকারই সাহস দেখাচ্ছে না, পাছে অজনপ্রিয় হয়!
কোটা কিন্তু এ অঞ্চলের সংস্কৃতিরই অংশ। ইংরেজ শাসনামলে পিছিয়ে পড়া দেশীয়দের জন্য চাকরিতে কিছু কোটা ছিল। প্রদেশভিত্তিক কোটাব্যবস্থা ছিল পাকিস্তান আমলেও, যদিও সেখানে বাঙালিদের জন্য ছিল কেবল বঞ্চনার গল্প। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রবর্তিত হয় কোটাব্যবস্থা। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য কোটার ব্যবস্থা ছিল জাতির পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি ঋণস্বীকারের একটি উপায়। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা সঠিকভাবে অনুসরণ করেনি। বরং মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের অবহেলা করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক তরুণের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ নিয়েও কারও কারও আপত্তি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা কোটাসুবিধা পেতে পারেন, কিন্তু নাতি-নাতনিদের জন্য কেন? এই কোটার পক্ষেও কেউ কেউ অবশ্য আছেন।
আরও একটি আপত্তির জায়গা আছে। তা হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপব্যবহার ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে। সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার বেলায় এই ‘চুক্তিযোদ্ধা’রা সিদ্ধহস্ত। এ দেশে একাধিক সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে, যাঁরা প্রশাসনে রাঘব বোয়াল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ধরাকে সরা জ্ঞান করেছেন। তাঁদের বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো যে একদিন খুলে যেতে পারে, হয়তো চিন্তাও করেননি।
বাস্তবতা হলো, এখনো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা বাছাই অভিযান চালাতে হচ্ছে। তাই সরকারি চাকরি ও পদায়নের ক্ষেত্রে এই বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত কোটা নিয়ে নয়ছয় হচ্ছে না, তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে? আর বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণই হয় না। যেহেতু পূরণ হয় না, সে ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা রাখা কতটুকু যৌক্তিক, ভেবে দেখা খুব জরুরি।
এরপরে আসে নারী কোটা। অতি সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে আমরা দেখলাম, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ফল ভালো (পাসের হারে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই মেয়ে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বোধ করি একই চিত্র। একসময় মেয়েদের জন্য এই কোটার সুবিধা প্রয়োজন ছিল। এখন তাঁরা নিজেদের যোগ্যতায় ছেলেদের সঙ্গে দিব্যি সমানে সমান হয়ে লড়ছে। তাহলে ১০ শতাংশ কোটা রেখে নারীদের অবলা বলে হেয় করার হেতু কী? এ দেশে বেসরকারি চাকরিতে বড় বড় পদে নারীরা কোনো ধরনের কোটা ছাড়াই কি চাকরি করছেন না?

সাধারণত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ৮ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জেলা কোটা পুনর্নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে। নতুন আদেশে দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ঢাকা জেলার জন্য সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলার জন্য সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা কোটা নিয়ে যতটুকু বোঝা গেল, তাতে এ কোটার আর প্রয়োজন নেই। থাকতে পারে ‘অনগ্রসর জেলা কোটা’। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট আর নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী জেলা এক নয়। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক চালচিত্রে যে জেলাগুলো পিছিয়ে আছে, সেসব জেলার জন্য কোটা থাকা হয়তো অযৌক্তিক হবে না।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ খুবই যৌক্তিক। তাদের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে। এ দেশে চাকমা ছাড়া মারমা, মুরং, তঞ্চঙ্গ্যা, খাসি, সাঁওতালসহ অন্য যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে, তারা শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। সে ক্ষেত্রে তাদের টেনে তোলা ন্যায়সংগত।
তবে প্রতিবন্ধী কোটা কি কার্যকর? সচরাচর সরকারি চাকরিতে কোনো মাঝারি বা বড় পদে কোনো প্রতিবন্ধী মানুষকে দেখা যায় না। নাকি উপযুক্ত প্রার্থীর অভাব?
আমার মনে হয়, ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা দরকার। এ দেশের নাগরিক হয়ে অনেক আশায় তারা বুক বেঁধেছেন। এখানকার বাসিন্দাদের অন্তত এক প্রজন্মের জন্য হলেও কোটা দরকার হবে।
সবমিলে যা দাঁড়াচ্ছে, এ দেশের মেধাবী তরুণদের যদি আমরা উপযুক্ত ব্যবহার করতে চাই, যদি ঠেকাতে চাই তাদের অনাবশ্যক বিদেশ-মুখিনতা, তাহলে কোটাব্যবস্থার আশু সংস্কার জরুরি। কোটার ভারে তরুণদের মনে হতাশার ছায়া পড়তে দেওয়া ঠিক হবে না।
পাশাপাশি যাঁরা কোটাসুবিধা নিয়ে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করছেন, চাকরিজীবনে তাঁদের নৈপুণ্য নিয়ে বিশদ গবেষণা হোক।
বর্তমান সরকার তো অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। তাহলে জরুরি এ কাজটি আর পিছিয়ে থাকে কেন?

কাজী আলিম-উজ-জামান: সাংবাদিক
alimkzaman@gmail.com